আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৯৯৬
১৮৭৫. মুসাফিরের জন্য তা-ই লিখিত হবে, যা সে আমল করত ইকামত (আবাস) অবস্থায়
২৭৮৮। মাতার ইবনে ফযল (রাহঃ) .... আবু বুরদা ইবনে আবু মুসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এবং ইয়াযিদ ইবনে আবু কাবশা (রাযিঃ) সফরে ছিলেন। আর ইয়াযিদ (রাযিঃ) মুসাফির অবস্থায় রোযা রাখতেন। আবু বুরদা (রাযিঃ) তাঁকে বললেন, আমি আবু মুসা (আশআরী) (রাযিঃ)- কে একাধিকবার বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন বান্দা রোগাক্রান্ত হয় কিংবা সফর করে, তখন তার জন্য তা-ই লিখিত হয়, যা সে মুকীম অবস্থায় বা সুস্থ অবস্থায় আমল করত।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য- মানুষ সুস্থ অবস্থায় যখন কোনও নেক আমলে অভ্যস্ত থাকে, তারপর অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে সে আমলটি করতে না পারে, তবে তার ছাওয়াব লেখা বন্ধ হয় না; বরং সুস্থ অবস্থায় আমল করে যে ছাওয়াব পেত, অনুরূপ ছাওয়াব এখনও তার আমলনামায় লেখা হবে। উদাহরণত তার অভ্যাস ছিল জামাতের সঙ্গে নামায পড়া। আর জামাতে নামায পড়লে সাতাশ (২৭) গুণ ছাওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু এখন অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে সে জামাতে যেতে পারছে না। ঘরে একাকী নামায পড়ছে। আল্লাহ তা'আলা বড়ই মেহেরবান। তিনি বান্দার এ ওযরকে কেবল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখেন না; বরং বাড়তি দয়া এই করেন যে, জামাতে নামায পড়লে সে যে ছাওয়াব পেত, এখন একাকী পড়ার দ্বারাই সমপরিমাণ ছাওয়াব তাকে দিয়ে দেন।

ওই একই কথা সফরের ক্ষেত্রেও। বাড়িতে থাকা অবস্থায় এক ব্যক্তির নফল পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা, রোগী দেখতে যাওয়া এরকম বিভিন্ন নেক আমলের অভ্যাস ছিল। সফরে থাকার কারণে তার পক্ষে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আল্লাহ তা'আলা তাকে মাহরুম করেন না; বরং নিজ দয়ায় তাকে ওই সকল আমলের ছাওয়াব দিয়ে দেন।

এর দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ উম্মতকে সুস্থ ও মুকীম থাকা অবস্থায় নেক আমলে যত্নবান থাকতে উৎসাহিত করছেন, যাতে সফর ও অসুস্থতা অবস্থায় ছাওয়াব থেকে বঞ্চিত না থাকে।

এর দ্বারা বোঝা যায়, সফরের প্রয়োজন না পড়া ও বাড়িতে থাকতে পারা এবং সুস্থ- সবল থাকা আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় নি'আমত। যে ব্যক্তি এ নি'আমতকে কাজে লাগাবে অর্থাৎ নেক আমলে ব্যবহার করবে, সে বড় সৌভাগ্যবান। কেননা যখন তার এ নি'আমতটি থাকবে না, অর্থাৎ কোনও কারণে সফরের প্রয়োজন হবে কিংবা আল্লাহ না করুন অসুস্থ হয়ে পড়বে, তখন আমল করতে না পেরেও আমল করার সমান ছাওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।

পক্ষান্তরে কেউ যদি এ নি'আমতকে কাজে না লাগায়, সুস্থ থাকা সত্ত্বেও 'ইবাদত- বন্দেগী না করে এবং মুকীম থাকা অবস্থায়ও গাফলাতি করে, তার কতই না দুর্ভাগ্য! সে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সৎকর্মের ছাওয়াব হাসিল করল না। আবার তা হাসিল না করার কারণে যখন সুযোগ হারাল, অর্থাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল বা সফরে চলে গেল, তখনও ছাওয়াব পাওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত থাকল। এরূপ দুর্ভাগ্যের শিকার যাতে না হতে হয় সেজন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিত সুস্থ থাকা অবস্থায় বেশি বেশি নেক কাজ করা এবং মুকীম থাকার সময়টাকে সৎকাজে ব্যবহার করা। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন 'উমর রাযি. কী সুন্দর উপদেশই না দিয়েছেন! তিনি বলেন-

خُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ

“তুমি তোমার সুস্থতাকালে অর্জন করে নাও অসুস্থতাকালীন সময়ের জন্য এবং তোমার জীবন থেকে সঞ্চয় করে নাও তোমার মৃত্যুপরবর্তী জীবনের জন্য।” সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৪১৬। জামে' তিরমিযী, হাদীছ নং ২৩৩

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা বোঝা গেল সুস্থ থাকা ও মুকীম অবস্থায় থাকা অনেক বড় নি'আমত। প্রত্যেকের উচিত এর সদ্ব্যবহার করা। অর্থাৎ এ অবস্থায় যত বেশি সম্ভব নেক আমলে রত থাকা।

খ. এ হাদীছ দ্বারাও আল্লাহ তা'আলার রহমতের পরিচয় পাওয়া যায় যে, তিনি অসুস্থতা ও সফরকালেও কিভাবে বান্দার ছাওয়াব অর্জনের পথ খোলা রেখেছেন।

গ. সুস্থ ও মুকীম থাকা অবস্থায় নেক আমল না করার ক্ষতি কত ব্যাপক তাও এর দ্বারা বোঝা গেল, যেহেতু এরূপ ক্ষেত্রে আমলের ছাওয়াব না এ সময় পাওয়া গেল, আর না পাওয়া যাবে অসুস্থাবস্থায় ও সফরকালে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন