মা'আরিফুল হাদীস
আখলাক অধ্যায়
হাদীস নং: ২৪২
আখলাক অধ্যায়
মু'আয (রা)-এর প্রতি রাসূল ﷺ-এর চিঠি
২৪২: হযরত মু'আয ইবন জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত, তাঁর এক ছেলের মৃত্যু হয়। নবী ﷺ তাঁকে সমবেদনা প্রকাশ করে চিঠি লিখলেন: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ ﷺ-এর নিকট থেকে মু'আয ইবন জাবালের প্রতি। সালামুন আলাইকা। আমি তোমার কাছে প্রশংসা করছি সেই আল্লাহর, যিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। অতঃপর দু'আ করি আল্লাহ তোমাকে মহান প্রতিদান ও পরিপূর্ণ সবর দান করুন এবং তোমাকে ও আমাদেরকে (নিয়ামতের) শুকরিয়া আদায় করার তওফিক দিন। আমাদের নফস, আমাদের সম্পদ এবং আমাদের পরিবার-পরিজন আল্লাহর আনন্দদায়ক দান এবং গচ্ছিত আমানত। আল্লাহ তোমাকে তা তৃপ্তি ও আনন্দের সাথে উপভোগ করতে দিয়েছেন এবং বিরাট প্রতিদানের বিনিময়ে তা তোমার কাছ থেকে উঠিয়ে নিয়েছেন। যদি তুমি তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য সবর কর তাহলে তোমার জন্য নিয়ামত, রহমত এবং হিদায়াত রয়েছে। তাই সবর কর এবং তোমার শোক যেন তোমার প্রতিদান বরবাদ করে তোমাকে অনুতপ্ত না করে। মনে রেখ, শোক মৃতকে ফিরিয়ে আনতে পারে না এবং ব্যথা-বেদনাকেও দূর করতে পারে না আর যা মানুষের উপর নাযিল হয়, তা ভাগ্যলিপিতে রয়েছে। ওয়াসসালাম। (তাবারানী)
کتاب الاخلاق
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ مَاتَ ابْنٌ لَهُ فَكَتَبَ إِلَيْهِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التَّعْزِيَهِ فَكَتَبَ إِلَيْهِ : « بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مِنْ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللَّهِ إِلَى مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ ، سَلَامٌ عَلَيْكَ ، فَإِنِّي أَحْمَدُ إِلَيْكَ اللَّهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ ، أَمَّا بَعْدُ فَأَعْظَمَ اللَّهُ لَكَ الْأَجْرَ ، وَأَلْهَمَكَ الصَّبْرَ ، وَرَزَقَنَا وَإِيَّاكَ الشُّكْرَ ، فَإِنَّ أَنْفُسَنَا وَأَمْوَالَنَا وَأَهْلَنَا مِنْ مَوَاهِبِ اللَّهِ الْهَنِيَّةِ وَعَوَارِيهِ الْمُسْتَوْدَعَةِ ، مَتَّعَكَ اللهُ بِهِ فِي غِبْطَةٍ وَسُرُورٍ ، وَقَبَضَهُ مِنْكَ بِأَجْرٍ كَبِيرٍ ، الصَّلَاةُ وَالرَّحْمَةُ وَالْهُدَى إِنِ احْتَسَبْتَهُ فَاصْبِرْ ، وَلَا يُحْبِطْ جَزَعُكَ أَجْرَكَ فَتَنْدَمَ ، وَاعْلَمْ أَنَّ الْجَزَعَ لَا يَرُدُّ مَيِّتًا وَلَا يَدْفَعُ حُزْنًا ، وَمَا هُوَ نَازِلٌ فَكَأَنْ قَدْ وَالسَّلَامُ » (رواه الطبرانى فى الكبير والاوسط)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আল্লাহর সৃষ্ট কিছু সংখ্যক জিনিসের ভোগ-দখলের অধিকার মানুষকে দেয়া হয়েছে। যেরূপ তিনি মানুষকে নিয়ামত দান করেন, সেরূপ তিনি কোন কোন সময় নিয়ামত ফিরিয়েও নেন। কেন তিনি নিয়ামত ফিরিয়ে নেন তা মানুষের বোধগম্যের বাইরে। বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য, তাকে শাস্তি দান করার জন্য, তার মরতবা বা মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য বা অন্য কোন অজ্ঞাত উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তিনি এরূপ করেন, তা আমাদের জানা নেই। কারণ যাই থাকুক, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি মেহেরবান। যখন বান্দা মুসীবতকালে ধৈর্য ধারণ করে, তখন আল্লাহ তাকে অন্য কোন নিয়ামত দান করেন, তার উপর রহমত নাযিল করেন এবং তাকে হিদায়াতের উপর কায়েম রাখেন, তার গুনাহ মাফ করে দেন এবং আখিরাতের যিন্দেগীতে আরাম-আয়েশে পরিপূর্ণ জান্নাত দান করেন। মু'মিন বান্দার জন্য এটা বিরাট কামিয়াবী, সবরের প্রতিদান।
যে বান্দা ধৈর্য ধারণ করে না, সে আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ পায় না। ধৈর্যহীনতা এবং সীমাহীন হা-হুতাশের দ্বারা সে তার মৃত প্রিয়জনকে ফিরিয়ে আনতে পারে না। তার হা-হুতাশ তার ব্যথা-বেদনা বৃদ্ধি করে এবং তাকে আল্লাহর রহমত, নিয়ামত ও বরকত থেকে বঞ্চিত করে। তাই বে-সবর বা ধৈর্যহীন ব্যক্তির দুঃখ-দুর্দশা এবং লোকসান অবর্ণনীয়, অফুরন্ত ও অপূরণীয়।
যে বান্দা ধৈর্য ধারণ করে না, সে আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ পায় না। ধৈর্যহীনতা এবং সীমাহীন হা-হুতাশের দ্বারা সে তার মৃত প্রিয়জনকে ফিরিয়ে আনতে পারে না। তার হা-হুতাশ তার ব্যথা-বেদনা বৃদ্ধি করে এবং তাকে আল্লাহর রহমত, নিয়ামত ও বরকত থেকে বঞ্চিত করে। তাই বে-সবর বা ধৈর্যহীন ব্যক্তির দুঃখ-দুর্দশা এবং লোকসান অবর্ণনীয়, অফুরন্ত ও অপূরণীয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)