আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৩১১৮
১৯৪৭. আল্লাহ তাআলার বাণীঃ নিশ্চয় এক পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও রাসূলের। (সূরা আনফাল ৮:৪১) তা বণ্টনের ইখতিয়ার রাসুলেরই।
২৮৯৮। আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ (রাহঃ) .... খাওলাহ আনসারীয়া (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নবী (ﷺ)- কে বলতে শুনেছি যে, কিছু লোক আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত।’
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরকারি বা জাতীয় সম্পদে তসরুফ করার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এটা ভবিষ্যদ্বাণীও হতে পারে যে, এমন একটা সময় আসবে, যখন লোকে সরকারি সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করতে কোনও পরওয়া করবে না। তিনি সাবধান করছেন যারা এমন করবে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
আবার এমনও হতে পারে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যমানায় নবদীক্ষিত কোনও কোনও মুসলিমের পক্ষ থেকে জনগণের অর্থ-সম্পদ ব্যবহারে শিথিলতা দেখা যাচ্ছিল। এ হাদীছ দ্বারা তিনি তাদেরকে সতর্ক করেছেন। তাছাড়া এটা তখনকার মুনাফিকদেরও খাসলাত হতে পারে।
কোন প্রেক্ষাপটে তিনি এ সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন তা অনুসন্ধানের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- যে কাজটি সম্পর্কে এ সাবধানবাণী সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা। এ হাদীছটি তিরমিযী শরীফেও উদ্ধৃত হয়েছে। তার ভাষা নিম্নরূপ -
إِنَّ هَذَا الْمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ ، مَنْ أَصَابَهُ بِحَقِّهِ بُورِكَ لَهُ فِيهِ ، وَرُبَّ مُتَخَوِّضٍ فِيمَا شَاءَتْ نَفْسُهُ مِنْ مَالِ اللهِ وَرَسُولِهِ لَيْسَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلاَّ النَّارُ.
এই (দুনিয়ার) অর্থ-সম্পদ চাকচিক্যময় ও সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা ন্যায্যভাবে গ্রহণ করে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয়। কিছু লোক এমন আছে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মালামালে নিজ ইচ্ছামত হস্তক্ষেপ করে। কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন ছাড়া কিছু নেই। জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৩৭৪
এতে প্রথমে সতর্ক করা হয়েছে যে, দুনিয়ার ধন-সম্পদ অত্যন্ত লোভনীয়। মানুষকে শুধু আকৃষ্ট করে। এ আকর্ষণ দ্বারা মানুষকে পরীক্ষা করা হয় যে, সে এর লোভে পড়ে নীতিবোধ হারিয়ে ফেলে, না ন্যায়-নীতিতে প্রতিষ্ঠিত থাকে। যারা নিজেদের মুমিন-মুসলিম বলে পরিচয় দেয় এবং আখিরাতে জান্নাতের আশা রাখে, তাদের কিছুতেই অর্থ-সম্পদের আকর্ষণে ন্যায়-নীতি বোধ হারিয়ে ফেলা যাবে না; বরং নিজেদেরকে ন্যায়-নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে হবে। যদি তা রাখা যায় এবং হালাল পন্থায় যা অর্জিত হয় তাতেই সন্তুষ্ট থাকা হয়, তবে আল্লাহ তা'আলা অল্প সম্পদেও বরকত দান করবেন। ফলে তা দ্বারা প্রয়োজন পূরণ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে ওই চাকচিক্যে ভুলে গিয়ে যদি ন্যায়নীতি বিসর্জন দেওয়া হয় এবং লোভে পড়ে অন্যায়ভাবে তা হস্তগত করা হয়, তবে কেবল যে বরকত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে তাই নয়, আখিরাতেও কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে, জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে।
কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে দুনিয়ার চাকচিক্য ও তার প্রতি নফসের আকর্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে যে, মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য ওই চাকচিক্যের ফাঁদে পা না দিয়ে আখিরাতের মুক্তিকে লক্ষ্যবস্তু বানানো এবং জান্নাতের অনন্ত অকল্পনীয় নি'আমত লাভের জন্য সচেষ্ট থাকা। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاللَّهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الْمَآبِ (14)
"মানুষের জন্য ওইসকল বস্তুর আসক্তিকে মনোরম করা হয়েছে, যা তার প্রবৃত্তির চাহিদা মোতাবেক অর্থাৎ নারী, সন্তান, রাশিকৃত সোনা-রূপা, চিহ্নিত অশ্বরাজি, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামার। এসব ইহজীবনের ভোগসামগ্রী। (কিন্তু) স্থায়ী পরিণামের সৌন্দর্য কেবল আল্লাহরই কাছে।" সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ১৪
দুনিয়ার এসব লোভনীয় বস্তুসামগ্রীর কথা উল্লেখ করার পর আল্লাহ তাআলা আখিরাতের মহা নি'আমত লাভের প্রতি এই বলে উৎসাহ দান করছেন যে -
قُلْ أَؤُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرٍ مِنْ ذَلِكُمْ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ (15)
“বল, আমি কি তোমাদেরকে এসব অপেক্ষা উৎকৃষ্ট জিনিসের সংবাদ দেব? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে এমন বাগ-বাগিচা, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত, যেখানে তারা সর্বদা থাকবে এবং (তাদের জন্য আছে) পবিত্র স্ত্রী ও আল্লাহর পক্ষ হতে সন্তুষ্টি। আল্লাহ সকল বান্দাকে ভালোভাবে দেখছেন। সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ১৫
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত হাকীম ইবন হিযাম রাযি.-কে লক্ষ্য করে উপদেশ দেন-
يَا حَكِيمُ! إِنَّ هَذَا المَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ، فَمَنْ أَخَذَهُ بِطِيبِ نَفْسٍ بُورِكَ لَهُ فِيهِ، وَمَنْ أَخَذَهُ بِإِشْرَافِ نَفْسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ، وَكَانَ كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ
হে হাকীম! এই সম্পদ চাকচিক্যময় ও সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করে মনের পবিত্রতার সাথে (অর্থাৎ লোভ ছাড়া এবং অন্যের প্রতি জুলুম না করে), তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করে মনের আগ্রহ ও লোভের সাথে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয় না। সে ওই ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তৃপ্ত হয় না। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৪৪১: সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০৩৫; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৪৬৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫৩১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩২২০; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৫৬৩; মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ১৬৪০৭)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দুনিয়ার অর্থ-সম্পদ মুমিনদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। এর লোভে পড়ে কিছুতেই ন্যায়-নীতি বিসর্জন দেওয়া চলবে না।
খ. অর্থ-সম্পদ উপার্জন করতে হবে প্রয়োজন পূরণের জন্য, মনের লোভ মেটানোর জন্য নয়।
গ. অন্যায় ও হারাম উপার্জনে কোনও বরকত থাকে না।
ঘ. হারাম উপার্জনের পরিণাম জাহান্নামের শাস্তিভোগ।
৩. হালাল উপার্জনে সন্তুষ্ট থাকার দ্বারা দুনিয়ায় বরকত লাভ হয় এবং আখিরাতে জান্নাতের অফুরন্ত নি'আমত লাভের আশা থাকে।
আল্লাহ জাল্লা শানুহু আমাদের অন্তরকে দুনিয়ার লোভ-লালসা থেকে মুক্ত করে দিন, হারাম উপার্জন থেকে হেফাজত করুন, অন্তরে কানা'আত ও পরিতুষ্টির গুণ দিয়ে দিন এবং আখিরাতে যাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতের অফুরন্ত নি'আমত লাভ করা যায়— সে লক্ষ্যে শরী'আতের যথাযথ অনুসরণ ও নেক আমলে লেগে থাকার তাওফীক দান করুন।
আবার এমনও হতে পারে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যমানায় নবদীক্ষিত কোনও কোনও মুসলিমের পক্ষ থেকে জনগণের অর্থ-সম্পদ ব্যবহারে শিথিলতা দেখা যাচ্ছিল। এ হাদীছ দ্বারা তিনি তাদেরকে সতর্ক করেছেন। তাছাড়া এটা তখনকার মুনাফিকদেরও খাসলাত হতে পারে।
কোন প্রেক্ষাপটে তিনি এ সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন তা অনুসন্ধানের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- যে কাজটি সম্পর্কে এ সাবধানবাণী সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা। এ হাদীছটি তিরমিযী শরীফেও উদ্ধৃত হয়েছে। তার ভাষা নিম্নরূপ -
إِنَّ هَذَا الْمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ ، مَنْ أَصَابَهُ بِحَقِّهِ بُورِكَ لَهُ فِيهِ ، وَرُبَّ مُتَخَوِّضٍ فِيمَا شَاءَتْ نَفْسُهُ مِنْ مَالِ اللهِ وَرَسُولِهِ لَيْسَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلاَّ النَّارُ.
এই (দুনিয়ার) অর্থ-সম্পদ চাকচিক্যময় ও সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা ন্যায্যভাবে গ্রহণ করে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয়। কিছু লোক এমন আছে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মালামালে নিজ ইচ্ছামত হস্তক্ষেপ করে। কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন ছাড়া কিছু নেই। জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৩৭৪
এতে প্রথমে সতর্ক করা হয়েছে যে, দুনিয়ার ধন-সম্পদ অত্যন্ত লোভনীয়। মানুষকে শুধু আকৃষ্ট করে। এ আকর্ষণ দ্বারা মানুষকে পরীক্ষা করা হয় যে, সে এর লোভে পড়ে নীতিবোধ হারিয়ে ফেলে, না ন্যায়-নীতিতে প্রতিষ্ঠিত থাকে। যারা নিজেদের মুমিন-মুসলিম বলে পরিচয় দেয় এবং আখিরাতে জান্নাতের আশা রাখে, তাদের কিছুতেই অর্থ-সম্পদের আকর্ষণে ন্যায়-নীতি বোধ হারিয়ে ফেলা যাবে না; বরং নিজেদেরকে ন্যায়-নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে হবে। যদি তা রাখা যায় এবং হালাল পন্থায় যা অর্জিত হয় তাতেই সন্তুষ্ট থাকা হয়, তবে আল্লাহ তা'আলা অল্প সম্পদেও বরকত দান করবেন। ফলে তা দ্বারা প্রয়োজন পূরণ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে ওই চাকচিক্যে ভুলে গিয়ে যদি ন্যায়নীতি বিসর্জন দেওয়া হয় এবং লোভে পড়ে অন্যায়ভাবে তা হস্তগত করা হয়, তবে কেবল যে বরকত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে তাই নয়, আখিরাতেও কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে, জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে।
কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে দুনিয়ার চাকচিক্য ও তার প্রতি নফসের আকর্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে যে, মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য ওই চাকচিক্যের ফাঁদে পা না দিয়ে আখিরাতের মুক্তিকে লক্ষ্যবস্তু বানানো এবং জান্নাতের অনন্ত অকল্পনীয় নি'আমত লাভের জন্য সচেষ্ট থাকা। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاللَّهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الْمَآبِ (14)
"মানুষের জন্য ওইসকল বস্তুর আসক্তিকে মনোরম করা হয়েছে, যা তার প্রবৃত্তির চাহিদা মোতাবেক অর্থাৎ নারী, সন্তান, রাশিকৃত সোনা-রূপা, চিহ্নিত অশ্বরাজি, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামার। এসব ইহজীবনের ভোগসামগ্রী। (কিন্তু) স্থায়ী পরিণামের সৌন্দর্য কেবল আল্লাহরই কাছে।" সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ১৪
দুনিয়ার এসব লোভনীয় বস্তুসামগ্রীর কথা উল্লেখ করার পর আল্লাহ তাআলা আখিরাতের মহা নি'আমত লাভের প্রতি এই বলে উৎসাহ দান করছেন যে -
قُلْ أَؤُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرٍ مِنْ ذَلِكُمْ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ (15)
“বল, আমি কি তোমাদেরকে এসব অপেক্ষা উৎকৃষ্ট জিনিসের সংবাদ দেব? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে এমন বাগ-বাগিচা, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত, যেখানে তারা সর্বদা থাকবে এবং (তাদের জন্য আছে) পবিত্র স্ত্রী ও আল্লাহর পক্ষ হতে সন্তুষ্টি। আল্লাহ সকল বান্দাকে ভালোভাবে দেখছেন। সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ১৫
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত হাকীম ইবন হিযাম রাযি.-কে লক্ষ্য করে উপদেশ দেন-
يَا حَكِيمُ! إِنَّ هَذَا المَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ، فَمَنْ أَخَذَهُ بِطِيبِ نَفْسٍ بُورِكَ لَهُ فِيهِ، وَمَنْ أَخَذَهُ بِإِشْرَافِ نَفْسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ، وَكَانَ كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ
হে হাকীম! এই সম্পদ চাকচিক্যময় ও সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করে মনের পবিত্রতার সাথে (অর্থাৎ লোভ ছাড়া এবং অন্যের প্রতি জুলুম না করে), তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করে মনের আগ্রহ ও লোভের সাথে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয় না। সে ওই ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তৃপ্ত হয় না। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৪৪১: সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০৩৫; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৪৬৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫৩১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩২২০; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৫৬৩; মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ১৬৪০৭)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দুনিয়ার অর্থ-সম্পদ মুমিনদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। এর লোভে পড়ে কিছুতেই ন্যায়-নীতি বিসর্জন দেওয়া চলবে না।
খ. অর্থ-সম্পদ উপার্জন করতে হবে প্রয়োজন পূরণের জন্য, মনের লোভ মেটানোর জন্য নয়।
গ. অন্যায় ও হারাম উপার্জনে কোনও বরকত থাকে না।
ঘ. হারাম উপার্জনের পরিণাম জাহান্নামের শাস্তিভোগ।
৩. হালাল উপার্জনে সন্তুষ্ট থাকার দ্বারা দুনিয়ায় বরকত লাভ হয় এবং আখিরাতে জান্নাতের অফুরন্ত নি'আমত লাভের আশা থাকে।
আল্লাহ জাল্লা শানুহু আমাদের অন্তরকে দুনিয়ার লোভ-লালসা থেকে মুক্ত করে দিন, হারাম উপার্জন থেকে হেফাজত করুন, অন্তরে কানা'আত ও পরিতুষ্টির গুণ দিয়ে দিন এবং আখিরাতে যাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতের অফুরন্ত নি'আমত লাভ করা যায়— সে লক্ষ্যে শরী'আতের যথাযথ অনুসরণ ও নেক আমলে লেগে থাকার তাওফীক দান করুন।


বর্ণনাকারী: