আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৯৫৪
১৮৪৮. সফরকালে বিদায় দান করা। ইবনে ওয়াহাব (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা(রাযিঃ)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে এক অভিযানে প্রেরণ করেন। কুরাইশদের দু‘জন লোকের নাম উল্লেখ করে আমাদেরকে বললেন, তোমরা যদি অমুক ও অমুকের সাক্ষাত পাও তবে তাদেরকে আগুনে জ্বালিয়ে ফেলবে। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, তারপর আমরা রওয়ানা করার প্রাক্কালে বিদায় গ্রহণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদেরকে অমুক ও আমুককে আগুনে জ্বালিয়ে ফেলতে আদেশ করেছিলাম, কিন্তু আগুনের মাধ্যমে শাস্তি দান করা আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কারো অধিকার নেই। তাই তোমরা যদি তাদেরকে পাকড়াও করতে সক্ষম হও, তবে তাদের উভয়কে হত্যা করবে।
২৭৫০। মুসাদ্দাদ এবং মুহাম্মাদ ইবনে সাব্বাহ (রাহঃ) .... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, পাপ কার্যের আদেশ না করা পর্যন্ত ইমামের কথা শোনা ও তার আদেশ মান্য করা অপরিহার্য। তবে পাপ কার্যের আদেশ করা হলে তা শোনা ও আনুগত্য করা যাবে না।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে পাপকর্মের হুকুম ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে শাসক-প্রশাসকের আনুগত্য করার অপরিহার্যতা বর্ণনা করা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ 'প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির (শাসকের আদেশ) শ্রবণ ও আনুগত্য করা অবশ্যকর্তব্য'। শ্রবণ করা মানে শাসক যা বলে তা গ্রহণ করা। আনুগত করা মানে তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। এটা মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য। তার মানে এটা ইসলামের নির্দেশ। কাজেই যে ব্যক্তি নিজেকে ইসলামের অনুসারী বলে দাবি করে, তার কর্তব্য মুসলিম সরকারের বৈধ সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। এটা যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় প্রযোজ্য ছিল, তেমনি তাঁর পরেও কিয়ামত পর্যন্ত সব কালেই সমান প্রযোজ্য। আমীর তথা খলীফা, তার প্রতিনিধি ও বিচারকের আদেশ-নিষেধ পালন করা সব কালেই জরুরি। তা অমান্য করা কেবল সরকারি আইন অমান্য করাই নয়; বরং ইসলামের নির্দেশ অমান্য করারও শামিল।
فِيمَا أَحَبَّ وَكَره (সে যা পসন্দ করে তাতেও এবং যা অপসন্দ করে তাতেও)। অর্থাৎ শাসকের হুকুম মনঃপূত হোক বা নাই হোক, নিজ রুচি-প্রকৃতির অনুকূল হোক বা প্রতিকূল, সর্বাবস্থায় তা মেনে চলতে হবে।
إِلَّا أَنْ يُؤْمَر بِمَعْصِية (যতক্ষণ না পাপকর্মের আদেশ করা হয়)। অর্থাৎ যদি সরকার এমন কোনও কাজের হুকুম করে, যা শরী'আত অনুমোদন করে না, ফলে তাতে আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এবং তা পাপকর্মরূপে গণ্য হয়, তবে আলাদা কথা। অর্থাৎ তা মানা যাবে না। যেমন কোনও নির্দোষ ব্যক্তিকে হত্যা করার হুকুম। রাষ্ট্রপ্রধান যদি তার আঞ্চলিক কোনও প্রতিনিধিকে, বিচারককে বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কিংবা সাধারণ কোনও নাগরিককে হুকুম করে যে, অমুককে হত্যা করো, অথচ সে হত্যার উপযুক্ত হওয়ার মতো কোনও অপরাধ করেনি, তবে রাষ্ট্রপ্রধানের এ হুকুম পালন করা কারও জন্যই জায়েয হবে না। এমনিভাবে সাজানো মামলা দেওয়া, নামায না পড়া, অন্যায়ভাবে মালক্রোক করা, মদপান করা, নাচ-গান করা এবং অনুরূপ যে-কোনও শরী'আতবিরোধী কাজের হুকুম করা হলে কারও জন্যই সে হুকুম পালন করা জায়েয নয়। হাদীছের পরবর্তী বাক্যে সুস্পষ্টভাবেই এটা বলে দেওয়া হয়েছে যে-
فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَة (যখন কোনও পাপকর্মের আদেশ করা হবে, তখন কোনও শ্রবণ ও আনুগত্য নেই)। অর্থাৎ যে কাজ করলে আল্লাহ তা'আলার অবাধ্যতা হয়, সরকার যদি তা করার হুকুম দেয়, তবে তা শোনা ও মানা যাবে না। অর্থাৎ এরূপ ক্ষেত্রে তোমরা শাসকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে না। কেননা যে কাজে আল্লাহর অবাধ্যতা হয়, তাতে শাসকের আনুগত্য করা জায়েয নয়। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوْقٍ فِي مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ
‘সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতা হয় এমন কাজে কোনও মাখলুকের আনুগত্য নেই। (মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩৩৭১৭; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৩৭৮৮; মুসনাদে আহমাদ: ৩৮৮৯; মুসনাদুল বাযযার: ১৯৮৮; শারহুস সুন্নাহ: ২৪৫৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর :৩৮১)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শাসক-প্রশাসকের আদেশ মনঃপূত হোক বা নাই হোক, সর্বাবস্থায় পালন কর জরুরি।
খ. সরকারের বৈধ আদেশ পালন করা কেবল রাষ্ট্রীয় বিষয় নয়; শরী'আতেরও হুকুম।
গ. সরকারের শরী'আতবিরোধী আদেশ পালন করা জায়েয নয়।
عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ 'প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির (শাসকের আদেশ) শ্রবণ ও আনুগত্য করা অবশ্যকর্তব্য'। শ্রবণ করা মানে শাসক যা বলে তা গ্রহণ করা। আনুগত করা মানে তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। এটা মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য। তার মানে এটা ইসলামের নির্দেশ। কাজেই যে ব্যক্তি নিজেকে ইসলামের অনুসারী বলে দাবি করে, তার কর্তব্য মুসলিম সরকারের বৈধ সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। এটা যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় প্রযোজ্য ছিল, তেমনি তাঁর পরেও কিয়ামত পর্যন্ত সব কালেই সমান প্রযোজ্য। আমীর তথা খলীফা, তার প্রতিনিধি ও বিচারকের আদেশ-নিষেধ পালন করা সব কালেই জরুরি। তা অমান্য করা কেবল সরকারি আইন অমান্য করাই নয়; বরং ইসলামের নির্দেশ অমান্য করারও শামিল।
فِيمَا أَحَبَّ وَكَره (সে যা পসন্দ করে তাতেও এবং যা অপসন্দ করে তাতেও)। অর্থাৎ শাসকের হুকুম মনঃপূত হোক বা নাই হোক, নিজ রুচি-প্রকৃতির অনুকূল হোক বা প্রতিকূল, সর্বাবস্থায় তা মেনে চলতে হবে।
إِلَّا أَنْ يُؤْمَر بِمَعْصِية (যতক্ষণ না পাপকর্মের আদেশ করা হয়)। অর্থাৎ যদি সরকার এমন কোনও কাজের হুকুম করে, যা শরী'আত অনুমোদন করে না, ফলে তাতে আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এবং তা পাপকর্মরূপে গণ্য হয়, তবে আলাদা কথা। অর্থাৎ তা মানা যাবে না। যেমন কোনও নির্দোষ ব্যক্তিকে হত্যা করার হুকুম। রাষ্ট্রপ্রধান যদি তার আঞ্চলিক কোনও প্রতিনিধিকে, বিচারককে বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কিংবা সাধারণ কোনও নাগরিককে হুকুম করে যে, অমুককে হত্যা করো, অথচ সে হত্যার উপযুক্ত হওয়ার মতো কোনও অপরাধ করেনি, তবে রাষ্ট্রপ্রধানের এ হুকুম পালন করা কারও জন্যই জায়েয হবে না। এমনিভাবে সাজানো মামলা দেওয়া, নামায না পড়া, অন্যায়ভাবে মালক্রোক করা, মদপান করা, নাচ-গান করা এবং অনুরূপ যে-কোনও শরী'আতবিরোধী কাজের হুকুম করা হলে কারও জন্যই সে হুকুম পালন করা জায়েয নয়। হাদীছের পরবর্তী বাক্যে সুস্পষ্টভাবেই এটা বলে দেওয়া হয়েছে যে-
فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَة (যখন কোনও পাপকর্মের আদেশ করা হবে, তখন কোনও শ্রবণ ও আনুগত্য নেই)। অর্থাৎ যে কাজ করলে আল্লাহ তা'আলার অবাধ্যতা হয়, সরকার যদি তা করার হুকুম দেয়, তবে তা শোনা ও মানা যাবে না। অর্থাৎ এরূপ ক্ষেত্রে তোমরা শাসকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে না। কেননা যে কাজে আল্লাহর অবাধ্যতা হয়, তাতে শাসকের আনুগত্য করা জায়েয নয়। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوْقٍ فِي مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ
‘সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতা হয় এমন কাজে কোনও মাখলুকের আনুগত্য নেই। (মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩৩৭১৭; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৩৭৮৮; মুসনাদে আহমাদ: ৩৮৮৯; মুসনাদুল বাযযার: ১৯৮৮; শারহুস সুন্নাহ: ২৪৫৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর :৩৮১)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শাসক-প্রশাসকের আদেশ মনঃপূত হোক বা নাই হোক, সর্বাবস্থায় পালন কর জরুরি।
খ. সরকারের বৈধ আদেশ পালন করা কেবল রাষ্ট্রীয় বিষয় নয়; শরী'আতেরও হুকুম।
গ. সরকারের শরী'আতবিরোধী আদেশ পালন করা জায়েয নয়।
