কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৩৬. ইসলামী শিষ্টাচারের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫০৯০
আন্তর্জাতিক নং: ৫১৮০
১৩৬. ব্যক্তি অনুমতি চাওয়ার সময় ক’বার সালাম করবে?
৫০৯০. আহমদ ইবনে আব্দা (রাহঃ) ..... আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি আনসারদের এক মজলিসে বসেছিলাম। এ সময় আবু মুসা (রাযিঃ) সেখানে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় হাযির হন। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করিঃ আপনার ভয়ের কারণ কি? তিনি বলেনঃ উমর (রাযিঃ) আমাকে ডাকেন এবং আমি তার কাছে উপস্থিত হয়ে তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করি। কিন্তু তিনি আমাকে অনুমতি না দেয়ায় আমি ফিরে এসেছি। এ

রপর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি আমার কাছে কেন আসনি? তখন আমি বলিঃ আমি গিয়ে তিনবার অনুমতি চেয়েছিলাম; কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। আর নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ তিনবার অনুমতি চায় আর তাকে অনুমতি না দেয়া হয়, তবে সে যেন ফিরে যায়। তখন উমর (রাযিঃ) বলেনঃ তুমি আমার সামনে তোমার এ বক্তব্যের সপক্ষে সাক্ষী পেশ কর। আবু সাঈদ (রাযিঃ) বলেনঃ তোমার সামনে এ সম্পর্কে কওমের সব চাইতে ছোট ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে। এরপর আবু মুসা (রাযিঃ)-তাঁর সঙ্গে যান এবং তিনি তার সামনে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
باب كَمْ مَرَّةٍ يُسَلِّمُ الرَّجُلُ فِي الاِسْتِئْذَانِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدَةَ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ خُصَيْفَةَ، عَنْ بُسْرِ بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ كُنْتُ جَالِسًا فِي مَجْلِسٍ مِنْ مَجَالِسِ الأَنْصَارِ فَجَاءَ أَبُو مُوسَى فَزِعًا فَقُلْنَا لَهُ مَا أَفْزَعَكَ قَالَ أَمَرَنِي عُمَرُ أَنْ آتِيَهُ فَأَتَيْتُهُ فَاسْتَأْذَنْتُ ثَلاَثًا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي فَرَجَعْتُ فَقَالَ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَأْتِيَنِي قُلْتُ قَدْ جِئْتُ فَاسْتَأْذَنْتُ ثَلاَثًا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا اسْتَأْذَنَ أَحَدُكُمْ ثَلاَثًا فَلَمْ يُؤْذَنْ لَهُ فَلْيَرْجِعْ " . قَالَ لَتَأْتِيَنِّي عَلَى هَذَا بِالْبَيِّنَةِ قَالَ فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ لاَ يَقُومُ مَعَكَ إِلاَّ أَصْغَرُ الْقَوْمِ . قَالَ فَقَامَ أَبُو سَعِيدٍ مَعَهُ فَشَهِدَ لَهُ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।

যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।

খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৫০৯০ | মুসলিম বাংলা