কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৩৪. নিহতের রক্তপণ সংক্রান্ত অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৪৪২
আন্তর্জাতিক নং: ৪৫০৩
৩. রক্তপণ মাফের ব্যাপারে ইমামের নির্দেশ সম্পর্কে।
৪৪৪২. মুসা ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) .... যিয়াদ ইবনে সা’দ ইবনে যামীরা (রাযিঃ) তার পিতা এবং দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁরা উভয়ই হুনায়েনের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে ছিলেন। রাবী ওয়াহাব (রাহঃ)-এর সূত্রে বলেনঃ মুহাল্লাম ইবনে জাছামা লায়ছী (রাযিঃ) আশজা গোত্রের এক ব্যক্তিকে ইসলামী যুগে হত্যা করেছিল। এটাই ছিল প্রথম দিয়াতের ঘটনা, যার ফায়সালা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) করেন। এরপর উয়াইনা আশাজ গোত্রের পক্ষে কথাবার্তা বলেন, আর তিনি ছিলেন গাতফান গোত্রের লোক এবং আকরা ইবনে হাবিস (রাযিঃ) মুহাল্লাম গোত্রের পক্ষে কথাবার্তা বলেন, আর তিনি ছিলেন খুনদুফ গোত্রের লোক। কথাবার্তা চলাকালে ঝগড়া যখন প্রচণ্ডরূপ ধারণ করে, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ হে উয়াইনা! তুমি কি দিয়াত গ্রহণ করবে না? তখন উয়াইনা বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি দিয়াত গ্রহণ করবো না; যতক্ষণ না তাদের স্ত্রীলোকেরা ঐরূপ শোকাতুরা হয়, যেরূপ আমাদের মহিলারা হয়েছে।

এভাবে প্রচণ্ড বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে এবং ঝগড়া যখন প্রচণ্ডরূপ ধারণ করে; তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবার জিজ্ঞাসা করেনঃ হে উয়ায়ানা! তুমি কি দিয়াত গ্রহণ করবে না? তখন উয়াইনা (রাযিঃ) আগের মত জবাব প্রদান করে। এ সময় লায়ছ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি, যার নাম ছিল মুকায়তিল, যিনি স্বশস্ত্র অবস্থায় ঢালসহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তিনি দাঁড়িয়ে বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ ব্যক্তি ইসলামের প্রথম যুগে যা করেছে, তার উদাহরণ ঐ বকরীর পালের মত, যারা কোথাও পানি পান করাকালে, তাদের একটি কারাহত হলে বাকীরা ভয়ে পালিয়ে যায়। কাজেই, আজ এ ব্যক্তির নিকট হতে কিসাস না নিয়ে, যদি দিয়াত কবুল করা হয়, তবে ভবিষ্যতে আরো লোক নিহত হতে থাকবে, যা ইসলামী বিধানের পরিবর্তন স্বরূপ হবে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন এই নির্দেশ দেনঃ হত্যাকারী এখনই পঞ্চাশটি উট প্রদান করবে এবং বাকী পঞ্চাশটি উট মদীনায় ফিরে গিয়ে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে দেবে। এ ঘটনা নবী (ﷺ)-এর কোন এক সফরে ঘটেছিল।

মুহাল্লাম (রাযিঃ) ছিলেন দীর্ঘদেহী এবং উজ্জ্বল বর্ণবিশিষ্ট। তিনি এতক্ষণ লোকদের একপাশে বসেছিলেন। মুক্তির নির্দেশ গ্রাপ্তির পর তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সামনে এসে বসেন। এ সময় তাঁর দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। এরপর তিনি বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যে অপরাধ করেছি, তা আপনি জানেন। আমি মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করছি। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি মহান আল্লাহর নিকটে আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ তুমি কি ইসলামের প্রথম যুগে তোমার তরবারি দিয়ে তাকে হত্যা করনি? ইয়া আল্লাহ! আপনি মুহাল্লামকে ক্ষমা করবেন না। তিনি উচ্চকন্ঠে এরূপ ঘোষণা দেন।

রাবী আবু সালামা (রাহঃ) এরূপ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, এ কথা শুনে মুহাল্লাম তার চাদরের কোণা দিয়ে নিজের অশ্রু মুছতে থাকেন। রাবী ইবনে ইসহাক (রাহঃ) বলেনঃ তার কওমের লোকদের ধারণা ছিল, অবশেষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুহাল্লামের মাগফিরাতের জন্য দুআ করেন।
باب الإِمَامِ يَأْمُرُ بِالْعَفْوِ فِي الدَّمِ
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، قَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ، فَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرِ بْنِ الزُّبَيْرِ، قَالَ سَمِعْتُ زِيَادَ بْنَ ضُمَيْرَةَ الضَّمْرِيَّ، ح وَحَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ بَيَانٍ، وَأَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ الْهَمْدَانِيُّ، قَالاَ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي الزِّنَادِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْحَارِثِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جَعْفَرٍ، أَنَّهُ سَمِعَ زِيَادَ بْنَ سَعْدِ بْنِ ضُمَيْرَةَ السُّلَمِيَّ، - وَهَذَا حَدِيثُ وَهْبٍ وَهُوَ أَتَمُّ - يُحَدِّثُ عُرْوَةَ بْنَ الزُّبَيْرِ عَنْ أَبِيهِ - قَالَ مُوسَى - وَجَدِّهِ وَكَانَا شَهِدَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حُنَيْنًا - ثُمَّ رَجَعْنَا إِلَى حَدِيثِ وَهْبٍ - أَنَّ مُحَلِّمَ بْنَ جَثَّامَةَ اللَّيْثِيَّ قَتَلَ رَجُلاً مِنْ أَشْجَعَ فِي الإِسْلاَمِ وَذَلِكَ أَوَّلُ غِيَرٍ قَضَى بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَتَكَلَّمَ عُيَيْنَةُ فِي قَتْلِ الأَشْجَعِيِّ لأَنَّهُ مِنْ غَطَفَانَ وَتَكَلَّمَ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ دُونَ مُحَلِّمٍ لأَنَّهُ مِنْ خِنْدِفَ فَارْتَفَعَتِ الأَصْوَاتُ وَكَثُرَتِ الْخُصُومَةُ وَاللَّغَطُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَا عُيَيْنَةُ أَلاَ تَقْبَلُ الْغِيَرَ " . فَقَالَ عُيَيْنَةُ لاَ وَاللَّهِ حَتَّى أُدْخِلَ عَلَى نِسَائِهِ مِنَ الْحَرْبِ وَالْحَزَنِ مَا أَدْخَلَ عَلَى نِسَائِي . قَالَ ثُمَّ ارْتَفَعَتِ الأَصْوَاتُ وَكَثُرَتِ الْخُصُومَةُ وَاللَّغَطُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَا عُيَيْنَةُ أَلاَ تَقْبَلُ الْغِيَرَ " . فَقَالَ عُيَيْنَةُ مِثْلَ ذَلِكَ أَيْضًا إِلَى أَنْ قَامَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي لَيْثٍ يُقَالُ لَهُ مُكَيْتِلٌ عَلَيْهِ شِكَّةٌ وَفِي يَدِهِ دَرَقَةٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي لَمْ أَجِدْ لِمَا فَعَلَ هَذَا فِي غُرَّةِ الإِسْلاَمِ مَثَلاً إِلاَّ غَنَمًا وَرَدَتْ فَرُمِيَ أَوَّلُهَا فَنَفَرَ آخِرُهَا اسْنُنِ الْيَوْمَ وَغَيِّرْ غَدًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " خَمْسُونَ فِي فَوْرِنَا هَذَا وَخَمْسُونَ إِذَا رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ " . وَذَلِكَ فِي بَعْضِ أَسْفَارِهِ وَمُحَلِّمٌ رَجُلٌ طَوِيلٌ آدَمُ وَهُوَ فِي طَرَفِ النَّاسِ فَلَمْ يَزَالُوا حَتَّى تَخَلَّصَ فَجَلَسَ بَيْنَ يَدَىْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَعَيْنَاهُ تَدْمَعَانِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي قَدْ فَعَلْتُ الَّذِي بَلَغَكَ وَإِنِّي أَتُوبُ إِلَى اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى فَاسْتَغْفِرِ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لِي يَا رَسُولَ اللَّهِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَقَتَلْتَهُ بِسِلاَحِكَ فِي غُرَّةِ الإِسْلاَمِ اللَّهُمَّ لاَ تَغْفِرْ لِمُحَلِّمٍ " . بِصَوْتٍ عَالٍ زَادَ أَبُو سَلَمَةَ فَقَامَ وَإِنَّهُ لَيَتَلَقَّى دُمُوعَهُ بِطَرَفِ رِدَائِهِ قَالَ ابْنُ إِسْحَاقَ فَزَعَمَ قَوْمُهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم اسْتَغْفَرَ لَهُ بَعْدَ ذَلِكَ .
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
rabi
বর্ণনাকারী:
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৪৪৪২ | মুসলিম বাংলা