আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

২৬- ক্রয় - বিক্রয়ের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২১৬৫
১৩৪৭. (শহরে প্রবেশের পূর্বে কমমূল্যে খরিদের আশায়) বণিক দলের সাথে সাক্ষাৎ করা নিষেধ। এরূপ ক্রয় করা প্রত্যাখ্যাত।
২০৩১. আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তোমাদের কেউ কারো ক্রয়-বিক্রয়ের উপর যেন ক্রয়-বিক্রয় না করে এবং তোমরা পণ্য ক্রয় করো না তা বাজারে উপস্থাপিত না করা পর্যন্ত।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

একজনের বেচাকেনার উপর আরেকজনের বেচাকেনায় লিপ্ত হওয়ার নিষিদ্ধতা
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরেকটি নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে তোমরা একজনের বেচাকেনার উপর আরেকজন বেচাকেনা করো না'। একজনের বেচাকেনার উপর আরেকজনের বেচাকেনায় লিপ্ত হওয়ার অর্থ- কেউ কারও কাছে কোনও মাল বিক্রি করার পর বিক্রেতাকে গিয়ে এ কথা বলা যে, তুমি তার কাছে বিক্রি বাতিল করে দাও, আমি আরও বেশি দামে তোমার কাছ থেকে কিনব। অথবা ক্রেতার কাছে গিয়ে বলা যে, তুমি এ ক্রয় বাতিল করে দাও, আমি এরকম মাল আরও সস্তায় তোমাকে দেব। এটা সম্পূর্ণ নিষেধ। এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী। ভ্রাতৃত্বের দাবি হচ্ছে নিজের জন্য যা পসন্দ করা হয়, অন্যের জন্যও তা পসন্দ করা। এমনিভাবে ভ্রাতৃত্বের দাবি প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনা করা। এ জাতীয় কাজ সে দাবির পরিপন্থী। কেননা প্রথম অবস্থায় ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর দ্বিতীয় অবস্থায় বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোনও মুসলিমকে ক্ষতিগ্রস্ত করা সম্পূর্ণ হারাম। এমনকি অকারণে কোনও অমুসলিমেরও ক্ষতি করা জায়েয নয়।

ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর তৃতীয় ব্যক্তি কর্তৃক তা বাতিল করার প্রস্তাব নাজায়েয তো বটেই, এমনকি ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার আগে যখন ক্রেতা- বিক্রেতার মধ্যে দরদাম চলে, তখনও সেই দরদামের মাঝখানে তৃতীয় ব্যক্তির ঢুকে পড়া জায়েয নয়। উদাহরণত, এক ব্যক্তির একটা বস্তু পসন্দ হল। সে বিক্রেতাকে একটা দামও বলল। বিক্রেতা সে দামে বিক্রি করতে রাজি হল না। ক্রেতা ভাবছে আরও বেশি দাম বলবে কি না। সে মালটি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানাল না। ঠিক ওই মুহূর্তে আরেকজন সেটি কেনার আগ্রহ দেখাল এবং একটা দামও বলে ফেলল। এভাবে একজনের দরদামের উপর আরেকজনের দরদাম করার এ কাজটি একরকম অশিষ্টতা। এটা একরকম স্বার্থপরতাও বটে, যা ইসলামী নীতি-নৈতিকতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا يَسم الْمُسْلِمُ عَلَى سَوْمِ الْمُسْلِم وَلَا يَخْطُبُ عَلَى خِطبته
‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের দরদাম করার উপর দরদাম করবে না এবং তার বিবাহের প্রস্তাবের উপর বিবাহের প্রস্তাব করবে না।

বেচাকেনার দরদামের মতই কারও গাড়ি ভাড়ার কথাবার্তার সময় একই গাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য অন্য ব্যক্তির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা কিংবা শ্রমিক নিয়োগের কথাবার্তাকালে একই শ্রমিক নেওয়ার জন্য অন্য ব্যক্তির আগ্রহ দেখানো এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসে যায়। এমনিভাবে যে-কোনও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আলোচনাকালে অপর ব্যক্তি তাতে ঢুকে পড়া ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী ও নাজায়েয। এ ব্যাপারে আমাদের অনেকেরই সতর্কতা নেই। কোনও বস্তুতে চোখ পড়ল, অমনি তাতে প্রস্তাব দিয়ে বসে, অথচ তখন তার লেনদেন সম্পর্কে দু'জনের মধ্যে কথা চলছে। এটা কিছুতেই ইসলামের শেখানো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। ইসলামের সামাজিক শিক্ষা অনেক মূল্যবান ও পূর্ণাঙ্গ। মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য তা শিখে নিয়ে সে অনুযায়ী চলতে সচেষ্ট থাকা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দুজন ব্যক্তির পারস্পরিক বেচাকেনা ও দরদাম করার মাঝখানে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ করা কিছুতেই উচিত নয়। এটা নাজায়েয কাজ।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন