আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৭. কিয়ামত-মৃত্যুপরবর্তী জগতের বিবরণ

হাদীস নং: ২৪২১
আন্তর্জাতিক নং: ২৪২১
হিসাব এবং অন্যায়ের বদলা।
২৪২৪. সুওয়ায়াদ ইবনে নসর (রাহঃ) ..... রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবী মিকদাদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন সূর্য বান্দাদের নিকটবর্তী হয়ে যাবে এমন কি তা এক মাইল বা দুই মাইল বলতে যমীনের দুরত্ব জ্ঞাপক মাইল বুঝানো হয়েছে না চোখে সুরমা লাগানো সলা বুঝানো হয়েছে জানি না।

নবীজী (ﷺ) বলেনঃ সূর্যতাপে তারা গলতে থাকবে। তারা স্ব-স্ব আমল অনুসারে ঘামের প্রবাহে অবস্থান করবে। কারো তো গোড়ালী পর্যন্ত, কারো দুই হাটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত কারো মুখ পর্যন্ত ঘাম পৌছে লাগামের মত বেষ্টন করবে।

মিকদাদ (রাযিঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে দেখেছি তিনি তাঁর হাত দিয়ে মুখের দিকে ইশারা করলেন অর্থাৎ লাগামের মত বেষ্টন করাকে বুঝিয়ে দিলেন।
بابُ مَا جَاءَ فِي شَأْنِ الْحِسَابِ وَالْقَصَاصِ
حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ، أَخْبَرَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ يَزِيدَ بْنِ جَابِرٍ، حَدَّثَنِي سُلَيْمُ بْنُ عَامِرٍ، حَدَّثَنَا الْمِقْدَادُ، صَاحِبُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ أُدْنِيَتِ الشَّمْسُ مِنَ الْعِبَادِ حَتَّى تَكُونَ قِيدَ مِيلٍ أَوِ اثْنَيْنِ " . قَالَ سُلَيْمٌ لاَ أَدْرِي أَىَّ الْمِيلَيْنِ عَنَى أَمَسَافَةَ الأَرْضِ أَمِ الْمِيلَ الَّذِي تُكْتَحَلُ بِهِ الْعَيْنُ قَالَ " فَتَصْهَرُهُمُ الشَّمْسُ فَيَكُونُونَ فِي الْعَرَقِ بِقَدْرِ أَعْمَالِهِمْ فَمِنْهُمْ مَنْ يَأْخُذُهُ إِلَى عَقِبَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَأْخُذُهُ إِلَى رُكْبَتَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَأْخُذُهُ إِلَى حَقْوَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يُلْجِمُهُ إِلْجَامًا " . فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُشِيرُ بِيَدِهِ إِلَى فِيهِ أَىْ يُلْجِمُهُ إِلْجَامًا . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ وَابْنِ عُمَرَ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে মূলত দু'টি বিষয় জানানো হয়েছে।
ক. হাশরের ময়দানে সূর্য মানুষের খুব কাছাকাছি চলে আসবে।
খ. হাশরের ময়দানে মানুষের শরীরের ঘাম এতবেশি পরিমাণে জমা হয়ে যাবে যে, তার মধ্যে আমল অনুপাতে একেকজনের শরীর একেক পরিমাণ ডুবে যাবে।

দু'টো বিষয়ই জানানোর উদ্দেশ্য সেদিনের বিভীষিকা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, যাতে উম্মত এখনই সাবধান হয়ে যায় এবং সেদিন যাতে আল্লাহ তাআলার রহমতের ছায়া পাওয়া যায়, সে উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ পালনের মধ্য দিয়ে ইহজীবন কাটায়।

উল্লেখ্য, ঘামের মধ্যে ডোবার বিষয়টি সকলের জন্য নয়। নবী-রাসূলদের জন্য তো নয়ই। তাছাড়া এমন অনেক লোকও থাকবে, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা তাঁর আরশের ছায়ায় জায়গা দেবেন। তাদেরও ঘামের মধ্যে থাকার প্রশ্ন আসে না। ঘামের মধ্যে ডুববে এক তো কাফেরগণ, দ্বিতীয়ত ওই সকল মুমিন, যারা বিভিন্ন পাপকর্মে লিপ্ত থেকে তাওবা ছাড়াই মারা যাবে। তাওবা কবুলের বিভিন্ন শর্ত আছে, যা 'তাওবা' অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে। কাজেই যারা বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত, তাদের হুঁশিয়ার হওয়া দরকার। তাদের উচিত অবিলম্বে যথাযথ শর্তপূরণের সঙ্গে খালেস তাওবা করে নেওয়া, যাতে হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাআলা নিজ দয়ায় তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করেন।

প্রকাশ থাকে যে, হাশরের ময়দান অদৃশ্য জগতের অংশ। সে জগৎ সম্পর্কে পুরোপুরি জানা যাবে তখনই, যখন সে জগতে যাওয়া হবে। তার আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতটুকু জানিয়েছেন অতটুকুতে ক্ষান্ত থাকাই কর্তব্য। তার বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে যাওয়া সমীচীন নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

হাশর-ময়দানের পরিস্থিতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। সে ভয়ে ভীত থেকে শরীআত মোতাবেক জীবনযাপন করা কর্তব্য, যাতে সেদিন আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় পাওয়া যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ২৪২১ | মুসলিম বাংলা