কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৩৬. ইসলামী শিষ্টাচারের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫১৩৩
আন্তর্জাতিক নং: ৫২২৩
১৫৭. হাতে চুমা দেয়া- সম্পর্কে।
৫১৩৩. আহমদ ইবনে ইউনুস (রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার আমরা নবী করীম (ﷺ)-এর কাছে গিয়ে তাঁর হাতে চুমা দেই।
باب فِي قُبْلَةِ الْيَدِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ أَبِي زِيَادٍ، أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِي لَيْلَى، حَدَّثَهُ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ حَدَّثَهُ وَذَكَرَ، قِصَّةً قَالَ فَدَنَوْنَا - يَعْنِي - مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَبَّلْنَا يَدَهُ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এখানে এ হাদীছটিতে একটি ঘটনার অংশবিশেষ বর্ণিত হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর বর্ণনায় ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ এরকম-
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাঠানো একটি সেনাদলে ছিলাম। যুদ্ধে সেনাদলের লোকজন পেছনে হটে গেল। আমিও তাদের একজন ছিলাম। পরে আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, এখন আমরা কী করব! আমরা তো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেছি। আমরা আল্লাহ তা'আলার ক্রোধের পাত্র হয়ে গেছি। শেষে আমরা বললাম, আমরা মদীনায় গিয়ে রাত কাটাই, তারপর নিজেদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করি। যদি আমাদের তাওবা কবুল হয় তো ভালো, আমরা মদীনায় অবস্থান করব। অন্যথায় কোথাও চলে যাব। সুতরাং আমরা ফজরের নামাযের আগে তাঁর নিকট আসলাম। তিনি বের হয়ে আসলেন। জিজ্ঞেস করলেন, এসব লোক কারা? বললাম, আমরা পলায়নকারী। তিনি বললেন, না; বরং তোমরা পুনরায় আক্রমণকারী। আমি তোমাদের দলের একজন। কিংবা বললেন, আমরা মুসলিম দল। এ কথা শোনার পর আমরা তাঁর কাছে এগিয়ে গেলাম এবং তাঁর হাতে চুম্বন করলাম। (ফাতহুল বারী, ১১ খণ্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা।)

এ ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সাহাবায়ে কেরাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে চুম্বন করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন হযরত উসামা ইবন শারীক রাযি. বলেন, আমরা উঠে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম এবং তাঁর হাতে চুম্বন করলাম।

হযরত জাবির রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে আছে, উমর রাযি. উঠে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন এবং তাঁর হাতে চুম্বন করলেন। (ফাতহুল বারী, ১১ খণ্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা।)

আব্দুর রহমান ইবন রাযীন রহ. বলেন, সালামা ইবনুল আকওয়া' রাযি. আমাদের সামনে তাঁর বৃহৎ পাঞ্জা বের করলেন। আমরা উঠে গিয়ে তাতে চুম্বন করলাম। (বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ৯৭৩)

বিখ্যাত তাবি'ঈ ছাবিত রহ. একবার হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি.-কে বললেন, আপনি কি আপনার এ হাত দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কে চুম্বন করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। তখন ছাবিত তাঁর হাতে চুম্বন করলেন। (বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ৯৭৪)

একবার তাবি'ঈ আবূ মালিক আশজা'ঈ রহ. হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আবী আওফা রাযি.-কে বললেন, আপনি যে হাত দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বায়'আত গ্রহণ করেছিলেন, সেই হাত আমাকে দিন। তিনি হাত বাড়িয়ে দিলে আবূ মালিক তাতে চুম্বন করলেন। (ফাতহুল বারী, ১১ খণ্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা।)

হযরত উমর রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, যখনই তিনি শামে আসতেন, হযরত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রাযি. সামনে অগ্রসর হয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানাতেন এবং তাঁর হাতে চুম্বন করতেন। (বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৮৫৫৯)

ইমাম নববী রহ. বলেন, কোনও ব্যক্তির যুহ্‌দ, পরহেযগারী, ইলম, দীনী মর্যাদা এবং এ জাতীয় দীনী কোনও বিশেষত্বের কারণে তার হাতে চুমু খাওয়া মাকরূহ নয়: বরং মুস্তাহাব। যদি কারও ধন-দৌলত কিংবা দুনিয়াদারদের কাছে তার প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে চুম্বন করা হয়, তবে তা অবশ্যই কঠিন মাকরূহ কাজ বলে গণ্য হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ভক্তি-ভালোবাসার প্রকাশস্বরূপ পিতা-মাতা এবং মুত্তাকী-পরহেযগার ব্যক্তির হাতে চুম্বন করা জায়েয।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৫১৩৩ | মুসলিম বাংলা