আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৯৫৬
১৮৫০. ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধ করা ও তাঁর মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন করা
২৭৫১। আবুল ইয়ামান (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে বলতে শুনেছি, আমরা সর্বশেষে আগমনকারী (পৃথিবীতে) সর্বাগ্রে প্রবেশকারী (জান্নাতে)। আর এ সনদেই বর্ণিত হয়েছে যে, (রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,) যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমার নফরমানী করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলারই নাফরমানী করল আর যে ব্যক্তি (শরীয়ত স্বীকৃত) আমীরের আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আমারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমীরের নাফরমানী করল সে ব্যক্তি আমারই নাফরমানী করল। ইমাম তো ঢাল স্বরূপ। তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ এবং তাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন করা হয়। অনন্তর যদি সে আল্লাহর তাকওয়ার নির্দেশ দেয় এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে, তবে তার জন্য এর প্রতিদান রয়েছে আর যদি সে এর বিপরীত করে তবে এর মন্দ পরিণতি তার উপরই বর্তাবে।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম তাঁর নিজের প্রতি উম্মতের আনুগত্য প্রদর্শনের গুরুত্ব তুলে ধরেন যে, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার অর্থ তিনি যা করতে আদেশ করেন তা করা এবং যা করতে নিষেধ করেন তা করা হতে বিরত থাকা। তাঁর আনুগত্য করার দ্বারা আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য হয় এ কারণে যে, তিনি যা-কিছু আদেশ-নিষেধ করেন তা আল্লাহর হুকুমেই করেন। কাজেই তাঁর আদেশ-নিষেধ মানার দ্বারা প্রকারান্তরে আল্লাহরই হুকুম পালন করা হয়। কথাটির এরকম ব্যাখ্যাও করা যায় যে, আল্লাহ তা'আলাই আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার হুকুম দিয়েছেন। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁর আনুগত্য করবে, প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহ তা'আলারই হুকুম মানবে। এভাবে তাঁর আনুগত্য করার দ্বারা আল্লাহ তা'আলারই আনুগত্য করা হয়।
অবাধ্যতার বিষয়টাও এরকমই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলারই অবাধ্যতা করল। তাঁর অবাধ্যতা করার অর্থ তিনি যা করতে আদেশ করেছেন তা না করা এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তাতে লিপ্ত হওয়া। এককথায় তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন না করা। এরূপ যে করে, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা'আলারই অবাধ্যতা করে।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করে, সে আমারই আনুগত্য করে। এর দ্বারা যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়োগকৃত আমীরকে বোঝানো হয়েছে, তেমনি পরবর্তীকালে যারা আমীর ও শাসকরূপে দায়িত্ব পালন করে, তাদেরকেও বোঝানো উদ্দেশ্য। কেননা শরী'আতসম্মতভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করলে তারাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়োগ করা আমীরেরই পর্যায়ভুক্ত। তাই তার আনুগত্য করাও জরুরি। মোটকথা আমীর বা শাসক যদি বৈধ হয়, তবে তার আনুগত্য করার দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই আনুগত্য করা হয়, যেহেতু তিনি তার আনুগত্য করার হুকুম দিয়েছেন। এমনিভাবে যদি কেউ আমীরের আনুগত্য না করে, তবে সে যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই আনুগত্য করা হতে বিরত থাকল, যেহেতু সে তার আনুগত্য না করার দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই হুকুম অমান্য করেছে।
হাদীছটিতে আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার প্রতি এতটা জোর দেওয়া হয়েছে এ কারণে যে, তার আনুগত্য করার দ্বারা উম্মতের ঐক্য ও সংহতি সুরক্ষিত থাকে। অন্যথায় উম্মতের মধ্যে বিভক্তি ও আত্মকলহের সৃষ্টি হয়, যা দীনের হাজারও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং উম্মতের অস্তিত্বও হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। তাই শাসক জালেম হলেও যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে বরখাস্ত করার শরী'আতসম্মত কারণ না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার আনুগত্য করা জরুরি।
হাদীছটির সারমর্ম দাঁড়াল, আল্লাহর অনুগত বান্দা হওয়ার জন্য তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুগত উম্মত হওয়ার জন্য আমীর ও শাসকের আনুগত্য করা অপরিহার্য। অর্থাৎ এ তিনও পর্যায়ের আনুগত্য পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। এর এক আনুগত্য পরিহার করে অন্য আনুগত্যের দাবি করার কোনও সুযোগ নেই। কেউ আমীরের বৈধ হুকুম অমান্য করে যদি বলে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করে থাকি, তবে তার সে কথা গ্রহণযোগ্য নয়। এমনিভাবে কেউ যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-নিষেধ তথা তাঁর হাদীছ ও সুন্নাহ অগ্রাহ্য করে আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য করার দাবি করে, তবে সে দাবিও সম্পূর্ণ অসত্য ও অবান্তর।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহ তা'আলার প্রতি অনুগত থাকার জন্য তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা তথা তাঁর সুন্নাহ মেনে চলা জরুরি।
খ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের একটা দিক হল আমীর ও শাসকের আনুগত্য করা ও তাদের অবাধ্যতা না করা।
অবাধ্যতার বিষয়টাও এরকমই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলারই অবাধ্যতা করল। তাঁর অবাধ্যতা করার অর্থ তিনি যা করতে আদেশ করেছেন তা না করা এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তাতে লিপ্ত হওয়া। এককথায় তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন না করা। এরূপ যে করে, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা'আলারই অবাধ্যতা করে।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করে, সে আমারই আনুগত্য করে। এর দ্বারা যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়োগকৃত আমীরকে বোঝানো হয়েছে, তেমনি পরবর্তীকালে যারা আমীর ও শাসকরূপে দায়িত্ব পালন করে, তাদেরকেও বোঝানো উদ্দেশ্য। কেননা শরী'আতসম্মতভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করলে তারাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়োগ করা আমীরেরই পর্যায়ভুক্ত। তাই তার আনুগত্য করাও জরুরি। মোটকথা আমীর বা শাসক যদি বৈধ হয়, তবে তার আনুগত্য করার দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই আনুগত্য করা হয়, যেহেতু তিনি তার আনুগত্য করার হুকুম দিয়েছেন। এমনিভাবে যদি কেউ আমীরের আনুগত্য না করে, তবে সে যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই আনুগত্য করা হতে বিরত থাকল, যেহেতু সে তার আনুগত্য না করার দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই হুকুম অমান্য করেছে।
হাদীছটিতে আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার প্রতি এতটা জোর দেওয়া হয়েছে এ কারণে যে, তার আনুগত্য করার দ্বারা উম্মতের ঐক্য ও সংহতি সুরক্ষিত থাকে। অন্যথায় উম্মতের মধ্যে বিভক্তি ও আত্মকলহের সৃষ্টি হয়, যা দীনের হাজারও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং উম্মতের অস্তিত্বও হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। তাই শাসক জালেম হলেও যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে বরখাস্ত করার শরী'আতসম্মত কারণ না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার আনুগত্য করা জরুরি।
হাদীছটির সারমর্ম দাঁড়াল, আল্লাহর অনুগত বান্দা হওয়ার জন্য তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুগত উম্মত হওয়ার জন্য আমীর ও শাসকের আনুগত্য করা অপরিহার্য। অর্থাৎ এ তিনও পর্যায়ের আনুগত্য পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। এর এক আনুগত্য পরিহার করে অন্য আনুগত্যের দাবি করার কোনও সুযোগ নেই। কেউ আমীরের বৈধ হুকুম অমান্য করে যদি বলে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করে থাকি, তবে তার সে কথা গ্রহণযোগ্য নয়। এমনিভাবে কেউ যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-নিষেধ তথা তাঁর হাদীছ ও সুন্নাহ অগ্রাহ্য করে আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য করার দাবি করে, তবে সে দাবিও সম্পূর্ণ অসত্য ও অবান্তর।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহ তা'আলার প্রতি অনুগত থাকার জন্য তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা তথা তাঁর সুন্নাহ মেনে চলা জরুরি।
খ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের একটা দিক হল আমীর ও শাসকের আনুগত্য করা ও তাদের অবাধ্যতা না করা।
