আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৬. যুহদ-দুনিয়া বিমুখতার বর্ণনা

হাদীস নং: ২৩৩৫
আন্তর্জাতিক নং: ২৩৩৫
আকাঙ্ক্ষা হ্রাস করা।
২৩৩৮. হান্নাদ (রাহঃ) ..... আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা তখন আমাদের একটি বাশের ঘর ঠিক করছিলাম, তিনি বললেনঃ এ কি করছ? আমরা বললামঃ ঘরটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তাই আমরা এটি ঠিক করছি। তিনি বললেনঃ পরমায়ূ তো এর চেয়েও দ্রুত আগমনকারী।
باب مَا جَاءَ فِي قِصَرِ الأَمَلِ
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي السَّفَرِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ مَرَّ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ نُعَالِجُ خُصًّا لَنَا فَقَالَ " مَا هَذَا " . فَقُلْنَا قَدْ وَهَى فَنَحْنُ نُصْلِحُهُ . قَالَ " مَا أُرَى الأَمْرَ إِلاَّ أَعْجَلَ مِنْ ذَلِكَ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَأَبُو السَّفَرِ اسْمُهُ سَعِيدُ بْنُ يُحْمِدَ وَيُقَالُ ابْنُ أَحْمَدَ الثَّوْرِيُّ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

خص বলা হয় বাঁশের ঘরকে বা এমন ঘরকে, যার ছাদ দেওয়া হয় কাঠ দ্বারা। বোঝানো উদ্দেশ্য ছোটখাটো অতি সাধারণ ঘর, যেমন আমাদের দেশে কুটির। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাযি.-এর পরিবারের একটা কুটির বা অতি সাধারণ ঘর ছিল। সেটিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। একবার তাঁরা সেটি মেরামত করছিলেন। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, মেরামত করছিলেন তিনি ও তাঁর মা। এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। কী করা হচ্ছে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা মেরামত করার কথা জানালেন। তখন তিনি তাঁদেরকে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে আকৃষ্ট করলেন। বললেন-
مَا أَرَى الأَمر إلا أَعْجَلَ مِنْ ذَلِكَ (আমি তো দেখছি ব্যাপারটি (মৃত্যু) এরচে'ও বেশি শীঘ্রগামী)। অর্থাৎ তোমরা যত দ্রুত এটি ভেঙে পড়বে বলে মনে করছ, মৃত্যু তারচে'ও বেশি দ্রুতগামী। এমনও হতে পারে ঘরটি মেরামত করার আগেই তোমার মৃত্যু এসে যাবে। তাই ঘরের মেরামত যেমন জরুরি, নিজ আমলের মেরামত তথা নিজেকে সংশোধন করা ও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত করা আরও বেশি জরুরি, আরও দ্রুত জরুরি।

ইমাম তীবী রহ. বলেন, দুনিয়ায় আমাদের থাকাটা তো একজন পথিকের মত বা গাছের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণকারীর মত। এরূপ ব্যক্তির চলে যাওয়াটা তো তুমি যে মেরামতের কাজে ব্যস্ত আছ তারচে'ও বেশি দ্রুত হয়ে থাকে।

এই যখন দুনিয়ায় থাকার অস্থায়িত্ব বা এই যখন মৃত্যুর দ্রুতগামিতা, তখন কোনও ব্যক্তিরই আখিরাত ভুলে কেবল দুনিয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকাটা শোভা পায় না। কোনও বুদ্ধিমানেরই মৃত্যুর কথা ভুলে ক্ষণিকের এ জীবন নিয়ে পড়ে থাকাটা সাজে না। সে ভাঙ্গা ঘর জোড়া লাগাবে বটে, তবে তার আসল ধ্যানজ্ঞান থাকবে কী করে ঈমান ও ইসলাম নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া যায়, কী করে সঠিক আমল-আখলাক নিয়ে কবরে যাওয়া যায় সেই চেষ্টা।

এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদাই সাহাবায়ে কেরামকে আখিরাতমুখী মানুষরূপে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। যখনই অবকাশ আসত, তাদের দিল-দেমাগে মৃত্যু ও আখিরাতের ফিকির তাজা করে দিতেন, যাতে করে দুনিয়ার আসক্তি তাদেরকে স্পর্শ করতে না পারে। তাদেরকে কখনও সন্ন্যাসী হতে বলেননি, কখনও দুনিয়ার কাজকর্ম সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেওয়ার উৎসাহ যোগাননি। কেবল সতর্ক করেছেন যাতে তারা কেবল দুনিয়ার মানুষ হয়ে না থাকেন। দুনিয়ার প্রয়োজনীয় কাজ করবেন বটে, কিন্তু হয়ে থাকবেন আখিরাতের মানুষ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ঘরবাড়ি এবং মাল ও আসবাব নষ্ট হতে থাকলে তা অবশ্যই মেরামত করা চাই, নষ্ট হতে দেওয়া ঠিক নয়।

খ. ঘরবাড়ি মেরামতের চেয়েও বেশি জরুরি নিজের আমল-আখলাক সংশোধন করা।

গ. মৃত্যু অতি দ্রুতগামী। তাই সর্বদা প্রস্তুত থাকা চাই, যাতে মৃত্যু হয় ঈমান ও নেক আমলের সঙ্গে।

ঘ. প্রত্যেকের উচিত নিজের অধীন ও সংশ্লিষ্ট লোকদের ঈমান-আকীদা, চিন্তা-চেতনা ও আমল-আখলাকের নির্মাণ-সংশোধনের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)