আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
৩. বিতর নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৬৪
আন্তর্জাতিক নং: ৪৬৪
বিতরে দুআ কুনূত পাঠ করা।
৪৬৪. কুতায়বা (রাহঃ) ..... হাসান ইবনে আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ বিতরে পাঠের জন্য রাসূল (ﷺ) আমাকে কিছু কালেমা শিখিয়েছেনঃ
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ
অর্থঃ ‘‘হে আল্লাহ! যাদের আপনি হিদায়াত করে তাদের সাথে আমাকেও হিদায়াত করুন, যাদের আপনি অকল্যাণ থেকে দূরে রেখেছেন তাদের সাথে আমাকেও অকল্যাণ থেকে দূরে রাখুন, যাদের আপনি আপনার অভিভাবকত্বে রেখেছেন তাদের সাথে আমাকেও আপনার অভিভাবকত্বে রাখুন। আপনি যা দিয়েছেন তাতে আপনি বরকত দিন। আপনি আমার তাকদিরে যা রেখেছেন এর অসুবিধা থেকে আমাকে রক্ষা করুন, আপনিই তো ফয়সালা দেন, আপনার বিপরীত তো ফয়সালা দিতে পারে না কেউ। আপনি যার বন্ধু তাকে তো লাঞ্ছিত করতে পারবে না কেউ। হে আমার রব! আপনি তো বরকতময় এবং সুমহান।’’
এই বিষয়ে আলী (রাযিঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান। আবুল হাওরা আস্-সা’দী (রাহঃ)-এর সূত্র ছাড়া আর কোনভাবে আমরা এই হাদীসটি সম্পর্কে জানি না। আবু হাওরা আস-সা’দী এর নাম হল রাবীআ ইবনে শায়বান। দুআ কুনুতের বিষয়ে রাসূল (ﷺ) থেকে এর চেয়ে উত্তম কিছু বর্ণিত আছে বলে আমাদের জানা নেই। বিতরে কুনূত পাঠ সম্পর্কে আলিমদের মতবিরোধ রয়েছে। ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) সারা বছরেই কুনুত পাঠের কথা বলেন। তিনি রুকূ-এর পূর্বে কুনুত পাঠের অভিমত পছন্দ করেছেন। কতক আলিমের অভিমতও এই। সুফঈয়ান সাওরী ইবনে মুবারক, ইসহাক ও কূফাবাসী আলিমগণও এই মত ব্যক্ত করেছেন। আলী ইবনে আবী তালিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি রমযান মাসের শেষ অর্ধাংশ ব্যতীত দুআ কুনূত পাঠ করতেন না, আর তিনি রুকূ-এর পর তা পাঠ করতেন। কতক আলিম এই মত গ্রহণ করেছেন। ইমাম শাফিঈ ও আহমদ (রাহঃ) এরও এই অভিমত।
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ
অর্থঃ ‘‘হে আল্লাহ! যাদের আপনি হিদায়াত করে তাদের সাথে আমাকেও হিদায়াত করুন, যাদের আপনি অকল্যাণ থেকে দূরে রেখেছেন তাদের সাথে আমাকেও অকল্যাণ থেকে দূরে রাখুন, যাদের আপনি আপনার অভিভাবকত্বে রেখেছেন তাদের সাথে আমাকেও আপনার অভিভাবকত্বে রাখুন। আপনি যা দিয়েছেন তাতে আপনি বরকত দিন। আপনি আমার তাকদিরে যা রেখেছেন এর অসুবিধা থেকে আমাকে রক্ষা করুন, আপনিই তো ফয়সালা দেন, আপনার বিপরীত তো ফয়সালা দিতে পারে না কেউ। আপনি যার বন্ধু তাকে তো লাঞ্ছিত করতে পারবে না কেউ। হে আমার রব! আপনি তো বরকতময় এবং সুমহান।’’
এই বিষয়ে আলী (রাযিঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান। আবুল হাওরা আস্-সা’দী (রাহঃ)-এর সূত্র ছাড়া আর কোনভাবে আমরা এই হাদীসটি সম্পর্কে জানি না। আবু হাওরা আস-সা’দী এর নাম হল রাবীআ ইবনে শায়বান। দুআ কুনুতের বিষয়ে রাসূল (ﷺ) থেকে এর চেয়ে উত্তম কিছু বর্ণিত আছে বলে আমাদের জানা নেই। বিতরে কুনূত পাঠ সম্পর্কে আলিমদের মতবিরোধ রয়েছে। ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) সারা বছরেই কুনুত পাঠের কথা বলেন। তিনি রুকূ-এর পূর্বে কুনুত পাঠের অভিমত পছন্দ করেছেন। কতক আলিমের অভিমতও এই। সুফঈয়ান সাওরী ইবনে মুবারক, ইসহাক ও কূফাবাসী আলিমগণও এই মত ব্যক্ত করেছেন। আলী ইবনে আবী তালিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি রমযান মাসের শেষ অর্ধাংশ ব্যতীত দুআ কুনূত পাঠ করতেন না, আর তিনি রুকূ-এর পর তা পাঠ করতেন। কতক আলিম এই মত গ্রহণ করেছেন। ইমাম শাফিঈ ও আহমদ (রাহঃ) এরও এই অভিমত।
باب مَا جَاءَ فِي الْقُنُوتِ فِي الْوِتْرِ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ بُرَيْدِ بْنِ أَبِي مَرْيَمَ، عَنْ أَبِي الْحَوْرَاءِ السَّعْدِيِّ، قَالَ قَالَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ رضى الله عَنْهُمَا عَلَّمَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَلِمَاتٍ أَقُولُهُنَّ فِي الْوِتْرِ " اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ " . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ مِنْ حَدِيثِ أَبِي الْحَوْرَاءِ السَّعْدِيِّ وَاسْمُهُ رَبِيعَةُ بْنُ شَيْبَانَ . وَلاَ نَعْرِفُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي الْقُنُوتِ فِي الْوِتْرِ شَيْئًا أَحْسَنَ مِنْ هَذَا . وَاخْتَلَفَ أَهْلُ الْعِلْمِ فِي الْقُنُوتِ فِي الْوِتْرِ فَرَأَى عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ الْقُنُوتَ فِي الْوِتْرِ فِي السَّنَةِ كُلِّهَا وَاخْتَارَ الْقُنُوتَ قَبْلَ الرُّكُوعِ . وَهُوَ قَوْلُ بَعْضِ أَهْلِ الْعِلْمِ وَبِهِ يَقُولُ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَابْنُ الْمُبَارَكِ وَإِسْحَاقُ وَأَهْلُ الْكُوفَةِ . وَقَدْ رُوِيَ عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ أَنَّهُ كَانَ لاَ يَقْنُتُ إِلاَّ فِي النِّصْفِ الآخِرِ مِنْ رَمَضَانَ وَكَانَ يَقْنُتُ بَعْدَ الرُّكُوعِ . وَقَدْ ذَهَبَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ إِلَى هَذَا وَبِهِ يَقُولُ الشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে ‘কুনূত’ (কুনূতের দুআ) পড়া জরুরি। এর বিভিন্ন দুআ রয়েছে।
আমরা বিতরে যে দুআ কুনূত পড়ি তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় আবদুর রহমান আসসুলামী রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন আমরা যেন কুনূতে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ি-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৯৬৫
শব্দের সামান্য তারতম্যসহ অন্যান্য বর্ণনায়ও এ দুআটি এসেছে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার এক বর্ণনায় وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ -এ দু’টি বাক্য বর্ধিত এসেছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩০৩৩৭) শরহু মাআনিল আসারের একটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় وَنَشْكُرُكَ শব্দটিও রয়েছে। (শরহু মাআনিল আসার ১/১৭৭)
এছাড়া হযরত আলী রা. যেভাবে পড়তেন তাতেও وَنَشْكُرُكَ শব্দটি পাওয়া যায়। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/১১৪
আর প্রশ্নোক্ত দুআটি উপরোক্ত বর্ণনাসমূহেরই সমন্বিত রূপ। এভাবে পড়ার দ্বারা উপরোক্ত সকল বর্ণনার উপর আমল হয়ে যায়।
অতএব এইসব বর্ণনার আলোকে দুআটি পূর্ণ পাঠ এভাবে হয়-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.
(আরো দেখুন : আলআওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/২১৮; আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ২/২১০;আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরা ১/১১০)
সুনানে বাইহাকীর এক বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুনূত শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর শব্দের সামান্য তারতম্যসহ উপরোক্ত দুআটিই উল্লেখিত হয়েছে। (আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ২/২১০, আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরা ১/১০১)
উল্লেখ্য, কুনূতের জন্য হাদীস শরীফে যেমন উপরোক্ত দুআটি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তেমনি আরেকটি দুআও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাসান ইবনে আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিতিরে পড়ার জন্য কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন, তাহল-
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ، فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ.
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪২৫
ইমাম নববী রাহ. বলেন, আমাদের অনেকেই বলেন, উভয় দুআ একত্রে পড়াটাই উত্তম। (শরহুল মুহাযযাব ৩/৪৭৫-৭৮) শামসুল আইম্মা সারাখসী রাহ. ইমাম কাসানী রাহ. প্রমূখ ফকীহগণও বিতিরের নামাযে উভয় দুআ একত্রে পড়াকে পছন্দ করতেন। (আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৬৫; বাদায়েউস সনায়ে ২/২৩২)
তবে কেউ যদি একটি দুআই পড়তে চায় তাহলে প্রথম দুআটি পড়াই উত্তম হবে। কেননা বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. নিজে বিতিরের কুনূতে এ দুআ পড়াকে পছন্দ করতেন এবং অন্যকে পড়তে আদেশ করতেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৯৯৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৯৬৪
তাবেয়ী হাসান বাসরী রাহ.ও কুনূতে এ দুআটিই পড়তেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৯৮২
একটি ভুল ধারণা : দুআয়ে কুনূত কি শুধু আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকাঃ
বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে ‘কুনূত’ (কুনূতের দুআ) পড়া জরুরি। এর বিভিন্ন দুআ রয়েছে : একটি হচ্ছে ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা ওয়া ... ’ আরেকটি হল, ‘আল্লাহুম্মাহদিনী ফীমান হাদাইত্ ... ’ এ ধরনের আরো দুআ রয়েছে। যেকোনো দুআ পড়া যায়। বরং কুরআন-হাদীসের যেকোনো দুআ পড়ার দ্বারাও কুনূতের ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। কেউ কেউ প্রথম দুআটিকেই একমাত্র দুআ মনে করেন। তাদের ধারণা এটা ছাড়া ‘কুনূত’ আদায় হয় না। এই ধারণা ঠিক নয়। যেকোনো মা’ছূর ও মাসনূন দুআর দ্বারা ওয়াজিব কুনূত আদায় হয়।
হাদীস শরীফে এ প্রসঙ্গে একাধিক দু‘আ পাওয়া যায়। তন্মধ্যে
ক.“আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তা‘ঈ নুকা ...”
১. ইমাম ইবনুল মুনযির রহ. বলেন-
وجاء في الحديث عن عمر بن الخطاب أنه كَانَ يقول في القنوت في الوتر: اللهم اغفر للمؤمنين، والمؤمنات، والمسلمين والمسلمات، وألف بين قلوبهم، وأصلح ذات بينهم، وانصرهم على عدوك وعدوهم، اللهم العن كفرة أهل الكتاب الذين يكذبون رسلك، ويقاتلون أولياءك، اللهم خالف بين قلوبهم، وزلزل أقدامهم، وأنزل بهم بأسك الذي لا يرد عن القوم المجرمين،
بسم الله الرحمن الرحيم، اللهم إنا نستعينك، ونستغفرك، ونثني عليك ولا نكفرك، ونخلع ونترك من يفجرك ويكفرك، بسم الله الرحمن الرحيم، اللهم إياك نعبد، ولك نصلي ونسجد، وإليك نسعى ونحفد، نرجو رحمتك، ونخاف عذابك إن عذابك بالكفار يلحق
وكان عبيد بن عمير، وهو راوي هذا الحديث عن عمر بن الخطاب يقول : بلغني أنهما سورتان من القرآن في مصحف ابن مسعود، وأنه يوتر بهما كل ليلة حدثناه إسحاق ، عن عبد الرزاق ، عن ابن جريج ، قال : أخبرنا عطاء، أنه سمع عبيد بن عمير، يأثر عن عمر بن الخطاب، أنه قال ذلك. (قلت: رجاله ثقات)
ثم قال: وممن روينا عنه، أنه قنت بالسورتين علي بن أبي طالب، وعبد الله بن مسعود، وأبي بن كعب، وقد رويت في القنوت أخبارا، وقد ذكرتها في كتاب قيام الليل.
অর্থ: হাদীসে এসেছে হযরত উমর রা. বিতরের কুনূতে বলতেন (اللهم اغفر للمؤمنين، والمؤمنات،) “আল্লাহুম্মাগফির লিল মুমিনীনা ওয়াল মুমিনাত...”, (اللهم إنا نستعينك، ونستغفرك،) “..আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতা‘ঈ নুকা ...”।
হযরত উমর রা. থেকে এ হাদীসের বর্ণনাকারী উবাইদ ইবনে উমাইর বলতেন- (اللهم إنا نستعينك، ونستغفرك،) এ দুটি দুআ ইবনে মাসউদ রা. এর মুছহাফে কুরআনের সূরা রূপে ছিল (যা পরে রহিত হয়ে গেছে)। তিনি দুআ দুটি দিয়ে প্রতি রাতে বিতর পড়তেন। [আল-আউসাত লি ইবনিল মুনযির ৫/২১৪)
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে নাছর আল-মারওয়াজী বর্ণনাটি উল্লেখ করার পর বলেন- অন্য বর্ণনায় বর্ধিতাংশে রয়েছে, ‘বিতরে এ দুআ রুকুর পূর্বে পড়তেন’ ...। [মুখতাছারু কিয়ামিল্লাইল পৃ. ৩২১-৩২২] ( )
২. আবু-আব্দুর রহমান (আসসুলামী) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন আমরা যেন কুনূতে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ি-
علمنا ابن مسعود رضي الله عنه أن نقرأ في القنوت : اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ. ( )
শব্দের সামান্য ব্যতিক্রম সহ অন্যান্য বর্ণনায়ও এ দুআ এসেছ। যেমন: এক বর্ণনায়-ونؤمن بك ونتوكل عليك -এ বাক্য দুটি বর্ধিত এসেছে। [ইবনে আবী শাইবা ১৫/৩৪৪] তহাবীর এক বর্ণনায় ونشكرك -শব্দটিও রয়েছে। [তহাবী ১/১৭৭] এর সনদ সহীহ]
এই বর্ণনাগুলির আলোকে পূর্ণ দু‘আটি এভাবে পড়া যায়-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، ونؤمن بك ونتوكل عليك، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، ونشكرك وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.
হযরত ইবনে মাসউদ রা. প্রতিদিন বিতর নামাযে এ দুআই পড়তেন। [মুছান্নাফে আব্দুল রাযযাক হা.৪৯৬৯ আল-আউসাত ৫/২১৪ মুখতাছারু কিয়ামিল্লাইল পৃ.২৯৭]
৩. সুনানে বায়হাকীর এক বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত জিবীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুনূত শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর শব্দের সামান্য তারতম্যসহ উপরোক্ত দুআটি উল্লেখিত হয়েছে। ( ) [বাইহাকী ২/২১০ আল-মুদাওয়ানা ১/১০১] বর্ণনাটি মুরসাল এবং এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। [নাতাইযুল আফকার লি ইবনে হাজার ২/১১১]
৪. বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখাঈ নিজে বিতরের কুনূতে এ দুআ পড়াকে পছন্দ করতেন এবং অন্যকে পড়তে আদেশ করতেন। [আব্দুর রাযযাক ৩/১২১, ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১৮]
৫. আমর বলেন- তাবেয়ী হাসান বসরী র. বিতর ও ফজরের কুনূতে এ দুআটিই পড়তেন। তাঁকে একজন জিজ্ঞেস করল, এই দুআর অতিরিক্ত আর কিছু পড়া যাবে কি? তিনি উত্তরে বললেন-
لا أنهاكم ولكنى سمعت أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم لايزيدون على هذا شيئا، ويغضب إذا أرادوه على الزيادة. ( )
অর্থাৎ তোমাদেরকে আমি নিষেধ করব না; তবে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে এর অতিরিক্ত কিছু পড়তে দেখিনি। ...। [মুছান্নাফে আর্ব্দুরায্যাক ৩/১১৬]
তাই হানাফী ফকীহগণ ও ইমাম মালিক র. এই দুআকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। ইমাম ইবনে আব্দিল বার র. বলেন-
قال الكوفيون ومالك: وليس فى القنوت دعاء موقت، ولكنهم يستحبون ألا يقنت إلا بقولهم: اللهم إنا نستعينك...انتهى ( )
অর্থ: কুফার অধিবাসী আহলে ইলমগণ ও ইমাম মালেক বলেন- দুআ কুনূত সুনির্দিষ্ট নয়। তবে তাঁরা এই দুআটি পড়া উত্তম মনে করেন।
খ. আল্লাহুম্মাহদিনা ফীমান হাদাইতা ...
হযরত হাসান ইবনে আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিতে পড়ার জন্য কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন :
اللَّهُمَّ اهْدِنِى فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِى فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِى فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِى فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِى شَرَّ مَا قَضَيْتَ، إِنَّكَ تَقْضِى وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ. ( )
[সুনানে আবু দাউদ: ১/৫২৬; সুনানে নাসায়ী ১/২৫২ জামে তিরমিযী ১/১০৬ হা.৪৬৪ সুনানে ইবনে মাজা ১/১৮৫ মুসনাদে আহমদ হা.১৭১৮]
তাই অনেকেই উভয় দুআ একতে পড়তেন। সুফ্ইয়ান ছাউরী বলেন-
كانوا يستحبون أن يجعلوا ، في قنوت الوتر هاتين السورتين : اللهم إنا نستعينك ونستغفرك، ونثني عليك ولا نكفرك، ونخلع ونترك من يفجرك، اللهم إياك نعبد ولك نصلي ونسجد، وإليك نسعى ونحفد، نخشى عذابك ونرجو رحمتك، إن عذابك بالكفار ملحق، وهذه الكلمات : اللهم اهدني فيمن هديت، وعافني فيمن عافيت، وتولني فيمن توليت، وبارك لي فيما أعطيت ، وقني شر ما قضيت، إنك تقضي ولا يقضى عليك، لا يذل من واليت تباركت ربنا وتعاليت، ويدعو بالمعوذتين. ( )
অর্থ: আমি আমার পূর্বসূরিদের দেখেছি তাঁরা বিতে উপরোক্ত দুটি দুআ পড়াকেই উত্তম মনে করতেন। [সালাতুল বিত পৃ.৩০১] মুসান্নাফ গ্রন্থকার ইমাম আব্দুর রাযযাকও তাই করতেন। [আল মুসান্নাফ ৩/১১৬]। শাফেয়ী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস ইমাম নববী র. বলেন- “আমাদের অনেকেই বলেন- উভয় দুআ একতে পড়াটাই উত্তম”। [শরহুল মুহায্যাব ৩/৪৭৫-৪৭৮]
পরবর্তী হানাফী ফকীহদের অনেকেই উভয় দুআ একতে পড়াকে পছন্দ করেছেন। [দেখুন, মাবসূত্র্রে সারাখসী ১/১৬৫ বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩২]
দুআয়ে কুনূত রুকুর আগে,না পরে?
এ বিষয়ে মতভেদ আছে যে, কুনূত শুধু বিতর নামাযেই পড়া হবে, না ফজরের নামাযেও; তদ্রূপ রুকুর আগে পড়া হবে, না রুকুর পরে। হানাফী মাযহবের আলিমগণ বলেন, বিতরের কুনূত সারা বছর পড়া হবে এবং রুকুর আগে পড়া হবে।
পক্ষান্তরে কুনূতে নাযেলা রুকুর পরে ও বিশেষ বিশেষ অবস্থায় পড়া হবে। রুকুর আগেও রুকুর পরে কুনূত পড়া সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের মাঝে হানাফী আলিমগণ এভাবেই সমন্বয় করে থাকেন।
সহীহ বুখারী ১/১৩৬, ‘বাবুল কুনূত কাবলার রুকু ওয়া বা’দাহ’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে আছে, ‘আসিম আহওয়াল বলেন, ‘আমি (হযরত) আনাস ইবনে মালিক রা.কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘কুনূত আছে।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, রুকুর আগে, না পরে? তিনি বললেন, ‘রুকুর আগে।’ আমি বললাম, জনৈক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন যে, আপনি রুকুর পরে কুনূত পড়ার কথা বলেছেন? তিনি বললেন, ‘সে ভুল বলেছে। রুকুর পরে তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু এক মাস কুনূত পড়েছেন।’
حدثنا عاصم قال : سألت أنس بن مالك رضي الله عنه عن القنوت فقال : كانت القنوت، قلت : قبل الركوع أو بعده؟ قال : قبله، قلت : فإن فلانا أخبرني عنك إنك قلت : بعد الركوع، فقال : كذب، إنما قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد الركوع شهرا.
হযরত আনাস রা. থেকেই অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত কুনূত পড়েছেন। আবু বকর রা.ও মৃত্যু পর্যন্ত কুনূত পড়েছেন, উমর রা.ও মৃত্যু পর্যন্ত কুনূত পড়েছেন।’
إن رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت حتى مات، وأبو بكر رضي الله عنه حتى مات، وعمر رضي الله عنه حتى مات، رواه البزار، ورجاله موثقون.
(বাযযার-মাজমাউয যাওয়াইদ ১/১৩৯)
এই বর্ণনায় বিতরের কুনূতই উদ্দেশ্য। কারণ ফজরের কুনূত সর্বদা পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় না; বরং বিপরীত বিষয়টি সহীহ বুখারীর উপরোক্ত হাদীস ছাড়াও বিভিন্ন হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। এজন্য মুসনাদে আহমদ ও বাযযারের নিম্নোক্ত বর্ণনায় ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া পর্যন্ত (অর্থাৎ জীবনভর) ফজরের নামাযে কুনূত পড়েছেন।’
ما زال رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت في الفجر حتى فارق الدنيا.
‘ফিল ফজর’ শব্দটি রাবীর ভুল না হয়ে থাকলে কুনূতে নাযিলা উদ্দেশ্য।
মোটকথা, বহু হাদীসের ভিত্তিতে হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত এই যে, কুনূতে নাযিলা, যা ফজরের নামাযে এবং (কখনো কখনো অন্য নামাযেও) পড়া হয় তা রুকুর পরে হবে আর তা হল বিশেষ পরিস্থিতির কুনূত। পক্ষান্তরে বিতরের কুনূত সর্বদা রুকুর আগে পড়া হবে। আর এটিই হচ্ছে সারা বছরের কুনূত।
রুকুর আগে দুআয়ে কুনূতের দলীল
বিতরের কুনূত রুকুর আগে হওয়া বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
১.
হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন … এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
عن أبي بن كعب رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يوتر بثلاث ركعات … ويقنت قبل الركوع.
(নাসায়ী ১/২৪৮)
ইবনে মাজার রেওয়ায়েতে আছে-‘তিনি বিতর পড়তেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
كان يوتر فيقنت قبل الركوع (ইবনে মাজাহ পৃ. ৮৪)
২.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামাযে রুকুর আগে কুনূত পড়তেন।’
عن ابن مسعود رضي الله عنه إن النبي صلى الله عليه وسلم قنت في الوتر قبل الركوع، قال الدار قطني وأبان بن أبي عياش متروك، قلت : ورواه الخطيب في كتاب القنوت من غير طريق أبان بن أبي عياش وذكره ابن الجوزي في التحقيق من جهة الخطيب وسكت عنه إلا أنه قال : أحاديثنا مقدمة كما في نصب الراية قال الترمذي في العلل : وقد روى غير واحد عن إبراهيم النخعي عن علقمة عن عبد الله بن مسعود أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يقنت في وتره قبل الركوع.
৩.
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يوتر بثلاث ركعات ويجعل القنوت قبل الركوع، قال الطبراني : لم يروه عن عبيد الله إلا سعيد بن سالم كما في نصب الراية.
৪.
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘আমি একরাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে ছিলাম। তিনি শয্যাত্যাগ করলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন। এরপর উঠে বিতর পড়লেন। প্রথম রাকাতে ফাতিহার পর সূরা আ’লা পাঠ করলেন। এরপর রুকু ও সিজদা করলেন। দ্বিতীয় রাকাতে ফাতিহা ও কাফিরূন পাঠ করলেন এবং রুকু-সিজদা করলেন। তৃতীয় রাকাতে ফাতিহা ও ইখলাস পাঠ করলেন। এরপর রুকুর আগে কুনূত পড়লেন।’
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال : بت عند النبي صلى الله عليه وسلم، فقام من الليل فصلى ركعتين، ثم قام فأوتر فقرأء بفاتحة الكتاب وسبح اسم ربك الأعلى ثم ركع وسجد ثم قام فقرأ يفاتحة الكتاب وقل يا أيها الكافرون ثم ركع وسجد وقام فقرأ بفاتحة الكتاب و قل هو الله أحد ثم قنت ودعا قبل الركوع.
(কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০১; হিলয়া, আবু নুআইম-নসবুর রায়াহ ২/১২৪)
৫.
আসওয়াদ রাহ. বলেন, ‘আমি ছয় মাস (হযরত) উমর রা.-এর সোহবতে ছিলাম। তিনি বিতর নামাযে রুকুর আগে কুনূত পড়তেন।’
عن الأسود قال : صحبت عمر بن الخطاب رضي الله عنه ستة أشهر فكان يقنت في الوتر قبل الركوع.
(কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০১)
৬.
আসওয়াদ রাহ. বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতর ছাড়া অন্য কোনো নামাযে কুনূত পড়তেন না। আর বিতরে কুনূত পড়তেন রুকুর আগে।’
عن الأسود أن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه كان لا يقنت في شيء من الصلوات إلا في الوتر قبل الركوع.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০২; কিতাবুল হুজ্জাহ, ইমাম মুহাম্মাদ ১/২০১; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২২৪)
৭.
আলকামা রাহ. বলেন, ‘(হযরত) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ও অন্যান্য সাহাবী বিতর নামাযে রুকুর আগে কুনূত পড়তেন।’
عن علقمة أن ابن مسعود وأصحاب النبي صلى الله عليه وسلم رضي الله عنهم كانوا يقنتون في الوتر قبل الركوع.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০২)
ইমাম ইবনে আবী শাইবা রাহ. বলেন, ‘আমাদের নিকটে বিতরের কুনূত রুকুর আগে পড়াই সঠিক।’
قال بن أبي شيبة هذا الأمر عندنا
(প্রাগুক্ত)
বিতরের কুনূতে তাকবীর ও রাফয়ে ইয়াদাইন
যারা উপরোক্ত হাদীসসমূহের ভিত্তিতে রুকুর আগে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের নিকট কিরাত ও কুনূতের মাঝে তাকবীর দেওয়া সুন্নত। এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইন আছে। এ প্রসঙ্গে কিছু রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হল।
১.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামাযে রুকুর আগে কুনূত পড়তেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার মা উম্মে আব্দকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে পাঠালাম তিনি উম্মুল মু’মিনীনদের সাথে রাত্রিযাপন করলেন এরপর জানালেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুর আগে কুনূত পড়েছেন’।’’
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يقنت في الوتر قبل الركوع قال : ثم أرسلت أمي أم عبد فباتت عند نساءه فأخبرتني أنه قنت في الوتر قبل الركوع.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০২)
হাফেয ইবনে আবদিল বার ‘আলইসতীআব ফী মা’রিফাতিল আসহাব’ কিতাবে লেখেন, ‘উম্মে আবদ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর মহিয়সী জননী। তাঁর থেকে পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেন যে, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রুকুর আগে কুনূত পড়তে দেখেছি।’ তাঁর সম্পর্কেই ঐ হাদীসটি প্রসিদ্ধ, যা হাফ্স ইবনে আবু সুলায়মান বর্ণনা করেন আবান ইবনে আবী আইয়াশ থেকে, তিনি ইবরাহীম নাখায়ী থেকে, তিনি আলকামা থেকে বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘আমি আমার আম্মাকে বললাম তিনি যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে রাত্রিযাপন করেন এবং তাঁর বিতর পড়া দেখেন। আম্মা তা করলেন (এবং জানালেন যে,) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামায পড়লেন যে পরিমাণ আল্লাহর ইচ্ছা, রাতের শেষ অংশে। এরপর বিতর নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন পড়লেন। এরপর বৈঠক করলেন এবং সালাম না ফিরিয়ে (তৃতীয় রাকাতে) দাঁড়ালেন। এই রাকাতে সূরা ইখলাস পড়লেন। এরপর তাকবীর দিয়ে দুআয়ে কুনূত পাঠ করলেন এবং যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা দুআ করলেন। এরপর তাকবীর দিয়ে রুকু করলেন।’
وفي الإستيعاب لابن عبد البر : أم عبد أم عبد الله بن مسعود روى عنها ابنها عبد الله بن مسعود أنها قالت : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت في الوتر قبل الركوع. ويعرف أيضا بها حديث أم بن مسعود يرويه حفص بن سليمان عن أبان بن عياش عن إبراهيم النخعي عن علقمة عن عبد الله قال أرسلت أمي ليلة لتبيت عند النبي صلى الله عليه وسلم فتنظر كيف يوتر فباتت عند النبي صلى الله عليه وسلم فصلى ما شاء الله أن يصلي حتى إذا كان آخر الليل وأراد الوتر قرأ بسح اسم ربك الأعلى في الركعة الأولى وقرأ في الثانية قل يا أيها الكافرون ثم قعد ثم قام ولم يفصل بينهما بالسلام ثم قرأ بقل هو الله أحد حتى إذا فرغ كبر ثم قنت فدعا بما شاء الله أن يدعوه ثم ركع فكبر.
(আলইসতীআব ৪/৪৫০; ইসাবার টীকায়)
২.
আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত, মাসরূক রাহ., আসওয়াদ রাহ. ও ইবনে মাসউদ রা.-এর অন্য শাগরিদগণ বলেছেন,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু বিতর নামাযে কুনূত পড়তেন আর তিনি কুনূত পড়তেন রুকুর আগে এবং কিরাআত সমাপ্ত হওয়ার পর কুনূত পড়ার সময় তাকবীর দিতেন।
عن مسروق والأسود وأصحاب عبد الله قالوا كان عبد الله لا يقنت إلا في الوتر وكان يقنت قبل الركوع يكبر إذا فرغ من قراءته حين يقنت
{শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪ আরো দেখুন : মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৭}
এই রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করার পর ইমাম তহাবী রাহ. বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় যুক্তি ও ইস্তিম্বাতের ভিত্তিতে বলা (বা করা) যায় না। তা একমাত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট শিক্ষা থেকেই গৃহীত হতে পারে।
إذ كان مثله لا يقال بالاستنباط ولا بالاستخراج وإنما يقال بالتوقيف الذي وقف رسول الله صلى الله عليه وسلم الناس عليه.
শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪-৩৭৫
ইমাম তহাবী রাহ. আরো বলেন, হযরত ওমর ফারূক রা.-এর আমলও এ পদ্ধতি সমর্থন করে। কারণ তিনি ফজরের নামাযে রুকুর আগে যখন কুনূত পড়তেন তখন কুনূতের জন্য তাকবীর দিতেন।-শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৫-৩৭৬
৩.
আসওয়াদ রাহ. বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের কুনূতের জন্য রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।’
عن الأسود قال عن عبد الله مسعود رضي الله عنه كان يرفع يديه إذا قنت في الوتر
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/২৭-২৮)
৪.
ইমাম বুখারীর ‘রিসালা রাফয়িল ইয়াদাইনে’ (পৃ. ২৪) আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের শেষ রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন, এরপর রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
أنه كان يقرأ في آخر ركعة من الوتر قل هو الله احد ثم رفع يديه فيقنت قبل الركعة
৫.
আবু উছমান বলেন, ‘উমর রা. কুনূতে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।’
عن أبي عثمان كان عمر رضي الله عنه يرفع يديه في القنوت
(জুয্উ রাফয়িল ইয়াদাইন পৃ. ২৮)
৬.
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেছেন, ‘বিতর নামাযে কুনূত ওয়াজিব, রমযানে ও রমযানের বাইরে। যখন তুমি কুনূত পড়ার ইচ্ছা করবে তখন তাকবীর দিবে, এরপর (কুনূতের পর) যখন রুকু করার ইচ্ছা করবে তখন পুনরায় তাকবীর দিবে।
محمد قال : أخبرنا أبو حنيفة عن حماد عن إبراهيم أن ألقنوت في الوتر واجد في شهر رمضان وغيره وإذا أردت أن تقنت فكبر وإذا أردت أن تركع فكبر أيضا
(কিতাবুল আছার ১/৫৭৯; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০০)
এই রেওয়ায়েত বর্ণনা করার পর ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, ‘আমরা এই তরীকা মোতাবেকই আমল করি। আর কুনূতের তাকবীরে সেভাবেই হাত তুলবে যেভাবে নামাযের শুরুতে তোলা হয়। এরপর হাত বেঁধে দুআ করবে। এটিই ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর সিদ্ধান্ত।’
قال محمد وبه نأخذ ويرفع يديه في التكبيرة الأولى قبل القنوت كما يرفع يديه في افتتاح الصلاة ثم يضعهما ويدعو وهو قول أبي حنيفة رضي الله عنه .
