কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৫. নামাযের আদ্যোপান্ত বর্ণনা এবং সুন্নাতসমূহ

হাদীস নং: ১১৭৮
আন্তর্জাতিক নং: ১১৭৮
বিতর সালাতে দু'আ কুনূত পাঠ করা প্রসঙ্গে
১১৭৮। আবু বকর ইবন আবু শায়বা (রাহঃ)........ হাসান ইবন 'আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার মাতামহ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাকে কিছু কথা শিখিয়েছেন, যা আমি বিতরের সালাতের কুনূতে পাঠ করি। তা হলোঃ اللَّهُمَّ عَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَاهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ إِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ سُبْحَانَكَ رَبَّنَا تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ

"হে আল্লাহ্! আপনি যাদের শান্তি দান করেছেন, তাদের সাথে আমাকেও শান্তি দান করুন। যাদের আপনি অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের সাথে আমারও অভিভাবকত্ব গ্রহণ করুন। আপনি আমাকে হিদায়েত দান করুন—তাদের সাথে, যাদের আপনি হিদায়েত দিয়েছেন, আপনার নির্ধারিত অনিষ্ট হতে আমাকে রক্ষা করুন। আমাকে যা দিয়েছেন, তাতে বরকত দান করুন। আপনি তো নির্দেশ দিয়ে থাকেন এবং আপনার উপর নির্দেশ চলে না। বস্তুত আপনি যাকে বন্ধু মনে করেন, সে অপমানিত হয় না। আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। হে আমাদের রব! আপনি বরকতময় এবং সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী।”
بَاب مَا جَاءَ فِي الْقُنُوتِ فِي الْوِتْرِ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ بُرَيْدِ بْنِ أَبِي مَرْيَمَ، عَنْ أَبِي الْحَوْرَاءِ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ، قَالَ عَلَّمَنِي جَدِّي رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ كَلِمَاتٍ أَقُولُهُنَّ فِي قُنُوتِ الْوِتْرِ ‏ "‏ اللَّهُمَّ عَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَاهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ إِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ سُبْحَانَكَ رَبَّنَا تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ ‏"‏ ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে ‘কুনূত’ (কুনূতের দুআ) পড়া জরুরি। এর বিভিন্ন দুআ রয়েছে।
আমরা বিতরে যে দুআ কুনূত পড়ি তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় আবদুর রহমান আসসুলামী রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন আমরা যেন কুনূতে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ি-

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৯৬৫

শব্দের সামান্য তারতম্যসহ অন্যান্য বর্ণনায়ও এ দুআটি এসেছে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার এক বর্ণনায় وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ -এ দু’টি বাক্য বর্ধিত এসেছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩০৩৩৭) শরহু মাআনিল আসারের একটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় وَنَشْكُرُكَ শব্দটিও রয়েছে। (শরহু মাআনিল আসার ১/১৭৭)

এছাড়া হযরত আলী রা. যেভাবে পড়তেন তাতেও وَنَشْكُرُكَ শব্দটি পাওয়া যায়। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/১১৪

আর প্রশ্নোক্ত দুআটি উপরোক্ত বর্ণনাসমূহেরই সমন্বিত রূপ। এভাবে পড়ার দ্বারা উপরোক্ত সকল বর্ণনার উপর আমল হয়ে যায়।

অতএব এইসব বর্ণনার আলোকে দুআটি পূর্ণ পাঠ এভাবে হয়-

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.

(আরো দেখুন : আলআওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/২১৮; আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ২/২১০;আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরা ১/১১০)

সুনানে বাইহাকীর এক বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুনূত শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর শব্দের সামান্য তারতম্যসহ উপরোক্ত দুআটিই উল্লেখিত হয়েছে। (আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ২/২১০, আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরা ১/১০১)

উল্লেখ্য, কুনূতের জন্য হাদীস শরীফে যেমন উপরোক্ত দুআটি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তেমনি আরেকটি দুআও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাসান ইবনে আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিতিরে পড়ার জন্য কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন, তাহল-

اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ، فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ.

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪২৫

ইমাম নববী রাহ. বলেন, আমাদের অনেকেই বলেন, উভয় দুআ একত্রে পড়াটাই উত্তম। (শরহুল মুহাযযাব ৩/৪৭৫-৭৮) শামসুল আইম্মা সারাখসী রাহ. ইমাম কাসানী রাহ. প্রমূখ ফকীহগণও বিতিরের নামাযে উভয় দুআ একত্রে পড়াকে পছন্দ করতেন। (আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৬৫; বাদায়েউস সনায়ে ২/২৩২)

তবে কেউ যদি একটি দুআই পড়তে চায় তাহলে প্রথম দুআটি পড়াই উত্তম হবে। কেননা বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. নিজে বিতিরের কুনূতে এ দুআ পড়াকে পছন্দ করতেন এবং অন্যকে পড়তে আদেশ করতেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৯৯৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৯৬৪

তাবেয়ী হাসান বাসরী রাহ.ও কুনূতে এ দুআটিই পড়তেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৯৮২


একটি ভুল ধারণা : দুআয়ে কুনূত কি শুধু আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকাঃ
বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে ‘কুনূত’ (কুনূতের দুআ) পড়া জরুরি। এর বিভিন্ন দুআ রয়েছে : একটি হচ্ছে ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা ওয়া ... ’ আরেকটি হল, ‘আল্লাহুম্মাহদিনী ফীমান হাদাইত্ ... ’ এ ধরনের আরো দুআ রয়েছে। যেকোনো দুআ পড়া যায়। বরং কুরআন-হাদীসের যেকোনো দুআ পড়ার দ্বারাও কুনূতের ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। কেউ কেউ প্রথম দুআটিকেই একমাত্র দুআ মনে করেন। তাদের ধারণা এটা ছাড়া ‘কুনূত’ আদায় হয় না। এই ধারণা ঠিক নয়। যেকোনো মা’ছূর ও মাসনূন দুআর দ্বারা ওয়াজিব কুনূত আদায় হয়।

হাদীস শরীফে এ প্রসঙ্গে একাধিক দু‘আ পাওয়া যায়। তন্মধ্যে

ক.“আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তা‘ঈ নুকা ...”

১. ইমাম ইবনুল মুনযির রহ. বলেন-

وجاء في الحديث عن عمر بن الخطاب أنه كَانَ يقول في القنوت في الوتر: اللهم اغفر للمؤمنين، والمؤمنات، والمسلمين والمسلمات، وألف بين قلوبهم، وأصلح ذات بينهم، وانصرهم على عدوك وعدوهم، اللهم العن كفرة أهل الكتاب الذين يكذبون رسلك، ويقاتلون أولياءك، اللهم خالف بين قلوبهم، وزلزل أقدامهم، وأنزل بهم بأسك الذي لا يرد عن القوم المجرمين،

بسم الله الرحمن الرحيم، اللهم إنا نستعينك، ونستغفرك، ونثني عليك ولا نكفرك، ونخلع ونترك من يفجرك ويكفرك، بسم الله الرحمن الرحيم، اللهم إياك نعبد، ولك نصلي ونسجد، وإليك نسعى ونحفد، نرجو رحمتك، ونخاف عذابك إن عذابك بالكفار يلحق

وكان عبيد بن عمير، وهو راوي هذا الحديث عن عمر بن الخطاب يقول : بلغني أنهما سورتان من القرآن في مصحف ابن مسعود، وأنه يوتر بهما كل ليلة حدثناه إسحاق ، عن عبد الرزاق ، عن ابن جريج ، قال : أخبرنا عطاء، أنه سمع عبيد بن عمير، يأثر عن عمر بن الخطاب، أنه قال ذلك. (قلت: رجاله ثقات)

ثم قال: وممن روينا عنه، أنه قنت بالسورتين علي بن أبي طالب، وعبد الله بن مسعود، وأبي بن كعب، وقد رويت في القنوت أخبارا، وقد ذكرتها في كتاب قيام الليل.

অর্থ: হাদীসে এসেছে হযরত উমর রা. বিতরের কুনূতে বলতেন (اللهم اغفر للمؤمنين، والمؤمنات،) “আল্লাহুম্মাগফির লিল মুমিনীনা ওয়াল মুমিনাত...”, (اللهم إنا نستعينك، ونستغفرك،) “..আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতা‘ঈ নুকা ...”।

হযরত উমর রা. থেকে এ হাদীসের বর্ণনাকারী উবাইদ ইবনে উমাইর বলতেন- (اللهم إنا نستعينك، ونستغفرك،) এ দুটি দুআ ইবনে মাসউদ রা. এর মুছহাফে কুরআনের সূরা রূপে ছিল (যা পরে রহিত হয়ে গেছে)। তিনি দুআ দুটি দিয়ে প্রতি রাতে বিতর পড়তেন। [আল-আউসাত লি ইবনিল মুনযির ৫/২১৪)

ইমাম মুহাম্মদ ইবনে নাছর আল-মারওয়াজী বর্ণনাটি উল্লেখ করার পর বলেন- অন্য বর্ণনায় বর্ধিতাংশে রয়েছে, ‘বিতরে এ দুআ রুকুর পূর্বে পড়তেন’ ...। [মুখতাছারু কিয়ামিল্লাইল পৃ. ৩২১-৩২২] ( )

২. আবু-আব্দুর রহমান (আসসুলামী) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন আমরা যেন কুনূতে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ি-

علمنا ابن مسعود رضي الله عنه أن نقرأ في القنوت : اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ. ( )

শব্দের সামান্য ব্যতিক্রম সহ অন্যান্য বর্ণনায়ও এ দুআ এসেছ। যেমন: এক বর্ণনায়-ونؤمن بك ونتوكل عليك -এ বাক্য দুটি বর্ধিত এসেছে। [ইবনে আবী শাইবা ১৫/৩৪৪] তহাবীর এক বর্ণনায় ونشكرك -শব্দটিও রয়েছে। [তহাবী ১/১৭৭] এর সনদ সহীহ]

এই বর্ণনাগুলির আলোকে পূর্ণ দু‘আটি এভাবে পড়া যায়-

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، ونؤمن بك ونتوكل عليك، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، ونشكرك وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.

হযরত ইবনে মাসউদ রা. প্রতিদিন বিতর নামাযে এ দুআই পড়তেন। [মুছান্নাফে আব্দুল রাযযাক হা.৪৯৬৯ আল-আউসাত ৫/২১৪ মুখতাছারু কিয়ামিল্লাইল পৃ.২৯৭]

৩. সুনানে বায়হাকীর এক বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত জিবীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুনূত শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর শব্দের সামান্য তারতম্যসহ উপরোক্ত দুআটি উল্লেখিত হয়েছে। ( ) [বাইহাকী ২/২১০ আল-মুদাওয়ানা ১/১০১] বর্ণনাটি মুরসাল এবং এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। [নাতাইযুল আফকার লি ইবনে হাজার ২/১১১]

৪. বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখাঈ নিজে বিতরের কুনূতে এ দুআ পড়াকে পছন্দ করতেন এবং অন্যকে পড়তে আদেশ করতেন। [আব্দুর রাযযাক ৩/১২১, ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১৮]

৫. আমর বলেন- তাবেয়ী হাসান বসরী র. বিতর ও ফজরের কুনূতে এ দুআটিই পড়তেন। তাঁকে একজন জিজ্ঞেস করল, এই দুআর অতিরিক্ত আর কিছু পড়া যাবে কি? তিনি উত্তরে বললেন-

لا أنهاكم ولكنى سمعت أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم لايزيدون على هذا شيئا، ويغضب إذا أرادوه على الزيادة. ( )

অর্থাৎ তোমাদেরকে আমি নিষেধ করব না; তবে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে এর অতিরিক্ত কিছু পড়তে দেখিনি। ...। [মুছান্নাফে আর্ব্দুরায্যাক ৩/১১৬]

তাই হানাফী ফকীহগণ ও ইমাম মালিক র. এই দুআকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। ইমাম ইবনে আব্দিল বার র. বলেন-

قال الكوفيون ومالك: وليس فى القنوت دعاء موقت، ولكنهم يستحبون ألا يقنت إلا بقولهم: اللهم إنا نستعينك...انتهى ( )

অর্থ: কুফার অধিবাসী আহলে ইলমগণ ও ইমাম মালেক বলেন- দুআ কুনূত সুনির্দিষ্ট নয়। তবে তাঁরা এই দুআটি পড়া উত্তম মনে করেন।

খ. আল্লাহুম্মাহদিনা ফীমান হাদাইতা ...

হযরত হাসান ইবনে আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিতে পড়ার জন্য কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন :

اللَّهُمَّ اهْدِنِى فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِى فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِى فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِى فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِى شَرَّ مَا قَضَيْتَ، إِنَّكَ تَقْضِى وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ. ( )

[সুনানে আবু দাউদ: ১/৫২৬; সুনানে নাসায়ী ১/২৫২ জামে তিরমিযী ১/১০৬ হা.৪৬৪ সুনানে ইবনে মাজা ১/১৮৫ মুসনাদে আহমদ হা.১৭১৮]

তাই অনেকেই উভয় দুআ একতে পড়তেন। সুফ্ইয়ান ছাউরী বলেন-

كانوا يستحبون أن يجعلوا ، في قنوت الوتر هاتين السورتين : اللهم إنا نستعينك ونستغفرك، ونثني عليك ولا نكفرك، ونخلع ونترك من يفجرك، اللهم إياك نعبد ولك نصلي ونسجد، وإليك نسعى ونحفد، نخشى عذابك ونرجو رحمتك، إن عذابك بالكفار ملحق، وهذه الكلمات : اللهم اهدني فيمن هديت، وعافني فيمن عافيت، وتولني فيمن توليت، وبارك لي فيما أعطيت ، وقني شر ما قضيت، إنك تقضي ولا يقضى عليك، لا يذل من واليت تباركت ربنا وتعاليت، ويدعو بالمعوذتين. ( )

অর্থ: আমি আমার পূর্বসূরিদের দেখেছি তাঁরা বিতে উপরোক্ত দুটি দুআ পড়াকেই উত্তম মনে করতেন। [সালাতুল বিত পৃ.৩০১] মুসান্নাফ গ্রন্থকার ইমাম আব্দুর রাযযাকও তাই করতেন। [আল মুসান্নাফ ৩/১১৬]। শাফেয়ী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস ইমাম নববী র. বলেন- “আমাদের অনেকেই বলেন- উভয় দুআ একতে পড়াটাই উত্তম”। [শরহুল মুহায্যাব ৩/৪৭৫-৪৭৮]

পরবর্তী হানাফী ফকীহদের অনেকেই উভয় দুআ একতে পড়াকে পছন্দ করেছেন। [দেখুন, মাবসূত্র্রে সারাখসী ১/১৬৫ বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩২]
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান