কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

২২. খাদ্যদ্রব্য-পানাহার সংক্রান্ত অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৭২৩
আন্তর্জাতিক নং: ৩৭৬৫
৪৬৭. খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা।
৩৭২৩. ইয়াহয়া ইবনে খালাফ (রাহঃ) .... জাবির ইবনে আব্দিল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা তিনি নবী (ﷺ)কে এরূপ বলতে শোনেন যে, যখন কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ করে এবং ভেতরে প্রবেশের সময় ও খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে, তখন শয়তান বলেঃ এখানে তোমাদের জন্য রাতে থাকার কোন স্থান নেই, আর খানাও নেই।

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশের সময় বিসমি্ল্লাহ বলে না, তখন শয়তান বলেঃ তোমরা রাতে থাকার স্থান পেয়েছ। এরপর সে ব্যক্তি খাবার সময় যখন বিসমিল্লাহ বলে না, তখন শয়তান (তার সাথীদের) বলেঃ তোমরা রাতে থাকার স্থান এবং খাবার পেয়ে গেছ।
باب التَّسْمِيَةِ عَلَى الطَّعَامِ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فَذَكَرَ اللَّهَ عِنْدَ دُخُولِهِ وَعِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ لاَ مَبِيتَ لَكُمْ وَلاَ عَشَاءَ وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ عِنْدَ دُخُولِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ فَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ عِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ وَالْعَشَاءَ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে ঘরে প্রবেশকালে এবং খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা না বলার দ্বারা কী লাভ-ক্ষতি হয় তা তুলে ধরা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানান যে, বিসমিল্লাহ বলা হলে শয়তান ঘরে রাত কাটানো ও খাওয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায় না। সে ক্ষেত্রে শয়তান তার সঙ্গীদের বলে-
لَا مَبِيْتَ لَكُمْ وَلَا عَشَاءَ (তোমাদের জন্য এ ঘরে রাত কাটানোর সুযোগ নেই এবং রাতের খাবারও নেই)। দুষ্টু জিন্নেরা শয়তানের সঙ্গী। শয়তান তাদেরকে মানুষের ক্ষতি করার কাজে ব্যবহার করে। শয়তান মানুষের ক্ষতি করতে চায় তার সম্ভাব্য সকল উপায়ে। সে তার দলবল নিয়ে মানুষের ঘরে রাত কাটাতে চায়। যাতে রাতের বেলা গৃহবাসীর কোনও ক্ষতি করা যায়। সে মানুষের খাদ্যে অংশগ্রহণ করে তাদের খাদ্যের বরকত নষ্ট করে। কাজেই তার এ ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য কোনও ব্যবস্থা দরকার। এর সর্বোত্তম ব্যবস্থা হল আল্লাহ তা'আলার যিকির। ঘরে প্রবেশকালে যদি আল্লাহর যিকির করা হয়, অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলে প্রবেশ করা হয়, তবে শয়তান সে ঘরে প্রবেশের সুযোগ পায় না। এমনিভাবে বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করা হলে শয়তান সে খাবারে অংশগ্রহণ করতে পারে না। শয়তান চাচ্ছিল তার দলবল নিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে। তার ইচ্ছা ছিল রাতের খাবারে শরীক হবে। কিন্তু বিসমিল্লাহ বলার কারণে তার সে ইচ্ছা পণ্ড হল। তাই সে আক্ষেপ করে তার সঙ্গীদের বলে, এ ঘরে তোমাদের রাত কাটানোর সুযোগ থাকল না এবং রাতের খাবারেও তোমরা শরীক হতে পারলে না। অর্থাৎ তারা তোমাদের অনিষ্ট থেকে নিজেদেরও রক্ষা করে নিল এবং খাবারও হেফাজত করে ফেলল।

পক্ষান্তরে ঘরে প্রবেশকালে বিসমিল্লাহ না বলা হলে শয়তান তার সঙ্গীদের বলে- أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيْتَ (তোমরা রাত কাটানোর জায়গা পেয়ে গেলে)। অর্থাৎ বিসমিল্লাহ না বলা তথা আল্লাহ তা'আলার যিকির না করার কারণে শয়তান সে ঘরে প্রবেশের সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে সেখানে রাত কাটিয়ে গৃহবাসীদের নানারকম অনিষ্ট সাধন করে। তারপর খানা খাওয়ার সময়ও যদি বিসমিল্লাহ না বলা হয়, তবে শয়তান তার সঙ্গীদের বলে- أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيْتَ وَالْعَشَاءَ (তোমরা রাত কাটানোর জায়গা পেয়ে গেলে এবং রাতের খাবারও)। অর্থাৎ আল্লাহর যিকির দ্বারা আত্মরক্ষা না করার কারণে শয়তান তার সঙ্গীদের নিয়ে সে ঘরে রাতও কাটায় এবং খাবারেও শরীক হয়। খাবারে শরীক হওয়ার দ্বারা বরকত উঠে যায় এবং সে খাবার নানাবিধ ক্ষতির কারণ হয়ে যায়।

প্রকাশ থাকে যে, এ হাদীছে বিশেষভাবে রাত কাটানো ও রাতের খাবারের কথা বলার অর্থ এ নয় যে, বিসমিল্লাহ বলার হুকুম রাতের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। বরং দিনের বেলায়ও ঘরে প্রবেশকালে ও খানা খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত। বিশেষভাবে রাতের কথা উল্লেখ করার কারণ হল অনেকেই সকাল বেলা কাজের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে যায় আর ফেরে রাতের বেলা। তাদের গৃহে প্রবেশ রাতের বেলায়ই হয়। তাই অধিকাংশের দিকে লক্ষ করে হাদীছে রাতের কথা বলা হয়েছে। নয়তো বিসমিল্লাহ বলার বিধান রাত ও দিন উভয় বেলার জন্যই।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. আল্লাহর যিকির দ্বারা শয়তান থেকে আত্মরক্ষা হয়।

খ. শয়তান যাতে ঘরে ঢুকতে না পারে, সেজন্য ঘরে প্রবেশের সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবে।

গ. খাবারের বরকত রক্ষা এবং তাতে শয়তানের অংশগ্রহণ ঠেকানোর জন্য বিসমিল্লাহর সঙ্গে খাওয়া উচিত।

ঘ. আল্লাহর যিকির না থাকাটা ঘরে অশান্তি সৃষ্টির একটা বড় কারণ।

ঙ. খানা খাওয়াটা যে অনেক সময় অনিষ্টের কারণ হয়, তাতে বিসমিল্লাহ না বলারও ভূমিকা থাকে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৩৭২৩ | মুসলিম বাংলা