মা'আরিফুল হাদীস
সলাত অধ্যায়
হাদীস নং: ১২৯
সলাত অধ্যায়
এশার সালাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরা'আত
১২৯. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু'আয ইবনে জাবাল (রা) নবী কারীম ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করতেন এবং নিজ গোত্রের লোকদের সালাতের ইমামতি করতেন। এক রাতে তিনি নবী কারীম ﷺ এর সাথে এশার সালাত আদায় করেন। তারপর নিজ গোত্রের লোকদের কাছে আসেন এবং তাদের সালাতের ইমামতি করেন। এতে তিনি সূরা বাকারা পাঠ করা শুরু করেন। ফলে জনৈক ব্যক্তি সরে গিয়ে সালাম ফিরায় এবং একাকী সালাত আদায় করে চলে যায় (বিষয়টি অস্বাভাবিক ছিল, কেননা মুনাফিক ছাড়া কেউ জামা'আত ছাড়া সালাত আদায় করত না)। লোকেরা তাকে বলল, তুমি কি মুনাফিক হয়ে গেছ? সে বলল, না আল্লাহর শপথ! আমি মুনাফিক নই। আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট যাব এবং তাঁকে বিষয় জানাব। তারপর সে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট গেল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা দিনে উটের সাহায্যে পানি সেচের কাজ করি ও সারাদিন পরিশ্রম করি। (রাতে) মু'আয (রা) আপনার সাথে ইশার সালাত আদায় করে আসেন এবং (সালাতে ইমামতি করতে গিয়ে) সূরা বাকারা পাঠ করা শুরু করেন। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ মু'আযের দিকে তাকান এবং বলেন, হে মু'আয! তুমি কি মানুষকে ফিতনায় ফেলতে চাও? তুমি (এশার সালাতে) সূরা শাম্স, আদ্-দুহা, আল-লায়ল ও সূরা আ'লা পাঠ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : كَانَ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ ، يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ يَأْتِي فَيَؤُمُّ قَوْمَهُ ، فَصَلَّى لَيْلَةً مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ ثُمَّ أَتَى قَوْمَهُ فَأَمَّهُمْ فَافْتَتَحَ بِسُورَةِ الْبَقَرَةِ فَانْحَرَفَ رَجُلٌ فَسَلَّمَ ثُمَّ صَلَّى وَحْدَهُ وَانْصَرَفَ فَقَالُوا لَهُ : أَنَافَقْتَ؟ يَا فُلَانُ ، قَالَ : لَا. وَاللهِ وَلَآتِيَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَأُخْبِرَنَّهُ. فَأَتَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ ، إِنَّا أَصْحَابُ نَوَاضِحَ نَعْمَلُ بِالنَّهَارِ وَإِنَّ مُعَاذًا صَلَّى مَعَكَ الْعِشَاءَ ، ثُمَّ أَتَى قَوْمَهُ فَافْتَتَحَ بِسُورَةِ الْبَقَرَةِ فَأَقْبَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى مُعَاذٍ فَقَالَ : « يَا مُعَاذُ أَفَتَّانٌ أَنْتَ؟ اقْرَأْ وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا وَالضُّحَى ، وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى ، وَسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আলোচ্য হাদীস থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, হযরত মু'আয (রা) একবার মসজিদে নববীতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে মুক্তাদী হিসেবে এবং অন্যবার নিজ গোত্রের লোকদের ইমামতি করার মধ্য দিয়ে দুইবার এশার সালাত আদায় করতেন। কিন্তু অধিকাংশ আলিমদের মতে, তিনি একবার নফল হিসেবে সালাত আদায় করতেন। ইমাম শাফিঈ (রা) এর মতে, হযরত মু'আয (রা) মসজিদে নব্বীতে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পিছনে মুক্তাদী হিসেবে যে সালাত আদায় করতেন তা ছিল মূলতঃ তার ফরয সালাত। আর নিজ গোত্রের লোকদের তিনি নফলের নিয়্যাতে সালাতে ইমামতি করতেন। এর ভিত্তিতে তিনি বলেন, নফল আদায়কারী ইমামের পেছনে ফরয সালাত আদায়ে কোন দোষ নেই। কিন্তু ইমাম আযম আবূ হানীফা (র) ও ইমাম মালিক (র)-এর মতে, নফল আদায়কারীর পেছনে ফরয আদায়কারীর সালাত কোনভাবেই আদায় হবে না। হযরত মু'আয (রা) এর ঘটনা বর্ণনা করতে যেয়ে তাঁরা বলেন, তিনি ফরযের নিয়্যাতেই নিজ গোত্রের লোকদের সালাতের ইমামতি করতেন আর মসজিদে নব্বীতে জামা'আতের সময়ে তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত থাকায় তাঁর বিশেষ বরকত লাভের এবং শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে নফলের নিয়্যাতে তাঁর পেছনে সালাত আদায় করতেন। এ মাস'আলার উভয় পক্ষ থেকে চমৎকার আলোচনা পর্যালোচনা বিধৃত রয়েছে। ফাতহুল বারী, উমদাতুল কারী এবং ফাতহুল মুলহিমে এ বিষয়ে সবিস্তার বিবরণ দেখে নিতে পারেন।
এ হাদীস থেকে আলোচ্য বিষয়বস্তু ও শিরোনাম সম্পর্কিত যে, নির্দেশনা লাভকরা যায় তা হচ্ছে এই যে, মুক্তাদীর সালাতে কষ্ট হয় এমন দীর্ঘ কিরা'আত পাঠ না করাই ইমামের কর্তব্য। বিশেষতঃ দুর্বল, অসুস্থ ও পেশাজীবী লোকদের প্রতি দৃষ্টি রাখা একান্ত জরুরী।
এ হাদীস থেকে আলোচ্য বিষয়বস্তু ও শিরোনাম সম্পর্কিত যে, নির্দেশনা লাভকরা যায় তা হচ্ছে এই যে, মুক্তাদীর সালাতে কষ্ট হয় এমন দীর্ঘ কিরা'আত পাঠ না করাই ইমামের কর্তব্য। বিশেষতঃ দুর্বল, অসুস্থ ও পেশাজীবী লোকদের প্রতি দৃষ্টি রাখা একান্ত জরুরী।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)