মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং: ৩২
সলাত অধ্যায়
ইসলামে আযানের শুভ সূচনা
৩২. মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে যায়িদ ইবনে আবদ রাব্বিহি (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আবদুল্লাহ্ ইবনে যায়িদ (রা) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি (আমার পিতা) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতে লোকদের একত্র করার উদ্দেশ্যে ঘন্টা বানানোর নির্দেশ দেন। ইতোমধ্যে স্বপ্নে একব্যক্তি আমার নিকট একটি ঘন্টা হাতে নিয়ে উপস্থিত হলো। আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর বান্দা! ঘন্টাটি কি বিক্রি করবে? সে জিজ্ঞেস করল, তুমি এর দ্বারা কি করবে? আমি বললাম, আমরা এর দ্বারা লোকদেরকে সালাতের জামা'আতে ডাকব। সে বলল, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম বিষয় বলব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। সে মতে সে বলল, তুমি বল, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ ﷺ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ ﷺ, হায়্যা আলাস্ সালাহ্, হায়্যা আলাস সালাহ; হায়্যা আলাল ফালাহ্, হায়‍্যা আলাল ফালাহ্; আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্। তিনি (আবদুল্লাহ্ ইবনে যায়িদ রা) বলেন, সে আমাকে আযানের শব্দমালা বলে খানিকটা পিছু হটে গেল এবং কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, এরপর যখন সালাতে দাঁড়াবে তখন এভাবে ইকামত দিবে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, হায়্যা আলাস্ সালাহ্, হায়্যা আলাল ফালাহ্, ক্বাদ-কামাতিস্ সালাতু ক্বাদ-কামাতিস সালাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্। তারপর আমি ভোরে ঘুম থেকে উঠে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট গেলাম এবং রাতে যা স্বপ্নে দেখেছি তাঁকে তা অবহিত করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ্ চাহেত তোমার স্বপ্ন সত্য। তুমি যা স্বপ্নে দেখেছ তা বিলালকে শেখাও এবং বিলাল সেই শব্দযোগে যেন আযান দেয়। কেননা সে তোমার চেয়ে উচ্চকণ্ঠের অধিকারী। সুতরাং আমি বিলালের সাথে গেলাম এবং তাঁকে তা শেখালাম। ফলে সে আযান দিল। তিনি (আবদুল্লাহ্ ইবনে যায়িদ) বলেন, উমর (রা) তাঁর ঘর থেকে আযান শুনে নিজ চাদর হেঁচড়াতে হেঁচাড়াতে বেরিয়ে আসেন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে যিনি সত্যসহ পাঠিয়েছেন সেই মহান সত্তার শপথ তাকে (আবদুল্লাহ্ ইবনে যায়িদ) যেরূপ স্বপ্ন দেখান হয়েছে তদ্রুপ আমিও সে স্বপ্ন দেখেছি। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন: সকল প্রশংসা ও স্তুতি আল্লাহর জন্য। (আবূ দাউদ ও দারিমী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَبْدِ رَبِّهِ ، ‏‏‏‏‏‏قَالَ : ‏‏‏‏ حَدَّثَنِي أَبِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَيْدٍ ، ‏‏‏‏‏‏قَالَ : ‏‏‏‏ "لَمَّا أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاقُوسِ يُعْمَلُ لِيُضْرَبَ بِهِ لِلنَّاسِ لِجَمْعِ الصَّلَاةِ ، ‏‏‏‏‏‏طَافَ بِي وَأَنَا نَائِمٌ رَجُلٌ يَحْمِلُ نَاقُوسًا فِي يَدِهِ ، ‏‏‏‏‏‏فَقُلْتُ : ‏‏‏‏ يَا عَبْدَ اللَّهِ ، ‏‏‏‏‏‏أَتَبِيعُ النَّاقُوسَ؟ قَالَ : ‏‏‏‏ وَمَا تَصْنَعُ بِهِ؟ فَقُلْتُ : ‏‏‏‏ نَدْعُو بِهِ إِلَى الصَّلَاةِ ، ‏‏‏‏‏‏قَالَ : ‏‏‏‏ أَفَلَا أَدُلُّكَ عَلَى مَا هُوَ خَيْرٌ مِنْ ذَلِكَ؟ فَقُلْتُ لَهُ : ‏‏‏‏ بَلَى ، فَقَالَ : ‏‏‏‏ تَقُولُ : ‏‏‏‏ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ ، ‏‏‏‏‏‏اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ ، ‏‏‏‏‏‏أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، ‏‏‏‏‏‏أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، ‏‏‏‏‏‏أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ، ‏‏‏‏‏‏أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ، ‏‏‏‏‏‏حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ ، ‏‏‏‏‏‏حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ ، ‏‏‏‏‏‏حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ ، ‏‏‏‏‏‏حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ ، ‏‏‏‏‏‏اللَّهُ أَكْبَرُ ، ‏‏‏‏‏‏اللَّهُ أَكْبَرُ ، ‏‏‏‏‏‏لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، ‏‏‏‏‏‏قَالَ : ‏‏‏‏ ثُمَّ اسْتَأْخَرَ عَنِّي غَيْرَ بَعِيدٍ ، ‏‏‏‏‏‏ثُمَّ قَالَ : ‏‏‏‏ تَقُولُ إِذَا أَقَمْتَ الصَّلَاةَ : ‏‏‏‏ اللَّهُ أَكْبَرُ ، ‏‏‏‏‏‏اللَّهُ أَكْبَرُ ، ‏‏‏‏‏‏أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، ‏‏‏‏‏‏أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ، ‏‏‏‏‏‏حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ ، ‏‏‏‏‏‏حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ ، ‏‏‏‏‏‏قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ ، ‏‏‏‏‏‏قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ ، ‏‏‏‏‏‏اللَّهُ أَكْبَرُ ، ‏‏‏‏‏‏اللَّهُ أَكْبَرُ ، ‏‏‏‏‏‏لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، ‏‏‏‏‏‏فَلَمَّا أَصْبَحْتُ ، ‏‏‏‏‏‏أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرْتُهُ بِمَا رَأَيْتُ ، ‏‏‏‏‏‏فَقَالَ : ‏‏‏‏ إِنَّهَا لَرُؤْيَا حَقٌّ إِنْ شَاءَ اللَّهُ ، ‏‏‏‏‏‏فَقُمْ مَعَ بِلَالٍ فَأَلْقِ عَلَيْهِ مَا رَأَيْتَ فَلْيُؤَذِّنْ بِهِ فَإِنَّهُ أَنْدَى صَوْتًا مِنْكَ ، ‏‏‏‏‏‏فَقُمْتُ مَعَ بِلَالٍ فَجَعَلْتُ أُلْقِيهِ عَلَيْهِ وَيُؤَذِّنُ بِهِ ، ‏‏‏‏‏‏قَالَ : ‏‏‏‏ فَسَمِعَ ذَلِكَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ وَهُوَ فِي بَيْتِهِ فَخَرَجَ يَجُرُّ رِدَاءَهُ ، ‏‏‏‏‏‏وَيَقُولُ : ‏‏‏‏ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ يَا رَسُولَ اللَّهِ ، ‏‏‏‏‏‏لَقَدْ رَأَيْتُ مِثْلَ مَا اُرِىَ ، ‏‏‏‏‏‏فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ‏‏‏‏ فَلِلَّهِ الْحَمْدُ". (رواه ابو داؤد والدارمى)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আলোচ্য হাদীসের সম্পর্কে দু'টি কথা পরিষ্কার করা আবশ্যক। যথা (১) হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে যায়িদ (রা) সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে সালাতে লোকদের জড়ো করার জন্য ঘন্টা তৈরীর নির্দেশ দিয়েছেন। (২) পক্ষান্তরে আনাস তনয় আবূ উমায়র বর্ণিত রিওয়ায়াত থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে যখন ঘন্টার তৈরীর কথা বলা হয়, তখন তিনি বলেন, এতো খ্রিস্টানদের ধর্মীয় বস্তু। অধমের (গ্রন্থকার) নিকট এর বিশুদ্ধ সমাধান এরূপ হতে পারে যে, সালাতে লোকদের জড়ো করার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে যে সব বস্তু পেশ করা হয় তন্মধ্যে পতাকা, আগুন প্রজ্জলিতকরণ, ইয়াহুদীদের শিঙা ইত্যাদি বস্তু ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ এসব বিষয় সরাসরি প্রত্যাখান করেন। তারপর তাঁর অনুমোদনের জন্য দ্বিতীয় কোন বস্তু পেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু ঘন্টা সম্পর্কে তিনি কেবল এতটুকু বলে ক্ষান্ত করেন যে, এতো খ্রিস্টানদের ধর্মীয় বস্তু। কিন্তু একথা দ্বারা ঘন্টা অবৈধ হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার বুঝা যায়নি। বরং তাঁর ভাষণ দ্বারা সম্ভবত কোন সাহাবী বুঝে নিয়েছিলেন যে, অন্যান্য বস্তুর তুলনায় তিনি একে প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা এও বুঝে নিয়েছিলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘন্টা অনিচ্ছাসত্ত্বেও অনুমোদন দিয়েছেন এবং যতক্ষণ এর সুষ্ঠু সমাধান বেরিয়ে না আসে ততক্ষণ এর উপর আমল করার অনুমোদন দিয়েছেন। (সম্ভবত এ কারণে কারো পক্ষ থেকে কোন বস্তু অনুমোদনের জন্য তাঁর কাছে পেশ করা হয়নি) এ অধমের মতে, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে যায়িদ (রা) امر بالناقوس (নবী কারীম ﷺ ঘন্টার নির্দেশ দেন) বলেছেন। কখনো কখনো কোন বস্তুর অনুমোদন ও সম্মতি দানের ক্ষেত্রে مر। (নির্দেশ) শব্দ ব্যবহার করা হয়। কুরআন-হাদীসে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায়।
আলোচ্য হাদীস সম্পর্কে দ্বিতীয় বিষয় হল এই যে, আযানে যে সব শব্দ দুই দুইবার বলা হয়েছে ইকামতে তা বলা হয়েছে একবার করে। হযরত আনাস (রা) সূত্রে পরে বর্ণিত রিওয়ায়াত থেকে জানা যায় যে, ইকামতে উক্ত শব্দসমূহ একবার করে বলারই নির্দেশ ছিল। কিন্তু অন্যান্য রিওয়ায়াত যা পরে বর্ণিত হবে। এর মধ্যে সহীহ্ মুসলিমের বর্ণনাও রয়েছে। আযানের মত ইকামতেও শব্দসমূহ দুই দুইবার বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন হাদীস বিশারদ নিজ প্রজ্ঞার উপর ভিত্তি করে (ইকামতের শব্দ) এক একবার এবং অপর কিছু সংখ্যক প্রাজ্ঞ ব্যক্তি দুই দুইবারকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ইকামতের ক্ষেত্রে উভয় পদ্ধতিই প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি। মতবিরোধ কেবল প্রাধান্য ফযীলাতের ক্ষেত্রে, অন্য ক্ষেত্রে নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান