আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৩. ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের বিবরণ

হাদীস নং: ২১৮৪
আন্তর্জাতিক নং: ২১৮৪
ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের বিবরণ
ভূমি ধ্বস।
২১৮৭. মাহমুদ ইবনে গায়লান (রাহঃ) ...... সাফিয়্যা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, লোকেরা এই আল্লাহর ঘর নিয়েও লড়াই থেকে বিরত হবে না। শেষ পর্যন্ত এক বাহিনী যখন লড়াইয়ে আসবে আর তারা যখন খোলা ময়দানে উপস্থিত হবে তখন তাদের প্রথম ও শেষ সকলকে নিয়ে যমীন ধ্বসে যাবে। যারা মাঝে ছিলেন তারাও এ থেকে বাঁচতে পারবে না। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, যে ব্যক্তি তাদের মাঝে বাধ্য হয়ে শামিল হয়েছে তার কি হবে? তিনি বললেনঃ তাদের অন্তরের অবস্থা অনুসারে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে উত্থিত করবেন।
أبواب الفتن عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
باب ما جاء في الخسف
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ أَبِي إِدْرِيسَ الْمَرْهَبِيِّ، عَنْ مُسْلِمِ بْنِ صَفْوَانَ، عَنْ صَفِيَّةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَنْتَهِي النَّاسُ عَنْ غَزْوِ هَذَا الْبَيْتِ حَتَّى يَغْزُوَ جَيْشٌ حَتَّى إِذَا كَانُوا بِالْبَيْدَاءِ أَوْ بِبَيْدَاءَ مِنَ الأَرْضِ خُسِفَ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ وَلَمْ يَنْجُ أَوْسَطُهُمْ " . قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَمَنْ كَرِهَ مِنْهُمْ قَالَ " يَبْعَثُهُمُ اللَّهُ عَلَى مَا فِي أَنْفُسِهِمْ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এটি একটি ভবিষ্যদ্বাণী। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাচ্ছেন, কিয়ামতের আগে একটা সময় আসবে যখন মানুষের ঈমান-আমলের ব্যাপক অবক্ষয় দেখা দেবে। মানুষ 'সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ'-এর দায়িত্ব পালনে চরম শৈথিল্য প্রদর্শন করবে। সেই সময় কোনও এক জালেম রাজা তার সেনাবাহিনী নিয়ে পবিত্র কা'বা ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য অভিযান চালাবে। কিন্তু সে তার এ দুরভিসন্ধিতে সফল হবে না। পবিত্র কা'বায় পৌঁছার আগেই এক তরুলতাহীন প্রান্তরে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে মাটির ভেতর ধ্বসিয়ে দেবেন। তাদের মধ্যে এমন কিছু লোকও থাকবে, যারা মূল বাহিনীর সদস্য নয়। তারা কেবল মালামাল বেচার জন্য তাদের সঙ্গী হবে। আরেকদল লোক কেবলই তাদের পথের সহযাত্রী হবে। হয়তো বাহিনীর লোক তাদের সঙ্গে যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু সকলেই যেহেতু একসঙ্গেই থাকবে, তাই সাধারণভাবে সকলেই আযাবের কবলে পড়ে যাবে। তবে আখিরাতের ব্যাপারটা হবে আলাদা। সেখানে প্রত্যেকের সংগে তার নিয়ত অনুযায়ী আচরণ করা হবে। যাদের নিয়ত থাকবে পবিত্র কা'বাঘরের ক্ষতি করা, তারা দুনিয়ার শাস্তির সাথে আখিরাতের আযাবও ভোগ করবে। আর যাদেরকে জোরপূর্বক তাদের সংগে যেতে বাধ্য করা হবে, তারা আখিরাতে শাস্তির সম্মুখীন হবে না। অবশ্য যারা স্বেচ্ছায় তাদের সংগে যোগদান করবে, তা বেচাকেনার উদ্দেশ্যে হোক বা অন্য কোনও উদ্দেশ্যে, তাদের কারণে যেহেতু অপরাধীদের দল ভারী হবে এবং দেখতে তাদেরকে একটি বড় বাহিনী মনে হবে, সেহেতু তারাও অপরাধীদের দলে গণ্য হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারাও নিয়তের গুরুত্ব বোঝা গেল। নিয়ত দ্বারাই কাজের ভালোমন্দ নির্ণিত হবে এবং সে অনুযায়ী আখিরাতে বদলা দেওয়া হবে।

খ. যাদের দ্বারা অপরাধকারীদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে, অপরাধকারীদের অনুরূপ শাস্তি তাদের জন্যও প্রযোজ্য হয়।

গ. যারা অন্যায়-অপরাধে লিপ্ত থাকে তাদের সংগে চলাফেরা ও উঠাবসা করার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে এ হাদীছে কঠিন সতর্কবাণী। সুতরাং এর থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মু'মিনের অবশ্যকর্তব্য। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

অর্থ : এবং সেই বিপর্যয়কে ভয় কর, যা বিশেষভাবে তোমাদের মধ্যে যারা জুলুম করে কেবল তাদেরকেই আক্রান্ত করবে না। জেনে রেখ, আল্লাহর আযাব সুকঠিন। - আনফালঃ ২৫
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)