আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৮- নবীগণের আঃ আলোচনা

হাদীস নং: ৩১১০
আন্তর্জাতিক নং: ৩৩৪৭
২০০৬. ইয়াজুজ ও মাজুজের ঘটনা। মহান আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয়ই ইয়াজুজ মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টিকারী (১৮ঃ ৯৪)

২০০৭.পরিচ্ছেদঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ (হে নবী) তারা আপনাকে যুল-কারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। আয়াতে سَبَبًا অর্থ চলাচলের পথ ও রাস্তা। তোমরা আমার কাছে লোহার টুকরা নিয়ে আস (১৮ঃ ৮৩-৯৬)। এখানে زُبَرَ শব্দটি বহুবচন। একবচনে زُبْرَةٌ অর্থ টুকরা। অবশেষে মাঝের ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে যখন লোহার স্তূপ দু’পর্বতের সমান হল (১৮ঃ ৯৬)। তখন তিনি লোকদেরকে বললেন, এখন তাতে ফুঁক দিতে থাক। এ আয়াতে الصَّدَفَيْنِ শব্দের অর্থ ইবন আব্বাস (রা)-এর বর্ণনা অনুযায়ী দু’টি পর্বতকে বুঝানো হয়েছে। আর وَالسُّدَّيْنِ -এর অর্থ দু’টি পাহাড়। خَرْجًا অর্থ পারিশ্রমিক। যুল-কারনাইন বলল, তোমরা হাঁফরে ফুক দিতে থাক। যখন তা আগুনের ন্যায় উত্তপ্ত হল, তখন তিনি বললেন, তোমরা গলিত তামা নিয়ে আস, আমি তা এর উপর ঢেলে দেই (১৮ঃ ৯৬)। قِطْرًا অর্থ সীসা। আবার লৌহ গলিত পদার্থকেও বলা হয়, এবং তামাকেও বলা হয়। আর ইবন আব্বাস (রা)-এর অর্থ তামা গলিত পদার্থ বলেছেন। (আল্লাহর বাণী)ঃ এরপর তারা (ইয়াজুজ ও মাজুজ) এ প্রাচীর অতিক্রম করতে পারল না (১৮ঃ ৯৭)। অর্থাৎ তারা এর উপরে চড়তে সক্ষম হল না। اسْتَطَاعَ শব্দটি طَعْتُ لَهُ থেকে باب استفعال আনা হয়েছে। একে أَسط ও يَسْطيعُ যবরসহ পড়া হয়ে থাকে। আর কেহ কেহ একে استطاع يستطيع রূপে পড়েন। (আল্লাহর বাণী) তারা তা ছিদ্রও করতে পারল না। তিনি বললেন, এটা আমার রবের অনুগ্রহ। যখন আমার রবের প্রতিশ্রুতি পুরা হবে তখন তিনি এটাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিবেন (১৮ঃ ৯৭-৯৮)। دكا অর্থ মাটির সাথে মিশিয়ে দিবেন। ناقة دكاء বলে যে উটের কুঁজ নেই। دكداك من الأرض যমীনের সেই সমতল উপরিভাগকে বলা হয় যা শুকিয়ে যায় এবং উঁচু নিচু না থাকে। (আল্লাহর বাণী) আর আমার রবের প্রতিশ্রুতি সত্য, সে দিন আমি তাদেরকে ছেড়ে দিব, এ অবস্থায় যে, একদল অপর দলের উপর তরঙ্গের ন্যায় পতিত হবে (১৮ঃ ৯৯)। (আল্লাহর বাণী) এমন কি যখন ইয়াজুজ ও মাজুজকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং তারা প্রতি উচ্চ ভূমি থেকে ছুটে আসবে (২১ঃ ৯৬)। কাতাদা (র) বলেনঃ حدب অর্থ টিলা। এক সাহাবী নবী (ﷺ)-কে বললেন, আমি প্রাচীরটিকে কারুকার্য খচিত চাদরের মত দেখেছি। নবী (ﷺ) বললেন, তুমি তা ঠিকই দেখেছ।
৩১১০। মুসলিম ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীরে আল্লাহ এ পরিমাণ ছিদ্র করে দিয়েছেন। এই বলে, তিনি তাঁর হাতে নব্বই সংখ্যার আকৃতি ধারণ করে দেখালেন। (অর্থাৎ তিনি নিজ শাহাদাত আঙ্গুলীর মাথা বৃদ্ধাংগুলের গোড়ায় লাগিয়ে ছিদ্রের পরিমাণ দেখালেন।
بَابُ قِصَّةِ يَأْجُوجَ، وَمَأْجُوجَوَ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: قَالُوا {يَا ذَا القَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ، وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الأَرْضِ} [الكهف: 94]
قَوْلُ اللَّهِ تَعَالَى {وَيَسْأَلُونَكَ عَنْ ذِي القَرْنَيْنِ قُلْ سَأَتْلُو عَلَيْكُمْ مِنْهُ ذِكْرًا. إِنَّا مَكَّنَّا لَهُ [ص:138] فِي الأَرْضِ وَآتَيْنَاهُ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ سَبَبًا} [الكهف: 84] . (فَاتَّبَعَ سَبَبًا) - إِلَى قَوْلِهِ - (ائْتُونِي زُبَرَ الحَدِيدِ) : «وَاحِدُهَا زُبْرَةٌ وَهِيَ القِطَعُ» {حَتَّى إِذَا سَاوَى بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ} [الكهف: 96] يُقَالُ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ: الجَبَلَيْنِ، وَالسُّدَّيْنِ الجَبَلَيْنِ {خَرْجًا} [الكهف: 94] : «أَجْرًا» ، {قَالَ انْفُخُوا حَتَّى إِذَا جَعَلَهُ نَارًا قَالَ آتُونِي أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا} [الكهف: 96] : " أَصْبُبْ عَلَيْهِ رَصَاصًا، وَيُقَالُ الحَدِيدُ، وَيُقَالُ: الصُّفْرُ " وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: «النُّحَاسُ» {فَمَا اسْطَاعُوا أَنْ يَظْهَرُوهُ} [الكهف: 97] " يَعْلُوهُ، اسْتَطَاعَ اسْتَفْعَلَ، مِنْ أَطَعْتُ لَهُ، فَلِذَلِكَ فُتِحَ أَسْطَاعَ يَسْطِيعُ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: اسْتَطَاعَ يَسْتَطِيعُ "، وَمَا اسْتَطَاعُوا لَهُ نَقْبًا. (قَالَ هَذَا رَحْمَةٌ مِنْ رَبِّي فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ رَبِّي جَعَلَهُ دَكًّا) : أَلْزَقَهُ بِالأَرْضِ، وَنَاقَةٌ دَكَّاءُ لاَ سَنَامَ لَهَا، وَالدَّكْدَاكُ مِنَ الأَرْضِ مِثْلُهُ، حَتَّى صَلُبَ وَتَلَبَّدَ، {وَكَانَ وَعْدُ رَبِّي حَقًّا. وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ يَوْمَئِذٍ يَمُوجُ فِي بَعْضٍ} [الكهف: 98] {حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ} [الأنبياء: 96] قَالَ قَتَادَةُ: " حَدَبٌ: أَكَمَةٌ " قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رَأَيْتُ السَّدَّ مِثْلَ البُرْدِ المُحَبَّرِ، قَالَ: «رَأَيْتَهُ»
3347 - حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا ابْنُ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «فَتَحَ اللَّهُ مِنْ رَدْمِ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مِثْلَ هَذَا وَعَقَدَ بِيَدِهِ تِسْعِينَ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে ইয়াজূজ মাজূজের আবির্ভাব ও তাদের প্রাচীরের ক্রমক্ষয় জানানো হয়েছে যে, এক সময় তারা প্রাচীর ভেঙে বের হয়ে পড়বে এবং সভ্য এলাকাসমূহে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে। এটি একটি ভবিষ্যদ্বাণী । ইতোমধ্যে এটি ঘটে গেছে না ভবিষ্যতে ঘটবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

ইয়াজূজ-মাজূজ ও যুলকারনায়নের প্রাচীর

ইয়াজূজ ও মা'জূজ বলতে তাতার, মঙ্গল, হুন ও শেথীন নামে পরিচিত উপজাতিসমূহকে বোঝায়। তারা হযরত নূহ আলাইহিস সালামের পুত্র ইয়াফিসের বংশধর। তারা রাশিয়া, উত্তর চীন ও এর মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকাসমূহে বাস করত। ইউরোপে তারা গগ ও মেগগ নামে পরিচিত। তারা একটি লড়াকু ও দুর্ধর্ষ জাতি ছিল। পার্বত্য অঞ্চল থেকে বের হয়ে তারা সভ্য দেশসমূহে দস্যুবৃত্তি ও লুটতরাজ করে বেড়াত। তাদের হামলা থেকে তিব্বত ও চীনের অধিবাসীরাও রেহাই পেত না। তাদের সে জুলুম-অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি প্রাচীর নির্মিত হয়। একটি প্রাচীর নির্মাণ করেন বাদশা যুলকারনায়ন। অনেক ঐতিহাসিকের মতে যুলকারনায়ন হচ্ছেন পারস্য সম্রাট খুরস (সাইরাস), যিনি খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দির এক দিগ্বিজয়ী বীর।
কুরআন মাজীদে যুলকারনায়নের বিভিন্ন সফরের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সর্বশেষ সফর সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছেঃ- حَتَّى إِذَا بَلَغَ بَيْنَ السَّدَّيْنِ وَجَدَ مِنْ دُونِهِمَا قَوْمًا لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ قَوْلًا قَالُوا يَاذَا الْقَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلَى أَنْ تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّا “চলতে চলতে যখন দু'টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছল, তখন সে পাহাড়ের কাছে এমন এক জাতির সাক্ষাৎ পেল, যারা তার কোনও কথা যেন বুঝতে পারছিল না। তারা বলল, হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মা'জূজ এ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়। আমরা কি আপনাকে কিছু কর দেব, যার বিনিময়ে আপনি আমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন?
তিনি তাদের সে অনুরোধ রক্ষা করেন এবং লোহা ও গলিত তামা দ্বারা একটি মজবুত প্রাচীর তৈরি করে দেন। সে সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদঃ- قَالَ مَا مَكَّنِّي فِيهِ رَبِّي خَيْرٌ فَأَعِينُونِي بِقُوَّةٍ أَجْعَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رَدْمًا آتُونِي زُبَرَ الْحَدِيدِ حَتَّى إِذَا سَاوَى بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ قَالَ انْفُخُوا حَتَّى إِذَا جَعَلَهُ نَارًا قَالَ آتُونِي أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا 'যুলকারনাইন বলল, আল্লাহ আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন সেটাই (আমার জন্য) শ্রেয়। সুতরাং তোমরা (তোমাদের হাত-পায়ের) শক্তি দ্বারা আমাকে সহযোগিতা কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব। তোমরা আমাকে লোহার পিণ্ড এনে দাও। অবশেষে সে যখন (মাঝখানের ফাকা পূর্ণ করে) উভয় পাহাড়ের চূড়া পরস্পর বরাবর করে মিলিয়ে দিল তখন বলল, এবার আগুনে হাওয়া দাও। যখন সেটিকে (প্রাচীর) জ্বলন্ত কয়লায় পরিণত করল তখন বলল, তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো। আমি তা এর ওপর ঢেলে দেব।
হযরত যুলকারনায়ন রহ. যে প্রাচীরটি নির্মাণ করেন, সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন সেটি আসলে কোন্‌টি। মধ্য এশিয়ায় প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ গবেষণা করে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে প্রাচীর যেটিই হোক না কেন, তার নির্মিত প্রাচীর দ্বারা তখন সভ্য এলাকার মানুষ ইয়াজূজ-মাজূজের লুটতরাজ থেকে নিস্তার পেয়েছিল। পরবর্তীকালে সেটি ধ্বংস হয়ে গেছে নাকি এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালে কোথাও বিদ্যমান আছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আল্লাহ তা'আলার কুদরতের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়।

যুলকারনায়নের প্রাচীর ছিদ্র হওয়ার অর্থ

আলোচ্য হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ইয়াজুজ মা'জুজের প্রাচীর ছিদ্র হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তা আক্ষরিক অর্থেও হতে পারে এবং রূপকার্থেও হতে পারে। আক্ষরিক অর্থে হলে তা দ্বারা ইয়াজূজ-মাজূজের কিয়ামতপূর্ববর্তী আবির্ভাবের কথাও বোঝানো হতে পারে অথবা তার আরও আগের কোনও বিপর্যয়ের দিকেও ইঙ্গিত করা হতে পারে। চেঙ্গিসখান, হালাকুখান, তৈমুরলঙ্গ প্রভৃতি মোঙ্গল নরপতিগণ বিভিন্ন সময় মুসলিম এলাকায় দুর্ধর্ষ হামলা চালিয়েছে। এ হাদীছে তাদের সে হামলাগুলোর কথা বোঝানো অসম্ভব নয়। আবার এমনও হতে পারে, কিয়ামতের আগে তারা যে বিভীষিকা চালাবে এবং যা কিয়ামতপূর্ববর্তী একটি বড় আলামত, সেদিকে ইশারা হয়েছে । কুরআন মাজীদে সে সম্পর্কে ইরশাদঃ- حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ ‘পরিশেষে যখন ইয়াজুজ ও মা'জুজকে খুলে দেওয়া হবে এবং তাদেরকে প্রতিটি উঁচু ভূমি থেকে পিছলে নামতে দেখা যাবে।
এ আয়াতে সরাসরি কোনও প্রাচীরের কথা উল্লেখ নেই। যদি তখন বাস্তবিক কোনও প্রাচীর থাকেও, তবে তা তাদের সে আবির্ভাব প্রতিহত করতে পারবে না। তাদের অসংখ্য লোক সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ঢলের বেগে নেমে আসতে থাকবে। সে হিসেবে প্রাচীর ছিদ্র হওয়া দ্বারা রূপক অর্থে তাদের সৃষ্ট ফিতনা বোঝানো হতে পারে। অর্থাৎ তারা একের পর এক ফিতনা বিস্তার করতে থাকবে, যার প্রথম শিকার হবে আরবগণ। তারপর তাদের সাথে অন্যান্য মুসলিম এলাকাও আক্রান্ত হবে। পরিশেষে কিয়ামতের আগে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের আবির্ভাবের পর তা এমনই ভয়াবহ আকার ধারণ করবে যে, কোনও শক্তি তা প্রতিহত করতে পারবে না। ফলে তাদের থেকে খাঁটি ঈমানদারদেরকে হেফাজত করার জন্য হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে তূর পাহাড়ে আশ্রয় নিতে হবে। যেমন এক হাদীছে আছেঃ-
“এ অবস্থায় আল্লাহ তা'আলা হযরত ঈসা ইব্ন মারয়ামকে প্রেরণ করবেন। তিনি দামেশকের পূর্বদিকের সাদা মিনারের নিকটে অবতরণ করবেন, জাফরানী রঙের দু'টি চাদর পরিহিত অবস্থায়, ফিরিশতাদের বাহুর ওপর দুই হাতে ভর করে। তিনি যখন মাথা নোয়াবেন, তখন পানি টপকাতে শুরু করবে। আবার যখন মাথা সোজা করবেন, তখন তা থেকে মুক্তার দানার মত পানি গড়িয়ে পড়বে। তার নিঃশ্বাস যে পর্যন্ত পৌছাবে সে পর্যন্ত সকল কাফের মারা যাবে। আর তার নিঃশ্বাস পৌছাবে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করবেন। তাকে পেয়ে যাবেন বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী 'লূদ্দ' নামক জনপদের দরজায়। তিনি সেখানেই তাকে হত্যা করে ফেলবেন। তারপর ঈসা আলাইহিস সালাম ওই সকল লোকের কাছে আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা দাজ্জাল থেকে রক্ষা করবেন। তিনি তাদের চেহারাসমূহ মুছে দেবেন এবং জান্নাতে তাদের জন্য যে মর্যাদা স্থির করা আছে সে সম্পর্কে তাদের অবহিত করবেন। ঠিক এ সময়ই আল্লাহ তা'আলা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর ওহী নাযিল করবেন যে, এখন আমি আমার এমন একদল বান্দার আবির্ভাব ঘটাচ্ছি, যাদের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই। সুতরাং তুমি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে তূর পাহাড়ের দিকে যাও। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা ইয়াজুজ ও মা'জূজের আবির্ভাব ঘটাবেন। তারা প্রত্যেক উঁচু স্থান থেকে দ্রুতবেগে নেমে আসবে -মুসলিম। "

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও এক কালে ইয়াজূজ-মাজূজ জাতিকে ঠেকানোর জন্য যে প্রাচীর নির্মিত হয়েছিল তা সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।

খ. কিয়ামতের আগে ইয়াজূজ-মাজূজের পক্ষ থেকে এ জাতির ওপর এক মহাবিপর্যয় নেমে আসবে। এটা কিয়ামতের বড় আলামতসমূহের একটি।
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)