আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৩- উযূর অধ্যায়
হাদীস নং:
১৪৫। উভয় মোজার ওপর মাসাহ্ করা
২০৩। আমর ইবনে খালিদ হাররানী (রাহঃ) .... মুগীরা ইবনে শু’বা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গেলে মুগীরা (রাযিঃ) পানি সহ একটি পাত্র নিয়ে তাঁর অনুসরণ করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রাকৃতিক প্রয়োজন শেষ করে এলে মুগীরা (রাযিঃ) তাঁকে পানি ঢেলে দিলেন। আর তিনি উযু করলেন এবং উভয় মোজার উপর মাসাহ করলেন।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।
হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি. বলেন, কোনও এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সফরে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, তোমার কাছে কি পানি আছে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি সাওয়ারি থেকে নামলেন। তারপর হাঁটতে থাকলেন। এমনকি তিনি রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তারপর ফিরে আসলেন। আমি পাত্র থেকে তাঁর হাতে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি মুখ ধুইলেন। তাঁর গায়ে একটি পশমের জুব্বা ছিল। তিনি তার ভেতর থেকে বাহুদু'টি বের করতে পারলেন না। শেষে জুব্বার নিচ দিয়ে সে দু'টি বের করলেন। তারপর তা ধুইলেন। তারপর মাথা মাসাহ করলেন। আমি তাঁর মোজাদু'টি খুলতে উদ্যত হলাম। তিনি বললেন, এ দু'টি ছেড়ে দাও। আমি এ দু'টি পরেছি পবিত্র অবস্থায়। তিনি তার উপর মাসাহ করলেন।
এ বর্ণনায় হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি. যে ঘটনা উল্লেখ করেছেন, তা ঘটেছিল তাবুকের যুদ্ধে। রোমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল হিজরী ৯ম সনে। এটাই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের সর্বশেষ যুদ্ধাভিযান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উটনীর পিঠে সওয়ার ছিলেন। তাঁর সে উটনীটির নাম ছিল আল-কাসওয়া। তাঁর ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন হলে উটনীর পিঠ থেকে নেমে রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে যান। অর্থাৎ তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। এটা ইস্তিঞ্জার আদব। ইস্তিঞ্জার জরুরত হলে যথাসম্ভব মানুষের দৃষ্টির আড়ালেই তা সম্পন্ন করা উচিত।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সম্পন্ন করার পর সঙ্গীদের কাছে ফিরে আসলেন। তিনি আগেই জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছিলেন যে, হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি.-এর কাছে পানি আছে। সুতরাং তিনি ওযু করতে বসে গেলেন। এটা ছিল ফজরের সময়। তিনি ফজরের নামাযের জন্য ওযু করছিলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিধানে ছিল একটি পশমের জুব্বা। এক বর্ণনায় সেটিকে শামী জুব্বা বলা হয়েছে। অর্থাৎ সেটি ছিল শামের তৈরি। সেকালে শাম বলতে বর্তমানকালের ফিলিস্তীন, জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাকে বোঝানো হত।
হযরত মুগীরা রাযি. পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করছিলেন। হাত ধোওয়ার সময় তিনি জুব্বার হাতা গুটাতে পারছিলেন না। কারণ হাতা ছিল সংকীর্ণ। অগত্যা জুব্বার ভেতর থেকে হাত বের করে আনেন। তিনি চেহারা ধুইলেন, কনুই পর্যন্ত হাত ধুইলেন, মাথা মাসাহ করলেন, তারপর আসল পা ধোওয়ার পালা। কিন্তু তাঁর পায়ে মোজা পরিহিত ছিল। হযরত মুগীরা রাযি. চিন্তা করলেন পা ধোওয়ার জন্য তো মোজা খুলতে হবে। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পা থেকে মোজা খুলে দিতে উদ্যত হলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে তাঁকে বারণ করলেন যে, আমি পবিত্র অবস্থায় এ দু'টি পরিধান করেছি। তারপর তিনি মোজার উপর মাসাহ করলেন।
এখানে দু'টি বিষয় লক্ষণীয়। এক হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পা না ধুয়ে মোজার উপর মাসাহ করেছেন। এর দ্বারা বোঝা গেল পায়ে মোজা পরা থাকলে তা খুলে পা ধোওয়ার প্রয়োজন নেই; মাসাহ করাই যথেষ্ট। এ বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের সকল ইমাম একমত। এমনকি মোজার উপর মাসাহ করার বৈধতায় বিশ্বাস করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের অন্তর্ভুক্ত থাকার পরিচায়ক। শী'আ সম্প্রদায় এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে। তাদের মতে মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয নয়।
দ্বিতীয় বিষয় হল হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি. মোজা খুলে দিতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এটা পরিধান করেছি পবিত্র অবস্থায়। অর্থাৎ পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধান করলে তার উপর মাসাহ করাই যথেষ্ট। পা ধোওয়া জরুরি নয়। এরই ভিত্তিতে মাসআলা হল কেউ যদি ওযু না থাকা অবস্থায় মোজা পরিধান করে আর এ অবস্থায় তার ওযুর প্রয়োজন হয়, তবে তাকে মোজা খুলে পা ধুইতে হবে। তার জন্য মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয হবে না। তা জায়েয হয় কেবল তখনই, যখন ওযু অবস্থায় মোজা পরিধান করা হয়। তারপর যখন তার ওষু ভেঙে যাবে, তখন নতুন ওযু করার জন্য মোজা খুলতে হবে না; বরং মোজার উপর দিয়ে মাসাহ করলেই যথেষ্ট হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পশমের তৈরি পোশাক পরা জায়েয।
খ. অমুসলিম জাতির তৈরি করা পোশাক পরা মুসলিমদের জন্য দূষণীয় নয়।
গ. ওযু করাতে অন্যের সহযোগিতা নেওয়া জায়েয আছে। যেমন একজন পানি ঢেলে দিল এবং অন্যজন তা দ্বারা ওযু করল।
ঘ. মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয।
হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি. বলেন, কোনও এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সফরে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, তোমার কাছে কি পানি আছে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি সাওয়ারি থেকে নামলেন। তারপর হাঁটতে থাকলেন। এমনকি তিনি রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তারপর ফিরে আসলেন। আমি পাত্র থেকে তাঁর হাতে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি মুখ ধুইলেন। তাঁর গায়ে একটি পশমের জুব্বা ছিল। তিনি তার ভেতর থেকে বাহুদু'টি বের করতে পারলেন না। শেষে জুব্বার নিচ দিয়ে সে দু'টি বের করলেন। তারপর তা ধুইলেন। তারপর মাথা মাসাহ করলেন। আমি তাঁর মোজাদু'টি খুলতে উদ্যত হলাম। তিনি বললেন, এ দু'টি ছেড়ে দাও। আমি এ দু'টি পরেছি পবিত্র অবস্থায়। তিনি তার উপর মাসাহ করলেন।
এ বর্ণনায় হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি. যে ঘটনা উল্লেখ করেছেন, তা ঘটেছিল তাবুকের যুদ্ধে। রোমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল হিজরী ৯ম সনে। এটাই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের সর্বশেষ যুদ্ধাভিযান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উটনীর পিঠে সওয়ার ছিলেন। তাঁর সে উটনীটির নাম ছিল আল-কাসওয়া। তাঁর ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন হলে উটনীর পিঠ থেকে নেমে রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে যান। অর্থাৎ তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। এটা ইস্তিঞ্জার আদব। ইস্তিঞ্জার জরুরত হলে যথাসম্ভব মানুষের দৃষ্টির আড়ালেই তা সম্পন্ন করা উচিত।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সম্পন্ন করার পর সঙ্গীদের কাছে ফিরে আসলেন। তিনি আগেই জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছিলেন যে, হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি.-এর কাছে পানি আছে। সুতরাং তিনি ওযু করতে বসে গেলেন। এটা ছিল ফজরের সময়। তিনি ফজরের নামাযের জন্য ওযু করছিলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিধানে ছিল একটি পশমের জুব্বা। এক বর্ণনায় সেটিকে শামী জুব্বা বলা হয়েছে। অর্থাৎ সেটি ছিল শামের তৈরি। সেকালে শাম বলতে বর্তমানকালের ফিলিস্তীন, জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাকে বোঝানো হত।
হযরত মুগীরা রাযি. পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করছিলেন। হাত ধোওয়ার সময় তিনি জুব্বার হাতা গুটাতে পারছিলেন না। কারণ হাতা ছিল সংকীর্ণ। অগত্যা জুব্বার ভেতর থেকে হাত বের করে আনেন। তিনি চেহারা ধুইলেন, কনুই পর্যন্ত হাত ধুইলেন, মাথা মাসাহ করলেন, তারপর আসল পা ধোওয়ার পালা। কিন্তু তাঁর পায়ে মোজা পরিহিত ছিল। হযরত মুগীরা রাযি. চিন্তা করলেন পা ধোওয়ার জন্য তো মোজা খুলতে হবে। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পা থেকে মোজা খুলে দিতে উদ্যত হলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে তাঁকে বারণ করলেন যে, আমি পবিত্র অবস্থায় এ দু'টি পরিধান করেছি। তারপর তিনি মোজার উপর মাসাহ করলেন।
এখানে দু'টি বিষয় লক্ষণীয়। এক হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পা না ধুয়ে মোজার উপর মাসাহ করেছেন। এর দ্বারা বোঝা গেল পায়ে মোজা পরা থাকলে তা খুলে পা ধোওয়ার প্রয়োজন নেই; মাসাহ করাই যথেষ্ট। এ বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের সকল ইমাম একমত। এমনকি মোজার উপর মাসাহ করার বৈধতায় বিশ্বাস করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের অন্তর্ভুক্ত থাকার পরিচায়ক। শী'আ সম্প্রদায় এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে। তাদের মতে মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয নয়।
দ্বিতীয় বিষয় হল হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি. মোজা খুলে দিতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এটা পরিধান করেছি পবিত্র অবস্থায়। অর্থাৎ পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধান করলে তার উপর মাসাহ করাই যথেষ্ট। পা ধোওয়া জরুরি নয়। এরই ভিত্তিতে মাসআলা হল কেউ যদি ওযু না থাকা অবস্থায় মোজা পরিধান করে আর এ অবস্থায় তার ওযুর প্রয়োজন হয়, তবে তাকে মোজা খুলে পা ধুইতে হবে। তার জন্য মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয হবে না। তা জায়েয হয় কেবল তখনই, যখন ওযু অবস্থায় মোজা পরিধান করা হয়। তারপর যখন তার ওষু ভেঙে যাবে, তখন নতুন ওযু করার জন্য মোজা খুলতে হবে না; বরং মোজার উপর দিয়ে মাসাহ করলেই যথেষ্ট হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পশমের তৈরি পোশাক পরা জায়েয।
খ. অমুসলিম জাতির তৈরি করা পোশাক পরা মুসলিমদের জন্য দূষণীয় নয়।
গ. ওযু করাতে অন্যের সহযোগিতা নেওয়া জায়েয আছে। যেমন একজন পানি ঢেলে দিল এবং অন্যজন তা দ্বারা ওযু করল।
ঘ. মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয।
