আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৩৬- যুলুম - নির্যাতন ও কিসাসের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৪৪২
১৫২৭. মুসলমান মুসলমানের প্রতি যুলুম করবে না এবং তাকে অপমানিতও করবে না
২২৮০। ইয়াহয়া ইবনে বুকাইর (রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পুরণ করবে আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি (পৃথিবীতে) কোন মুসলমানের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে এক মুসলিমকে অপর মুসলিমের ভাই বলা হয়েছে। এক বর্ণনায় আছে, হযরত সুওয়াইদ ইব্ন হানযালাহ রাযি. নামক এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করার উদ্দেশ্যে নিজ বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে হযরত ওয়াইল ইব্ন হুজর রাযি.-ও ছিলেন। রাস্তায় হযরত ওয়াইল রাযি.-কে তাঁর এক শত্রু ধরে ফেলল। সঙ্গীগণ তাঁকে নিজেদের ভাই বলে পরিচয় দিলেন। তাঁর শত্রু তা মানতে চাইল না। সে এ ব্যাপারে তাদেরকে কসম করতে বলল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি তাদের ভাই না হওয়ায় কেউ কসম করতে রাজি হচ্ছিল না। শেষে হযরত সুওয়াইদ ইব্ন হানযালাহ রাযি. কসম করে বললেন যে, সে আমার ভাই। তখন শত্রু তাঁকে ছেড়ে দিল। তারপর তাঁরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছে এ ঘটনা সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলেন। তিনি বললেনঃ- صدقت، المسلم أخو المسلم “তুমি সত্য বলেছ, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই ।
কুরআন মাজীদেও আছেঃ- إنّما المؤمنون إخوة ‘মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই।
এর দ্বারা দুই মুসলিমের ঈমানী সম্পর্ককে দুই ব্যক্তির ভ্রাতৃসম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। দুই ব্যক্তি যখন একই মূলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় অর্থাৎ তাদের পিতা-মাতা অভিন্ন হয়, তখন তারা ভাই ভাই হয়। তেমনি যারা আদর্শগতভাবে একই মূল তথা ঈমান ও ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের পরস্পরকেও 'ভাই ভাই' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারাই ভাই ভাই নামে অভিহিত হওয়ার বেশি উপযুক্ত। কেননা একই পিতা-মাতা-সঞ্জাত হওয়ার দ্বারা যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তা ক্ষণস্থায়ী। এ জীবন তো অল্পদিনের, যা মৃত্যুতেই শেষ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে ঈমান ও ইসলামভিত্তিক সম্পর্ক চিরস্থায়ী, যেহেতু ঈমান ও ইসলাম দ্বারা আখেরাতের অনন্ত জীবন লাভ হয়।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীছে মুসলিম ব্যক্তির কয়েকটি কর্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তার আগে ভূমিকাস্বরূপ المسلم أخو المسلم (এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই)- এ নীতিবাক্যটি বলে নিয়েছেন।কেননা মন-মস্তিষ্কে এ ভ্রাতৃত্ববোধ সঞ্চারিত হয়ে গেলে মুসলিম ব্যক্তি সে কর্তব্যসমূহ পালনে প্রস্তুত থাকবে। বস্তুত সে কর্তব্যসমূহ এ ভ্রাতৃত্বেরই দাবি।সে দাবির কারণে মুসলিম ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তা পালন করার কথা। আলাদাভাবে তাকে সেসব কর্তব্যের কথা বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু উম্মতের এক পরম দরদী শিক্ষকও ছিলেন, তাই ছাত্র পড়ানোর মত করে তিনি এক এক করে সেগুলো স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, যাতে উম্মতের চরম গাফেল ব্যক্তিও মুসলিম ভাইয়ের প্রতি আপন কর্তব্য সম্পর্কে অনবহিত না থাকে এবং তা পালন করতে কোনওরূপ অবহেলা না করে।
তিনি এ হাদীছে এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের পাঁচটি কর্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন।
কারও প্রতি জুলুম না করা
প্রথম কর্তব্য বলেছেন- لا يظلمه সে তার উপর জুলুম করবে না। অর্থাৎ তার জান, মাল ও ইজ্জতের হক নষ্ট করবে না। অন্যায়ভাবে তার উপর আঘাত করবে না। তাকে হত্যা তো করবেই না, শারীরিকভাবেও তাকে লাঞ্ছিত করবে না। তার অর্থ সম্পদ গ্রাস করবে না বা তার অর্থ-সম্পদের কোনও ক্ষতি করবে না।
অর্থ-সম্পদের ক্ষেত্রে অন্যের প্রতি জুলুম নানানভাবে করা হয়ে থাকে। কোনও কোনও আচরণ জুলুমের মধ্যে পড়ে। অথচ তাকে জুলুম মনে করা হয় না। যেমন পাওনাদারকে ঘোরানো এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করা। এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- مطل الغني ظلم ‘(অন্যের পাওনা পরিশোধে) সচ্ছল ব্যক্তির টালবাহানা জুলুম।
এটা জুলুম হওয়া সত্ত্বেও ব্যাপকভাবেই করা হয়ে থাকে। এর থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত। এটা এক রকম হয়রানিও। অন্যকে হয়রানি করা কোনও ভদ্রলোকের কাজ হতে পারে না। একজন মুসলিম তো উচ্চস্তরের ভদ্রই হবে। সে কেন এরূপ কাজ করবে?
অন্যের সম্মানহানি করাও জুলুম। কাজেই এক মুসলিম অপর মুসলিমের মান সম্মানের উপর আঘাত আসে এমন কোনও আচরণ তার প্রতি করবে না। তাকে গালমন্দ করবে না, তার গীবত করবে না এবং তার প্রাপ্য মর্যাদা থেকে তাকে বঞ্চিত করবে না। কেননা এসব করা জুলুম। জুলুম করা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী ও কঠিন পাপ। এক হাদীছে কুদসীতে ইরশাদ হয়েছেঃ- يا عبادي إني حرمت الظلم على نفسي، وجعلته بينكم محرما، فلا تظالموا 'হে আমার বান্দাগণ! আমি আমার নিজের প্রতি জুলুম হারাম করে নিয়েছি এবং একে তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও হারাম করলাম। সুতরাং তোমরা একে অন্যের উপর জুলুম করো না।
মজলুম ও বিপন্নকে সাহায্য করা
দ্বিতীয় কর্তব্য বলেছেন, ولا يسلمه 'তাকে (শত্রুর হাতে অসহায়ভাবে) পরিত্যাগ করবে না'। অর্থাৎ কোনও মুসলিমের উপর তার কোনও শত্রু আক্রমণ চালালে সে তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। তাকে শত্রুর হাতে অসহায়ভাবে ছেড়ে দেবে না; বরং তার জুলুম থেকে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে।
শত্রু যদি তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয় বা শারীরিকভাবে তাকে লাঞ্ছিত করে, তবে সে তাকে রক্ষার চেষ্টা করবে। যদি তার অর্থ-সম্পদ কেড়ে নেয় বা অন্য কোনওভাবে তার আর্থিক ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তবে সে ক্ষেত্রেও সে তার সাহায্য করবে।
এমনিভাবে যদি তার ইজ্জতের উপর আঘাত করে, তবে তাও প্রতিহত করবে। যেমন কেউ তার সামনে তার মুসলিম ভাইয়ের বদনাম করছে ও তার দোষত্রুটি গেয়ে বেড়াচ্ছে, এ ক্ষেত্রে তার কর্তব্য হবে বদনামকারীকে বাধা দেওয়া এবং তার ভাইয়ের সদ্গুণাবলী উল্লেখ করে তার সম্মান রক্ষায় ভূমিকা রাখা। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছেঃ- من ذب عن لحم أخيه بالمغيبة كان حقا على الله أن يعتقه من النار “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের পেছনে তার মাংস ভক্ষণ অর্থাৎ তার গীবত প্রতিহত করে, আল্লাহ তাআলার কর্তব্য হয়ে যায় তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া।"
অপর এক হাদীছে আছেঃ- ما من مسلم يرد عن عرض أخيه إلا كان حقا على الله أن يرد عنه نار جهنم يوم القيامة، ثم تلا هذه الآية: وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ ‘যে কোনও মুসলিম ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের ইজ্জত রক্ষায় ভূমিকা রাখে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন অবশ্যই জাহান্নামের আগুন তার থেকে দূরীভূত করবেন। এই বলে তিনি পাঠ করলেন- وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ (আর মুমিনদেরকে সাহায্য করার দায়িত্ব আমি নিজের উপর রেখেছি)।
বস্তুত কারও সামনে অন্যের গীবত করা হলে তাতে বাধা দেওয়া অনেক বড় নেকীর কাজ। এটা এমনই এক নেকীর কাজ, যার পুরস্কার দুনিয়ায়ও পাওয়া যায়। অপরদিকে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও গীবতে বাধা না দেওয়া কঠিন গুনাহও বটে এবং তাও এমনই কঠিন গুনাহ, যার শাস্তি কেবল আখেরাতে নয়; দুনিয়ায়ও ভোগ করতে হয়। সুতরাং এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছেঃ- من اغتيب عنده مؤمن فنصره جزاه الله بها خيرا في مؤمن فلم ينصره جزاه الله بها في الدنيا والآخرة ‘ ومن اغتيب عنده مؤمن فلم ينصره الدنيا والآخرة شرا 'যার সামনে তার মুসলিম ভাইয়ের গীবত করা হয় আর সে তাকে সাহায্য করে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে উত্তম বদলা দান করবেন। অপরদিকে যার সামনে তার মুসলিম ভাইয়ের গীবত করা হয় আর সে তাকে সাহায্য না করে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে অশুভ প্রতিফল দান করবেন।
নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে সাহায্য করা
উল্লেখ্য, যে শত্রু জান, মাল ও ইজ্জতের উপর হামলা চালায়, সেও শত্রু বটে। এবং এ হাদীছ অনুযায়ী সেই শত্রুর কবল থেকে মুসলিম ভাইকে রক্ষা করা অবশ্যকর্তব্যও বৈকি। তবে এছাড়া আরও দুই শত্রু আছে- নফস ও শয়তান। এরা গোপন শত্রু। নফসের কাজ মুসলিম ব্যক্তিকে মন্দকাজের প্ররোচনা দেওয়া। কুরআন মাজীদে ইরশাদঃ- إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ “বস্তুত নফস সর্বদা মন্দ কাজেরই আদেশ করে।
শয়তানও মানুষের ঘোরতর শত্রু। সে মানুষকে জাহান্নামের দিকেই ডাকে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ- إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ “নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু। সুতরাং তাকে শত্রুই গণ্য করো। সে তার অনুসারীদেরকে দাওয়াত দেয় কেবল এজন্যই, যাতে তারা জাহান্নামবাসী হয়ে যায়।
কাজেই যদি কোনও মুসলিম ভাইকে দেখা যায় সে নফসের চাহিদা মেটানোয় ব্যস্ত এবং নফসের চাহিদা মেটাতে গিয়ে শরীআতের বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে যাচ্ছে কিংবা শয়তানের ফেরেবে পড়ে সে দীন ও ঈমানবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়েছে, তবে ঈমানী ভ্রাতৃত্বের দাবি হচ্ছে তাকে নফস ও শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাওয়া। এ চেষ্টায় ত্রুটি করলে তা তাকে শত্রুর হাতে ছেড়ে দেওয়ার নামান্তর হবে, যা এ হাদীছে নিষেধ করা হয়েছে।
মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন সমাধা করা
তৃতীয় কর্তব্য বলেছেন— من كان في حاجة أخيه كان الله في حاجته 'যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন সমাধায় রত থাকে, আল্লাহ তার প্রয়োজন সমাধা করতে থাকেন। অর্থাৎ কোনও মুসলিম ভাইয়ের কোনওরকম প্রয়োজন দেখা দিলে যার পক্ষে সে প্রয়োজন সমাধা করা সম্ভব, তার কর্তব্য তা সমাধা করে দেওয়া। যে ব্যক্তি তা সমাধা করে দেবে, তার প্রয়োজনও আল্লাহ তাআলা সমাধা করে দেবেন। অপর এক বর্ণনায় আছেঃ- والله في عون العبد ما كان العبد في عون أخيه ‘আল্লাহ বান্দার সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ- هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ ‘উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম ছাড়া আর কী হতে পারে?
