কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৩৫. সুন্নাহের গুরুত্ব ও আকাঈদ অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৬৭৮
আন্তর্জাতিক নং: ৪৭৫৩
২৬. কবরের প্রশ্ন ও শাস্তির বর্ণনা।
৪৬৭৮. উছমান ইবনে আবি শাঈবা (রাহঃ) .... বারা ইবনে আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গে একজন আনসার সাহাবীর জানাযার নামাযে শরীক হই, এমন কি তার কবরের কাছে যাই, যা তখনও তৈরী হয়নি। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেখানে বসেন এবং আমরা ও তাঁর সাথে তাঁর চারদিকে শান্তভাবে বসে পড়ি, যেন আমাদের মাথার উপর পাখি বসা। এ সময় নবী (ﷺ)-এর হাতে একখণ্ড কাঠ ছিল, যা দিয়ে তিনি যমীনের উপর আঘাত করছিলেন। এরপর তিনি মাথা উঁচু করে দুই বা তিনবার বলেনঃ তোমরা কবরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে নাজাত চাও।

রাবী জারীরের বর্ণনায় এরূপ অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে যে, দাফনের পর লোকেরা যখন ফিরে যায় এবং সে লোক তাদের শব্দ শুনতে পায়, সে সময় তাকে এরূপ প্রশ্ন করা হয়ঃ হে ব্যক্তি! তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কি এবং তোমার নবী কে?

রাবী হান্নাদ (রাহঃ) বলেনঃ নবী (ﷺ) বলেছেনঃ তখন তার কাছে দু’জন ফিরিশতা আসে এবং তাকে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করেঃ তোমার রব কে? তখন সে বলেঃ আল্লাহ আমার রব। তখন তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেঃ তোমার দ্বীন কী? সে বলেঃ আমার দ্বীন ইসলাম। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেঃ এ ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে পাঠান হয়েছিল? তখন সে বলেঃ ইনি হলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)। তখন ফিরিশতারা আবার জিজ্ঞাসা করেঃ তুমি এ কিরূপে জানলে? তখন সে বলেঃ আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, এর উপর ঈমান এনেছি এবং একে সত্য বলে মনে করি। রাবী জারীর বলেন, আল্লাহর বাণীঃ ″আল্লাহ তাআলা মু’মিনদের ইহজীবন ও পরজীবনে শাশ্বত- বাণীর (কালিমার) উপর দূর রাখেন।″ এর অর্থ ইহাই।

রাবী বলেনঃ এরপর আসমান থেকে একজন আহবানকারী এরূপ ঘোষণা দিতে থাকেঃ আমার বান্দা সত্য বলেছে, তার কবরে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। রাবী বলেনঃ তখন তার কবরে জান্নাতের মৃদুমন্দ বাতাস ও খোশবু আসতে থাকে এবং সে ব্যক্তির কবরকে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত করে দেয়া হয়।

এরপর তিনি কাফির ব্যক্তির মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা করে বলেনঃ কবরে রাখার পর তার আত্মাকে দেহের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। তখন দু’জন ফিরিশতা এসে তাকে বসায় এবং প্রশ্ন করেঃ তোমার রব কে? তখন সে বলেঃ হা - হা - লা - আদরী; অর্থাৎ আফসোস, আমি তো জানি না। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেঃ তোমার দ্বীন কী? সে বলেঃ আফসোস আমি জানি না। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেঃ এ ব্যক্তি কে, যাকে দুনিয়াতে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? তখন সে বলেঃ হায় আফসোস! আমি জানি না।

তখন আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী এরূপ বলতে থাকেঃ সে মিথ্যা বলেছে। তার কবরে আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার কবর থেকে জাহান্নামের দিকে একটা দরজা খুলে দাও; যাতে তার কবরে জাহান্নামের আগুনের প্রচণ্ড তাপ ও ভাঁপ আসতে থাকে। এরপর কবর তার জন্য এতই সংকুচিত হয়ে যায় যে, তার পাজরের একপাশ অপরপাশে চলে যায়।

রাবী জারীর আরো বর্ণনা করেনঃ এরপর সে ব্যক্তির জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফিরিশতাকে নিয়োগ করা হয় এবং তার হাতে এমন একটা লোহার মুগুর থাকে, যদি তা দিয়ে দুনিয়ার কোন পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয়, তবে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মাটিতে পরিণত হবে। এরপর সে ফিরিশতা মুগুর দিয়ে তাকে এমনভাবে পিটাতে থাকে, যার শব্দ জ্বীন ও ইনসান ব্যতীত পূর্ব-পশ্চিমের সমস্ত মাখলূক (সৃষ্টজীব) শুনতে পায় এবং তার দেহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধূলায় পরিণত হয়। এরপর তার মধ্যে পুনরায় রুহ ফুঁকে দেয়া হয়।
باب فِي الْمَسْأَلَةِ فِي الْقَبْرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، ح وَحَدَّثَنَا هَنَّادُ بْنُ السَّرِيِّ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، - وَهَذَا لَفْظُ هَنَّادٍ - عَنِ الأَعْمَشِ، عَنِ الْمِنْهَالِ، عَنْ زَاذَانَ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ : خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي جَنَازَةِ رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ، فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدْ، فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ كَأَنَّمَا عَلَى رُءُوسِنَا الطَّيْرُ، وَفِي يَدِهِ عُودٌ يَنْكُتُ بِهِ فِي الأَرْضِ، فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ : " اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ " . مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا - زَادَ فِي حَدِيثِ جَرِيرٍ هَا هُنَا - وَقَالَ : " وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ خَفْقَ نِعَالِهِمْ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ حِينَ يُقَالُ لَهُ : يَا هَذَا مَنْ رَبُّكَ وَمَا دِينُكَ وَمَنْ نَبِيُّكَ " . قَالَ هَنَّادٌ قَالَ : " وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ : رَبِّيَ اللَّهُ . فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَا دِينُكَ فَيَقُولُ : دِينِي الإِسْلاَمُ . فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ قَالَ فَيَقُولُ : هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَيَقُولاَنِ : وَمَا يُدْرِيكَ فَيَقُولُ : قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ " . زَادَ فِي حَدِيثِ جَرِيرٍ : " فَذَلِكَ قَوْلُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ( يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا ) " . الآيَةَ . ثُمَّ اتَّفَقَا قَالَ : " فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ : أَنْ قَدْ صَدَقَ عَبْدِي فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ " . قَالَ : " فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا " . قَالَ : " وَيُفْتَحُ لَهُ فِيهَا مَدَّ بَصَرِهِ " . قَالَ : " وَإِنَّ الْكَافِرَ " . فَذَكَرَ مَوْتَهُ قَالَ : " وَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولاَنِ : مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِي . فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَا دِينُكَ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِي . فَيَقُولاَنِ : مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِي . فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ : أَنْ كَذَبَ فَأَفْرِشُوهُ مِنَ النَّارِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ النَّارِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ " . قَالَ : " فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُومِهَا " . قَالَ : " وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلاَعُهُ " . زَادَ فِي حَدِيثِ جَرِيرٍ قَالَ : " ثُمَّ يُقَيَّضُ لَهُ أَعْمَى أَبْكَمُ مَعَهُ مِرْزَبَّةٌ مِنْ حَدِيدٍ، لَوْ ضُرِبَ بِهَا جَبَلٌ لَصَارَ تُرَابًا " . قَالَ : " فَيَضْرِبُهُ بِهَا ضَرْبَةً يَسْمَعُهَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ إِلاَّ الثَّقَلَيْنِ فَيَصِيرُ تُرَابًا " . قَالَ : " ثُمَّ تُعَادُ فِيهِ الرُّوحُ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে যে আয়াতটি উল্লেখ করা হয়েছে তা দ্বারা বোঝা যায়, যারা সুদৃঢ় কথা অর্থাৎ কালেমায়ে তায়্যিবার উপর ঈমান আনবে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে দুনিয়ায়ও দীনের উপর মজবুত রাখবেন অর্থাৎ প্রকৃত ঈমানদার কোনও পরিস্থিতিতেই বিভ্রান্তির শিকার হবে না। বিপথগামিতার কোনও ডাকে তারা সাড়া দেবে না। এমনিভাবে কবর ও হাশর তথা আখিরাতের প্রতিটি ঘাঁটিতে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে অবিচল রাখবেন। কবরের প্রশ্ন ও হাশরের ময়দানের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি, কোনও অবস্থায়ই তারা দিশেহারা হবে না। আল্লাহ তা'আলা প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদেরকে সাহায্য করবেন। কবর আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। এখানে যে ব্যক্তি মুনকার নাকীরের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে, কবর তার জন্য জান্নাতের টুকরায় পরিণত হবে। এখানে যে শান্তি পেয়ে যাবে, পরবর্তী সকল ঘাঁটি তার জন্য আসান হয়ে যাবে। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা তা বোঝা যায়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে ওই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে শামিল রাখুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কবরের সাওয়াল-জাওয়াব সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।

খ. কবরে মুনকার-নাকীরের প্রশ্নের যাতে সঠিক উত্তর দেওয়া যায়, সে লক্ষ্যে আমাদের কর্তব্য কালেমায়ে তায়্যিবার প্রতি অবিচল ঈমান রাখা এবং এর দাবি অনুযায়ী শরী'আত মোতাবেক জীবনযাপন করা। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তাওফীক দিন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৪৬৭৮ | মুসলিম বাংলা