আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৭. নবীজী ﷺ থেকে বর্ণিত যাকাত অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৭৬
আন্তর্জাতিক নং: ৬৭৬
সাদ্‌কাতুল ফিতর।
৬৭৩. ইসহাক ইবনে মুসা আনসারী (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আযাদ-গোলাম, নর-নারী প্রত্যেক মুসলিমের উপর রমযানের সাদ্‌কাতুল ফিতর হিসাবে এক সা খেজুর বা এক সা যব ফরয বলে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। - ইবনে মাজাহ ১৮২৬, বুখারি, মুসলিম

ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, ইবনে উমর (রাযিঃ) বর্ণিত এই হাদীসটি হাসান সহীহ্। মালিক (রাহঃ) নাফি, ইবনে উমর (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে আইয়্যুব-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে من المسلمين শব্দটি অতিরিক্ত রয়েছে। আরো অনেকে নাফি (রাহঃ) থেকে এটির রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু তারা من المسلمين শব্দের উল্লেখ করেননি। এই বিষয়ে আলিমগণের মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, যদি কারো অমুসলিম দাস-দাসী থাকে তবে তাদের পক্ষ থেকে তাকে সাদ্‌কাতুল ফিতর আদায় করতে হবে না। এ হল ইমাম মালিক, শাফিঈ ও আহমাদ (রাহঃ) এর অভিমত। আবার কেউ কেউ বলেন, তারা অমুসলিম হলেও তাদের পক্ষ থেকে (মালিককে) ফিতরা আদায় করতে হবে। এ হল ইমাম সাওরী, ইবনে মুবারক ও ইসহাক (রাহঃ)-এর অভিমত।
باب مَا جَاءَ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مُوسَى الأَنْصَارِيُّ، حَدَّثَنَا مَعْنٌ، حَدَّثَنَا مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَرَضَ زَكَاةَ الْفِطْرِ مِنْ رَمَضَانَ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى كُلِّ حُرٍّ أَوْ عَبْدٍ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى مِنَ الْمُسْلِمِينَ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ ابْنِ عُمَرَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَرَوَى مَالِكٌ عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَ حَدِيثِ أَيُّوبَ وَزَادَ فِيهِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ . وَرَوَاهُ غَيْرُ وَاحِدٍ عَنْ نَافِعٍ وَلَمْ يَذْكُرْ فِيهِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ . وَاخْتَلَفَ أَهْلُ الْعِلْمِ فِي هَذَا فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِذَا كَانَ لِلرَّجُلِ عَبِيدٌ غَيْرُ مُسْلِمِينَ لَمْ يُؤَدِّ عَنْهُمْ صَدَقَةَ الْفِطْرِ . وَهُوَ قَوْلُ مَالِكٍ وَالشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ . وَقَالَ بَعْضُهُمْ يُؤَدِّي عَنْهُمْ وَإِنْ كَانُوا غَيْرَ مُسْلِمِينَ . وَهُوَ قَوْلُ الثَّوْرِيِّ وَابْنِ الْمُبَارَكِ وَإِسْحَاقَ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সদাকাতুল ফিতর : গুরুত্ব ও ফযীলত

আল্লাহ তাআলার হুকুমে বান্দা পুরো মাস রোযা রেখেছে। আল্লাহ যেভাবে হুকুম করেছেন সেভাবে রাখতেই চেষ্টা করেছে। কিন্তু মহান আল্লাহ্র মহান হুকুম পালন করা অসহায় বান্দার জন্য কি এত সহজ! আল্লাহ তাআলা বান্দার দুর্বলতা ভালোভাবে জানেন। আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও জানেন তাঁর উম্মতের দুর্বলতার কথা। তাই রোযা রাখতে গিয়ে যে টুকটাক ভুল হয়ে যায় তার কাফফারা স্বরূপ সদাকাতুল ফিত্রের বিধান দিয়েছেন।

পাশাপাশি রোযার মাধ্যমে রোযাদার কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছে উপবাসে থাকা অন্ন-বস্ত্রহীন ভাইগুলোর কষ্ট। আজ রমযান শেষে ঈদের দিন সেই ভাইদের মুখেও যেন ফুটে ওঠে আনন্দের রেখা, তাদের ঘরেও উত্তম খাবারের ব্যবস্থা হয় সেজন্য বিত্তবানদের উপর ওয়াজিব করা হয়েছে সদাকাতুল ফিত্র। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেনÑ

فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصّائِمِ مِنَ اللّغْوِ وَالرّفَثِ، وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ، مَنْ أَدّاهَا قَبْلَ الصّلَاةِ، فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ، وَمَنْ أَدّاهَا بَعْدَ الصّلَاةِ، فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصّدَقَاتِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকাতুল ফিতরের বিধান দান করেছেন রোযাদারকে অর্থহীন ও অশ্লীল কথা-কাজ থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের খাবারের ব্যবস্থা হিসাবে। যে ব্যক্তি তা (ঈদের) নামাযের আগে আদায় করবে সেটা গ্রহণযোগ্য সদকা হিসাবে পরিগণিত হবে। আর যে নামাযের পর আদায় করবে সেটা সাধারণ সদকা হিসাবে বিবেচিত হবে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৬০৯

প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যার মালিকানায় মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার ওপর সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। প্রত্যেকে তার নিজের পক্ষ থেকে এবং নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করবে।

অতএব নিজের রোযাকে বিশুদ্ধ করার জন্য এবং ঈদের দিন অসহায় ভাইদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য ঈদের নামাযে যাওয়ার আগেই সদাকাতুল ফিত্র আদায় করব।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ৬৭৬ | মুসলিম বাংলা