আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৬. যুহদ-দুনিয়া বিমুখতার বর্ণনা

হাদীস নং: ২৩৬৭
আন্তর্জাতিক নং: ২৩৬৭
নবী (ﷺ) এর সাহাবীগণের জীবন-যাপন।
২৩৭০. কুতায়বা (রাহঃ) ..... মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-এর কাছে ছিলাম। তাঁর গায়ে তখন দুটো রংিন কাতান কাপড় ছিল। একটাতে তিনি নাক ঝাড়লেন। এরপর বললেনঃ বেশ বেশ, আবু হুরায়রা আজ কাতান কাপড় দিয়ে নাক ঝাড়ছে। অথচ আমাকে দেখেছি যে, ক্ষুধায় কাতর হয়ে আয়িশার হুজরা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মিম্বরের মাঝে বেহুশ হয়ে পড়ে আছি। তখন একজন এসে আমার গর্দানে পা চাপা দিয়ে ধরছে। সে মনে করেছে আমাকে বুঝি পাগলামোয় পেয়েছে। অথচ আমার কোন পাগলামো রোগ ছিল না। এ তো ক্ষুধার জ্বালা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
باب مَا جَاءَ فِي مَعِيشَةِ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، قَالَ كُنَّا عِنْدَ أَبِي هُرَيْرَةَ وَعَلَيْهِ ثَوْبَانِ مُمَشَّقَانِ مِنْ كَتَّانٍ فَتَمَخَّطَ فِي أَحَدِهِمَا ثُمَّ قَالَ بَخٍ بَخٍ يَتَمَخَّطُ أَبُو هُرَيْرَةَ فِي الْكَتَّانِ لَقَدْ رَأَيْتُنِي وَإِنِّي لأَخِرُّ فِيمَا بَيْنَ مِنْبَرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَحُجْرَةِ عَائِشَةَ مِنَ الْجُوعِ مَغْشِيًّا عَلَىَّ فَيَجِيءُ الْجَائِي فَيَضَعُ رِجْلَهُ عَلَى عُنُقِي يُرَى أَنَّ بِيَ الْجُنُونَ وَمَا بِي جُنُونٌ وَمَا هُوَ إِلاَّ الْجُوعُ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ
مِنْ هَذَا الْوَجْهِ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

মুহাম্মাদ ইবন সীরীন রহ. বলেন, একদিন আমরা হযরত আবু হুরায়রা রাযি.-এর নিকট বসা ছিলাম। তাঁর পরিধানে ছিল কাতানের এক জোড়া রঙিন কাপড়। তিনি সেই কাপড়ে নাক মুছলেন। তারপর বলে উঠলেন, বাহ্ বাহ্ আবু হুরায়রা! আর কাতানে নাক মুছছে। এরপর তিনি সুফ্ফায় থাকা অবস্থায় তাঁর কিভাবে দিন কাটছিল তা বর্ণনা করছেন এবং জানাচ্ছেন প্রচণ্ড ক্ষুধায় কিভাবে মসজিদের ভেতর বেহুঁশ হয়ে পড়ে যেতেন আর পাগল ভেবে লোকে পা দিয়ে তাঁর ঘাড় চেপে ধরত। অথচ তিনি পাগল ছিলেন না। ছিল কেবল ক্ষুধার তীব্রতা। আর সে কারণেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে যেতেন।

এ ঘটনা বলার উদ্দেশ্য আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা যে, শত কষ্ট সত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যে লেগে থাকার বদৌলতে আল্লাহ তা'আলা তাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে এসেছেন। তাছাড়া সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কালে অতীতের কষ্ট-ক্লেশের কথা স্মরণ করার দ্বারা অন্তরে বিনয় রক্ষা ও অহংকার-অহমিকা থেকে আত্মরক্ষা করাও সহজ হয়। প্রকাশ থাকে যে, পাগল মনে করে পা দিয়ে ঘাড় চেপে ধরার কারণ ছিল সেকালে মনে করা হতো এর দ্বারা পাগলামী রোগ ভালো হয়। এমনিতেও দেখা যেত কিছুক্ষণ হাড় চেপে ধরে রাখার পর হুঁশ ফিরে এসেছে। এজন্যই কেউ বেহুঁশ হয়ে গেলে তার সঙ্গে তারা এরূপ আচরণ করত।

উল্লেখ্য, ক্ষুধায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে যাওয়া সম্পর্কে হযরত আবূ হুরায়রা রাযি.-এর আরও একটি ঘটনা আছে। সহীহ ইবন হিব্বানে ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
أيَّامٍ لَمْ أَطْعَمْ فِيها طَعَامًا، فَجِئْتُ أريد الصفةَ، فَجَعَلْتُ الله ثلاثة علي انت فَجَعَل الصَّيَانُ يُنَادُونَ: جُنَّ أَبُو هُرَيْرَةَ، قَالَ: فَجَعَلْتُ أَنادِيهِمْ، وَأَقول بل انه الْمَجَانِينُ حَتَّى انتهينا إلى الصفةِ، فَوَافَقَتُ رَسُول الله كل أُتِيَ بِقَصْعَةِ مِنْ تَرِيدِ، قدها عليها أهل الصفةِ وَهُمْ يَأْكُلُونَ مِنْهَا، فَجَعَلْتُ أنطاولُ كَيْ يَدْعُونِي، حَتَّى قَامَ الْقَوْمُ وَلَيْسَ فِي الْقَصْعَةِ إِلَّا شَيءٌ في نواحي الفَضْعَةِ، فَجَمَعَهُ رَسُولُ اللهِ ﷺ قصارت لقْمَةً، فَوَضَعَهَا عَلى أَصَابِعِهِ، ثُمَّ قَالَ لِي كُل باسم الله، فَوَالَّذِي نَفْسِي زلْتُ أكُل مِنْهَا حَتَّى شبعْتُ
"আমার এমন সময়ও গেছে যে, টানা তিনদিন পর্যন্ত কোনও খাবার খাইনি। এ অবস্থায় সুফ্ফার দিকে আসছিলাম, কিন্তু বারবার পড়ে যাই। শিশুরা দেখে চিৎকার করে বলছিল, আবু হুরায়রা পাগল হয়ে গেছে। আমি তাদেরকে ডেকে বলছিলাম, বরং তোমরাই পাগল। এভাবে কোনওমতে সুফ্ফায় পৌছাই। আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনাসামনি হই, তখন তাঁর নিকট এক পেয়ালা ছারীদ নিয়ে আসা হয়। তিনি সুফ্ফার সকলকে তা খাওয়ার জন্য ডাকলেন। তারা তা থেকে খাচ্ছিল। আমি উঁচু হয়ে তাঁর দিকে তাকাই, যাতে তিনি আমাকে ডাকেন। এভাবে সকলে খেয়ে উঠে গেল। পেয়ালায় কিছুই থাকল না- কেবল চারপাশে যা লেগে থাকে সেটুকুই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই কাছিয়ে জমা করলেন। তাতে একটা লোকমার মত হল। তিনি তা তাঁর আঙ্গুলে রাখলেন। তারপর বললেন, বিসমিল্লাহ বলে খাও। যার হাতে আমার প্রাণ, সেই আল্লাহর কসম! আমি তা খেতে থাকলাম। খেতে খেতে আমার পেট পুরোপুরি ভরে গেল।"

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সুখের দিনে অতীতের কষ্টের কথা ভুলতে নেই।

খ. মানুষের কাছে অতীতের অভাব-অনটনের কথা প্রকাশ করার দ্বারা অহংকার-অহমিকা থেকে আত্মরক্ষা হয়।

গ. আল্লাহওয়ালার সাহচর্যে বা ইলমে দীনের সন্ধানে রত থাকা অবস্থায় সবর করতে থাকলে আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ায়ও তার বদলা দিয়ে থাকেন। তিনি অর্থসংকট দূর করে সচ্ছলতা দান করেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন