মা'আরিফুল হাদীস

কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়

হাদীস নং: ১৫
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
যিকিরের কালেমাসমূহ: সেগুলোর বরকত-ফযীলত
১৫. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: এ পৃথিবীর যত কিছুর উপর সূর্যালোক পতিত হয়ে থাকে, সে সবের তুলনায় আমার নিকট প্রিয়তর হচ্ছে আমি একবার বলি: সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইলাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর। -(মুসলিম)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَأَنْ أَقُولَ سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ» (رواه مسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এই চারটি কালিমা বা শব্দের ইজমালী অর্থ সম্পর্কে ভূমিকাস্বরূপ লিখিত বাক্যগুলোতে আলোকপাত করা হয়েছে। তার দ্বারা পাঠকগণ নিশ্চয়ই উপলব্ধি করে থাকবেন যে, এ চারটি সংক্ষিপ্ত শব্দ যা তেমন গুরুগম্ভীর বা উচ্চারণেও কঠিন নয় আল্লাহ তা'আলার সমস্ত ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিশেষণকে কেমন চমৎকারভাবে ধারণ করে আছে! কোন কোন কামিল আরিফ তথা আল্লাহ তত্ত্বজ্ঞানী লিখেন, আসমাউল-হুসনা তথা আল্লাহ তা'আলার গুণবাচক নামসমূহ তাঁর যে মহৎ গুণাবলীর প্রতিনিধিত্ব করে বা অর্থ বহন করে, তার কোনটিই এ চার কালিমার বাইরে নয়।

উদাহরণ স্বরূপ ُاَلْقُدُّوْسُ السَّلَامُ الظَّاهِر প্রভৃতি যে সব গুণবাচক নাম তাঁর পবিত্র সত্তার সমস্ত অপূর্ণতা ও দোষ থেকে মুক্ত থাকার কথা ঘোষণা করে থাকে 'সুবহানাল্লাহ' শব্দের মধ্যে তা নিহিত রয়েছে। অনুরূপভাবে:

الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمِ الْكَرِيْمُ الْعَلِيْمُ الْقَدِيْرُ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ.

প্রভৃতি যে সব গুণবাচক নাম আল্লাহ তা'আলার ইতিবাচক অর্থবোধক গুণসমূহের অর্থ বহন করে, সে সব اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ -এর আওতায় এসে যায়। অনুরূপ যে সমস্ত আসমাউল হুসনা পবিত্র সত্তার একত্ব ও তাঁর অনন্য ও শরীক হওয়ার অর্থবোধক সেই الْوَاحِدُ الأَحَدُ প্রভৃতি গুণবাচক নামের পূর্ণ প্রতিনিধিত্বশীল কালিমা হচ্ছে لَا اِلٰهَ اِلَّا اللّٰه একই রকমে الأَعْلٰى الْكَبِيْرُ الْمُتَعَالُ প্রভৃতি আসমাঊল হুসনা যেগুলোর মর্ম হচ্ছে আল্লাহকে যারা জেনেছেন বুঝেছেন আল্লাহ তা'আলা তাঁদের সে জ্ঞান বুদ্ধিরও উর্ধ্বে। االلّٰهُ أَكْبَرُ কালিমাটিতে সে অর্থের সর্বোত্তম অভিব্যক্তি ঘটেছে।
সুতরাং যিনিই পূর্ণ প্রত্যয় ও হৃদয়-মনের অনুভূতি নিয়ে উচ্চারণ করলেন:

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ للّٰهِ وَلَا اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ.

তিনিই আল্লাহর সমস্ত গুণাবলীর প্রশংসা এবং স্তবস্তুতি করে ফেললেন, আসমাউল হুসনারূপী আল্লাহর নিরানব্বই নামের মধ্যে নিহিত ইতিবাচক ও নেতিবাচক অর্থবোধক তাঁর সমস্ত গুণাবলীর বর্ণনা ও সাক্ষ্যই তিনি দিয়ে দিলেন। এজন্যে এ চারটি কালিমা নিজ নিজ মূল্যমান মাহাত্ম্য ও বরকতের দিক থেকে নিঃসন্দেহে বিশ্ব জাহানের সে সবকিছুর তুলনায় যেগুলোর উপর সূর্যালোক পতিত হয়ে থাকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। যে অন্তরসমূহ ঈমানের আলোতে ভাস্বর ও প্রদীপ্ত তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা অনুভব করেন। আল্লাহ তা'আলা ঈমানের এ দৌলত নসীব করুন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান