আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৬. যুহদ-দুনিয়া বিমুখতার বর্ণনা

হাদীস নং: ২৩৬৬
আন্তর্জাতিক নং: ২৩৬৬
নবী (ﷺ) এর সাহাবীগণের জীবন-যাপন।
২৩৬৯. মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) ...... কায়স (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সা‘দ ইবনে মালিক (রাযিঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আমিই প্রথম আরব ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে তীর ছুড়েছে। আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে যুক্ত করতে দেখেছি তখন বাবলা বৃক্ষ আর বুনো জাম ছাড়া আমাদের সঙ্গে আহারের কোন কিছুই ছিল না। এমন কি তা খেয়ে আমাদের এক একজন বকরীর মলের ন্যায় মল ত্যাগ করত। এরপর এখন বনু আসাদরা দ্বীনের বিষয়ে আমার ত্রুটি ধরতে আসে। এ যদি হয় তাহলে তো আমি ক্ষতিগ্রস্ত এবং আমার আমলও নিষ্ফল।
باب مَا جَاءَ فِي مَعِيشَةِ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ أَبِي خَالِدٍ، حَدَّثَنَا قَيْسٌ، قَالَ سَمِعْتُ سَعْدَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ إِنِّي أَوَّلُ رَجُلٍ مِنَ الْعَرَبِ رَمَى بِسَهْمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَقَدْ رَأَيْتُنَا نَغْزُو مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَمَا لَنَا طَعَامٌ إِلاَّ الْحُبُلَةَ وَهَذَا السَّمُرَ حَتَّى إِنَّ أَحَدَنَا لَيَضَعُ كَمَا تَضَعُ الشَّاةُ ثُمَّ أَصْبَحَتْ بَنُو أَسَدٍ يُعَزِّرُونِي فِي الدِّينِ لَقَدْ خِبْتُ إِذًا وَضَلَّ عَمَلِي . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَفِي الْبَابِ عَنْ عُتْبَةَ بْنِ غَزْوَانَ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটির বর্ণনায় হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. নিজেকে আল্লাহর পথে সর্বপ্রথম তির নিক্ষেপকারী বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এ তিরটি নিক্ষেপ করেছিলেন এক সারিয়্যায় (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাঠানো যুদ্ধাভিযানে)। হযরত উবায়দা ইবনুল হারিছ রাযি. ছিলেন সে অভিযানের আমীর। সৈন্যসংখ্যা ছিল ৬০ জন। এটি ইসলামের প্রথম সারিয়্যা। কারও মতে দ্বিতীয়। তবে এ অভিযানে কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়নি। তবে হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. তাদের লক্ষ্য করে একটি তির নিক্ষেপ করেছিলেন।

অপর এক বর্ণনায় আছে, সে তীরে এক কাফের বিদ্ধও হয়েছিল, যে কারণে হযরত সা'দ রাযি, নিজেকে আল্লাহর পথে শত্রুর রক্ত প্রবাহিতকারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম বলে উল্লেখ করেছেন। এটা হিজরতের প্রথম বছরের কথা। হযরত সা'দ রাযি. একদম প্রথম দিকের মুসলিম। তাই মক্কা মুকাররামার তো বটেই, মদীনা মুনাউওয়ারারও প্রথম দিকের অবস্থা তাঁর ভালোভাবেই জানা ছিল। তখন কী রকম অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে তাঁদের যেতে হয়েছে, এ হাদীছের বর্ণনায় তিনি তার একটা ছবি এঁকেছেন। তিনি যে যুদ্ধের কথা বলেছেন, সেটি কোন যুদ্ধ ছিল এ সম্পর্কে দু'রকম মত পাওয়া যায়।

একটি হচ্ছে ৮ম হিজরীতে সংঘটিত আল-খাবাতের যুদ্ধ। সে যুদ্ধের আমীর ছিলেন হযরত আবূ উবায়দা রাযি.। কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়ায়, হযরত সা'দ রাযি. তো বলছেন-
كنا نغزو مع رسول الله ﷺ (আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছি), অথচ এ যুদ্ধটি ছিল একটি সারিয়্যা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাঠানো অভিযান, তিনি নিজে এতে শরীক ছিলেন না, তাহলে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন এ কথাটি সঠিক হয় কী করে? উত্তর দেওয়া হয়েছে- এখানে সঙ্গে থাকা বলতে তাঁর আনুগত্যের অধীনে থাকা। তিনি অভিযানে শরীক হতে আদেশ করেছিলেন। তিনি সে আদেশ মেনেছিলেন। সুতরাং এ 'সঙ্গে থাকা' শারীরিক নয়; বরং মানসিক ও আদর্শিকভাবে ছিল।

দ্বিতীয় মত হল এটা অপর কোনও যুদ্ধ ছিল, যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই অংশগ্রহণ করেছেন। এটা প্রমাণিত হলে উপরের ব্যাখ্যার কোনও প্রয়োজন পড়ে না।

যুদ্ধ যেটিই হোক না কেন এতটুকু পরিষ্কার যে, সে যুদ্ধে সাহাবায়ে কেরামকে খাদ্যাভাবের দরুন বাবলা গাছ ও ঝাউ গাছের পাতা পর্যন্ত খেতে হয়েছিল আর এ কারণে তাঁদের মল পর্যন্ত বকরির মলের মত হয়ে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও খাদ্যকষ্টের অজুহাতে তাঁরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ হতে বিরত থাকেননি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ আমাদের শিক্ষা দেয়, যত কঠিন অভাব-অনটনই হোক না কেন, এমনকি ক্ষুধা নিবারণের জন্য গাছের পাতা বা মানুষের পক্ষে এরকম কোনও অখাদ্যও খেতে হয়, তবুও আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুম পালনে শিথিলতা করা যাবে না।

খ. এ হাদীছ অভাবগ্রস্ত ও অন্নকষ্টে জর্জরিত ব্যক্তিদের পক্ষে সান্ত্বনার বাণীও বটে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন