আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
৭. নবীজী ﷺ থেকে বর্ণিত যাকাত অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৩৫
আন্তর্জাতিক নং: ৬৩৫
অলংকারের যাকাত।
৬৩৫. হান্নাদ .... আব্দুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের মাঝে খুতবা দিলেন এবং বললেনঃ হে নারী সমাজ! তোমরা সাদ্কা দাও, তোমাদের অলংকার থেকে হলেও। কারণ কিয়ামতের দিন জাহান্নামবাসীদের মধ্যে তোমরাই হবে অধিক।
باب مَا جَاءَ فِي زَكَاةِ الْحُلِيِّ
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ بْنِ الْمُصْطَلِقِ، عَنِ ابْنِ أَخِي، زَيْنَبَ امْرَأَةِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ زَيْنَبَ، امْرَأَةِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَتْ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّ فَإِنَّكُنَّ أَكْثَرُ أَهْلِ جَهَنَّمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলা সাহাবীদেরকে বিশেষভাবে দান-সদাকা করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। হাদীছে আছে-
تصدقن يا معشر النساء ولو من حليكن
(হে নারী সম্প্রদায়! তোমরা সদাকা কর তোমাদের অলংকারাদি থেকে হলেও)। অর্থাৎ সদাকা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। এর দ্বারা গুনাহ মাফ হয় এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন تصدقوا، فإن الصدقة فكاككم من النار ‘তোমরা সদাকা কর। সদাকা তোমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিনিময়।৯৩ কাজেই সকলের জন্যই এ আমল জরুরি।
দান-সদাকা সাধারণত টাকাপয়সা ও খাদ্যসামগ্রী করা হয়ে থাকে। কিন্তু সকলের হাতে সবসময় তা থাকে না, বিশেষত মহিলাদের কাছে। তবে কিছু না কিছু অলংকার তাদের থাকেই। স্বভাবগতভাবে অলংকারের প্রতি মহিলাদের আকর্ষণও থাকে, যে কারণে গরীব হলেও তারা কিছু না কিছু অলংকার গড়িয়ে নেয়। বলাবাহুল্য এটা দু'দিনের সম্পদ, দু'দিনের শোভা। বড়জোর মৃত্যু পর্যন্ত কাছে থাকে। জান্নাতের অলংকারই আসল অলংকার। তা কোনওদিন হাতছাড়া হবে না। জান্নাত পেতে হলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই এবং চাই পাপের মার্জনা। এ উদ্দেশ্যে দুনিয়ার সবটা সম্পদও যদি দান করে দেওয়া যায়, তাও তুচ্ছই বটে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَوْ أَنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لَافْتَدَوْا بِهِ مِنْ سُوءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“যারা জুলুমে লিপ্ত হয়েছে, যদি দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ তাদের থাকত এবং তার সমপরিমাণ আরও, তবে কিয়ামতের দিন নিকৃষ্টতম শাস্তি হতে বাঁচার জন্য তা সবই মুক্তিপণস্বরূপ দিয়ে দিত।৯৪
এ কারণেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে অন্ততপক্ষে নিজেদের অলংকার থেকে হলেও সদাকা করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন।
হাদীছে আছে-হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'ঊদ রাযি.-এর স্ত্রী যায়নাব রাযি. সে নসীহতে খুব প্রভাবিত হলেন এবং দান-সদাকা করবেন বলে মনস্থ করলেন। ওদিকে তাঁর স্বামী হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. ছিলেন একজন গরীব সাহাবী। আয়-রোযগার কম ছিল। হযরত যায়নাব রাযি. ভাবলেন তিনি যা দান সদাকা করবেন তা স্বামীকেই দিয়ে দেবেন কি না। আবার স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে দান-সদাকা করলে তা সঠিক হবে কি না সে প্রশ্নও ছিল। তাই হযরত যায়নাব রাযি. এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন। হাদীসে আছে হযরত যায়নাব রাযি. হযরত বিলাল রাযি.কে অনুরোধ করলেন যেন তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন যে, তারা যদি তাদের স্বামীদেরকে এবং তাদের প্রতিপালনের অধীনে যে ইয়াতীমগণ আছে তাদেরকে দান-সদাকা করে, তবে তা সঠিক হবে কি না। হযরত বিলাল রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলেন। হাদীসে আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জিজ্ঞাসার জবাবে বললেন, এটা করলে তারা দ্বিগুণ ছাওয়াব পাবে। এক তো সদাকা করার ছাওয়াব, দ্বিতীয়ত আত্মীয়ের সহযোগিতা করার ছাওয়াব।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দান-সদাকা করার উৎসাহ লাভ হয়।
খ. এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় স্ত্রী তার স্বামীকে দান-সদাকা করতে পারে এবং তাতে দ্বিগুণ ছাওয়াব পাওয়া যায়।
গ. হাদীছটি দ্বারা আরও জানা যায় যে, মহিলাদের জন্য পৃথকভাবে ওয়াজ-নসীহতের ব্যবস্থা থাকা চাই।
ঘ. সরকারি ব্যবস্থাপনায় পুরুষ-নারী সকলের জন্যই আদেশ-উপদেশদানের কার্যক্রম চালু থাকা উচিত।
ঙ. দীনী কোনও বিষয়ে মনে খটকা জাগলে উলামায়ে কেরামের কাছে জিজ্ঞেস করে তার সমাধান নেওয়া চাই।
৯৩, বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৮৪; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৮০৬০
৯৪. সূরা যুমার (৩৯), আয়াত ৪৭
تصدقن يا معشر النساء ولو من حليكن
(হে নারী সম্প্রদায়! তোমরা সদাকা কর তোমাদের অলংকারাদি থেকে হলেও)। অর্থাৎ সদাকা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। এর দ্বারা গুনাহ মাফ হয় এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন تصدقوا، فإن الصدقة فكاككم من النار ‘তোমরা সদাকা কর। সদাকা তোমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিনিময়।৯৩ কাজেই সকলের জন্যই এ আমল জরুরি।
দান-সদাকা সাধারণত টাকাপয়সা ও খাদ্যসামগ্রী করা হয়ে থাকে। কিন্তু সকলের হাতে সবসময় তা থাকে না, বিশেষত মহিলাদের কাছে। তবে কিছু না কিছু অলংকার তাদের থাকেই। স্বভাবগতভাবে অলংকারের প্রতি মহিলাদের আকর্ষণও থাকে, যে কারণে গরীব হলেও তারা কিছু না কিছু অলংকার গড়িয়ে নেয়। বলাবাহুল্য এটা দু'দিনের সম্পদ, দু'দিনের শোভা। বড়জোর মৃত্যু পর্যন্ত কাছে থাকে। জান্নাতের অলংকারই আসল অলংকার। তা কোনওদিন হাতছাড়া হবে না। জান্নাত পেতে হলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই এবং চাই পাপের মার্জনা। এ উদ্দেশ্যে দুনিয়ার সবটা সম্পদও যদি দান করে দেওয়া যায়, তাও তুচ্ছই বটে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَوْ أَنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لَافْتَدَوْا بِهِ مِنْ سُوءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“যারা জুলুমে লিপ্ত হয়েছে, যদি দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ তাদের থাকত এবং তার সমপরিমাণ আরও, তবে কিয়ামতের দিন নিকৃষ্টতম শাস্তি হতে বাঁচার জন্য তা সবই মুক্তিপণস্বরূপ দিয়ে দিত।৯৪
এ কারণেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে অন্ততপক্ষে নিজেদের অলংকার থেকে হলেও সদাকা করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন।
হাদীছে আছে-হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'ঊদ রাযি.-এর স্ত্রী যায়নাব রাযি. সে নসীহতে খুব প্রভাবিত হলেন এবং দান-সদাকা করবেন বলে মনস্থ করলেন। ওদিকে তাঁর স্বামী হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. ছিলেন একজন গরীব সাহাবী। আয়-রোযগার কম ছিল। হযরত যায়নাব রাযি. ভাবলেন তিনি যা দান সদাকা করবেন তা স্বামীকেই দিয়ে দেবেন কি না। আবার স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে দান-সদাকা করলে তা সঠিক হবে কি না সে প্রশ্নও ছিল। তাই হযরত যায়নাব রাযি. এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন। হাদীসে আছে হযরত যায়নাব রাযি. হযরত বিলাল রাযি.কে অনুরোধ করলেন যেন তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন যে, তারা যদি তাদের স্বামীদেরকে এবং তাদের প্রতিপালনের অধীনে যে ইয়াতীমগণ আছে তাদেরকে দান-সদাকা করে, তবে তা সঠিক হবে কি না। হযরত বিলাল রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলেন। হাদীসে আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জিজ্ঞাসার জবাবে বললেন, এটা করলে তারা দ্বিগুণ ছাওয়াব পাবে। এক তো সদাকা করার ছাওয়াব, দ্বিতীয়ত আত্মীয়ের সহযোগিতা করার ছাওয়াব।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দান-সদাকা করার উৎসাহ লাভ হয়।
খ. এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় স্ত্রী তার স্বামীকে দান-সদাকা করতে পারে এবং তাতে দ্বিগুণ ছাওয়াব পাওয়া যায়।
গ. হাদীছটি দ্বারা আরও জানা যায় যে, মহিলাদের জন্য পৃথকভাবে ওয়াজ-নসীহতের ব্যবস্থা থাকা চাই।
ঘ. সরকারি ব্যবস্থাপনায় পুরুষ-নারী সকলের জন্যই আদেশ-উপদেশদানের কার্যক্রম চালু থাকা উচিত।
ঙ. দীনী কোনও বিষয়ে মনে খটকা জাগলে উলামায়ে কেরামের কাছে জিজ্ঞেস করে তার সমাধান নেওয়া চাই।
৯৩, বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৮৪; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৮০৬০
৯৪. সূরা যুমার (৩৯), আয়াত ৪৭
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: