কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৩৬. ইসলামী শিষ্টাচারের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫০৯১
আন্তর্জাতিক নং: ৫১৮১
১৩৬. ব্যক্তি অনুমতি চাওয়ার সময় ক’বার সালাম করবে?
৫০৯১. মুসাদ্দাদ (রাহঃ) .... আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার উমর (রাযিঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে তিনবার অনুমতি চান এবং বলেনঃ আবু মুসা অনুমতি চায়, আশআরী অনুমতি চায়, আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স অনুমতি চায়। কিন্তু তাকে অনুমতি না দেয়ায় তিনি ফিরে যান। এরপর উমর (রাযিঃ) তাকে ডেকে পাঠান এবং জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কেন ফিরে গেলে? তখন তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেককে যেন তিনবার অনুমতি চায়। যদি সে অনুমতি দেয়, তবে ভেতরে প্রবেশ করবে, অন্যথায় ফিরে যাবে।

তখন উমর (রাযিঃ) বলেনঃ তোমার এ বক্তব্যের সপক্ষে সাক্ষী পেশ কর। এরপর তিনি চলে যান এবং ফিরে এসে বলেনঃ এই যে উবাই্যা ইবনে কা’ব, (যিনি এর সাক্ষী।) তখন উবাই্যা বলেনঃ হে উমর! আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহাবীদের কষ্ট দেবেন না। উমর (রাযিঃ) বলেনঃ আমি আর কখনো রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহাবীদের কষ্ট দেব না।
باب كَمْ مَرَّةٍ يُسَلِّمُ الرَّجُلُ فِي الاِسْتِئْذَانِ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ دَاوُدَ، عَنْ طَلْحَةَ بْنِ يَحْيَى، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِي مُوسَى، أَنَّهُ أَتَى عُمَرَ فَاسْتَأْذَنَ ثَلاَثًا فَقَالَ يَسْتَأْذِنُ أَبُو مُوسَى يَسْتَأْذِنُ الأَشْعَرِيُّ يَسْتَأْذِنُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ قَيْسٍ فَلَمْ يُؤْذَنْ لَهُ فَرَجَعَ فَبَعَثَ إِلَيْهِ عُمَرُ مَا رَدَّكَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَسْتَأْذِنُ أَحَدُكُمْ ثَلاَثًا فَإِنْ أُذِنَ لَهُ وَإِلاَّ فَلْيَرْجِعْ " . قَالَ ائْتِنِي بِبَيِّنَةٍ عَلَى هَذَا . فَذَهَبَ ثُمَّ رَجَعَ فَقَالَ هَذَا أُبَىٌّ فَقَالَ أُبَىٌّ يَا عُمَرُ لاَ تَكُنْ عَذَابًا عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَقَالَ عُمَرُ لاَ أَكُونُ عَذَابًا عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।

যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।

খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান