মা'আরিফুল হাদীস
সলাত অধ্যায়
হাদীস নং: ১৩৭
সলাত অধ্যায়
রাফি ইয়াদাঈন (সালাতে হাত উত্তোলন)
১৩৭. হযরত আলকামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে মাসউদ (রা) আমাদের বলেছেন: আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ন্যায় সালাত আদায় করে দেখাব না? সে মতে তিনি সালাত আদায় করলেন, কিন্তু প্রথমবার (তাকবীরে তাহরীমার সময়) ছাড়া আর কোথাও রাফি ইয়াদাইন করেন নি। (তিরমিযী, আবু দাউদ ও নাসাঈ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَلْقَمَةَ ، قَالَ : قَالَ لَنَا اِبْنُ مَسْعُودٍ : أَلاَ أُصَلِّي بِكُمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَصَلَّى ، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلاَّ فِي أَوَّلِ مَرَّةٍ. (رواه الترمذى وابوداؤد والنسائى)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর প্রবীণ ও সম্মানিত সাহাবীদের অন্যতম, যিনি তাঁর নির্দেশন অনুযায়ী প্রথম কাতারে তাঁর নিকটে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন। তিনি তাঁর ছাত্রদের শেখানোর লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ন্যায় সালাত আদায় করে দেখান। উল্লেখ্য, তার এ সালাতে তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত কোন পর্যায়ে রাফি ইয়াদাইন ছিল না।
হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণিত হাদীসের আলোকে বলা যায় যে, হযরত ইবনে উমর (রা) বর্ণিত হাদীসে যে রুকূতে যাবার সময় ও উঠার সময় রাফি ইয়াদাইনের উল্লেখ রয়েছে তাও রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সব সময়ের অথবা বেশির ভাগ সময়ের আমল ছিলনা। যদি ব্যাপারটি এরূপই হতো, তবে ইবনে মাসউদ (রা) যিনি প্রথম সারিতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন, তিনি নিশ্চয়ই তা জানতেন এবং শিক্ষাদান কালে রাফি ইয়াদাইন আদৌ বর্জন করতেন না। উল্লিখিত হাদীসমূহ সামনে রেখে প্রত্যেক ন্যায়নিষ্ঠ প্রাজ্ঞ ব্যক্তি মাত্র এই সিদ্ধান্তে পৌঁছবেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সালাতে কখনো রাফি ইয়াদাইন করতেন আবার কখনো করতেন না। অর্থাৎ ব্যাপারটি এরূপ হতো যে, কখনো তিনি তাঁর পুরো সালাতে কেবল তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্য কোন সময় হাত উঠাতেন না। আবার কখনো তাকবীরে তাহরীমা ছাড়াও রুকূতে যাবার সময় এবং উঠার সময় রাফি ইয়াদাইন করতেন আবার কদাচিৎ সিজদায় যাবার সময় আবার কখনো সিজদা থেকে উঠার পর রাফি ইয়াদাইন করতেন। হযরত ইবনে মাসউদ (রা) দীর্ঘদিন তা প্রত্যক্ষ করে মনে করেছিলেন যে মূলতঃ তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত সালাতে রাফি ইয়াদাইন নেই। পক্ষান্তরে হযরত ইবনে উমর (রা) সহ বিপুল সংখ্যক সাহাবী মনে করেছিলেন যে, সালাতের মূলে রাফি ইয়াদাইন রয়েছে। বলাবাহুল্য চিন্তা-গবেষণার পথ পরিক্রমায় তাবিঈদের মধ্যেই এ দ্বিমত থেকে যায়।
ইমাম তিরমিযী (র) হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা) বর্ণিত হাদীস সনদসহ বর্ণনা করার পর ঐ সকল সাহাবীর আমল উল্লেখ করেছেন যাঁদের সূত্রে রাফি ইয়াদাইন সম্বলিত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন-"রাসূলুল্লাহ ﷺ কিছু সংখ্যক সাহাবী যেমন আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর, জাবির, আবু হুরায়রা, আনাস (রা) প্রমুখ রাফি ইয়াদাইনের বিষয়টি গ্রহণ করেছেন। একইভাবে তাবিঈ এবং তাঁদের পরবর্তী একদল ইমাম এ অভিমত পোষণ করেন।
রাফি ইয়াদাইন বর্জনের পক্ষে হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণিত হাদীস বর্ণনা করার পর এ বিষয়ের উপর বারা ইবনে আযিবের বরাতে অন্য একটি হাদীস বর্ণনা করে ইমাম তিরমিযী (র) লিখেছেন: "বেশ কিছু সংখ্যক সাহাবী রাফি ইয়াদাইন বর্জনের পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। একইভাবে তাবিঈ ও তাঁদের পরবর্তী ইমামগণও এ মত পোষণ করেন"।
মোদ্দাকথা, 'আমীন' সশব্দে ও নিঃশব্দে পাঠ করার ন্যায় রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর পক্ষ থেকে রাফি ইয়াদাইন করার এবং না করার উভয়বিধ বিবরণ রয়েছে। সাহাবা কিরামের মধ্যে প্রাধান্য দানের এবং গ্রহণের ব্যাপারে এ জন্য দ্বিমতের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের কিছু সংখ্যক নিজ গবেষণা ও অভিজ্ঞতার আলোকে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর আমল পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত সালাতে মূলতঃ রাফি ইয়াদাইন নেই; তবে তা কখনও ঘটনাচক্রে করেছেন। সাহাবীদের মধ্যে ইবনে মাসউদ (রা) পরবর্তীদের মধ্যে ইমাম আযম আবূ হানীফা, সুফিয়ান সাওরী (র) প্রমুখ এই অভিমত গ্রহণ করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর ও হযরত জাবির (রা) সহ অপরাপর সাহাবাগণ সম্পূর্ণ বিপরীত অভিমত পোষণ করেন। পরবর্তীদের মতে ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ (র) সহ অপরাপর মনীষীবৃন্দ এই অভিমতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। উভয়বিধ অভিমতের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে কেবল ফযীলতের ব্যাপারে। রাফি ইয়াদাইন অবলম্বন এবং বর্জন জায়িয হওয়ার বিষয়ে উভয়পক্ষ ঐকমত্য পোষণ করেন। আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে বাড়াবাড়ি ও বে-ইনসাফি থেকে হিফাযত করুন এবং সত্যাশ্রয়ী হওয়ার তাওফীক দিন।
হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণিত হাদীসের আলোকে বলা যায় যে, হযরত ইবনে উমর (রা) বর্ণিত হাদীসে যে রুকূতে যাবার সময় ও উঠার সময় রাফি ইয়াদাইনের উল্লেখ রয়েছে তাও রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সব সময়ের অথবা বেশির ভাগ সময়ের আমল ছিলনা। যদি ব্যাপারটি এরূপই হতো, তবে ইবনে মাসউদ (রা) যিনি প্রথম সারিতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন, তিনি নিশ্চয়ই তা জানতেন এবং শিক্ষাদান কালে রাফি ইয়াদাইন আদৌ বর্জন করতেন না। উল্লিখিত হাদীসমূহ সামনে রেখে প্রত্যেক ন্যায়নিষ্ঠ প্রাজ্ঞ ব্যক্তি মাত্র এই সিদ্ধান্তে পৌঁছবেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সালাতে কখনো রাফি ইয়াদাইন করতেন আবার কখনো করতেন না। অর্থাৎ ব্যাপারটি এরূপ হতো যে, কখনো তিনি তাঁর পুরো সালাতে কেবল তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্য কোন সময় হাত উঠাতেন না। আবার কখনো তাকবীরে তাহরীমা ছাড়াও রুকূতে যাবার সময় এবং উঠার সময় রাফি ইয়াদাইন করতেন আবার কদাচিৎ সিজদায় যাবার সময় আবার কখনো সিজদা থেকে উঠার পর রাফি ইয়াদাইন করতেন। হযরত ইবনে মাসউদ (রা) দীর্ঘদিন তা প্রত্যক্ষ করে মনে করেছিলেন যে মূলতঃ তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত সালাতে রাফি ইয়াদাইন নেই। পক্ষান্তরে হযরত ইবনে উমর (রা) সহ বিপুল সংখ্যক সাহাবী মনে করেছিলেন যে, সালাতের মূলে রাফি ইয়াদাইন রয়েছে। বলাবাহুল্য চিন্তা-গবেষণার পথ পরিক্রমায় তাবিঈদের মধ্যেই এ দ্বিমত থেকে যায়।
ইমাম তিরমিযী (র) হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা) বর্ণিত হাদীস সনদসহ বর্ণনা করার পর ঐ সকল সাহাবীর আমল উল্লেখ করেছেন যাঁদের সূত্রে রাফি ইয়াদাইন সম্বলিত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন-"রাসূলুল্লাহ ﷺ কিছু সংখ্যক সাহাবী যেমন আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর, জাবির, আবু হুরায়রা, আনাস (রা) প্রমুখ রাফি ইয়াদাইনের বিষয়টি গ্রহণ করেছেন। একইভাবে তাবিঈ এবং তাঁদের পরবর্তী একদল ইমাম এ অভিমত পোষণ করেন।
রাফি ইয়াদাইন বর্জনের পক্ষে হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণিত হাদীস বর্ণনা করার পর এ বিষয়ের উপর বারা ইবনে আযিবের বরাতে অন্য একটি হাদীস বর্ণনা করে ইমাম তিরমিযী (র) লিখেছেন: "বেশ কিছু সংখ্যক সাহাবী রাফি ইয়াদাইন বর্জনের পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। একইভাবে তাবিঈ ও তাঁদের পরবর্তী ইমামগণও এ মত পোষণ করেন"।
মোদ্দাকথা, 'আমীন' সশব্দে ও নিঃশব্দে পাঠ করার ন্যায় রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর পক্ষ থেকে রাফি ইয়াদাইন করার এবং না করার উভয়বিধ বিবরণ রয়েছে। সাহাবা কিরামের মধ্যে প্রাধান্য দানের এবং গ্রহণের ব্যাপারে এ জন্য দ্বিমতের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের কিছু সংখ্যক নিজ গবেষণা ও অভিজ্ঞতার আলোকে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর আমল পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত সালাতে মূলতঃ রাফি ইয়াদাইন নেই; তবে তা কখনও ঘটনাচক্রে করেছেন। সাহাবীদের মধ্যে ইবনে মাসউদ (রা) পরবর্তীদের মধ্যে ইমাম আযম আবূ হানীফা, সুফিয়ান সাওরী (র) প্রমুখ এই অভিমত গ্রহণ করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর ও হযরত জাবির (রা) সহ অপরাপর সাহাবাগণ সম্পূর্ণ বিপরীত অভিমত পোষণ করেন। পরবর্তীদের মতে ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ (র) সহ অপরাপর মনীষীবৃন্দ এই অভিমতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। উভয়বিধ অভিমতের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে কেবল ফযীলতের ব্যাপারে। রাফি ইয়াদাইন অবলম্বন এবং বর্জন জায়িয হওয়ার বিষয়ে উভয়পক্ষ ঐকমত্য পোষণ করেন। আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে বাড়াবাড়ি ও বে-ইনসাফি থেকে হিফাযত করুন এবং সত্যাশ্রয়ী হওয়ার তাওফীক দিন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)