(কিতাবুল আছার ১/৫৭৯)
ইমাম তহাবী রাহ. বলেন, বিতর নামাযে কুনূতের তাকবীর হল এই নামাযে একটি অতিরিক্ত তাকবীর। যারা রুকুর পূর্বে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের ইজমা রয়েছে যে,এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইনও করতে হবে।
وأما التكبير في القنوت في الوتر فإنها تكبيرة زائدة في تلك الصلاة وقد أجمع الذين يقنتون قبل الركوع على الرفع معها.
(তহাবী ১/৩৩২)
দুআয়ে কুনূতে হাত বাঁধা
বিতরের কুনূতে হাত বাধা-না বাঁধার ক্ষেত্রে তিনটি সম্ভাবনা আছে :
১. দোয়ার মতো হাত ওঠানো হবে।
২. কওমার মতো দুই হাত ছেড়ে দেওয়া
৩. রাফয়ে ইয়াদাইনের তার কিয়ামের মতো দুই হাত বাঁধা।
প্রথম পদ্ধতিটি হানাফী ইমামগণের নিকট পসন্দনীয় নয়। কারণ নামাযের যত জায়গায় দোয়া আছে কোথাও হাত ওঠানোর নিয়ম নেই। যদিও হাত তুলে দোয়া করাই দোয়ার সাধারণ নিয়ম। কিন্তু নামাযের মধ্যে হাত তুলে দোয়া করার বিধান নেই। এজন্যই ইবনে উমর রা. এই পদ্ধতিকে বিদআত বলেছেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন,‘দেখ,তোমরা যে ফজরের নামাযেও ইমামের কিরাত শেষে কুনূতের জন্য দাড়াও,আল্লাহর কসম,এটা বিদআত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুধু এক মাস করেছেন। দেখ, তোমরা যে নামাযে হাত তুলে কুনূত পড়,আল্লাহর কসম,এটিও বিদআত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো শুধু কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন।
قال عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال : أرأيتم قيامكم عند فراغ الإمام من السورة هذا القنوت والله إنه لبدعة ما فعله رسول الله صلى الله عليه وسلم غير شهر ثم تركه أرأيتم رفعكم في الصلاة والله إنه لبدعة ما زاد رسول الله صلى الله عليه وسلم هذا قط فرفع يديه حيال منكبيه، رواه الطبراني في الكبير وفيه شهر بن حوشب ضعفه أحمد وابن معين وأبو زرعة وأبو حاتم والناسئي ووثقه أيوب وابن عدي.
(আলমু’জামুল কাবীর তবারানী; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৩৭)
উপরোক্ত রেওয়ায়েতের সরল অর্থ এটাই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূতের জন্য যদিও রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন কিন্তু দুআর মতো হাত উঠিয়ে কুনূত পড়তেন না।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে কথা এই যে, কুনূত যদি রুকুর আগে পড়া হয়, যেমন বিতরের কুনূত, তো রুকুর আগের হালত যেহেতু কিয়ামের হালত, আর কিয়ামের হালতে হাত বাঁধা সুন্নত তাই এ সময় হাত বাঁধা থাকবে। পক্ষান্তরে কুনূতে নাযিলা যেহেতু রুকুর পর কওমার হালতে পড়া হয় আর কওমার হালতে হাত বাঁধা সুন্নত নয় এজন্য এ কুনূত হাত ছেড়ে পড়া হবে।
আমরা বিতরে যে দুআ কুনূত পড়ি তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় আবদুর রহমান আসসুলামী রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন আমরা যেন কুনূতে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ি-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৯৬৫
শব্দের সামান্য তারতম্যসহ অন্যান্য বর্ণনায়ও এ দুআটি এসেছে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার এক বর্ণনায় وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ -এ দু’টি বাক্য বর্ধিত এসেছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩০৩৩৭) শরহু মাআনিল আসারের একটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় وَنَشْكُرُكَ শব্দটিও রয়েছে। (শরহু মাআনিল আসার ১/১৭৭)
এছাড়া হযরত আলী রা. যেভাবে পড়তেন তাতেও وَنَشْكُرُكَ শব্দটি পাওয়া যায়। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/১১৪
আর প্রশ্নোক্ত দুআটি উপরোক্ত বর্ণনাসমূহেরই সমন্বিত রূপ। এভাবে পড়ার দ্বারা উপরোক্ত সকল বর্ণনার উপর আমল হয়ে যায়।
অতএব এইসব বর্ণনার আলোকে দুআটি পূর্ণ পাঠ এভাবে হয়-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.
(আরো দেখুন : আলআওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/২১৮; আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ২/২১০;আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরা ১/১১০)
সুনানে বাইহাকীর এক বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুনূত শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর শব্দের সামান্য তারতম্যসহ উপরোক্ত দুআটিই উল্লেখিত হয়েছে। (আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ২/২১০, আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরা ১/১০১)
উল্লেখ্য, কুনূতের জন্য হাদীস শরীফে যেমন উপরোক্ত দুআটি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তেমনি আরেকটি দুআও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাসান ইবনে আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিতিরে পড়ার জন্য কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন, তাহল-
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ، فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ.
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪২৫
ইমাম নববী রাহ. বলেন, আমাদের অনেকেই বলেন, উভয় দুআ একত্রে পড়াটাই উত্তম। (শরহুল মুহাযযাব ৩/৪৭৫-৭৮) শামসুল আইম্মা সারাখসী রাহ. ইমাম কাসানী রাহ. প্রমূখ ফকীহগণও বিতিরের নামাযে উভয় দুআ একত্রে পড়াকে পছন্দ করতেন। (আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৬৫; বাদায়েউস সনায়ে ২/২৩২)
তবে কেউ যদি একটি দুআই পড়তে চায় তাহলে প্রথম দুআটি পড়াই উত্তম হবে। কেননা বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. নিজে বিতিরের কুনূতে এ দুআ পড়াকে পছন্দ করতেন এবং অন্যকে পড়তে আদেশ করতেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৯৯৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৯৬৪
তাবেয়ী হাসান বাসরী রাহ.ও কুনূতে এ দুআটিই পড়তেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৯৮২
একটি ভুল ধারণা : দুআয়ে কুনূত কি শুধু আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকাঃ
বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে ‘কুনূত’ (কুনূতের দুআ) পড়া জরুরি। এর বিভিন্ন দুআ রয়েছে : একটি হচ্ছে ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা ওয়া ... ’ আরেকটি হল, ‘আল্লাহুম্মাহদিনী ফীমান হাদাইত্ ... ’ এ ধরনের আরো দুআ রয়েছে। যেকোনো দুআ পড়া যায়। বরং কুরআন-হাদীসের যেকোনো দুআ পড়ার দ্বারাও কুনূতের ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। কেউ কেউ প্রথম দুআটিকেই একমাত্র দুআ মনে করেন। তাদের ধারণা এটা ছাড়া ‘কুনূত’ আদায় হয় না। এই ধারণা ঠিক নয়। যেকোনো মা’ছূর ও মাসনূন দুআর দ্বারা ওয়াজিব কুনূত আদায় হয়।
হাদীস শরীফে এ প্রসঙ্গে একাধিক দু‘আ পাওয়া যায়। তন্মধ্যে
ক.“আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তা‘ঈ নুকা ...”
১. ইমাম ইবনুল মুনযির রহ. বলেন-
وجاء في الحديث عن عمر بن الخطاب أنه كَانَ يقول في القنوت في الوتر: اللهم اغفر للمؤمنين، والمؤمنات، والمسلمين والمسلمات، وألف بين قلوبهم، وأصلح ذات بينهم، وانصرهم على عدوك وعدوهم، اللهم العن كفرة أهل الكتاب الذين يكذبون رسلك، ويقاتلون أولياءك، اللهم خالف بين قلوبهم، وزلزل أقدامهم، وأنزل بهم بأسك الذي لا يرد عن القوم المجرمين،
بسم الله الرحمن الرحيم، اللهم إنا نستعينك، ونستغفرك، ونثني عليك ولا نكفرك، ونخلع ونترك من يفجرك ويكفرك، بسم الله الرحمن الرحيم، اللهم إياك نعبد، ولك نصلي ونسجد، وإليك نسعى ونحفد، نرجو رحمتك، ونخاف عذابك إن عذابك بالكفار يلحق
وكان عبيد بن عمير، وهو راوي هذا الحديث عن عمر بن الخطاب يقول : بلغني أنهما سورتان من القرآن في مصحف ابن مسعود، وأنه يوتر بهما كل ليلة حدثناه إسحاق ، عن عبد الرزاق ، عن ابن جريج ، قال : أخبرنا عطاء، أنه سمع عبيد بن عمير، يأثر عن عمر بن الخطاب، أنه قال ذلك. (قلت: رجاله ثقات)
ثم قال: وممن روينا عنه، أنه قنت بالسورتين علي بن أبي طالب، وعبد الله بن مسعود، وأبي بن كعب، وقد رويت في القنوت أخبارا، وقد ذكرتها في كتاب قيام الليل.
অর্থ: হাদীসে এসেছে হযরত উমর রা. বিতরের কুনূতে বলতেন (اللهم اغفر للمؤمنين، والمؤمنات،) “আল্লাহুম্মাগফির লিল মুমিনীনা ওয়াল মুমিনাত...”, (اللهم إنا نستعينك، ونستغفرك،) “..আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতা‘ঈ নুকা ...”।
হযরত উমর রা. থেকে এ হাদীসের বর্ণনাকারী উবাইদ ইবনে উমাইর বলতেন- (اللهم إنا نستعينك، ونستغفرك،) এ দুটি দুআ ইবনে মাসউদ রা. এর মুছহাফে কুরআনের সূরা রূপে ছিল (যা পরে রহিত হয়ে গেছে)। তিনি দুআ দুটি দিয়ে প্রতি রাতে বিতর পড়তেন। [আল-আউসাত লি ইবনিল মুনযির ৫/২১৪)
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে নাছর আল-মারওয়াজী বর্ণনাটি উল্লেখ করার পর বলেন- অন্য বর্ণনায় বর্ধিতাংশে রয়েছে, ‘বিতরে এ দুআ রুকুর পূর্বে পড়তেন’ ...। [মুখতাছারু কিয়ামিল্লাইল পৃ. ৩২১-৩২২] ( )
২. আবু-আব্দুর রহমান (আসসুলামী) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন আমরা যেন কুনূতে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ি-
علمنا ابن مسعود رضي الله عنه أن نقرأ في القنوت : اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ. ( )
শব্দের সামান্য ব্যতিক্রম সহ অন্যান্য বর্ণনায়ও এ দুআ এসেছ। যেমন: এক বর্ণনায়-ونؤمن بك ونتوكل عليك -এ বাক্য দুটি বর্ধিত এসেছে। [ইবনে আবী শাইবা ১৫/৩৪৪] তহাবীর এক বর্ণনায় ونشكرك -শব্দটিও রয়েছে। [তহাবী ১/১৭৭] এর সনদ সহীহ]
এই বর্ণনাগুলির আলোকে পূর্ণ দু‘আটি এভাবে পড়া যায়-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، ونؤمن بك ونتوكل عليك، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، ونشكرك وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.
হযরত ইবনে মাসউদ রা. প্রতিদিন বিতর নামাযে এ দুআই পড়তেন। [মুছান্নাফে আব্দুল রাযযাক হা.৪৯৬৯ আল-আউসাত ৫/২১৪ মুখতাছারু কিয়ামিল্লাইল পৃ.২৯৭]
৩. সুনানে বায়হাকীর এক বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত জিবীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুনূত শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর শব্দের সামান্য তারতম্যসহ উপরোক্ত দুআটি উল্লেখিত হয়েছে। ( ) [বাইহাকী ২/২১০ আল-মুদাওয়ানা ১/১০১] বর্ণনাটি মুরসাল এবং এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। [নাতাইযুল আফকার লি ইবনে হাজার ২/১১১]
৪. বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখাঈ নিজে বিতরের কুনূতে এ দুআ পড়াকে পছন্দ করতেন এবং অন্যকে পড়তে আদেশ করতেন। [আব্দুর রাযযাক ৩/১২১, ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১৮]
৫. আমর বলেন- তাবেয়ী হাসান বসরী র. বিতর ও ফজরের কুনূতে এ দুআটিই পড়তেন। তাঁকে একজন জিজ্ঞেস করল, এই দুআর অতিরিক্ত আর কিছু পড়া যাবে কি? তিনি উত্তরে বললেন-
لا أنهاكم ولكنى سمعت أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم لايزيدون على هذا شيئا، ويغضب إذا أرادوه على الزيادة. ( )
অর্থাৎ তোমাদেরকে আমি নিষেধ করব না; তবে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে এর অতিরিক্ত কিছু পড়তে দেখিনি। ...। [মুছান্নাফে আর্ব্দুরায্যাক ৩/১১৬]
তাই হানাফী ফকীহগণ ও ইমাম মালিক র. এই দুআকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। ইমাম ইবনে আব্দিল বার র. বলেন-
قال الكوفيون ومالك: وليس فى القنوت دعاء موقت، ولكنهم يستحبون ألا يقنت إلا بقولهم: اللهم إنا نستعينك...انتهى ( )
অর্থ: কুফার অধিবাসী আহলে ইলমগণ ও ইমাম মালেক বলেন- দুআ কুনূত সুনির্দিষ্ট নয়। তবে তাঁরা এই দুআটি পড়া উত্তম মনে করেন।
খ. আল্লাহুম্মাহদিনা ফীমান হাদাইতা ...
হযরত হাসান ইবনে আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিতে পড়ার জন্য কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন :
اللَّهُمَّ اهْدِنِى فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِى فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِى فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِى فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِى شَرَّ مَا قَضَيْتَ، إِنَّكَ تَقْضِى وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ. ( )
[সুনানে আবু দাউদ: ১/৫২৬; সুনানে নাসায়ী ১/২৫২ জামে তিরমিযী ১/১০৬ হা.৪৬৪ সুনানে ইবনে মাজা ১/১৮৫ মুসনাদে আহমদ হা.১৭১৮]
তাই অনেকেই উভয় দুআ একতে পড়তেন। সুফ্ইয়ান ছাউরী বলেন-
كانوا يستحبون أن يجعلوا ، في قنوت الوتر هاتين السورتين : اللهم إنا نستعينك ونستغفرك، ونثني عليك ولا نكفرك، ونخلع ونترك من يفجرك، اللهم إياك نعبد ولك نصلي ونسجد، وإليك نسعى ونحفد، نخشى عذابك ونرجو رحمتك، إن عذابك بالكفار ملحق، وهذه الكلمات : اللهم اهدني فيمن هديت، وعافني فيمن عافيت، وتولني فيمن توليت، وبارك لي فيما أعطيت ، وقني شر ما قضيت، إنك تقضي ولا يقضى عليك، لا يذل من واليت تباركت ربنا وتعاليت، ويدعو بالمعوذتين. ( )
অর্থ: আমি আমার পূর্বসূরিদের দেখেছি তাঁরা বিতে উপরোক্ত দুটি দুআ পড়াকেই উত্তম মনে করতেন। [সালাতুল বিত পৃ.৩০১] মুসান্নাফ গ্রন্থকার ইমাম আব্দুর রাযযাকও তাই করতেন। [আল মুসান্নাফ ৩/১১৬]। শাফেয়ী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস ইমাম নববী র. বলেন- “আমাদের অনেকেই বলেন- উভয় দুআ একতে পড়াটাই উত্তম”। [শরহুল মুহায্যাব ৩/৪৭৫-৪৭৮]
পরবর্তী হানাফী ফকীহদের অনেকেই উভয় দুআ একতে পড়াকে পছন্দ করেছেন। [দেখুন, মাবসূত্র্রে সারাখসী ১/১৬৫ বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩২]
দুআয়ে কুনূত রুকুর আগে,না পরে?
এ বিষয়ে মতভেদ আছে যে, কুনূত শুধু বিতর নামাযেই পড়া হবে, না ফজরের নামাযেও; তদ্রূপ রুকুর আগে পড়া হবে, না রুকুর পরে। হানাফী মাযহবের আলিমগণ বলেন, বিতরের কুনূত সারা বছর পড়া হবে এবং রুকুর আগে পড়া হবে।
পক্ষান্তরে কুনূতে নাযেলা রুকুর পরে ও বিশেষ বিশেষ অবস্থায় পড়া হবে। রুকুর আগেও রুকুর পরে কুনূত পড়া সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের মাঝে হানাফী আলিমগণ এভাবেই সমন্বয় করে থাকেন।
সহীহ বুখারী ১/১৩৬, ‘বাবুল কুনূত কাবলার রুকু ওয়া বা’দাহ’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে আছে, ‘আসিম আহওয়াল বলেন, ‘আমি (হযরত) আনাস ইবনে মালিক রা.কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘কুনূত আছে।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, রুকুর আগে, না পরে? তিনি বললেন, ‘রুকুর আগে।’ আমি বললাম, জনৈক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন যে, আপনি রুকুর পরে কুনূত পড়ার কথা বলেছেন? তিনি বললেন, ‘সে ভুল বলেছে। রুকুর পরে তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু এক মাস কুনূত পড়েছেন।’
حدثنا عاصم قال : سألت أنس بن مالك رضي الله عنه عن القنوت فقال : كانت القنوت، قلت : قبل الركوع أو بعده؟ قال : قبله، قلت : فإن فلانا أخبرني عنك إنك قلت : بعد الركوع، فقال : كذب، إنما قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد الركوع شهرا.
হযরত আনাস রা. থেকেই অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত কুনূত পড়েছেন। আবু বকর রা.ও মৃত্যু পর্যন্ত কুনূত পড়েছেন, উমর রা.ও মৃত্যু পর্যন্ত কুনূত পড়েছেন।’
إن رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت حتى مات، وأبو بكر رضي الله عنه حتى مات، وعمر رضي الله عنه حتى مات، رواه البزار، ورجاله موثقون.
(বাযযার-মাজমাউয যাওয়াইদ ১/১৩৯)
এই বর্ণনায় বিতরের কুনূতই উদ্দেশ্য। কারণ ফজরের কুনূত সর্বদা পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় না; বরং বিপরীত বিষয়টি সহীহ বুখারীর উপরোক্ত হাদীস ছাড়াও বিভিন্ন হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। এজন্য মুসনাদে আহমদ ও বাযযারের নিম্নোক্ত বর্ণনায় ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া পর্যন্ত (অর্থাৎ জীবনভর) ফজরের নামাযে কুনূত পড়েছেন।’
ما زال رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت في الفجر حتى فارق الدنيا.
‘ফিল ফজর’ শব্দটি রাবীর ভুল না হয়ে থাকলে কুনূতে নাযিলা উদ্দেশ্য।
মোটকথা, বহু হাদীসের ভিত্তিতে হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত এই যে, কুনূতে নাযিলা, যা ফজরের নামাযে এবং (কখনো কখনো অন্য নামাযেও) পড়া হয় তা রুকুর পরে হবে আর তা হল বিশেষ পরিস্থিতির কুনূত। পক্ষান্তরে বিতরের কুনূত সর্বদা রুকুর আগে পড়া হবে। আর এটিই হচ্ছে সারা বছরের কুনূত।
রুকুর আগে দুআয়ে কুনূতের দলীল
বিতরের কুনূত রুকুর আগে হওয়া বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
১.
হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন … এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
عن أبي بن كعب رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يوتر بثلاث ركعات … ويقنت قبل الركوع.
(নাসায়ী ১/২৪৮)
ইবনে মাজার রেওয়ায়েতে আছে-‘তিনি বিতর পড়তেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
كان يوتر فيقنت قبل الركوع (ইবনে মাজাহ পৃ. ৮৪)
২.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামাযে রুকুর আগে কুনূত পড়তেন।’
عن ابن مسعود رضي الله عنه إن النبي صلى الله عليه وسلم قنت في الوتر قبل الركوع، قال الدار قطني وأبان بن أبي عياش متروك، قلت : ورواه الخطيب في كتاب القنوت من غير طريق أبان بن أبي عياش وذكره ابن الجوزي في التحقيق من جهة الخطيب وسكت عنه إلا أنه قال : أحاديثنا مقدمة كما في نصب الراية قال الترمذي في العلل : وقد روى غير واحد عن إبراهيم النخعي عن علقمة عن عبد الله بن مسعود أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يقنت في وتره قبل الركوع.
৩.
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يوتر بثلاث ركعات ويجعل القنوت قبل الركوع، قال الطبراني : لم يروه عن عبيد الله إلا سعيد بن سالم كما في نصب الراية.
৪.
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘আমি একরাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে ছিলাম। তিনি শয্যাত্যাগ করলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন। এরপর উঠে বিতর পড়লেন। প্রথম রাকাতে ফাতিহার পর সূরা আ’লা পাঠ করলেন। এরপর রুকু ও সিজদা করলেন। দ্বিতীয় রাকাতে ফাতিহা ও কাফিরূন পাঠ করলেন এবং রুকু-সিজদা করলেন। তৃতীয় রাকাতে ফাতিহা ও ইখলাস পাঠ করলেন। এরপর রুকুর আগে কুনূত পড়লেন।’
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال : بت عند النبي صلى الله عليه وسلم، فقام من الليل فصلى ركعتين، ثم قام فأوتر فقرأء بفاتحة الكتاب وسبح اسم ربك الأعلى ثم ركع وسجد ثم قام فقرأ يفاتحة الكتاب وقل يا أيها الكافرون ثم ركع وسجد وقام فقرأ بفاتحة الكتاب و قل هو الله أحد ثم قنت ودعا قبل الركوع.
(কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০১; হিলয়া, আবু নুআইম-নসবুর রায়াহ ২/১২৪)
৫.
আসওয়াদ রাহ. বলেন, ‘আমি ছয় মাস (হযরত) উমর রা.-এর সোহবতে ছিলাম। তিনি বিতর নামাযে রুকুর আগে কুনূত পড়তেন।’
عن الأسود قال : صحبت عمر بن الخطاب رضي الله عنه ستة أشهر فكان يقنت في الوتر قبل الركوع.
(কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০১)
৬.
আসওয়াদ রাহ. বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতর ছাড়া অন্য কোনো নামাযে কুনূত পড়তেন না। আর বিতরে কুনূত পড়তেন রুকুর আগে।’
عن الأسود أن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه كان لا يقنت في شيء من الصلوات إلا في الوتر قبل الركوع.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০২; কিতাবুল হুজ্জাহ, ইমাম মুহাম্মাদ ১/২০১; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২২৪)
৭.
আলকামা রাহ. বলেন, ‘(হযরত) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ও অন্যান্য সাহাবী বিতর নামাযে রুকুর আগে কুনূত পড়তেন।’
عن علقمة أن ابن مسعود وأصحاب النبي صلى الله عليه وسلم رضي الله عنهم كانوا يقنتون في الوتر قبل الركوع.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০২)
ইমাম ইবনে আবী শাইবা রাহ. বলেন, ‘আমাদের নিকটে বিতরের কুনূত রুকুর আগে পড়াই সঠিক।’
قال بن أبي شيبة هذا الأمر عندنا
(প্রাগুক্ত)
বিতরের কুনূতে তাকবীর ও রাফয়ে ইয়াদাইন
যারা উপরোক্ত হাদীসসমূহের ভিত্তিতে রুকুর আগে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের নিকট কিরাত ও কুনূতের মাঝে তাকবীর দেওয়া সুন্নত। এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইন আছে। এ প্রসঙ্গে কিছু রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হল।
১.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামাযে রুকুর আগে কুনূত পড়তেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার মা উম্মে আব্দকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে পাঠালাম তিনি উম্মুল মু’মিনীনদের সাথে রাত্রিযাপন করলেন এরপর জানালেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুর আগে কুনূত পড়েছেন’।’’
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يقنت في الوتر قبل الركوع قال : ثم أرسلت أمي أم عبد فباتت عند نساءه فأخبرتني أنه قنت في الوتر قبل الركوع.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০২)
হাফেয ইবনে আবদিল বার ‘আলইসতীআব ফী মা’রিফাতিল আসহাব’ কিতাবে লেখেন, ‘উম্মে আবদ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর মহিয়সী জননী। তাঁর থেকে পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেন যে, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রুকুর আগে কুনূত পড়তে দেখেছি।’ তাঁর সম্পর্কেই ঐ হাদীসটি প্রসিদ্ধ, যা হাফ্স ইবনে আবু সুলায়মান বর্ণনা করেন আবান ইবনে আবী আইয়াশ থেকে, তিনি ইবরাহীম নাখায়ী থেকে, তিনি আলকামা থেকে বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘আমি আমার আম্মাকে বললাম তিনি যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে রাত্রিযাপন করেন এবং তাঁর বিতর পড়া দেখেন। আম্মা তা করলেন (এবং জানালেন যে,) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামায পড়লেন যে পরিমাণ আল্লাহর ইচ্ছা, রাতের শেষ অংশে। এরপর বিতর নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন পড়লেন। এরপর বৈঠক করলেন এবং সালাম না ফিরিয়ে (তৃতীয় রাকাতে) দাঁড়ালেন। এই রাকাতে সূরা ইখলাস পড়লেন। এরপর তাকবীর দিয়ে দুআয়ে কুনূত পাঠ করলেন এবং যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা দুআ করলেন। এরপর তাকবীর দিয়ে রুকু করলেন।’
وفي الإستيعاب لابن عبد البر : أم عبد أم عبد الله بن مسعود روى عنها ابنها عبد الله بن مسعود أنها قالت : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم قنت في الوتر قبل الركوع. ويعرف أيضا بها حديث أم بن مسعود يرويه حفص بن سليمان عن أبان بن عياش عن إبراهيم النخعي عن علقمة عن عبد الله قال أرسلت أمي ليلة لتبيت عند النبي صلى الله عليه وسلم فتنظر كيف يوتر فباتت عند النبي صلى الله عليه وسلم فصلى ما شاء الله أن يصلي حتى إذا كان آخر الليل وأراد الوتر قرأ بسح اسم ربك الأعلى في الركعة الأولى وقرأ في الثانية قل يا أيها الكافرون ثم قعد ثم قام ولم يفصل بينهما بالسلام ثم قرأ بقل هو الله أحد حتى إذا فرغ كبر ثم قنت فدعا بما شاء الله أن يدعوه ثم ركع فكبر.
(আলইসতীআব ৪/৪৫০; ইসাবার টীকায়)
২.
আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত, মাসরূক রাহ., আসওয়াদ রাহ. ও ইবনে মাসউদ রা.-এর অন্য শাগরিদগণ বলেছেন,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু বিতর নামাযে কুনূত পড়তেন আর তিনি কুনূত পড়তেন রুকুর আগে এবং কিরাআত সমাপ্ত হওয়ার পর কুনূত পড়ার সময় তাকবীর দিতেন।
عن مسروق والأسود وأصحاب عبد الله قالوا كان عبد الله لا يقنت إلا في الوتر وكان يقنت قبل الركوع يكبر إذا فرغ من قراءته حين يقنت
{শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪ আরো দেখুন : মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৭}
এই রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করার পর ইমাম তহাবী রাহ. বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় যুক্তি ও ইস্তিম্বাতের ভিত্তিতে বলা (বা করা) যায় না। তা একমাত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট শিক্ষা থেকেই গৃহীত হতে পারে।
إذ كان مثله لا يقال بالاستنباط ولا بالاستخراج وإنما يقال بالتوقيف الذي وقف رسول الله صلى الله عليه وسلم الناس عليه.
শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪-৩৭৫
ইমাম তহাবী রাহ. আরো বলেন, হযরত ওমর ফারূক রা.-এর আমলও এ পদ্ধতি সমর্থন করে। কারণ তিনি ফজরের নামাযে রুকুর আগে যখন কুনূত পড়তেন তখন কুনূতের জন্য তাকবীর দিতেন।-শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৫-৩৭৬
৩.
আসওয়াদ রাহ. বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের কুনূতের জন্য রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।’
عن الأسود قال عن عبد الله مسعود رضي الله عنه كان يرفع يديه إذا قنت في الوتر
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/২৭-২৮)
৪.
ইমাম বুখারীর ‘রিসালা রাফয়িল ইয়াদাইনে’ (পৃ. ২৪) আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের শেষ রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন, এরপর রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
أنه كان يقرأ في آخر ركعة من الوتر قل هو الله احد ثم رفع يديه فيقنت قبل الركعة
৫.
আবু উছমান বলেন, ‘উমর রা. কুনূতে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।’
عن أبي عثمان كان عمر رضي الله عنه يرفع يديه في القنوت
(জুয্উ রাফয়িল ইয়াদাইন পৃ. ২৮)
৬.
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেছেন, ‘বিতর নামাযে কুনূত ওয়াজিব, রমযানে ও রমযানের বাইরে। যখন তুমি কুনূত পড়ার ইচ্ছা করবে তখন তাকবীর দিবে, এরপর (কুনূতের পর) যখন রুকু করার ইচ্ছা করবে তখন পুনরায় তাকবীর দিবে।
محمد قال : أخبرنا أبو حنيفة عن حماد عن إبراهيم أن ألقنوت في الوتر واجد في شهر رمضان وغيره وإذا أردت أن تقنت فكبر وإذا أردت أن تركع فكبر أيضا
(কিতাবুল আছার ১/৫৭৯; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০০)
এই রেওয়ায়েত বর্ণনা করার পর ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, ‘আমরা এই তরীকা মোতাবেকই আমল করি। আর কুনূতের তাকবীরে সেভাবেই হাত তুলবে যেভাবে নামাযের শুরুতে তোলা হয়। এরপর হাত বেঁধে দুআ করবে। এটিই ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর সিদ্ধান্ত।’
قال محمد وبه نأخذ ويرفع يديه في التكبيرة الأولى قبل القنوت كما يرفع يديه في افتتاح الصلاة ثم يضعهما ويدعو وهو قول أبي حنيفة رضي الله عنه .
(কিতাবুল আছার ১/৫৭৯)
ইমাম তহাবী রাহ. বলেন, বিতর নামাযে কুনূতের তাকবীর হল এই নামাযে একটি অতিরিক্ত তাকবীর। যারা রুকুর পূর্বে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের ইজমা রয়েছে যে,এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইনও করতে হবে।
وأما التكبير في القنوت في الوتر فإنها تكبيرة زائدة في تلك الصلاة وقد أجمع الذين يقنتون قبل الركوع على الرفع معها.
(তহাবী ১/৩৩২)
দুআয়ে কুনূতে হাত বাঁধা
বিতরের কুনূতে হাত বাধা-না বাঁধার ক্ষেত্রে তিনটি সম্ভাবনা আছে :
১. দোয়ার মতো হাত ওঠানো হবে।
২. কওমার মতো দুই হাত ছেড়ে দেওয়া
৩. রাফয়ে ইয়াদাইনের তার কিয়ামের মতো দুই হাত বাঁধা।
প্রথম পদ্ধতিটি হানাফী ইমামগণের নিকট পসন্দনীয় নয়। কারণ নামাযের যত জায়গায় দোয়া আছে কোথাও হাত ওঠানোর নিয়ম নেই। যদিও হাত তুলে দোয়া করাই দোয়ার সাধারণ নিয়ম। কিন্তু নামাযের মধ্যে হাত তুলে দোয়া করার বিধান নেই। এজন্যই ইবনে উমর রা. এই পদ্ধতিকে বিদআত বলেছেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন,‘দেখ,তোমরা যে ফজরের নামাযেও ইমামের কিরাত শেষে কুনূতের জন্য দাড়াও,আল্লাহর কসম,এটা বিদআত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুধু এক মাস করেছেন। দেখ, তোমরা যে নামাযে হাত তুলে কুনূত পড়,আল্লাহর কসম,এটিও বিদআত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো শুধু কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন।
قال عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال : أرأيتم قيامكم عند فراغ الإمام من السورة هذا القنوت والله إنه لبدعة ما فعله رسول الله صلى الله عليه وسلم غير شهر ثم تركه أرأيتم رفعكم في الصلاة والله إنه لبدعة ما زاد رسول الله صلى الله عليه وسلم هذا قط فرفع يديه حيال منكبيه، رواه الطبراني في الكبير وفيه شهر بن حوشب ضعفه أحمد وابن معين وأبو زرعة وأبو حاتم والناسئي ووثقه أيوب وابن عدي.
(আলমু’জামুল কাবীর তবারানী; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৩৭)
উপরোক্ত রেওয়ায়েতের সরল অর্থ এটাই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূতের জন্য যদিও রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন কিন্তু দুআর মতো হাত উঠিয়ে কুনূত পড়তেন না।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে কথা এই যে, কুনূত যদি রুকুর আগে পড়া হয়, যেমন বিতরের কুনূত, তো রুকুর আগের হালত যেহেতু কিয়ামের হালত, আর কিয়ামের হালতে হাত বাঁধা সুন্নত তাই এ সময় হাত বাঁধা থাকবে। পক্ষান্তরে কুনূতে নাযিলা যেহেতু রুকুর পর কওমার হালতে পড়া হয় আর কওমার হালতে হাত বাঁধা সুন্নত নয় এজন্য এ কুনূত হাত ছেড়ে পড়া হবে।


বর্ণনাকারী: