মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং: ১৩৫
সলাত অধ্যায়
সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে 'আমীন' বলা
১৩৫. হযরত আবূ মূসা আশ'আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমরা যখন সালাতে দাঁড়াবে তখন (প্রথমেই) কাতার সোজা করে নিবে। এরপর তোমাদের কেউ যেন সালাতের ইমামতি করে। যখন সে তাকবীর বলে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে এবং যখন সে 'গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দাল্লীন' বলে তখন তোমরা আমীন (কবুল করুন) বলবে। আল্লাহ্ তোমাদের দু'আ কবুল করে নিবেন। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِذَا صَلَّيْتُمْ فَأَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ ثُمَّ لْيَؤُمَّكُمْ أَحَدُكُمْ ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا ، وَإِذَا قَالَ {غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ} فَقُولُوا : آمِينَ ، يُجِبْكُمُ اللهُ. (رواه مسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

'আমীন' মূলতঃ দু'আ কবুলের আবেদনপত্র এবং বান্দার পক্ষ থেকে এই স্বীকারোক্তি একথা বলার অধিকার আমার নেই যে, আল্লাহ্ আমার দু'আ ককূল করবেনই, তাই যাঞ্চনাকারীর ন্যায় আবেদন করতে হবে- হে আল্লাহ্! তুমি তোমার অনুগ্রহ দ্বারা আমার চাহিদা মেটাও এবং আমার দু'আ কবুল কর। তাই 'আমীন' শব্দটি সংক্ষিপ্ত হলেও আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্তির একটি স্বতন্ত্র দু'আও বটে। সুনানে আবু দাউদে আবূ যুহায়র নুমায়রী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা একবার রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে বের হলাম এবং এমন এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছলাম যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কাতর প্রার্থনা করছিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ যদি সে মোহর লাগায়, তবে সে নিজের জন্য জান্নাত অবধারিত করে নিল। লোকদের মধ্যকার এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, কিসের দ্বারা সে মোহর লাগবে? তিনি বললেন: 'আমীন' দ্বারা।"
এই হাদীস থেকে জানা যায় যে, দু'আ শেষে আমীন বললে দু'আ কবুলের আশা করা যেতে পারে।

'আমীন' কি সশব্দে না নিঃশব্দে পাঠ করতে হবে
সালাতে 'আমীন' সশব্দে পাঠ করা হবে না নিঃশব্দে এ বিষয়টি অযাচিতভাবে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। অথচ সালাতে সশব্দে ও নিঃশব্দে 'আমীন' বলার বিষয়টি যে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত কোন আলিম ব্যক্তির পক্ষে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। একইভাবে একথাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সশব্দে ও নিঃশব্দে 'আমীন' পাঠকারীর মধ্যে সাহাবী ও তাবিঈ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এটাই স্পষ্ট প্রমাণ যে এ দু'টি ধারাই রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে প্রমাণিত এবং তাঁর জীবদ্দশায় উভয় পদ্ধতি কার্যকর ছিল। একথা অসম্ভব যে, তিনি তাঁর জীবদ্দশায় 'আমীন' সশব্দে পাঠ করেন নি অথচ তাঁর ইন্তিকালের পর সাহাবা কিরাম সশব্দে 'আমীন' বলা শুরু করে দেন। একইভাবে এটাও অসম্ভব যে, তাঁর জীবদ্দশায় কখনো তাঁর সম্মুখে কেউ কার্যত নিঃশব্দে 'আমীন' বলেনি অথচ তাঁর ইন্তিকালের পর সাহাবা কিরাম নিঃশব্দে 'আমীন' পাঠ শুরু করে দেন। মোদ্দাকথা, সাহাবী ও তাবিঈগনের মধ্যে উভয়বিধ আমল কার্যকর থাকাই প্রমাণ করে সে রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর যুগে উভয়বিধ আমল কার্যকর ছিল।

পরবর্তী যুগের কিছু সংখ্যক প্রাজ্ঞ আলিম নিজ গবেষণার আলোকে মনে করেছেন যে, আমীন মূলতঃ সশব্দে পাঠ করতে হবে এবং নবী যুগে এর উপরই বেশির ভাগ আমল করা হতো। যদিও কখনো কখনো ব্যতিক্রম ও পরিলক্ষিত হতো। তাই তারা সশব্দে আমীন পাঠ করা উত্তম এবং নিঃশব্দে পাঠ করা জায়িয বলেছেন। এর বিপরীত অন্য একদল মুজতাহিদ ইমাম নিজ নিজ গবেষণা অনুযায়ী মনে করেছেন যে, 'আমীন' যেহেতু কুরআনের শব্দ নয়, তাই তা নিঃশব্দে পাঠ করাই বাঞ্ছনীয় এবং নবী যুগেও সাধারণভাবে নিঃশব্দেই পাঠ করা হতো, যদিও কখনো কখনো সশব্দ পাঠ করা হতো। মোদ্দাকথা, এই ইমামগণের গবেষণা ও বিশ্লেষণের দাবি হল নিঃশব্দে পাঠ করা উত্তম এবং সশব্দ পাঠ করা জায়িয। বলাবাহুল্য ইমামদের মতবিরোধ মূলতঃ উত্তম হওয়ার বিষয় নিয়ে আবর্তিত। উভয় প্রকার পাঠ জায়িয হওয়ার বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। এ বিষয়ে আমাদের পূর্ববর্তী আলিমগণ গবেষণা ও বিশ্লেষণের আলোকে যা বিশুদ্ধ মনে করেছেন, তাই গ্রহণ করেছেন আল্লাহ্ তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং আমাদের সবাইকে সত্য ও ন্যায়ের পথ অবলম্বনের তাওফীক দিন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান