মা'আরিফুল হাদীস
সলাত অধ্যায়
হাদীস নং: ২২৯
সলাত অধ্যায়
ইস্তিখারার সালাত
মানুষের জ্ঞানসীমিত। বেশির ভাগ সময় এমন মনে হয় যে, মানুষ কোন একটি কাজ করার সিদ্ধান্ত নিবে সম্পাদনও করে কিন্তু তা পরিণামে শুভ হয়না। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ লোকদেরকে ইস্তিখারার সালাত আদায়ের প্রতি অনুপ্রাণিত করেছেন এবং বলেছেন: কোন ব্যক্তি যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন দিক নির্দেশা নেয়ার লক্ষ্যে সে যেন আল্লাহর কাছে কল্যাণের তাওফীক কামনা করে।
মানুষের জ্ঞানসীমিত। বেশির ভাগ সময় এমন মনে হয় যে, মানুষ কোন একটি কাজ করার সিদ্ধান্ত নিবে সম্পাদনও করে কিন্তু তা পরিণামে শুভ হয়না। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ লোকদেরকে ইস্তিখারার সালাত আদায়ের প্রতি অনুপ্রাণিত করেছেন এবং বলেছেন: কোন ব্যক্তি যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন দিক নির্দেশা নেয়ার লক্ষ্যে সে যেন আল্লাহর কাছে কল্যাণের তাওফীক কামনা করে।
২২৯. হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন, ঠিক তেমনিভাবে প্রতিটি কাজে আমাদেরকে ইস্তিখারা (কল্যাণ প্রার্থনা) শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন: যখন তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করে তখন সে যেন ফরয ব্যতীত দুই রাক'আত সালাত আদায় করে নেয়। তারপর বলে, হে আল্লাহ্! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। তুমিই শক্তি ও ক্ষমতার আধার, আমার কোন ক্ষমতা নেই। তুমি অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী, আমার কোন জ্ঞান নেই। তুমি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে ও সম্যকভাবে জ্ঞাত। হে আল্লাহ্! তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য, আমার দীনের দৃষ্টিকোণ থেকে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজের পরিণামের দিক থেকে, অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বলেছেন; আমার দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে কল্যাণকর মনে কর, তবে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দাও এবং আমার জন্য সহজ করে দাও। পক্ষান্তরে তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য আমার দীনের দৃষ্টিকোণ থেকে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজকর্মের পরিণামের দিক থেকে, অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বলেছেন, আমার দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে ক্ষতিকর মনে কর, তবে তুমি সে কাজটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে দাও এবং আমাকেও তা থেকে বিরত রাখ। যেখান থেকে হোক তুমি আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করে দাও। বর্ণনাকারী বলেন: নবী কারীম ﷺ এও বলেছেন প্রার্থনাকারী যেন এ কাজটির স্থলে নিজের উদ্দিষ্ট কাজের নাম করে। (বুখারী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ جَابِرِ قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُنَا الِاسْتِخَارَةَ فِي الأُمُورِ ، كَمَا يُعَلِّمُنَا السُّورَةَ مِنَ القُرْآنِ ، يَقُولُ : " إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالأَمْرِ ، فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الفَرِيضَةِ ، ثُمَّ لِيَقُلْ : اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيمِ ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الغُيُوبِ ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي (أَوْ قَالَ فِىْ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ) فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي (أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ) فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ ، وَاقْدُرْ لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ، ثُمَّ أَرْضِنِي " قَالَ : « وَيُسَمِّي حَاجَتَهُ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এই দু'আ থেকে ইস্তিখারার হাকীকত পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। আর ইস্তিখারার তাৎপর্য হল, মানুষ তার বিনয়ভাব ও অজ্ঞতা স্বীকার করে জ্ঞানের আধার, সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে নির্দেশনা ও সাহায্য চাইবে এবং নিজের ব্যাপারটিকে তাঁর উপর ন্যস্ত করে দিবে, যেন তিনি তাই নির্ধারণ করেন যা তার জন্য উত্তম ও কল্যাণকর। এহেন দু'আ দ্বারা বান্দা মূলতঃ নিজ ইচ্ছাকে আল্লাহর মর্জির মধ্যেই বিলীন করে দেয়। যদি এই দু'আ আন্তর থেকে উৎসারিত হয়, তবে আল্লাহ্ তাঁর বান্দাকে পথনির্দেশ করবেন না কিংবা সাহায্য করবেন না এমনটি কখনো হতে পারে না। বান্দা কিভাবে পথ নির্দেশ লাভ করবে, হাদীসে তার কোন ইঙ্গিত নেই। কিন্ত আল্লাহ্ প্রিয় বান্দাদের এ অভিজ্ঞতা রয়েছে যে, স্বপ্নযোগে অথবা অদৃশ্য লোকের ইঙ্গিতে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। আবার কখনো কখনো এরূপ হয় যে, কর্ম সম্পদানকারীর স্বতঃস্ফূর্তভাবে উক্ত কাজে প্রবল স্পৃহা জন্মে অথবা বিপরীত দিকে উক্ত কাজের অনীহা কাজে উভয় অবস্থাকেই আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং দু'আ কবুল হওয়ার ফল গণ্য করা উচিত। যদি ইস্তিখারা করার পরও অন্তরে দোদুল্যমানভাব বিরাজ করে, তাহলে বারবার ইস্তিখারা করা যেতে পারে এবং যতক্ষণে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছা না যাবে ততক্ষণে পিছপা হওয়া যাবে না।
মোটকথা সালাতুল ইস্তিগফার, সালাতুল হাজাত ও সালাতুল ইস্তিখারা আল্লাহ্ তা'আলার মহান নি'আমাত সমূহের অন্তর্ভুক্ত যা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাধ্যমে এ উম্মাত লাভ করেছে। আল্লাহ্ তা'আলা এগুলো দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দিন।
মোটকথা সালাতুল ইস্তিগফার, সালাতুল হাজাত ও সালাতুল ইস্তিখারা আল্লাহ্ তা'আলার মহান নি'আমাত সমূহের অন্তর্ভুক্ত যা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাধ্যমে এ উম্মাত লাভ করেছে। আল্লাহ্ তা'আলা এগুলো দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দিন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)