আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৩৬- যুলুম - নির্যাতন ও কিসাসের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২৪৪১
১৫২৬. আল্লাহ তাআলার বাণীঃ সাবধান! জালিমদের উপর আল্লাহর লা‘নত (১১:১৮)।
২২৭৯। মুসা ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) .... সাফওয়ান ইবনে মুহরিয আল- মাযিনী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি ইবনে উমর (রাযিঃ)- এর সাথে তাঁর হাত ধরে চলছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা ও তাঁর মু’মিন বান্দার একান্তে কথাবার্তা সম্পর্কে আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে কি বলতে শুনেছেন? তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তাআলা মু’মিন ব্যক্তিকে নিজের কাছে নিয়ে আসবেন এবং তার উপর স্বীয় আবরণ দ্বারা তাকে ঢেকে নিবেন। তারপর বলবেন, অমুক পাপের কথা কি তুমি জান? তখন সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার প্রতিপালক। এভাবে তিনি তার কাছ থেকে তার পাপগুলো স্বীকার করিয়ে নিবেন। আর সে মনে করবে যে, তার ধ্বংস অনিবার্য। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি পৃথিবীতে তোমার পাপ গোপন করে রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে দিব। তারপর তার নেকের আমলনামা তাকে দেওয়া হবে। কিন্তু কাফির ও মুনাফিকদের সম্পর্কে সাক্ষীরা বলবে, এরাই তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছিল। সাবধান, জালিমদের উপর আল্লাহর লা’নত।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার খাস রহমতের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিয়ামতের দিন তিনি মুমিনদেরকে কাছে ডেকে পর্দা ফেলে দেবেন। অর্থাৎ সকলের থেকে আড়ালে নিয়ে যাবেন। তারপর এক এক করে তার ওইসকল গুনাহ তার সামনে উল্লেখ করবেন, যা সে গোপনে করেছিল, কোনও মানুষ তা জানত না। প্রত্যেকটি সম্পর্কে সে স্বীকার করবে যে, সে তা করেছিল। আল্লাহ তা'আলা তার সামনে আমলনামাও খুলে দেবেন। তাতেও সে তার গোপন গুনাহসমূহ দেখতে পাবে। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, এ অবস্থায় সে ডানে-বামে তাকাবে। সে তাকানোটা হবে চরম ভয় ও আতঙ্কের কারণে। সে ধরেই নেবে আজ তার মুক্তির কোনও উপায় নেই। কিন্তু পরম দয়ালু আল্লাহ তাকে নির্ভয় দেবেন। বলবেন, দুনিয়ায় তোমার এসব গুনাহ আমি গোপন রেখেছিলাম, আজ আমি ক্ষমা করে দিলাম। এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ বলবেন, তোমার কোনও ভয় নেই। তুমি আমার পর্দার ভেতর রয়েছ। আমি ছাড়া তোমার গুনাহ সম্পর্কে কেউ জানতে পারবে না।
প্রকাশ থাকে যে, এটা হবে হাক্কুল্লাহ সম্পর্কিত গুনাহের ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে কেউ যদি গোপনে কোনও বান্দার হক নষ্ট করে, তবে তা এভাবে ক্ষমা করা হবে না; বরং বান্দার পক্ষ থেকেও তাকে ক্ষমা পেতে হবে। এমনিভাবে মানুষ যেসব গুনাহ প্রকাশ্যে করে, সে ক্ষেত্রেও এরকম খাস রহমত করা হবে না। প্রকাশ্যে কৃত গুনাহ সম্পর্কে হাদীছে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
كل أمتي معافى إلا المجاهرين، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا، ثم يصبح وقد ستره الله عليه، فيقول: يا فلان، عملت البارحة كذا وكذا، وقد بات يستره ربه، ويصبح يكشف ستر الله عنه، متفق عليه
আমার উম্মতের প্রত্যেকেই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে, কিন্তু প্রকাশ্যে গুনাহকারীগণ নয়। এটাও প্রকাশ্য গুনাহের অন্তর্ভুক্ত যে, কোনও ব্যক্তি রাতের বেলা কোনও (পাপের) কাজ করে তারপর এ অবস্থায় তার ভোর হয় যে, আল্লাহ তা'আলা তার কাজটি গোপন রাখেন, কিন্তু সে নিজেই বলে, হে অমুক! (শোন) আমি গতরাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে রাত যাপন করেছিল এ অবস্থায় যে, তার প্রতিপালক তার দোষ আড়ালে রেখেছিলেন। আর সে সকালবেলা আল্লাহর আড়াল উন্মোচন করে দেয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছটি দ্বারা মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার বিশেষ দয়ার পরিচয় পাওয়া যায়।
খ. আরও জানা যায়, আল্লাহ তা'আলা যাকে চান নিজ দয়ায় ক্ষমা করবেন।
গ. যেসকল গুনাহ গোপনে হয়ে যায়, সে ব্যাপারে ক্ষমালাভের বেশি আশা থাকে।
ঘ. কোনও গুনাহ গোপনে হয়ে গেলে নিজের পক্ষ থেকে তা কারও কাছে প্রকাশ করতে নেই।
প্রকাশ থাকে যে, এটা হবে হাক্কুল্লাহ সম্পর্কিত গুনাহের ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে কেউ যদি গোপনে কোনও বান্দার হক নষ্ট করে, তবে তা এভাবে ক্ষমা করা হবে না; বরং বান্দার পক্ষ থেকেও তাকে ক্ষমা পেতে হবে। এমনিভাবে মানুষ যেসব গুনাহ প্রকাশ্যে করে, সে ক্ষেত্রেও এরকম খাস রহমত করা হবে না। প্রকাশ্যে কৃত গুনাহ সম্পর্কে হাদীছে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
كل أمتي معافى إلا المجاهرين، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا، ثم يصبح وقد ستره الله عليه، فيقول: يا فلان، عملت البارحة كذا وكذا، وقد بات يستره ربه، ويصبح يكشف ستر الله عنه، متفق عليه
আমার উম্মতের প্রত্যেকেই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে, কিন্তু প্রকাশ্যে গুনাহকারীগণ নয়। এটাও প্রকাশ্য গুনাহের অন্তর্ভুক্ত যে, কোনও ব্যক্তি রাতের বেলা কোনও (পাপের) কাজ করে তারপর এ অবস্থায় তার ভোর হয় যে, আল্লাহ তা'আলা তার কাজটি গোপন রাখেন, কিন্তু সে নিজেই বলে, হে অমুক! (শোন) আমি গতরাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে রাত যাপন করেছিল এ অবস্থায় যে, তার প্রতিপালক তার দোষ আড়ালে রেখেছিলেন। আর সে সকালবেলা আল্লাহর আড়াল উন্মোচন করে দেয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছটি দ্বারা মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার বিশেষ দয়ার পরিচয় পাওয়া যায়।
খ. আরও জানা যায়, আল্লাহ তা'আলা যাকে চান নিজ দয়ায় ক্ষমা করবেন।
গ. যেসকল গুনাহ গোপনে হয়ে যায়, সে ব্যাপারে ক্ষমালাভের বেশি আশা থাকে।
ঘ. কোনও গুনাহ গোপনে হয়ে গেলে নিজের পক্ষ থেকে তা কারও কাছে প্রকাশ করতে নেই।
