কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ
৪৯. আদালত - বিচারকের নীতিমালা সংক্রান্ত অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৩৯৭
আন্তর্জাতিক নং: ৫৩৯৭
আলিমদের ঐকমত্যে ফয়সালা করা
৫৩৯৬. মুহাম্মাদ ইবনে আ’লা (রাহঃ) ......... আব্দুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আব্দুল্লাহ্ (ইবনে মাসউদ) (রাযিঃ)-এর নিকট অনেক লোক আসলো। তখন আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ) বললেনঃ আমাদের উপর এমন এক সময় অতিবাহিত হয়েছে, যখন আমরা কোন বিচার করতাম না, আর ভাগ্যে আল্লাহ্ তাআলা আমাদের রেখেছেন যে, আমরা এই পর্যায়ে পৌছাব যেমন তোমরা প্রত্যক্ষ করছে। এখন হতে তোমাদের কারো যদি কখনও কোন মীমাংসা করার প্রয়োজন হয়, তখন সে আল্লাহ্ পাকের কিতাবানুসারে মীমাংসা করবে। যদি এমন কোন ব্যাপারে মীমাংসা করতে হয়, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তখন সে তার নবী এ ব্যাপারে যে মীমাংসা করেছেন, তা দ্বারা মীমাংসা করবে।
আর যদি তার নিকট এমন কোন ব্যাপারে উপস্থিত হয়, যা আল্লাহর কিতাবেও নেই এবং এ ব্যাপারে নবী (ﷺ) এর ফয়সালাও নেই, তখন সে যেন নেককারদের মীমাংসা অনুযায়ী মীমাংসা করে। যদি তার নিকট এমন কোন ব্যাপারে উপস্থিত হয়, যা আল্লাহর কিতাবেও নেই, তার নবী যা মীমাংসা দিয়েছেন তাতেও নেই এবং নেককারদের মীমাংসায়ও এর দৃষ্টান্ত নেই, তখন সে ব্যাপারে স্বীয় জ্ঞানের দ্বারা মীমাংসা করবে এবং সে যেন এ কথা না বলে যে, নিশ্চয়ই আমি ভয় করি, আমি ভয় করি। কেননা হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দুয়ের মধ্যে কোন কোন বিষয় আছে, যা সন্দেহযুক্ত। অতএব এমন কাজ পরিত্যাগ কর, যা সন্দেহযুক্ত এবং ঐ কাজ কর, যাতে সন্দেহ নেই।
আর যদি তার নিকট এমন কোন ব্যাপারে উপস্থিত হয়, যা আল্লাহর কিতাবেও নেই এবং এ ব্যাপারে নবী (ﷺ) এর ফয়সালাও নেই, তখন সে যেন নেককারদের মীমাংসা অনুযায়ী মীমাংসা করে। যদি তার নিকট এমন কোন ব্যাপারে উপস্থিত হয়, যা আল্লাহর কিতাবেও নেই, তার নবী যা মীমাংসা দিয়েছেন তাতেও নেই এবং নেককারদের মীমাংসায়ও এর দৃষ্টান্ত নেই, তখন সে ব্যাপারে স্বীয় জ্ঞানের দ্বারা মীমাংসা করবে এবং সে যেন এ কথা না বলে যে, নিশ্চয়ই আমি ভয় করি, আমি ভয় করি। কেননা হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দুয়ের মধ্যে কোন কোন বিষয় আছে, যা সন্দেহযুক্ত। অতএব এমন কাজ পরিত্যাগ কর, যা সন্দেহযুক্ত এবং ঐ কাজ কর, যাতে সন্দেহ নেই।
الْحُكْمُ بِاتِّفَاقِ أَهْلِ الْعِلْمِ
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ عَنْ الْأَعْمَشِ عَنْ عُمَارَةَ هُوَ ابْنُ عُمَيْرٍ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ أَكْثَرُوا عَلَى عَبْدِ اللَّهِ ذَاتَ يَوْمٍ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّهُ قَدْ أَتَى عَلَيْنَا زَمَانٌ وَلَسْنَا نَقْضِي وَلَسْنَا هُنَالِكَ ثُمَّ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدَّرَ عَلَيْنَا أَنْ بَلَغْنَا مَا تَرَوْنَ فَمَنْ عَرَضَ لَهُ مِنْكُمْ قَضَاءٌ بَعْدَ الْيَوْمِ فَلْيَقْضِ بِمَا فِي كِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ جَاءَ أَمْرٌ لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَلْيَقْضِ بِمَا قَضَى بِهِ نَبِيُّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنْ جَاءَ أَمْرٌ لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ وَلَا قَضَى بِهِ نَبِيُّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلْيَقْضِ بِمَا قَضَى بِهِ الصَّالِحُونَ فَإِنْ جَاءَ أَمْرٌ لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ وَلَا قَضَى بِهِ نَبِيُّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا قَضَى بِهِ الصَّالِحُونَ فَلْيَجْتَهِدْ رَأْيَهُ وَلَا يَقُولُ إِنِّي أَخَافُ وَإِنِّي أَخَافُ فَإِنَّ الْحَلَالَ بَيِّنٌ وَالْحَرَامَ بَيِّنٌ وَبَيْنَ ذَلِكَ أُمُورٌ مُشْتَبِهَاتٌ فَدَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيبُكَ قَالَ أَبُو عَبْد الرَّحْمَنِ هَذَا الْحَدِيثُ جَيِّدٌ جَيِّدٌ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
(নিশ্চয়ই হালাল সুস্পষ্ট)। অর্থাৎ শরী'আত যা হালাল করেছে তা এমনই স্পষ্ট, যার ভেতর কোনও সন্দেহ নেই। হয়তো তা কুরআন-হাদীছে সুনির্দিষ্টভাবে হালাল বলে দেওয়া হয়েছে, অথবা কুরআন-হাদীছে বর্ণিত মূলনীতি দ্বারা হালাল সাব্যস্ত হয়েছে। যেমন খাদ্যশস্য ও ফল-ফলাদি, গবাদি পশু, পবিত্র পানীয়, তুলা, পশম ইত্যাদির তৈরি পোশাক, বেচাকেনা, মীরাছ, হিবা ও হাদিয়াসূত্রে অর্জিত মালামাল, গায়রে মাহরাম নারী-পুরুষের মধ্যে বিবাহ ইত্যাদি।
(এবং হারামও সুস্পষ্ট)। অর্থাৎ কুরআন-হাদীছে যেসব বিষয়কে হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে, অথবা কুরআন-হাদীছে বর্ণিত মূলনীতি দ্বারা যা হারাম সাব্যস্ত হয়েছে, তার মধ্যে কোনও অস্পষ্টতা নেই। সকলের কাছেই তা হারাম হিসেবে পরিষ্কার। যেমন মৃতজন্তু, রক্ত ও শূকরের গোশত খাওয়া, মদপান করা, মাহরাম নারীকে বিবাহ করা, ব্যভিচার করা, পুরুষের জন্য রেশমি পোশাক পরিধান করা, সুদ-ঘুষ ও চুরি-ডাকাতির মাধ্যমে হস্তগত সম্পদ ভোগ করা ইত্যাদি।
(উভয়ের মধ্যে আছে কিছু সন্দেহযুক্ত বিষয়)। অর্থাৎ হালাল ও হারাম বিষয়াবলির মাঝখানে এমন কিছু বিষয় আছে, যা হালাল না হারাম সে সম্পর্কে সন্দেহ আছে। একদিক থেকে তা হালালের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সে হিসেবে তা হালাল বলে মনে হয়। আবার অন্যদিক থেকে হারামের সঙ্গেও সাদৃশ্য আছে। সে কারণে তাকে হারাম বলেও মনে হয়। এমনিভাবে কোনও কোনও দলীল দ্বারা মনে হয় তা হালাল। আবার কোনও কোনও দলীল দ্বারা হারামও বোঝা যায়। এ অবস্থায় সেরকম বিষয়কে হালাল মনে করা হবে না হারাম, এ নিয়ে সন্দেহ জন্মায়। যেমন ঘোড়া ও গাধা খাওয়া, হিংস্র পশুর চামড়া দ্বারা তৈরি পোশাক পরিধান করা ইত্যাদি। কোনও বিষয়ে হালাল বা হারাম হওয়ার সন্দেহ দেখা দেয় বিভিন্ন কারণে। যেমন-
(ক) হয়তো সে সম্পর্কে হাদীছের ভাষ্য অতি অল্পসংখ্যক বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছে। ফলে সমস্ত আলেমের কাছে তা পৌঁছায়নি।
(খ) হয়তো সে সম্পর্কে হাদীছের ভাষ্য দু'রকম আছে। এক হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় হালাল, অন্য হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় হারাম।
(গ) হয়তো সে বিষয়ে হাদীছের সুস্পষ্ট ভাষ্য নেই। ফলে হাদীছের কোনও সাধারণ ভাষ্য বা সুনির্দিষ্ট কোনও বিষয় সম্পর্কিত ভাষ্যের বিপরীত অর্থ কিংবা কিয়াস দ্বারা সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর তা নিতে গিয়ে মুজতাহিদ আলেমদের মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দেয়।
(ঘ) হয়তো সে সম্পর্কে কোনও আদেশ বা নিষেধসূচক বাণী আছে। এখন সে আদেশটিকে অবশ্যপালনীয় অর্থে ধরা হবে না অনুমোদন অর্থে, এটা অনেকের পক্ষেই সহজে নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। তা সম্ভব হয় অল্পসংখ্যক আলেমের পক্ষে, শরী'আতের পরিভাষায় যাদেরকে মুজতাহিদ বলা হয়।
যখন কোনও জিনিস নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয় যে, সেটি হালাল না হারাম, আর সে সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহর কোনও স্পষ্ট নির্দেশনা বা ইজমা' থাকে না, তখন মুজতাহিদ আলেম তা নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি নিজ গবেষণার ভিত্তিতে সেটিকে হালালের কাতারে ফেলেন অথবা হারামের কাতারে। তখন সেটি হালাল বা হারাম সাব্যস্ত হয়। কখনও কখনও মুজতাহিদের পক্ষেও সে বিষয়ে কোনও সমাধানে পৌঁছা সম্ভব হয় না। ফলে সেটিকে হালাল ধরা হবে না হারাম, তা পরিষ্কার হয়ে ওঠে না। এ অবস্থায় পরহেযগারীর দাবি তা থেকে বেঁচে থাকা। এরূপ বিষয়কে সাধারণত মাকরূহ বলা হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. যেসব বিষয় হালাল না হারাম তা নিয়ে সন্দেহ থাকে, তা পরিহার করাই তাকওয়ার দাবি।
খ. সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করার দ্বারা নিজ দীনদারি ও সম্মান রক্ষা পায়।
গ. সন্দেহযুক্ত বিষয়ে লিপ্ত হওয়ার দ্বারা হারামে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
(এবং হারামও সুস্পষ্ট)। অর্থাৎ কুরআন-হাদীছে যেসব বিষয়কে হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে, অথবা কুরআন-হাদীছে বর্ণিত মূলনীতি দ্বারা যা হারাম সাব্যস্ত হয়েছে, তার মধ্যে কোনও অস্পষ্টতা নেই। সকলের কাছেই তা হারাম হিসেবে পরিষ্কার। যেমন মৃতজন্তু, রক্ত ও শূকরের গোশত খাওয়া, মদপান করা, মাহরাম নারীকে বিবাহ করা, ব্যভিচার করা, পুরুষের জন্য রেশমি পোশাক পরিধান করা, সুদ-ঘুষ ও চুরি-ডাকাতির মাধ্যমে হস্তগত সম্পদ ভোগ করা ইত্যাদি।
(উভয়ের মধ্যে আছে কিছু সন্দেহযুক্ত বিষয়)। অর্থাৎ হালাল ও হারাম বিষয়াবলির মাঝখানে এমন কিছু বিষয় আছে, যা হালাল না হারাম সে সম্পর্কে সন্দেহ আছে। একদিক থেকে তা হালালের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সে হিসেবে তা হালাল বলে মনে হয়। আবার অন্যদিক থেকে হারামের সঙ্গেও সাদৃশ্য আছে। সে কারণে তাকে হারাম বলেও মনে হয়। এমনিভাবে কোনও কোনও দলীল দ্বারা মনে হয় তা হালাল। আবার কোনও কোনও দলীল দ্বারা হারামও বোঝা যায়। এ অবস্থায় সেরকম বিষয়কে হালাল মনে করা হবে না হারাম, এ নিয়ে সন্দেহ জন্মায়। যেমন ঘোড়া ও গাধা খাওয়া, হিংস্র পশুর চামড়া দ্বারা তৈরি পোশাক পরিধান করা ইত্যাদি। কোনও বিষয়ে হালাল বা হারাম হওয়ার সন্দেহ দেখা দেয় বিভিন্ন কারণে। যেমন-
(ক) হয়তো সে সম্পর্কে হাদীছের ভাষ্য অতি অল্পসংখ্যক বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছে। ফলে সমস্ত আলেমের কাছে তা পৌঁছায়নি।
(খ) হয়তো সে সম্পর্কে হাদীছের ভাষ্য দু'রকম আছে। এক হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় হালাল, অন্য হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় হারাম।
(গ) হয়তো সে বিষয়ে হাদীছের সুস্পষ্ট ভাষ্য নেই। ফলে হাদীছের কোনও সাধারণ ভাষ্য বা সুনির্দিষ্ট কোনও বিষয় সম্পর্কিত ভাষ্যের বিপরীত অর্থ কিংবা কিয়াস দ্বারা সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর তা নিতে গিয়ে মুজতাহিদ আলেমদের মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দেয়।
(ঘ) হয়তো সে সম্পর্কে কোনও আদেশ বা নিষেধসূচক বাণী আছে। এখন সে আদেশটিকে অবশ্যপালনীয় অর্থে ধরা হবে না অনুমোদন অর্থে, এটা অনেকের পক্ষেই সহজে নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। তা সম্ভব হয় অল্পসংখ্যক আলেমের পক্ষে, শরী'আতের পরিভাষায় যাদেরকে মুজতাহিদ বলা হয়।
যখন কোনও জিনিস নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয় যে, সেটি হালাল না হারাম, আর সে সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহর কোনও স্পষ্ট নির্দেশনা বা ইজমা' থাকে না, তখন মুজতাহিদ আলেম তা নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি নিজ গবেষণার ভিত্তিতে সেটিকে হালালের কাতারে ফেলেন অথবা হারামের কাতারে। তখন সেটি হালাল বা হারাম সাব্যস্ত হয়। কখনও কখনও মুজতাহিদের পক্ষেও সে বিষয়ে কোনও সমাধানে পৌঁছা সম্ভব হয় না। ফলে সেটিকে হালাল ধরা হবে না হারাম, তা পরিষ্কার হয়ে ওঠে না। এ অবস্থায় পরহেযগারীর দাবি তা থেকে বেঁচে থাকা। এরূপ বিষয়কে সাধারণত মাকরূহ বলা হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. যেসব বিষয় হালাল না হারাম তা নিয়ে সন্দেহ থাকে, তা পরিহার করাই তাকওয়ার দাবি।
খ. সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করার দ্বারা নিজ দীনদারি ও সম্মান রক্ষা পায়।
গ. সন্দেহযুক্ত বিষয়ে লিপ্ত হওয়ার দ্বারা হারামে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: