আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪১- হিবা তথা উপহার প্রদান, এর ফযীলত ও এতে উৎসাহ প্রদান

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৫৯৭
১৬২১. কোন কারণে হাদিয়া গ্রহণ না করা।
২৪২৫। আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) .... আবু হুমায়দ সাঈদী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) আযদ গোত্রের ইবনে উতবিয়া নামক এক ব্যক্তিকে সাদ্‌কা সংগ্রহের কাজে নিয়োগ করেছিলেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, এগুলো আপনাদের (অর্থাৎ সাদ্‌কার মাল) আর এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে তার বাবার ঘরে কিংবা তার মায়ের ঘরে কেন বসে থাকল না? তখন সে দেখত, তাকে কেউ হাদিয়া দেয় কিনা? যার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, সাদ্‌কার মাল থেকে সামান্য পরিমাণও যে আত্মসাৎ করবে, সে তা কাঁধে করে কিয়ামতের দিন হাযির হবে। সে মাল যদি উট হয় তাহলে তা তার আওয়াজে, আর যদি গাভী হয় তাহলে হাম্বা হাম্বা রবে আর বকরী হয় তাহলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ রবে (আওয়াজ করতে থাকবে)। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার দু’হাত এতটুকু উত্তোলন করলেন যে, আমরা তার উভয় বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি তিন বার বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি পৌছে দিয়েছি। হে আল্লাহ্ আমি কি পৌছে দিয়েছি?

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এই হাদীসটি বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাগুলোর মাঝে ঘটনার বিবরণে বাহ্যত বিরোধ পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া কোন কোন বর্ণনা, সংক্ষিপ্ত আবার কোন কোন বর্ণনা বিস্তারিত। নিম্নে সকল বর্ণনার আলোকে ব্যাখ্যা পেশ করা হল।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা মুনাউওয়ারাকে কেন্দ্র করে যথারীতি একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। তিনি এখান থেকে যেমন বিভিন্ন অঞ্চলে বিশিষ্ট সাহাবীদেরকে গভর্নর নিযুক্ত করে পাঠাতেন, তেমনি অন্যান্য রাষ্ট্রীয় দায়িত্বেও লোকজনকে নিয়োগ দান করতেন। তার মধ্যে একটা বিশেষ দায়িত্ব ছিল নেসাবের মালিকদের কাছ থেকে যাকাত উশুল করা। বস্তুত রাষ্ট্রীয় বিভাগসমূহের মূল দায়িত্বশীল রাষ্ট্রপ্রধানই। তিনি যাদেরকে নিয়োগ দেন তারা আপন আপন বিভাগে রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। সেদিকে ইঙ্গিত করেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-

فإني أستعمل الرجل منكم على العمل مما ولاني الله

'আল্লাহ তাআলা আমাকে যে সকল বিষয়ের অভিভাবক বানিয়েছেন, তার কোনও কোনওটিতে আমি তোমাদের কোনও ব্যক্তিকে নিযুক্ত করি।'

আয্দ গোত্রের পরিচয় ও তাদের প্রশংসা

হযরত আবূ হুমাইদ রাযি. জানাচ্ছেন যে, একবার আয্দ গোত্রীয় জনৈক ব্যক্তিকে সদাকা (যাকাত) উশুলের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়, যাকে ইবনুল লুতবিয়্যাহ বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে।
অপর এক বর্ণনায় আয্দ গোত্রের স্থানে আসাদ গোত্র বলা হয়েছে। বাহ্যত উভয়ের মধ্যে বিরোধ মনে হয় । প্রকৃতপক্ষে কোনও বিরোধ নেই। কেননা আসাদ গোত্রটি বনু আযদেরই একটি শাখা। আয্দ একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নাম। এর বহু শাখা-প্রশাখা ছিল। আনসারদের গোত্রসমূহ আয্দ জনগোষ্ঠীরই অন্তর্ভুক্ত। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস ইব্ন মালিক আল-আনসারী রাযি. বলতেন, আমরা যদি আযদের অন্তর্ভুক্ত না হই তবে আমরা মানুষেরই অন্তর্ভুক্ত নই। বিভিন্ন হাদীছে আয্দ গোত্রের প্রশংসা আছে। যেমন এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ-

الأزد جرثومة العرب

'আয্দ হচ্ছে আরবজাতির গোড়া।' (ইবন আসাকির, তারিখু দিমাশক, খ. ৫১, পৃ. ২৭৫; ইমাম আল-মিযযী, তাহযীবুল কামাল, খ, ২৪. পূ. ৩৬০)

অপর এক হাদীছে আছেঃ-

الأزد أسد الله في الأرض، يريد الناس أن يضعفوهم، ويأبى الله إلا أن يرفعهم، وليأتين على الناس زمان يقول الرجل : يا ليت أبي كان أزديا! يا ليت أمي كانت أزدية

'আয্দ গোত্র পৃথিবীতে আল্লাহর সিংহ। মানুষ তাদেরকে দুর্বল করতে চাবে, কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে কেবল উঁচুই করতে চাবেন। মানুষের এমন একটা সময় আসবে যখন লোকে বলবে, আহা, আমার পিতা যদি আয্দ গোত্রের লোক হতেন! আহা, আমার মা যদি আয্দ গোত্রীয়া হতেন! (জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৯৩৭। আত-তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৭৪০৩ ইমাম আল-মিযযী, তাহযীবুল কামাল, খ. ১৩, পৃ. ৬৮, ইমাম আন-নববী, তাহযীবুল আসমা ওয়াল-লুগাত, খ. ১, পৃ. ৪৫)

ইবনুল লুতবিয়্যাহ অর্থ লুতবিয়্যাহ'র পুত্র। লুতবিয়্যাহ হচ্ছেন মা। তিনি আসাদ গোত্রের শাখা লুতাব গোত্রের মেয়ে ছিলেন বলে তাকে লুতবিয়্যাহ বলা হত। তার প্রকৃত নাম জানা যায় না। ইবনুল লুতবিয়্যাহ'র প্রকৃত নাম আব্দুল্লাহ। কোনও কোনও বর্ণনায় তাকে 'ইবনুল লাতবিয়্যাহ' এবং কোনও বর্ণনায় 'ইবনুল আতবিয়্যাহ'-ও বলা হয়েছে। তবে ইমাম ইবন হাজার রহ.-এর মতে 'ইবনুল লুতবিয়্যাহ'-ই সঠিক।

ইবনুল লুতবিয়্যাহ রাযি.-কে যাকাত উশুলের দায়িত্বে নিয়োগ ও তাঁর হাদিয়া গ্রহণ প্রসঙ্গ

যাহোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনুল লুতবিয়্যাহ রাযি.-কে যাকাত উশুলের দায়িত্ব দিয়ে পাঠালেন। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায় তাকে পাঠানো হয়েছিল সুলায়ম গোত্রের যাকাত উশুলের জন্য। তিনি সে এলাকায় গিয়ে আপন দায়িত্ব পালনে রত থাকেন। সাধারণত যেমনটা হয় যে, লোকে সরকারি পদস্থ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন রকম হাদিয়া তোহফা দিয়ে থাকে, তার ক্ষেত্রেও তাই হল। তিনি সেসব হাদিয়া-তোহফা ও যাকাতের মালামাল নিয়ে মদীনা মুনাওয়ারায় ফিরে আসলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছ থেকে সে মালামালের হিসাব নিতে শুরু করলেন।

কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তিনি তার কাছ থেকে হিসাব নেওয়ার জন্য কাউকে পাঠিয়েছিলেন। প্রেরিত ব্যক্তি যখন তার কাছে হিসাব চাইলেন, তখন তিনি যাকাতের মালামাল যা ছিল তার হিসাব বুঝিয়ে দিলেন আর অবশিষ্ট মালামাল সম্পর্কে বললেন, এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। তিনি মনে করেছিলেন, তা যেহেতু তাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে সেহেতু তিনি তার মালিক এবং তার জন্য তা ভোগ করা হালাল। প্রেরিত সাহাবী এসে যখন এ বৃত্তান্ত নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালেন, তখন তিনি মনক্ষুণ্ণ হলেন এবং এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক করার প্রয়োজন বোধ করলেন। সুতরাং তিনি মিম্বরে উঠলেন।

এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, তিনি যখন মিম্বরে উঠেন তখন তাঁর চেহারায় রাগের লক্ষণ ছিল। তাঁর বক্তৃতা দ্বারাও রাগ প্রকাশ পাচ্ছিল। তিনি রাগত ভাষায়ই বলছিলেনঃ-

أفلا جلس في بيت أبيه وأمه حتى تأتيه هديته إن كان صادقا ؟

তার এ কথা যদি সত্য হয় যে, তাকে তা হাদিয়া হিসেবে দেওয়া হয়েছে, তবে সে তার বাবা বা তার মা'র ঘরে বসে থাকল না কেন?

হাদিয়া হয়ে থাকলে তো তার ঘরেই তা পৌঁছানো হত। কিন্তু বাস্তবতা তো এই যে, ঘরে বসে থাকলে তার কাছে তা আসত না। এর দ্বারা বোঝা যায় তাকে তা ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে দেওয়া হয়নি; বরং তা দেওয়া হয়েছে সরকারি দায়িত্বে থাকা ও সে দায়িত্ব পালনে যাওয়ার কারণেই। আর এরূপ ক্ষেত্রে দেওয়া হয় এই আশায় যে, যাকাত হিসেবে যে পরিমাণ প্রদেয় সাব্যস্ত হয়েছে তা সব দিতে হবে না, কিছুটা ছাড় পাওয়া যাবে। সে হিসেবে একে হাদিয়া বলা যায় না; বরং একরকম ঘুষ। তাই তার জন্য এটা ভোগ করা বৈধ নয়।

ঘুষের কদর্যতা

এবার চিন্তা করুন, এ সাহাবীর মনে ঘুষের ধারণা মাত্র ছিল না, তিনি তাদের কাছে কিছু তো চানইনি; বরং পাওয়ার আশা করেছিলেন বলেও কোনও আভাস পাওয়া যায় না, ফলে তাকে যা দেওয়া হয়েছিল তিনি তাকে হাদিয়াই মনে করেছিলেন, এতদসত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য সে মালকে বৈধ মনে করেননি।

বর্তমানে যারা সরকারি দায়িত্বে নিযুক্ত তাদের বিপুল অংশই এমন, যারা ভোক্তাদের কাছ থেকে কেবল পাওয়ার আশা করে বা তাদের কাছ থেকে কেবল চেয়েই ক্ষান্ত হয় না; বরং তাদেরকে ঘুষ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। না দিলে ফাইল আটকে রাখে ও নানারকম হয়রানি করে। এমতাবস্থায় সেসকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যা দেওয়া হয় তা কী পরিমাণ হারাম হবে? এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ-

لعنة الله على الراشي والمرتشي

ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতার ওপর আল্লাহর লানত। (সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৩১৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৫৮০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৩৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৫৩২; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫০৭৭; মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ১৪৬৬৮)
আল্লাহ তা'আলা এ উম্মতের সকলকে হালাল-হারামের বিবেচনাবোধ দান করুন এবং সর্বপ্রকার হারামভোগ থেকে বাঁচার তাওফীক দিন।

হাশরের ময়দানে অন্যায্য সম্পদ গ্রহীতার অবস্থা

তারপর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানান যে-

والله لا يأخذ أحد منكم شيئا بغير حقه إلا لقي الله تعالى يحمله يوم القيامة

'আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যে কেউ অন্যায়ভাবে কোনও বস্তু গ্রহণ করলে। কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে ওই বস্তু বহনরত অবস্থায়।'
অর্থাৎ যে-কেউ এমন কোনও মাল ও অর্থ-সম্পদ গ্রহণ করবে, যা তার হক ও প্রাপ্য নয়; বরং সে তা সরকারি প্রভাব খাটিয়ে বা কোনওরূপ ছলচাতুরি করে আত্মসাৎ করেছে, তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সে যখন সাক্ষাৎ করবে তখন সেই অর্থ-সম্পদ তার কাঁধে চাপানো থাকবে। আর সেগুলো পশু-জাতীয় সম্পদ হলে তারা দুনিয়ায় যেভাবে ডেকে থাকে, হাশরের ময়দানেও সেভাবে ডাকতে থাকবে। ফলে একে তো বহন করার কষ্ট, তার ওপর ডাকাডাকির কারণে আরও বেশি প্রচার হওয়ায় জনসম্মুখে লজ্জা পাওয়ার যন্ত্রণা। এভাবে তাকে জাহান্নামে যাওয়ার আগেই শারীরিক ও মানসিক শাস্তিতে নাজেহাল হতে হবে।

অন্য রেওয়ায়েত দ্বারা জানা যায়, অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করা সম্পদ পশু-জাতীয় না হয়ে অন্য কোনও সম্পদ হলে তাও বহন করা অবস্থায় তাকে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হতে হবে, যেমনটা জমি সম্পর্কে এর আগের হাদীছে বলা হয়েছে। কুরআন মাজীদেও ইরশাদ হয়েছেঃ-

وَهُمْ يَحْمِلُونَ أَوْزَارَهُمْ عَلَى ظُهُورِهِمْ

তারা তাদের গুনাহসমূহ তাদের পিঠে বহন করবে। (সূরা আন'আম (৬), আয়াত ৩১)
কোনও কোনও রেওয়ায়েত দ্বারা জানা যায় যে, কিয়ামতের দিন এ ঘোষণাও করে দেওয়া হবে যে, এই ব্যক্তি এ মাল অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করেছিল।একইরকম কষ্ট ও লজ্জার লাঞ্ছনা সেক্ষেত্রেও রয়েছে। কাজেই ইহজীবনের দু'দিনের সুখ ও আনন্দের কারণে কেন এভাবে আখিরাতের জীবন নষ্ট করা? আল্লাহ তা'আলা আমাদের হেফাজত করুন।

হুকুম পৌছানো সম্পর্কে আল্লাহকে সাক্ষী রাখা কেন

তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলাকে সাক্ষী রেখে তিনবার বলেছেন যে-

اللهم هل بلغت؟

হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিলাম?
অর্থাৎ এর দ্বারা তিনি উপস্থিত জনমণ্ডলীকে বোঝাতে চাচ্ছেন যে, আমি আল্লাহর হুকুম তোমাদের কাছে অবশ্যই পৌঁছে দিলাম, যেমনটা আমার প্রতি নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ-

يَاأَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ

হে রাসূল! তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে তা পৌছে দাও। (সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৬৭)
সেইসঙ্গে আল্লাহ তাআলাকে লক্ষ্য করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ কথা বলার ভেতর কিয়ামতের দিন যে প্রত্যেক উম্মতকে তাদের নবী-রাসূল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যে, তাঁরা তাদের কাছে আল্লাহর নাযিলকৃত বিধি-বিধান পৌছিয়েছিলেন কিনা এবং উম্মতের পক্ষ থেকে তার কী জবাব দেওয়া হবে, সেদিকেও ইঙ্গিত রয়েছে।
অথবা তাঁর এ কথা বলার উদ্দেশ্য হতে পারে বক্তব্য বিষয়কে মানুষের কাছে হৃদয়গ্রাহী করে তোলা এবং তারা যাতে বুঝতে পারে বিষয়টি কত গুরুত্বপূর্ণ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, ইমাম ও রাষ্ট্রপ্রধানের কর্তব্য নিজ ভাষণে দীনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা এবং কারও দ্বারা অনুচিত কোনও কাজ হয়ে গেলে সে ব্যাপারে জনগণকে সাবধান করা, যাতে আর কেউ সেরকম কাজে লিপ্ত না হয়।

খ. সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থেকে তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হিসাব নেওয়া উচিত।

গ. সরকারি কর্মচারীদের এমন কারও থেকে হাদিয়া গ্রহণ করা উচিত নয়, তার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বের সাথে যার কোনওরকম সংশ্লিষ্টতা আছে।

ঘ. কেউ যদি শরী‘আতের কোনও বিধানের ব্যাপারে ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্তব্য তাকে সে বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়া।

ঙ. যদি কারও দ্বারা এমন কোনও ভুল হয়ে যায়, যাতে অন্যদের বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে সে বিষয়টি জনগণের মধ্যে প্রচার করে দেওয়া উচিত, যাতে সকলে সে বিষয়ে সচেতন হতে পারে।

চ. কেউ কোনও ভুল করলে সংশোধনের নিয়তে তাকে তিরস্কার করা যেতে পারে।

ছ. শরী'আতের কোনও বিধান মানুষের কাছে পৌছানোর পর মানুষের কাছে তা হৃদয়গ্রাহী করা এবং তাদের কাছে তার গুরুত্ব ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে সে বিষয়ে মানুষকে বা আল্লাহ তা'আলাকে সাক্ষী রাখা যেতে পারে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন