কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ
৩৫. যুহদ-দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তির বর্ণনা
হাদীস নং: ৪১৪৫
আন্তর্জাতিক নং: ৪১৪৫
মুহাম্মাদ এর পরিবার-পরিজনের জীবন-যাপন পদ্ধতি
৪১৪৫। আবু বাকর ইবন আবু শায়বা (রাহঃ)...... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর পরিবার পরিজনদের বেলায় এমন মাসও অতিবাহিত হতো যে, তার গৃহগুলোর কোনটি থেকে ধুয়া বের হতে দেখা যেতো না। (আবু সালাম (রাযিঃ) বলেন) ঃ আমি জিজ্ঞাসা করলাম ঃ তখন তাদের আহার্য কি ছিল ? তিনি বললেন ঃ দু'টো কালো রং এর জিনিস-খিজুর ও পানি। তবে আমাদের আনাসারী সৎ প্রতিবেশীরা বকরী পালন করতেন এবং বকরীর দুধ হাদিয়া হিসেবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট পাঠাতেন। রাবী মুহাম্মাদ ইবন আমর (যিনি আবু সালামা থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন) বলেন, তাদের নয়টি গৃহ ছিল। (নয়জন উন্মুহাতুল মু'মিনীনের জন্য নয়টি পৃথক কামরা ছিল)
بَاب مَعِيشَةِ آلِ مُحَمَّدٍ ﷺ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ لَقَدْ كَانَ يَأْتِي عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ ـ صلى الله عليه وسلم ـ الشَّهْرُ مَا يُرَى فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِهِ الدُّخَانُ . قُلْتُ فَمَا كَانَ طَعَامُهُمْ قَالَتِ الأَسْوَدَانِ التَّمْرُ وَالْمَاءُ غَيْرَ أَنَّهُ كَانَ لَنَا جِيرَانٌ مِنَ الأَنْصَارِ جِيرَانُ صِدْقٍ وَكَانَتْ لَهُمْ رَبَائِبُ فَكَانُوا يَبْعَثُونَ إِلَيْهِ أَلْبَانَهَا . قَالَ مُحَمَّدٌ وَكَانُوا تِسْعَةَ أَبْيَاتٍ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. থেকে এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন তাঁর ভাগিনা উরওয়া রহ, তাঁর বড় বোন হযরত আসমা রাযি.-এর পুত্র। তিনি একজন বিশিষ্ট তাবি'ঈ। আম্মাজান রাযি, তাঁর কাছে অভাব-অনটনের বর্ণনা প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন যে, পরপর তিন চাঁদ অর্থাৎ দু'মাস এভাবে কাটত যে, আমাদের কারও চুলায় আগুন জ্বলত না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যখন ওফাত হয়, তখন তাঁর ৯ জন স্ত্রী জীবিত ছিলেন। তাঁদের কারও ঘরেই রান্না হতো না। কারণ রান্না করার মত কিছু থাকত না।
আম্মাজান রাযি. এ কথা বলছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের অনেক পরে। এটা কোনও অভিযোগ নয়। বরং ভাগিনাকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনপদ্ধতি শিক্ষা দিচ্ছেন। তাঁকে তাঁর জীবনবোধ সম্পর্কে অবহিত করছেন যে, দুনিয়ার প্রতি কেমন নিরাসক্ত তিনি ছিলেন।
উরওয়া রহ, জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে খালাম্মা কী খেয়ে আপনাদের জীবন কাটত? তিনি বললেন- الأسودان التمر والماء (কালো দুই বস্তু- খেজুর ও পানি)। খেজুর ও পানিকে একত্রে দুই কালো বস্তু বলা হয়েছে। খেজুর কালো হয় বটে, বিশেষত আজওয়া খেজুর, কিন্তু পানি তো কালো নয়। তাহলে একসঙ্গে দু'টোকে কালো বলা হল কেন? আসলে এটা আরবী ভাষারীতি। একসঙ্গে দুই বস্তুর উল্লেখ করতে গিয়ে একটির জন্য ব্যবহৃত শব্দ বা একটির নাম অপরটির জন্যও ব্যবহার করা হয় এবং একসঙ্গে দু'টোকে সেই এক শব্দে বা এক নামে উল্লেখ করা হয়। যেমন বলা হয় قمرين (চাঁদদ্বয়) অর্থাৎ চন্দ্র ও সূর্য। এমনিভাবে عمرين (উমরদ্বয়) অর্থাৎ হযরত আবু বকর রাযি. ও হযরত উমর রাযি.।
তো খেজুর ও পানিই ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারবর্গের নিয়মিত খাবার। ব্যতিক্রম হতো কেবল তখন, যখন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কিছু আসত। সে সম্পর্কে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন
إلا أنه قد كان لرسول الله ﷺ جيران من الأنصار، وكانت لهم منائح ، وكانوا يرسلون إلى رسول الله ﷺ من ألبانها فيسقينا
(অবশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতিপয় আনসার প্রতিবেশী ছিল। তাদের দুধের উটনী ছিল। তারা তার দুধ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পাঠাত। তিনি আমাদেরকে তা পান করাতেন)। এভাবে তাঁদের মাঝেমধ্যে দুধ পান করা হতো। তা না হলে খেজুর ও পানি খেয়েই তাঁদের দিন কাটত মাসের পর মাস। এমনই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের দৈনন্দিন খাবারের অবস্থা, আর এভাবেই তিনি তাঁর পূতঃপবিত্র স্ত্রীদের নিয়ে চলেছেন। তাঁদেরও ছিল অসামান্য ধৈর্য; বরং ছিল আপন জীবনমানের উপর পরিতৃপ্তি ও পরিতুষ্টি। ফলে তাঁরা পরবর্তীকালের মুসলিমসাধারণের জন্য আদর্শ হয়ে আছেন। বৈষয়িক ও চারিত্রিক দিক থেকে একজন মুসলিম নারীর কেমন হতে হয়, তার সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষা কেবল তাঁদের জীবনেই পাওয়া যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জীবনের কষ্ট-ক্লেশের কথা অভিযোগরূপে না হয়ে যদি অন্যের শিক্ষাদানের জন্য প্রকাশ করা হয়, তবে তাতে কোনও দোষ নেই। বরং এরূপ প্রয়োজনে তা প্রকাশের অবকাশ রয়েছে।
খ. নবী-জীবনের কষ্ট-ক্লেশ ও কৃচ্ছতার মধ্যে আমাদের জন্য রয়েছে অনেক বড় সান্ত্বনা ও শোকরগুযারীর সবক।
গ. প্রতিবেশীদের মধ্যে হাদিয়া বিনিময় করা সুন্নত। বিশেষত কোনও প্রতিবেশী যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তবে তাকে হাদিয়া দেওয়াই চাই।
ঘ. বুযুর্গ ও আল্লাহওয়ালা প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়া খায়র ও বরকতের কারণ।
আম্মাজান রাযি. এ কথা বলছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের অনেক পরে। এটা কোনও অভিযোগ নয়। বরং ভাগিনাকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনপদ্ধতি শিক্ষা দিচ্ছেন। তাঁকে তাঁর জীবনবোধ সম্পর্কে অবহিত করছেন যে, দুনিয়ার প্রতি কেমন নিরাসক্ত তিনি ছিলেন।
উরওয়া রহ, জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে খালাম্মা কী খেয়ে আপনাদের জীবন কাটত? তিনি বললেন- الأسودان التمر والماء (কালো দুই বস্তু- খেজুর ও পানি)। খেজুর ও পানিকে একত্রে দুই কালো বস্তু বলা হয়েছে। খেজুর কালো হয় বটে, বিশেষত আজওয়া খেজুর, কিন্তু পানি তো কালো নয়। তাহলে একসঙ্গে দু'টোকে কালো বলা হল কেন? আসলে এটা আরবী ভাষারীতি। একসঙ্গে দুই বস্তুর উল্লেখ করতে গিয়ে একটির জন্য ব্যবহৃত শব্দ বা একটির নাম অপরটির জন্যও ব্যবহার করা হয় এবং একসঙ্গে দু'টোকে সেই এক শব্দে বা এক নামে উল্লেখ করা হয়। যেমন বলা হয় قمرين (চাঁদদ্বয়) অর্থাৎ চন্দ্র ও সূর্য। এমনিভাবে عمرين (উমরদ্বয়) অর্থাৎ হযরত আবু বকর রাযি. ও হযরত উমর রাযি.।
তো খেজুর ও পানিই ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারবর্গের নিয়মিত খাবার। ব্যতিক্রম হতো কেবল তখন, যখন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কিছু আসত। সে সম্পর্কে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন
إلا أنه قد كان لرسول الله ﷺ جيران من الأنصار، وكانت لهم منائح ، وكانوا يرسلون إلى رسول الله ﷺ من ألبانها فيسقينا
(অবশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতিপয় আনসার প্রতিবেশী ছিল। তাদের দুধের উটনী ছিল। তারা তার দুধ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পাঠাত। তিনি আমাদেরকে তা পান করাতেন)। এভাবে তাঁদের মাঝেমধ্যে দুধ পান করা হতো। তা না হলে খেজুর ও পানি খেয়েই তাঁদের দিন কাটত মাসের পর মাস। এমনই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের দৈনন্দিন খাবারের অবস্থা, আর এভাবেই তিনি তাঁর পূতঃপবিত্র স্ত্রীদের নিয়ে চলেছেন। তাঁদেরও ছিল অসামান্য ধৈর্য; বরং ছিল আপন জীবনমানের উপর পরিতৃপ্তি ও পরিতুষ্টি। ফলে তাঁরা পরবর্তীকালের মুসলিমসাধারণের জন্য আদর্শ হয়ে আছেন। বৈষয়িক ও চারিত্রিক দিক থেকে একজন মুসলিম নারীর কেমন হতে হয়, তার সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষা কেবল তাঁদের জীবনেই পাওয়া যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জীবনের কষ্ট-ক্লেশের কথা অভিযোগরূপে না হয়ে যদি অন্যের শিক্ষাদানের জন্য প্রকাশ করা হয়, তবে তাতে কোনও দোষ নেই। বরং এরূপ প্রয়োজনে তা প্রকাশের অবকাশ রয়েছে।
খ. নবী-জীবনের কষ্ট-ক্লেশ ও কৃচ্ছতার মধ্যে আমাদের জন্য রয়েছে অনেক বড় সান্ত্বনা ও শোকরগুযারীর সবক।
গ. প্রতিবেশীদের মধ্যে হাদিয়া বিনিময় করা সুন্নত। বিশেষত কোনও প্রতিবেশী যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তবে তাকে হাদিয়া দেওয়াই চাই।
ঘ. বুযুর্গ ও আল্লাহওয়ালা প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়া খায়র ও বরকতের কারণ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
