কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
২২. খাদ্যদ্রব্য-পানাহার সংক্রান্ত অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৭২৪
আন্তর্জাতিক নং: ৩৭৬৬
৪৬৭. খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা।
৩৭২৪. উছমান ইবনে আবী শায়বা (রাহঃ) .... হুযাইফা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গে খানা খেতাম, তখন যতক্ষণ না রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খানা শুরু করতেন, ততক্ষণ আমাদের কেউ-ই খাদ্য স্পর্শ করতো না। একদা আমরা তাঁর সঙ্গে খানা খেতে বসি, তখন সেখানে দৌড়ে একজন বেদুইন লোক আসে। মনে হচ্ছিল, কেউ যেন তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছে। সে এসেই খাবারে হাত দেওয়ার ইচ্ছা করে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার হাত ধরে ফেলেন। এরপর একটি মেয়ে দৌড়ে আসে। মনে হচ্ছিল কেউ যেন তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছে এবং সে এসেই খাবারে হাত দেওয়ার ইচ্ছা করে।
তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার হাতও ধরে ফেলেন এবং বলেনঃ যে খাবারের উপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না, তার উপর শয়তানের আধিপত্য হয়ে যায়। আর শয়তান এ বেদুঈন লোকটির উপর ভর করে এসেছিল, যাতে সে এ খাবারের উপর আধিপত্য পায়। আমি যখন তার হাত ধরে ফেলি, তখন সে এ মেয়েটির উপর ভর করে আসে; যাতে শয়তান তার মাধ্যমে এ খানায় আধিপত্য পায়। কিন্তু আমি তার হাতও ধরে ফেলি। ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, শয়তানের হাত এ দু’জনের হাতের সাথে এখনও আমার হাতের মধ্যে আছে।
তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার হাতও ধরে ফেলেন এবং বলেনঃ যে খাবারের উপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না, তার উপর শয়তানের আধিপত্য হয়ে যায়। আর শয়তান এ বেদুঈন লোকটির উপর ভর করে এসেছিল, যাতে সে এ খাবারের উপর আধিপত্য পায়। আমি যখন তার হাত ধরে ফেলি, তখন সে এ মেয়েটির উপর ভর করে আসে; যাতে শয়তান তার মাধ্যমে এ খানায় আধিপত্য পায়। কিন্তু আমি তার হাতও ধরে ফেলি। ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, শয়তানের হাত এ দু’জনের হাতের সাথে এখনও আমার হাতের মধ্যে আছে।
باب التَّسْمِيَةِ عَلَى الطَّعَامِ
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ خَيْثَمَةَ، عَنْ أَبِي حُذَيْفَةَ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ كُنَّا إِذَا حَضَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم طَعَامًا لَمْ يَضَعْ أَحَدُنَا يَدَهُ حَتَّى يَبْدَأَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَإِنَّا حَضَرْنَا مَعَهُ طَعَامًا فَجَاءَ أَعْرَابِيٌّ كَأَنَّمَا يُدْفَعُ فَذَهَبَ لِيَضَعَ يَدَهُ فِي الطَّعَامِ فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهِ ثُمَّ جَاءَتْ جَارِيَةٌ كَأَنَّمَا تُدْفَعُ فَذَهَبَتْ لِتَضَعَ يَدَهَا فِي الطَّعَامِ فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهَا وَقَالَ " إِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ الَّذِي لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ جَاءَ بِهَذَا الأَعْرَابِيِّ يَسْتَحِلُّ بِهِ فَأَخَذْتُ بِيَدِهِ وَجَاءَ بِهَذِهِ الْجَارِيَةِ يَسْتَحِلُّ بِهَا فَأَخَذْتُ بِيَدِهَا فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّ يَدَهُ لَفِي يَدِي مَعَ أَيْدِيهِمَا " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
সাহাবায়ে কেরামের নবীপ্রেম ছিল অসাধারণ। তাদের সকল কাজকর্মে নবীপ্রেমের নিদর্শন মেলে। তারা প্রতিটি বিষয়ে তাঁর আদব রক্ষা করতেন। এমনকি খাবার বেলায়ও। যেমনটা এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে খানা খাওয়ার সময় তিনি নিজে খাওয়া শুরু না করা পর্যন্ত তারা খাবারে হাত লাগাতেন না। এটা আদব। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ
‘হে মুমিনগণ! (কোনও বিষয়ে) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের থেকে আগ বেড়ে যেয়ো না।’ (সূরা হুজুরাত (৪৯), আয়াত ১)
এ হুকুম সাধারণভাবে সকল বিষয়ের জন্য। খানা খাওয়াও এর অন্তর্ভুক্ত। তাই খানা খাওয়ার সময় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রে হাত না রাখা পর্যন্ত সাহাবায়ে কেরাম হাত রাখতেন না।
একদিন এক বালিকা দ্রুত ছুটে আসছিল, যেন পেছন থেকে কেউ তাকে তাড়াচ্ছে। সে এসেই বিসমিল্লাহ না বলে পাত্রে হাত দিতে যাচ্ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চট করে তার হাত ধরে ফেলেন। একই কাজ করতে যাচ্ছিল এক বেদুঈন। তিনি তারও হাত ধরে ফেলেন। তারপর ইরশাদ করেন-
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لَا يُذْكَرَ اسْمُ الله تَعَالَى عَلَيْهِ (খাদ্যে আল্লাহর নাম না নেওয়া হলে শয়তান তা হালাল করে নেয়)। অর্থাৎ সে খাদ্যে শরীক হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে একইসঙ্গে সেও সেই খাবার খেতে থাকে। ফলে খাবারের বরকত নষ্ট হয়ে যায় এবং সেই খাবার নানা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তো শয়তান নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখা খাবারে শরীক হতে চাচ্ছিল। এ লক্ষ্যেই সে প্রথমে বালিকাটিকে নিয়ে আসে, যাতে সে বিসমিল্লাহ না বলে খেতে শুরু করে আর এ অবকাশে শয়তানও তাতে শরীক হয়ে যায়। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালিকাটির হাত ধরে ফেলায় শয়তানের ইচ্ছা পূরণ হল না। সে ফের চেষ্টা করল। এবার বেদুঈনকে নিয়ে আসল। কিন্তু বেদুঈনও যখন বিসমিল্লাহ ছাড়া খেতে যাচ্ছিল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে সঙ্গে তার হাতও ধরে ফেললেন। এভাবে শয়তানের দ্বিতীয়বারের চেষ্টাও ব্যর্থ হল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়তানকে তৃতীয়বার চেষ্টা করার সুযোগ দিলেন না। তিনি তার হাতও ধরে ফেললেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন-
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ يَدَهُ فِي يَدِه مَعَ يَدَيْهِمَا (এ দুজনের হাতের সঙ্গে তার হাতও আমার হাতের মধ্যে রয়েছে)। এভাবে শয়তানের হাত ধরে ফেলার ক্ষমতা আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়েছিলেন। শয়তান তাঁর বিরুদ্ধে চেষ্টা করে কখনও সফল হতে পারত না। তিনি তার চেষ্টা নস্যাৎ করে দিতেন। শয়তান আগুনের তৈরি। তারও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে। কিন্তু তা সূক্ষ্ম। সাধারণভাবে মানুষ দেখতে পায় না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা'আলা বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ফলে তিনি দেখতে পেতেন এবং তার বিরদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারতেন। এ সম্পর্কে হাদীছে বিভিন্ন ঘটনা আছে। কাজেই তিনি যে শয়তানের হাত পাকড়াও করেছেন, অথচ অন্য কেউ তা দেখতে পায়নি, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. বড়দের সঙ্গে বসে খাওয়ার সময় তাদের আগে নিজে খাওয়া শুরু করতে নেই।
খ. খাওয়ার শুরুতে অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলতে হবে।
গ. বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া হলে শয়তান থেকে খাবারের হেফাজত হয়। ফলে সে খাবার ক্ষতির কারণ হয় না এবং তাতে বরকত হয়।
ঘ. বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান খাওয়ায় শরীক হয়ে যায়। ফলে খাবারের বরকত নষ্ট হয়।
ঙ. আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শয়তানের উপর আধিপত্য বিস্তার করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ফলে শয়তান তাঁর কোনও ক্ষতি করতে পারত না। বরং তিনিই শয়তানের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হতেন।
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ
‘হে মুমিনগণ! (কোনও বিষয়ে) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের থেকে আগ বেড়ে যেয়ো না।’ (সূরা হুজুরাত (৪৯), আয়াত ১)
এ হুকুম সাধারণভাবে সকল বিষয়ের জন্য। খানা খাওয়াও এর অন্তর্ভুক্ত। তাই খানা খাওয়ার সময় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রে হাত না রাখা পর্যন্ত সাহাবায়ে কেরাম হাত রাখতেন না।
একদিন এক বালিকা দ্রুত ছুটে আসছিল, যেন পেছন থেকে কেউ তাকে তাড়াচ্ছে। সে এসেই বিসমিল্লাহ না বলে পাত্রে হাত দিতে যাচ্ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চট করে তার হাত ধরে ফেলেন। একই কাজ করতে যাচ্ছিল এক বেদুঈন। তিনি তারও হাত ধরে ফেলেন। তারপর ইরশাদ করেন-
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لَا يُذْكَرَ اسْمُ الله تَعَالَى عَلَيْهِ (খাদ্যে আল্লাহর নাম না নেওয়া হলে শয়তান তা হালাল করে নেয়)। অর্থাৎ সে খাদ্যে শরীক হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে একইসঙ্গে সেও সেই খাবার খেতে থাকে। ফলে খাবারের বরকত নষ্ট হয়ে যায় এবং সেই খাবার নানা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তো শয়তান নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখা খাবারে শরীক হতে চাচ্ছিল। এ লক্ষ্যেই সে প্রথমে বালিকাটিকে নিয়ে আসে, যাতে সে বিসমিল্লাহ না বলে খেতে শুরু করে আর এ অবকাশে শয়তানও তাতে শরীক হয়ে যায়। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালিকাটির হাত ধরে ফেলায় শয়তানের ইচ্ছা পূরণ হল না। সে ফের চেষ্টা করল। এবার বেদুঈনকে নিয়ে আসল। কিন্তু বেদুঈনও যখন বিসমিল্লাহ ছাড়া খেতে যাচ্ছিল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে সঙ্গে তার হাতও ধরে ফেললেন। এভাবে শয়তানের দ্বিতীয়বারের চেষ্টাও ব্যর্থ হল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়তানকে তৃতীয়বার চেষ্টা করার সুযোগ দিলেন না। তিনি তার হাতও ধরে ফেললেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন-
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ يَدَهُ فِي يَدِه مَعَ يَدَيْهِمَا (এ দুজনের হাতের সঙ্গে তার হাতও আমার হাতের মধ্যে রয়েছে)। এভাবে শয়তানের হাত ধরে ফেলার ক্ষমতা আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়েছিলেন। শয়তান তাঁর বিরুদ্ধে চেষ্টা করে কখনও সফল হতে পারত না। তিনি তার চেষ্টা নস্যাৎ করে দিতেন। শয়তান আগুনের তৈরি। তারও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে। কিন্তু তা সূক্ষ্ম। সাধারণভাবে মানুষ দেখতে পায় না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা'আলা বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ফলে তিনি দেখতে পেতেন এবং তার বিরদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারতেন। এ সম্পর্কে হাদীছে বিভিন্ন ঘটনা আছে। কাজেই তিনি যে শয়তানের হাত পাকড়াও করেছেন, অথচ অন্য কেউ তা দেখতে পায়নি, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. বড়দের সঙ্গে বসে খাওয়ার সময় তাদের আগে নিজে খাওয়া শুরু করতে নেই।
খ. খাওয়ার শুরুতে অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলতে হবে।
গ. বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া হলে শয়তান থেকে খাবারের হেফাজত হয়। ফলে সে খাবার ক্ষতির কারণ হয় না এবং তাতে বরকত হয়।
ঘ. বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান খাওয়ায় শরীক হয়ে যায়। ফলে খাবারের বরকত নষ্ট হয়।
ঙ. আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শয়তানের উপর আধিপত্য বিস্তার করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ফলে শয়তান তাঁর কোনও ক্ষতি করতে পারত না। বরং তিনিই শয়তানের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হতেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: