আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৬. যুহদ-দুনিয়া বিমুখতার বর্ণনা

হাদীস নং: ২৩৩৬
আন্তর্জাতিক নং: ২৩৩৬
সম্পদ নিয়েই হল এই উম্মতের ফিতনা।
২৩৩৯. আহমাদ ইবনে মানী‘ (রাহঃ) ...... কা‘ব ইবনে ইয়ায (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি প্রত্যেক উম্মতের একটি ফিতনা রয়েছে। আমার উম্মতের ফিতনা হল ধন-সম্পদ।
باب مَا جَاءَ أَنَّ فِتْنَةَ هَذِهِ الأُمَّةِ فِي الْمَالِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ سَوَّارٍ، حَدَّثَنَا لَيْثُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ صَالِحٍ، أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ جُبَيْرِ بْنِ نُفَيْرِ، حَدَّثَهُ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ كَعْبِ بْنِ عِيَاضٍ، قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ لِكُلِّ أُمَّةٍ فِتْنَةً وَفِتْنَةُ أُمَّتِي الْمَالُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ مُعَاوِيَةَ بْنِ صَالِحٍ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

فتنة বলা হয় এমন বিষয়কে, যা দ্বারা মানুষকে পরীক্ষা করা হয়। এটি ভালো ও মন্দ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। যেমন কুরআন মাজীদে আছে-
وَنَبْلُوكُمْ بِالشَّرِ وَالْخَيْرِ فِتْنَة
আমি পরীক্ষা করার জন্য তোমাদেরকে মন্দ ও ভালোতে লিপ্ত করি।
অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে যা ভালো তা দ্বারাও মানুষকে পরীক্ষা করা হয় এবং আপাতদৃষ্টিতে যা মন্দ তা দ্বারাও। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে সবটাই ভালো। উত্তীর্ণ হতে না পারলে সবটাই মন্দ। উত্তীর্ণ হওয়া না-হওয়াই আসল কথা।

এ হাদীছে বলা হয়েছে, সব উম্মতকেই বিশেষ কোনও একটা বিষয় দিয়ে পরীক্ষা করা হতো। এ উম্মতের সে বিশেষ বিষয়টি হল মাল-সম্পদ। মানুষকে মাল দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা এই যে, সে তা বৈধ উপায়ে উপার্জন করে, না অবৈধ উপায়ে। সে তা বৈধ খাতে ব্যয় করে, না অবৈধ খাতে। এমনিভাবে সে মালের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে কি না। সে মালের আসক্তিতে নিমজ্জিত হয়ে আখিরাত ভুলে যায় কি না। বস্তুত মালের পরীক্ষা বড় কঠিন পরীক্ষা। তাই কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে-
وَاعْلَمُوا أَنَّما أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ
জেনে রেখ, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা।

অপর এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ الدُّنْيا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ، وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيْهَا، فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ
“নিশ্চয়ই দুনিয়া মিষ্ট ও চাকচিক্যময়। আল্লাহ তোমাদেরকে এতে স্থলাভিষিক্ত বানিয়েছেন। তিনি দেখবেন তোমরা এতে কেমন আমল কর।"

কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
المَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَياةِ الدُّنْيَا وَ الْبقِيتُ الصلحتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَ خَيْرٌ أَمَلا
"সম্পদ ও সন্তান পার্থিব জীবনের শোভা। তবে যে সৎকর্ম স্থায়ী, তোমার প্রতিপালকের নিকট তা ছাওয়াবের দিক থেকেও উৎকৃষ্ট এবং আশা পোষণের দিক থেকেও উৎকৃষ্ট।"

আল্লাহ তা'আলা কাউকে পরীক্ষা করেন মাল দিয়ে, কাউকে করেন মাল না দিয়ে। যার মাল-সম্পদ কম তার করা হয় ধৈর্য পরীক্ষা। দেখা হয় সে তার যতটুকু আছে ততটুকুতে খুশিমনে ধৈর্যধারণ করে, নাকি যাদের বেশি আছে তাদের দিকে তাকিয়ে লালায়িত হয় এবং তাদের মত সম্পদ অর্জনের জন্য বৈধ-অবৈধ নির্বিশেষে যে-কোনও পন্থায় লিপ্ত হয়ে যায়।

যাকে আল্লাহ তা'আলা মাল বেশি দেন তাকে পরীক্ষা করেন সে এর হকসমূহ আদায় করে কি না। সে ধন-সম্পদকে আল্লাহপ্রদত্ত মনে করে আল্লাহর শোকর আদায়ে লিপ্ত হয় কি না এবং সে লক্ষ্যে আল্লাহর পথে অকুণ্ঠভাবে খরচ করে কি না। প্রকৃতপক্ষে অর্থ-সম্পদ কম থাকার পরীক্ষা অপেক্ষা বেশি থাকার পরীক্ষা বেশি কঠিন। অর্থ-সম্পদ বেশি হলে মানুষ যেমন আরও বেশি অর্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে, তেমনি যাদের কম আছে তাদের উপর গর্ব ও ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে। তাছাড়া করে কৃপণতাও। এর থেকে বাঁচতে পারে কম লোকই। তাই যাদের ধন-সম্পদ বেশি তাদের খুব বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ধন-সম্পদের লোভে পড়তে নেই। এ নিয়ে অহংকারেরও সুযোগ নেই। এর দ্বারা তো মানুষকে পরীক্ষা করা হয়। তাই সর্বদা অন্তরে ভয় রাখতে হবে, যাতে সে পরীক্ষায় ব্যর্থতা না আসে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ২৩৩৬ | মুসলিম বাংলা