মা'আরিফুল হাদীস
সলাত অধ্যায়
হাদীস নং: ২৫২
সলাত অধ্যায়
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা
প্রত্যেক জাতিরই কিছু কিছু বিশেষ জাতীয় উৎসব রয়েছে যাতে তারা সামর্থ্যানুযায়ী উত্তম পোশাক পরিধান করে এবং উপাদেয় খাবার পাকায় এবং বিভিন্নভাবে মনের আনন্দ প্রকাশ করে। বলাবাহুল্য এ হচ্ছে, মানব স্বভাবের সহজাত দাবি। তাই এমন কোন মানব গোষ্ঠি নেই, যাদের বিশেষ কোন জাতীয় উৎসব নেই।
ইসলামে জাতীয় উৎসবের দু'টি দিন রয়েছে। যথা:- ১. ঈদুল ফিতর এবং ২. ঈদুল আযহা। এদু'টিই হল মুসলমানদের ধর্মীয় বড় উৎসব। এছাড়া মুসলমানরা যে সব অনুষ্ঠান পালন করে তার কোন ধর্মীয় ভিত্তি নেই, বরং তার বেশির ভাগই রয়েছে নানা আজে বাজে উপাদান।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মদীনায় হিজরতের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের সামাজিক ও সামষ্টিক জীবন শুরু হয়। আর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এ সময় থেকেই শুরু হয়।
উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতর রমযানের অব্যবহিত পরে ১লা শাওয়াল অনুষ্ঠিত হয়। আর ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হয় যিলহাজ্জ মাসের দশ তারিখে। ধর্মীয় পবিত্রতা সংরক্ষণ ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ বিধানের লক্ষ্যে মুবারক মাস। এ মাসেই কুরআন অবতরণের শুভ সূচনা ঘটে। এ মাসের পুরো সময়ে সিয়াম পালন করা মুসলিম উম্মাতের উপর ফরয। এ মাসে স্বতন্ত্র জামা'আতবদ্ধ সালাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং প্রতিটি সৎকাজে অধিক লাভের বিষয় অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। মোদ্দাকথা, পুরো মাসটিকে প্রবৃত্তি দমন ও কৃচ্ছতা অবলম্বন এবং সর্ববিধ আনুগত্য ও বেশি বেশি ইবাদত করার মাসরূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ঈমানী ও আধ্যাত্মিক উভয় দিক থেকে এ মাসের পর যেদিন আসে সে দিনের সবচেয়ে বড় দাবি হল, মুসলিম উম্মাত এদিনে আনন্দ-স্ফূর্তি করবে। তাই এ দিনকে ঈদুল ফিতরের দিন বলা হয়েছে।
দশই যিলহাজ্জ একটি ঐতিহাসিক দিন। এদিনে মুসিলম উম্মাতের পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ) আল্লাহ্ কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে স্বীয় কলিজার টুকরা (সন্তান) হযরত ইসমাঈল (আ) কে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে গলায় ছুরি চালিয়ে দিয়ে ছিলেন এবং তিনি আল্লাহর নির্দেশ পালনে চূড়ান্ত আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের প্রমাণ রেখে ছিলেন। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর এই প্রিয় বান্দাকে কুরবানীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ঘোষণা দিয়ে হযরত ইসমাঈল (আ) কে জীবিত রেখে একটি পশুর কুরবানী কবুল করেন। তার পর আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহীম (আ) এর মাথায় أنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ امَامًا (আমি তোমাকে বিশ্বমানবতার নেতা নির্বাচন করেছি।) এর মুকুট পরিয়ে দেন এবং তিনি কুরবানীর এই ধারাকে কিয়ামত পর্যন্ত প্রীতির স্মারকরূপে স্বীকৃতি দেন। কাজেই এই বিরাট ঘটনা সংঘটিত হওয়ার দিনকে স্মরণীয় করে রাখা হলে তা মুসলিম উম্মাতের জন্য ইব্রাহিমী উত্তরাধিকারের স্মারক হতে পারে। এ ঘটনা স্মরণীয় করে রাখার ক্ষেত্রে দশই যিলহজ্জের চেয়ে উত্তম কোন দিন ধার্য করা যায় না। তাই দ্বিতীয় ঈদ হিসেবে ঈদুল আযহাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যে উপত্যকায় হযরত ইসমাঈল (আ) এর কুরবানী হওয়ার ঘটনা সংঘটিত হয় উক্ত উপত্যকায় সম্মিলিতভাবে সমবেত হওয়া, হজ্জ অনুষ্ঠান পালন ও কুরবানী করা মূলতঃ মূল ঘটনাকেই বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় এটাই মূল স্মারক। আর প্রত্যেক ইসলামী রাষ্ট্রে কিংবা মহল্লায় যে সালাত ও কুরবানী অনুষ্ঠিত হয় তা যেন দ্বিতীয় পর্যায়ের স্মারক মোটকথা এ দু'দিনের (১ শাওয়াল ও ১০ যিলহজ্জ) উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের কারণে এ গুলোকে মুসলমানদের উৎসবের দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
এই দীর্ঘ ভূমিকার পর উভয় ঈদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিম্নোক্ত হাদীস সমূহ পাঠ করা যেতে পারে। আলোচ্য সালাত অধ্যায়ে দুই ঈদের সালাতের বর্ণনাই মূল উদ্দেশ্য, তবুও দুই ঈদ ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজের বিধান সম্বলিত হাদীসসমূহ ও হাদীস বিশারদগণের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী এখানে আনা হয়েছে।
দুই ঈদের উৎপত্তি
প্রত্যেক জাতিরই কিছু কিছু বিশেষ জাতীয় উৎসব রয়েছে যাতে তারা সামর্থ্যানুযায়ী উত্তম পোশাক পরিধান করে এবং উপাদেয় খাবার পাকায় এবং বিভিন্নভাবে মনের আনন্দ প্রকাশ করে। বলাবাহুল্য এ হচ্ছে, মানব স্বভাবের সহজাত দাবি। তাই এমন কোন মানব গোষ্ঠি নেই, যাদের বিশেষ কোন জাতীয় উৎসব নেই।
ইসলামে জাতীয় উৎসবের দু'টি দিন রয়েছে। যথা:- ১. ঈদুল ফিতর এবং ২. ঈদুল আযহা। এদু'টিই হল মুসলমানদের ধর্মীয় বড় উৎসব। এছাড়া মুসলমানরা যে সব অনুষ্ঠান পালন করে তার কোন ধর্মীয় ভিত্তি নেই, বরং তার বেশির ভাগই রয়েছে নানা আজে বাজে উপাদান।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মদীনায় হিজরতের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের সামাজিক ও সামষ্টিক জীবন শুরু হয়। আর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এ সময় থেকেই শুরু হয়।
উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতর রমযানের অব্যবহিত পরে ১লা শাওয়াল অনুষ্ঠিত হয়। আর ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হয় যিলহাজ্জ মাসের দশ তারিখে। ধর্মীয় পবিত্রতা সংরক্ষণ ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ বিধানের লক্ষ্যে মুবারক মাস। এ মাসেই কুরআন অবতরণের শুভ সূচনা ঘটে। এ মাসের পুরো সময়ে সিয়াম পালন করা মুসলিম উম্মাতের উপর ফরয। এ মাসে স্বতন্ত্র জামা'আতবদ্ধ সালাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং প্রতিটি সৎকাজে অধিক লাভের বিষয় অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। মোদ্দাকথা, পুরো মাসটিকে প্রবৃত্তি দমন ও কৃচ্ছতা অবলম্বন এবং সর্ববিধ আনুগত্য ও বেশি বেশি ইবাদত করার মাসরূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ঈমানী ও আধ্যাত্মিক উভয় দিক থেকে এ মাসের পর যেদিন আসে সে দিনের সবচেয়ে বড় দাবি হল, মুসলিম উম্মাত এদিনে আনন্দ-স্ফূর্তি করবে। তাই এ দিনকে ঈদুল ফিতরের দিন বলা হয়েছে।
দশই যিলহাজ্জ একটি ঐতিহাসিক দিন। এদিনে মুসিলম উম্মাতের পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ) আল্লাহ্ কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে স্বীয় কলিজার টুকরা (সন্তান) হযরত ইসমাঈল (আ) কে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে গলায় ছুরি চালিয়ে দিয়ে ছিলেন এবং তিনি আল্লাহর নির্দেশ পালনে চূড়ান্ত আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের প্রমাণ রেখে ছিলেন। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর এই প্রিয় বান্দাকে কুরবানীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ঘোষণা দিয়ে হযরত ইসমাঈল (আ) কে জীবিত রেখে একটি পশুর কুরবানী কবুল করেন। তার পর আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহীম (আ) এর মাথায় أنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ امَامًا (আমি তোমাকে বিশ্বমানবতার নেতা নির্বাচন করেছি।) এর মুকুট পরিয়ে দেন এবং তিনি কুরবানীর এই ধারাকে কিয়ামত পর্যন্ত প্রীতির স্মারকরূপে স্বীকৃতি দেন। কাজেই এই বিরাট ঘটনা সংঘটিত হওয়ার দিনকে স্মরণীয় করে রাখা হলে তা মুসলিম উম্মাতের জন্য ইব্রাহিমী উত্তরাধিকারের স্মারক হতে পারে। এ ঘটনা স্মরণীয় করে রাখার ক্ষেত্রে দশই যিলহজ্জের চেয়ে উত্তম কোন দিন ধার্য করা যায় না। তাই দ্বিতীয় ঈদ হিসেবে ঈদুল আযহাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যে উপত্যকায় হযরত ইসমাঈল (আ) এর কুরবানী হওয়ার ঘটনা সংঘটিত হয় উক্ত উপত্যকায় সম্মিলিতভাবে সমবেত হওয়া, হজ্জ অনুষ্ঠান পালন ও কুরবানী করা মূলতঃ মূল ঘটনাকেই বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় এটাই মূল স্মারক। আর প্রত্যেক ইসলামী রাষ্ট্রে কিংবা মহল্লায় যে সালাত ও কুরবানী অনুষ্ঠিত হয় তা যেন দ্বিতীয় পর্যায়ের স্মারক মোটকথা এ দু'দিনের (১ শাওয়াল ও ১০ যিলহজ্জ) উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের কারণে এ গুলোকে মুসলমানদের উৎসবের দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
এই দীর্ঘ ভূমিকার পর উভয় ঈদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিম্নোক্ত হাদীস সমূহ পাঠ করা যেতে পারে। আলোচ্য সালাত অধ্যায়ে দুই ঈদের সালাতের বর্ণনাই মূল উদ্দেশ্য, তবুও দুই ঈদ ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজের বিধান সম্বলিত হাদীসসমূহ ও হাদীস বিশারদগণের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী এখানে আনা হয়েছে।
দুই ঈদের উৎপত্তি
২৫২. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নবী কারীম ﷺ মদীনায় পৌঁছে দেখতে পান যে, সেখানকার অধিবাসীরা যাদের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তারা বছরে দুই দিন খেলাধূলা ও আনন্দ উৎসব করে থাকে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এই দু'টি দিন কিসের এর মূল ভিত্তি ও তাৎপর্য কি? তারা বলল, জাহিলিয়্যা যুগে আমরা এই দুই দিন খেলাধূলা ও আনন্দ উৎসব করতাম সেই প্রথা এখনও বহাল রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন: আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের এই দুই দিনের বিনিময়ে অন্য দু'টি উত্তম দিন দান করেছেন এখন এগুলোই তোমাদের জাতীয় ও ধর্মীয় উৎসব রূপে গণ্য হবে। তাহল, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ : قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا ، فَقَالَ : مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ؟ قَالُوا : كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا : يَوْمَ الْأَضْحَى ، وَيَوْمَ الْفِطْرِ " (رواه ابوداؤد)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
কোন জাতির আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়েই মূলত তাদের বিশ্বাস, ইতিহাস-ঐতিহ্য ইত্যাদির প্রতিফলন ঘটে। তাই ইসলাম পূর্ব জাহিলিয়া যুগে মাদীনাবাসী উৎসবের আয়োজন করত এবং তার মধ্যে দিয়ে জাহিলিয়া যুগের চিন্তা-চেতনা ও ভাবধারার বহিঃ প্রকাশ ঘটত।
এদিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর বাণী প্রাপ্ত হয়ে সেকালে জাতীয় উৎসব নির্মূল করে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নামে দু'টি জাতীয় উৎসব তাঁর উম্মাতের জন্য নির্ধারণ করেন। আর এর মধ্য দিয়ে তাঁর তাওহীদি চেতনা, ঐতিহ্য জীবনবোধের নীতি ইত্যাদি চিন্তা-চেতনার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছে। কাজেই মুসলমানরা যদি এই জাতীয় উৎসব রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নির্দেশনা অনুযায়ী উদযাপন করে, ইসলামের প্রাণশক্তি ও এর আহবানের তাৎপর্য উপলব্ধির জন্য এ দু'টি উৎসব যথেষ্ট।
এদিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর বাণী প্রাপ্ত হয়ে সেকালে জাতীয় উৎসব নির্মূল করে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নামে দু'টি জাতীয় উৎসব তাঁর উম্মাতের জন্য নির্ধারণ করেন। আর এর মধ্য দিয়ে তাঁর তাওহীদি চেতনা, ঐতিহ্য জীবনবোধের নীতি ইত্যাদি চিন্তা-চেতনার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছে। কাজেই মুসলমানরা যদি এই জাতীয় উৎসব রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নির্দেশনা অনুযায়ী উদযাপন করে, ইসলামের প্রাণশক্তি ও এর আহবানের তাৎপর্য উপলব্ধির জন্য এ দু'টি উৎসব যথেষ্ট।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)