অর্থাৎ যারা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া ও ইহসানের আচরণ করবে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেও তারা দয়ার আচরণ লাভ করবে। দুনিয়ার মানুষের প্রয়োজন নানারকম।
কারও প্রয়োজন খাদ্যের, কারও কাপড়ের, কারও বাসস্থানের, কারও চিকিৎসার, কারও সুপরামর্শের, কারও ভার লাঘবের, কারও বিবাহের, এমনিভাবে পৃথিবীতে মানুষকে নানারকম প্রয়োজনের সম্মুখীন হতে হয়। যার পক্ষে তার মুসলিম ভাইয়ের এসব প্রয়োজনের কোনওটি পূরণ করা সম্ভব, তা পূরণ করা তার অবশ্যকর্তব্য।
এ হাদীছ দ্বারা তো জানা গেল তার সে প্রয়োজন পূরণ করলে তার নিজের প্রয়োজনও আল্লাহ তাআলা পূরণ করে দেবেন। এটা নিজ প্রয়োজন সমাধারও এক উত্তম ব্যবস্থা। দুনিয়ায় মানুষের কোনও না কোনও প্রয়োজন থাকেই। অনেক সময় দেখা যায় এমন কোনও প্রয়োজন সামনে এসে পড়ে, যা হাজারও চেষ্টা সত্ত্বেও পূরণ করা সম্ভব হয় না। এরূপ ক্ষেত্রে তা সমাধার একটা ভালো উপায় এইও হতে পারে যে, অন্য কোনও ব্যক্তির যে প্রয়োজন আমার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব আমি তা পূরণ করে দেব। অসম্ভব নয় তাতে খুশি হয়ে আল্লাহ তাআলাও আমার সে কঠিন প্রয়োজনটি অতি সহজেই পূরণ করে দেবেন। সবচে' বড় কথা এর জন্য আখেরাতের যে পুরস্কার নির্দিষ্ট আছে তা তো পাওয়া যাবেই।
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- أيما مؤمن أطعم مؤمنا على جوع أطعمه الله يوم القيامة من ثمار الجنّة، وأيما مؤمن سقى مؤمنا على ظما سقاه الله يوم القيامة من الرحيق المختوم، وأيما مؤمن کسی مؤمنا على عري كساه الله من خضر الجنة 'যে-কোনও মুমিন কোনও ক্ষুধার্ত মুমিনকে খানা খাওয়াবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে-কোনও মুমিন কোনও তৃষ্ণার্ত মুমিনকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন মোহরকৃত সুপেয় শরাব পান করাবেন। যে-কোনও মুমিন কোনও বস্ত্রহীন মুমিনকে বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ রেশমি পোশাক পরাবেন।
সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ শিক্ষার উপর আমল করতেন। তাঁরা খুঁজে বেড়াতেন কোথায় কোন্ মুসলিমের কী প্রয়োজন আছে। নিজ সাধ্য অনুযায়ী তার সে প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করতেন। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. মহল্লার কোনও বাড়ির পুরুষ লোক অনুপস্থিত থাকলে তাদের ছাগলের দুধ দোহন করে দিতেন। এটা সেকালের একটা প্রয়োজন ছিল। কেননা তখনকার রেওয়াজ অনুযায়ী মহিলাগণ দুধ দোহন করত না। ফলে বাড়িতে পুরুষ লোক অনুপস্থিত থাকলে তারা সমস্যায় পড়ে যেত।
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. ও হযরত উমর ফারূক রাযি.-এর মানবসেবা
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. নিয়মিতই তাদের এ প্রয়োজন পূরণ করতেন। তিনি খলিফা হওয়ার পর এক নারী মন্তব্য করেছিল, এখন তো আর তিনি আমাদের ছাগলের দুধ দুইয়ে দেবেন না। এ কথা তাঁর কানে পৌঁছে গেল। তিনি বললেন, অবশ্যই, আমি আশা করি যে দায়িত্ব আমার কাঁধে চেপেছে তা আমার আগেকার অভ্যাস বদলাতে পারবে না।
হযরত উমর রাযি.-ও রাতের বেলা ঘুরে ঘুরে বিধবা মহিলাদের বাড়িতে পানি পৌছিয়ে দিতেন। এ সম্পর্কে একটা চমৎকার বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি রাতের বেলা নিয়মিতই এক বিধবার বাড়িতে যেতেন। তাঁর এ আসা-যাওয়াটা হযরত তালহা রাযি.-এর চোখে পড়ে যায়। কী ঘটনা? তাঁর জানার কৌতূহল হল। তিনি একদিন সেই মহিলার বাড়িতে গেলেন। গিয়ে দেখেন এক অন্ধ ও অচল বৃদ্ধা। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ওই যে লোকটি রাতের বেলা আপনার কাছে এসে থাকে, সে কী করে? বৃদ্ধা বলল, সে এত-এত দিন যাবৎ এসে আমার খোঁজ-খবর নেয় এবং আমার প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করে দেয়। এ কথা শুনে হযরত তালহা রাযি. স্তম্ভিত। তিনি নিজেকে তিরস্কার করে বললেন, রে তালহা! তুই মরে যা না! উমরের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াচ্ছিস?
সাহাবায়ে কেরাম, তাবি'ঈন, সালাফে সালিহীন ও বুযুর্গানে দীনের এ জাতীয় হাজারও ঘটনা আছে। অন্যের প্রয়োজন পূরণকে তারা অনেক বড় পুণ্যের কাজ মনে করতেন। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকেও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণের তাওফীক দিন।
অন্যের মুখে হাসি ফোটানো
মানুষের প্রয়োজন বড় বিচিত্র। এক ব্যক্তির কোনও অভাব-অনটন নেই, কিন্তু বিশেষ কোনও কারণে সে মনোকষ্টে ভুগছে। তার মলিন মুখের দিকে তাকালে মনের কষ্ট অনুভব করা যায়। এই ব্যক্তির প্রয়োজন কষ্টের কারণটি দূর করে তার মুখে হাসি ফোটানো। নিঃসন্দেহে অন্যের মনে আনন্দদানও একটি বড় নেকীর কাজ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছেঃ- إن أحب الأعمال إلى الله بعد الفرائض إدخال السرور على المسلم ‘ফরয আমলসমূহের পর আল্লাহ কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় আমল হচ্ছে মুসলিম ব্যক্তিকে আনন্দ দান করা।
আরেক হাদীছে ইরশাদ হয়েছেঃ- إن من موجبات المغفرة إدخال السرور على أخيك المسلم 'যেসকল কারণে আল্লাহ তাআলার কাছে মাগফিরাত লাভ হয়, তার একটি হচ্ছে মুসলিম ভাইকে আনন্দ দান করা।
অপরকে আনন্দদানের জন্য ইসলাম পরিমিত রসিকতাকেও জায়েয করেছে। এর একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত হচ্ছে পোষা পাখি মারা যাওয়ায় বিষণ্ণ বালক আবূ উমায়রকে লক্ষ্য করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হালকা রসিকতা। হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি.-এর বালক পুত্র আবূ উমায়রের একটি পোষা পাখি ছিল। সেটির নাম ছিল নুগায়র। আবূ উমায়র সেটি নিয়ে সময় কাটাত। অকস্মাৎ তার সে পাখিটি মারা গেল। তাতে আবূ উমায়র ভীষণ দুঃখ পেল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই তাদের বাড়ি আসতেন এবং আবূ উমায়রকে খুব আদর করতেন। আবূ উমায়রও তাঁকে পেলে বেশ আনন্দিত হত। এবার তিনি এসে দেখেন আবূ উমায়র কেমন বিষণ্ণ, মুখে হাসি নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন তার পাখিটি মারা গেছে। সুতরাং তিনি তার দুঃখ ভোলানোর জন্য ছড়া গেয়ে উঠলেন

يا أبا عمير
ما فعل النغير؟
“ওহে আবূ উমায়ের!
কোথা গেল নুগায়ের?

বিপদগ্রস্তের বিপদ দূর করার ফযীলত
চতুর্থ কর্তব্য বলেছেন— ومن فرج عن مسلم كربة فرج الله عنه بها كربة من كرب يوم القيامة “যে ব্যক্তি কোনও মুসলিমের কোনও একটি বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ থেকে একটা বিপদ দূর করে দেবেন'।
এখানে কারও প্রশ্ন জাগতে পারে, আল্লাহ তাআলা তো বলেছেন- مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا ‘যে ব্যক্তি কোনও পুণ্য নিয়ে আসবে, তার জন্য অনুরূপ তার দশগুণ (সওয়াব) রয়েছে, এ হিসেবে তো একটি বিপদ দূর করার পরিবর্তে কিয়ামতের দিন দশটি বিপদ দূর হওয়ার কথা?
এর উত্তর এই যে, এখানে একটি বিপদ দূর করার কথা বলার দ্বারা দশগুণ বিনিময়কে অস্বীকার করা হয়নি। যে-কোনও নেক আমলের বদলা যে দশগুণ দেওয়া হয় তার একটি হচ্ছে মূল এবং নয়টি অতিরিক্ত। এখানে সম্ভবত একটি নেক আমলের একটি যে মূল বদলা সেটার কথাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা নিজ দয়া ও অনুগ্রহে কেবল কি দশগুণ, তার অনেক বেশিও দিতে পারেন। বেশি দিতে পারেন সাতশ' গুণ পর্যন্ত। এমনকি তাঁর ইচ্ছামত বিনা হিসেবে দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।।
তাছাড়া বেশি হওয়ার বিষয়টি যেমন পরিমাণের দিক থেকে হয়, তেমনি মানের দিক থেকেও হয়, যেমন আকৃতিতে হয়, তেমনি প্রকৃতিতেও হয় এবং যেমন বাহ্যিকভাবে হয়, তেমনি গুণগতভাবেও হয়। আর এতে তো কোনও সন্দেহ নেই যে, কিয়ামতের একটি বিপদ দুনিয়ার হাজারও বিপদ অপেক্ষা কঠিন। সুতরাং দুনিয়ায় কারও একটি বিপদ দূর করার দ্বারা যদি আখেরাতের একটি বিপদ দূরীভূত হয়, তবে সে প্রাপ্তি অনেক বড়। প্রত্যেক মুমিনের এটা কাম্যও বটে।
হাশর ময়দানের বিভীষিকা
দুনিয়ার কষ্ট-পেরেশানি অপেক্ষা আখেরাতের কষ্ট ও পেরেশানি-যে কত বেশি কঠিন, তা যথাযথভাবে অনুমান করাও সম্ভব নয়। কেননা এক তো জিজ্ঞাসাবাদ ও হিসাব-নিকাশ করার জন্য সমস্ত মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে হাজির করা হবে। ইরশাদ হয়েছেঃ- يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ ‘যে দিন সমস্ত মানুষ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়ানোটাই তো চরম কঠিন ব্যাপার।তদুপরি সেদিনকার পরিবেশ-পরিস্থিতি তো হবে অত্যন্ত বিভীষিকাময়।
এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- يجمع الله الأولين والأخرين في صعيد واحد، فيسمعهم الداعي وينفذهم البصر وتدنو الشمس منهم، فيبلغ النّاس من الغم والكرب ما لا يطيقون ولا يحتملون، فيقول الناس بعضهم لبعض : ألا ترون ما قد بلغكم؟ ألا تنظرون من يشفع لكم إلى ربكم؟ ‘আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মানুষকে একই ময়দানে একত্র করবেন। ঘোষক তার ঘোষণা তাদের সকলকেই শুনিয়ে দেবে, দৃষ্টিশক্তি তাদের সকলকে ভেদ করবে এবং সূর্য তাদের নিকটবর্তী হয়ে যাবে। ফলে মানুষের এতটা পেরেশানি ও অস্থিরতা দেখা দেবে, যা তারা সইতে পারবে না ও বরদাশত করতে সক্ষম হবে না। ফলে মানুষ একে অন্যকে বলবে, দেখছ না তোমরা কী কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছ? তোমরা কি এমন কাউকে খুঁজবে না, যে তোমাদের জন্য তোমার প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করবে?" হাদীছটিতে এর পরে শাফাআতের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছেঃ- يحشرون حفاة عراة غرلا، قالت: فقلت: يا رسول الله! الرجال والنساء؟ ينظر بعضهم إلى بعض؟ فقال: الأمر أشد من أن يهمهم ذلك 'নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হাশরের ময়দানে তোমাদেরকে খালিপায়ে, বস্ত্রহীন ও নগ্ন অবস্থায় একত্র করা হবে। হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নারী-পুরুষ সকলে? তাদের একজন অন্যজনকে দেখতে থাকবে? তিনি বললেন, সেদিনকার অবস্থা অনেক কঠিন। তাদের ওদিকে ভ্রূক্ষেপ করারই অবকাশ হবে না।
সেদিনের বিভীষিকা ও ভয়াবহতার কারণে নবী-রাসূলগণ পর্যন্ত অত্যন্ত ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বেন। তাঁরা প্রত্যেকে বলতে থাকবেন, اللهم سلم سلم 'হে আল্লাহ! রক্ষা কর, রক্ষা কর।" সেই কঠিন দুর্দিনে দুনিয়ার যেসকল আমল কাজে আসবে, তার একটি হচ্ছে অন্যের বিপদ-আপদ দূর করতে ভূমিকা রাখা, যেমনটা আলোচ্য হাদীছে বলা হয়েছে।
মুমিন ব্যক্তিকে আড়াল করা ও তার দোষ গোপন রাখা
পঞ্চম কর্তব্য বলেছেন- ومن ستر مسلما ستره الله يوم القيامة যে ব্যক্তি কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে গোপন রাখে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে গোপন রাখবেন। কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে গোপন রাখার দুই অর্থ হতে পারে- তার দোষ গোপন রাখা অথবা খোদ সেই ব্যক্তিকেই গোপন রাখা।
ব্যক্তিকে গোপন রাখার অর্থ তাকে জালেমের দৃষ্টির আড়ালে রাখা, যাতে সে তার উপর জুলুম করতে না পারে। হয়তো অত্যাচারী শাসক নিরপরাধ কোনও ব্যক্তিকে খোঁজ করছে। তাকে ধরতে পারলে হত্যা করবে কিংবা কঠিন নির্যাতন চালাবে। এ অবস্থায় যার পক্ষে তাকে সেই শাসক ও তার পাইক-পেয়াদা থেকে লুকিয়ে রাখা সম্ভব, তার অবশ্যকর্তব্য তাকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা। এ চেষ্টার বিনিময়ে সে আখেরাতে জাহান্নামের আড়ালে থাকার পুরস্কার লাভ করবে। কোনও মুসলিমকে গোপন করার আরেক অর্থ তার দোষ গোপন করা। যদি তার কোনও দোষ চোখে পড়ে, তবে অন্যকে তা না জানানো; নিজ মনের মধ্যেই রেখে দেওয়া।
কোথাও কারও গীবত হতে দেখলে তার প্রতিবাদ করা এবং তার প্রশংসা করাও এর মধ্যে পড়ে।
অন্যের দোষ প্রকাশ দ্বারা তার সম্মানহানী ঘটানো হয় ও তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। এটা মহানুভবতার পরিপন্থী। মহানুভবতা আল্লাহ তাআলার গুণ। মুমিন ব্যক্তির উচিত এ গুণের চর্চা করা, অন্যের দোষের পেছনে পড়া নয়। হযরত উছমান রাযি.-এর মহানুভবতা দেখুন।
বর্ণিত আছে যে, একবার কিছু লোক দুষ্কর্মে লিপ্ত ছিল। তাদেরকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য হযরত উছমান রাযি.-কে ডেকে আনা হল। তিনি আসতেই লোকগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে পালিয়ে গেল। তিনি আর তাদেরকে ধরার চেষ্টা করলেন না; বরং তাঁর হাতে কোনও মুসলিম লাঞ্ছিত না হওয়ায় তিনি আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করলেন এবং একটি গোলাম আযাদ করে দিলেন।
প্রকাশ থাকে যে, অন্যের দোষ আড়াল করার এ ফযীলত কেবল তখনই, যখন দোষটি কারও ব্যক্তিগত বিষয় হয় এবং তা দ্বারা অন্যের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে। যেমন কারও সম্পর্কে জানা গেল সে অতীতে কোনও একটি গুনাহ ও পাপকর্ম করেছে, যা সে ছাড়া আর কেউ জানে না। এ ক্ষেত্রে তার কর্তব্য তা অন্যকে না শোনানো। অন্যকে শোনানোর দ্বারা এক তো তার গীবত করা হবে, যা অত্যন্ত কঠিন পাপ, সেইসঙ্গে করা হবে তার সম্মানহানী, এটাও সম্পূর্ণ নাজায়েয।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ মুসলিম উম্মাহকে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত করে ।

খ. আমরা কেউ একে অন্যের প্রতি জুলুম করব না। অর্থাৎ অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের উপর আঘাত করব না। এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী।

গ. কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়, তবে তার সাহায্য না করে পাশ কাটিয়ে যাওয়া উচিত নয়; বরং তার সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি।

ঘ. কোনও মুসলিম ভাইয়ের বিশেষ কোনও জরুরত ও প্রয়োজন দেখা দিলে আমাদের কর্তব্য তার সে প্রয়োজন সমাধায় ভূমিকা রাখা।

ঙ. মুসলিম ভাইয়ের জরুরত পূরণ করলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিজ জরুরত পূরণের আশ্বাস রয়েছে।

চ. মুসলিম ভাইয়ের পেরেশানি ও দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সচেষ্ট থাকা চাই । এটাও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি।

ছ. এ হাদীছ দ্বারা কিয়ামতের অবশ্যম্ভাবিতা ও সেদিনের কঠিন বিপদ-আপদ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সেদিনের বিপদ থেকে নিস্তার লাভের একটি উপায় হচ্ছে দুনিয়ায় মুসলিম ভাইয়ের বিপদ-আপদে সাহায্য করা।

জ. অপরের যে দোষত্রুটি অন্যের জন্য ক্ষতিকারক নয় তা গোপন রাখা চাই। অন্যের দোষ গোপন রাখার দ্বারা কিয়ামতে নিজ দোষ গোপন থাকার আশা রয়েছে।

ঝ. অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা বা যে-কোনও নেককাজের জন্য মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য আখেরাতের বিনিময় আশা করা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষভাবে পরকালীন বিনিময়ের উল্লেখ দ্বারা সৎকর্মের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন, যেমনটা এ হাদীছ দ্বারাও জানা যায়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন