মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং: ২০৭
সলাত অধ্যায়
কিয়ামুল লায়ল বা তাহাজ্জুদ সালাতের ফযীলত ও গুরুত্ব
২০৭. হযরত মুগীরা ইবনে শু'বা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম ﷺ (এত দীর্ঘ সময় তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করতেন যে, তাঁর পদযুগল ফুলে যেত। তাঁকে বলা হল, আপনি এত কষ্ট করছেন কেন অথচ আপনার পূর্বাপর ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে (এবং কুরআন মজীদে এ সম্পর্কে আপনাকে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে) তিনি বললেন: তাই বলে কি আমি (এ মহা অনুগ্রহের জন্য অধিক ইবাদত করে শোক্ত আদায়কারী বান্দা হব না? (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ : قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى تَوَرَّمَتْ قَدَمَاهُ ، فَقِيلَ لَهُ : لِمَ تَصْنَعُ هَذَا وَقَدْ غُفِرَ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ ، قَالَ : « أَفَلاَ أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا » (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

যদিও আমাদের মত গুনাহগারদের ন্যায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অত ইবাদাত ও রিয়াযত করার প্রয়োজন নেই, এবং যদিও তাঁর চলাফেরা এমনকি বিশ্রামও সাওয়াবের কাজ, তথাপিও রাতে তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন যে, তাঁর পদযুগল ফুলে উঠত। এর মধ্যে রয়েছে আমাদের মত আরাম প্রিয় ও নায়েবে নবী হওয়ার দাবীদারদের জন্য শিক্ষণীয় সবক।

রাসূলুল্লাহ ﷺ নিষ্পাপ হওয়ার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং তাঁর গুনাহ ও ক্ষমা প্রসঙ্গে
আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গুনাহ (ذنب) ক্ষমা করার বিষয়টি স্থান পেয়েছে। আর সাধারণভাবে (ذنب) অর্থ গুনাহ। তাই সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠে যে, নবী রাসূলগণ নিষ্পাপ এটা যেহেতু সত্যপন্থী মুসলিম উম্মাহর প্রতিষ্ঠিত আকীদা। তাহলে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর গুনাহ ক্ষমা করার অর্থ কি দাঁড়ায়? অধমের নিকট এ প্রশ্নের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য হৃদয়স্পর্শী জবাব হল এই যে, তাঁর নিষ্পাপ হওয়ার অর্থ হল: যে সব কাজ উম্মাতের ক্ষেত্রে পাপরূপে চিহ্নিত তিনি সে সব পাপ ও শরী'আত পরিপন্থী কাজ থেকে সম্পূর্ণ পূতঃ পবিত্র। তবে যে সব কাজ গুনাহ নয় মর্যাদার পরিপন্থী তা নবী-রাসূল থেকেও সংঘটিত হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় রাসূলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক নিজের উপর মধু হারাম করা, অথবা আবদুল্লাহ্ ইবনে উম্মু মাকতূমের প্রতি অমনোযোগী হওয়া ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ঘটনা দু'টিকে কেন্দ্র করে সূরা তাহরীম ও সূরা আবাসা অবতীর্ণ হয় এবং তাতে তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ পায় এমনভাবে সতর্ক করা হয়। মোটকথা এমনিতর সাধারণ পদস্খলন নবী-রাসূল থেকে প্রকাশ পেয়েছে যদিও এসব কাজ অবাধ্যতা কিংবা গুনাহের পর্যায়ে পড়ে না। কিন্তু قريبا نرابیش بود حیرانی "অধিক নৈকট্য, অধিক পেরেশানী" মূলনীতির উপর ভিত্তি করে নবী-রাসূলগণ এত বেশি দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হয়ে পড়তেন যে, আমরা বিরাট বিরাট গুনাহ করেও তেমন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হই না। সুতরাং কুরআন হাদীসের যেখানেই রাসূলুল্লাহ ﷺ কিংবা অন্য কোন নবী রাসূলের ক্ষেত্রে গুনাহ ক্ষমার বিষয় আলোচনা আসে তখন মনে করতে হবে যে, এমনিতর পদস্খলন তাঁদের জন্য ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। ذنب এর আভিধানিক অর্থ এমন ব্যাপক যে, এর দ্বারাও ত্রুটি বুঝানো যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান