মা'আরিফুল হাদীস
সলাত অধ্যায়
হাদীস নং: ২২
সলাত অধ্যায়
ইশার সময় প্রসঙ্গে
২২. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একরাতে আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ইশার সালাত আদায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। রাতের এক তৃতীয়াংশে অথবা আরো কিছু বেশী সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি আমাদের কাছে বেরিয়ে আসেন। আমরা জানতাম না যে, জরুরী কোন কাজ তাঁকে তাঁর ঘরে ব্যস্ত রেখেছিলেন, না অন্য কোন কাজে তিনি মশগুল ছিলেন। তারপর তিনি বেরিয়ে এসে (আমাদের সান্ত্বনা দিয়ে) বললেনঃ তোমরা এমন এক সালাতের জন্য অপেক্ষা করছ, যার জন্য তোমরা ব্যতীত অন্য কোন ধর্মাবলম্বীগণ অপেক্ষা করে নি। আমার উম্মাতের উপর যদি তা কষ্টকর না হতো, তাহলে তাদের নিয়ে (সব সময়) এই সময়ই সালাত আদায় করতাম। তারপর তিনি মুআ'যযিনকে আদেশ দিলেন। সে সালাতের ইকামত দিল এবং তিনি সালাত আদায় করলেন। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ، قَالَ : مَكَثْنَا ذَاتَ لَيْلَةٍ نَنْتَظِرُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِصَلَاةِ الْعِشَاءِ الآخِرَةِ ، فَخَرَجَ إِلَيْنَا ، حِينَ ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ أَوْ بَعْدَهُ ، فَلَا نَدْرِي أَشَيْءٌ شَغَلَهُ فِي أَهْلِهِ ، أَوْ غَيْرُ ذَلِكَ ، فَقَالَ حِينَ خَرَجَ : " إِنَّكُمْ تَنْتَظِرُونَ صَلَاةً ، مَا يَنْتَظِرُهَا أَهْلُ دِينٍ غَيْرُكُمْ ، وَلَوْلَا أَنْ يَثْقُلَ عَلَى أُمَّتِي ، لَصَلَّيْتُ بِهِمْ هَذِهِ السَّاعَةَ " ، ثُمَّ أَمَرَ الْمُؤَذِّنَ ، فَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَصَلَّى" (رواه مسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীস থেকে একথা পরিষ্কার জানা গেল যে, ইশার সালাত রাতের এক তৃতীয়াংশের পর আদায় করা উত্তম। কিন্তু সাধারণ মুসল্লীদের এতক্ষণ জেগে থেকে সালাত আদায় করা সত্যি কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ কষ্টের দিকে লক্ষ্য করেই রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর উম্মাতের সুবিধার্থে তাড়াতাড়ি করে সালাত আদায় করে নিতেন। হযরত জাবির (রা) সূত্রে এ মর্মে একটি হাদীস পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে যে, ইশার সালাতে যদি তাড়াতাড়ি লোক সমাগম হতো তাহলে তাড়াতাড়ি, আর বিলম্বে লোক সমাগম হলে বিলম্বে নবী কারীম ﷺ সালাত আদায় করে নিতেন। নবী কারীম ﷺ এর কথা ও কাজ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি জানা যায় যে, কোন সামষ্টিক আমল সম্পাদন করতে যেয়ে উত্তম সময় পেতে যদি সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়, তবে তা বর্জন করাই উত্তম। আল্লাহ্ চাহেত সাধারণ মানুষের কষ্ট বিবেচনা করে উত্তম সময় বর্জন করায় হয়ত বা আরো অধিক সাওয়াব হবে। অন্যকথায় বলা যায়, সামষ্টিক কাজে সময়ের মর্যাদার তুলনায় সাধারণের অবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখা সাওয়াব অর্জনের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হওয়ার দাবি রাখে। এ হাদীস থেকে এও জানা যায় যে, ইশার সালাত কেবল এই উম্মাতের উপরই ফরয। অন্য কোন উম্মাতের উপর এই সালাত ফরয ছিল না। এই কথা অন্য হাদীসে আরো সবিস্তার বর্ণনা করা হয়েছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)