আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ২৬৭৬
আন্তর্জতিক নং: ২৮৭৩

পরিচ্ছেদঃ ১৮০১. নবী (ﷺ)-এর সাদা খচ্চর। আনাস (রাযিঃ) তা বর্ণনা করেছেন। আবু হুমাইদ (রাহঃ) বলেন, আয়লার শাসক নবী (ﷺ)- কে একটি সাদা খচ্চর উপহার দিয়েছিলেন

২৬৭৬। আমর ইবনে আলী (রাহঃ) .... আমর ইবনে হারিস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) (ইন্‌তিকালের সময়) তাঁর সাদা খচ্চর, কিছু যুদ্ধ সরঞ্জাম ও সামান্য ভূমি ব্যতীত আর কিছুই রেখে যাননি। এগুলোও তিনি সাদ্‌কা স্বরূপ ছেড়ে যান।

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ

এ হাদীছে বলা হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ওফাতকালে কোনও দিরহাম-দীনার ও দাস-দাসী রেখে যাননি। কিন্তু সীরাত গ্রন্থসমূহে তাঁর দাস-দাসী রেখে যাওয়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। মূলত উভয় বর্ণনার মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। এ হাদীছে যে বলা হয়েছে দাস-দাসী রেখে যাননি, তার অর্থ হল তিনি তাঁর দাস-দাসীদেরকে আযাদ করে দিয়েছিলেন। ফলে ওফাতকালে তারা ছিলেন স্বাধীন। দাসত্বের জীবনে ছিলেন না। আর সীরাত গ্রন্থসমূহে যে দাস-দাসীর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তার মানে এক কালে যারা তাঁর দাস-দাসী ছিল, যদিও তাঁর ওফাতের আগেই তারা সবাই মুক্তি পেয়ে গিয়েছিলেন। হাদীছটির এ বর্ণনায় ولا شيئا (অন্য কিছুই না) বলা হয়েছে। অপর এক বর্ণনায় আছে : و لا شاة (এবং কোনও বকরিও না)। অর্থাৎ ওফাতকালে তিনি একটি বকরিও রেখে যাননি। এমনই গরীবানা হালে তিনি জীবন কাটিয়েছেন। বর্ণনাকারী আরও বলেন- রেখে গিয়েছিলেন কেবল তাঁর সাদা খচ্চরটি, যেটিতে তিনি আরোহণ করতেন এবং তাঁর যুদ্ধাস্ত্র ও কিছু ভূমি, যা মুসাফিরদের জন্য সদাকা (ওয়াকফ) করেছিলেন। তিনি যখন ইন্তিকাল করেন, তখন তাঁর কাছে মাত্র এ তিনটি জিনিসই ছিল। একটি খচ্চর, কয়েক খণ্ড ভূমি এবং তাঁর যুদ্ধাস্ত্র। কিন্তু এ তিনটিও তিনি ওয়াকফ করে গিয়েছিলেন। তাঁর খচ্চরটির নাম ছিল দুলদুল। এটি সাদা রঙের ছিল। মিশরের বাদশা মুকাওকিস এটি তাঁর কাছে উপহারস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন। তাঁর যুদ্ধসামগ্রীর যে তালিকা পাওয়া যায়, তার মধ্যে রয়েছে ১টি তরবারি, একটি বর্ম, ৬টি ধনুক, ২টি শিরস্ত্রাণ, ১টি তুণীর, কয়েকটি পতাকা ও তিনটি জুব্বা (এ জুব্বাগুলো তিনি যুদ্ধকালে পরিধান করতেন)। তাঁর রেখে যাওয়া জমির মধ্যে রয়েছে ফাদাকের এক খণ্ড জমি, ওয়াদিল-কুরার কিছু জমি, খায়বারের কয়েকটি বাগান এবং বনু নাযীরের যে সম্পত্তি গনিমতের অংশ হিসেবে তাঁর ভাগে পড়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সমুদয় মালামাল মুসাফির ও মুসলিম সাধারণের জন্য সদাকা (ওয়াকফ) করে গিয়েছিলেন। জমি ও বাগানের আয় বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হতো। বনু নাযীরের সম্পত্তি থেকে যে আয় হতো তা আকস্মিক কোনও দুর্ঘটনা ও দুর্যোগে ত্রাণরূপে ব্যয় করা হতো। ফাদাকের সম্পত্তি থেকে যা আয় হতো তা বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মেহমানদের আপ্যায়নে খরচ করা হতো। খায়বারের সম্পত্তির আমদানি থেকে তিন ভাগের দুই ভাগ "আম মুসলমানদের জন্য ব্যয় করা হতো, আর তিন ভাগের এক ভাগ থেকে উম্মাহাতুল মুমিনীনের বার্ষিক খোরপোষ দেওয়া হতো। তারপরও কিছু বেঁচে থাকলে গরীব মুহাজিরদের পেছনে ব্যয় করা হতো। প্রকাশ থাকে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মীরাছরূপে কোনও সম্পত্তি রেখে যাননি। নবী-রাসূলগণের সম্পদে মীরাছ বা উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়না। এ সম্পর্কে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. বর্ণনা করেন- سبعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: لا نُورَث، مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমাদের( অর্থাৎ নবীদের) কোনও ওয়ারিশ হয় না। আমরা যা রেখে যাই তা সদাকা। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ এ হাদীছ দ্বারা আমরা যুহদের শিক্ষা পাই। ওফাতকালে টাকা-পয়সা ও দাস-দাসী না থাকার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থ-সম্পদ সঞ্চয় করতেন না। তাঁর হাতে যখন যে মাল-সম্পদ আসত, তিনি অবিলম্বে তা বিলিয়ে দিতেন। এটা তাঁর উচ্চস্তরের যুহদের পরিচায়ক।


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন