মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ২৩৩
আখলাক অধ্যায়
প্রাচুর্য ও দারিদ্র্য অন্তরে
২৩৩. হযরত আবু যর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেনঃ হে আবু যর! তুমি কি সম্পদের আধিক্যকে প্রাচুর্য বল। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি কি সম্পদের স্বল্পতাকে দারিদ্র্য বল? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তিনবার এ প্রশ্ন করলেন, অতঃপর বললেনঃ প্রাচুর্য অন্তরে এবং দারিদ্র্য অন্তরে। (তাবারানী, কাবীর গ্রন্থে)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي ذَرٍّ ، قَالَ : قَالَ لِىْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " يَا أَبَا ذَرٍّ , تَقُوْلُ كَثْرَةَ الْمَالِ الْغِنَى؟ " قُلْتُ : نَعَمْ قَالَ : " تَقُوْلُ قِلَّةَ الْمَالِ هِيَ الْفَقْرُ؟ " , قُلْتُ : نَعَمْ قَالَ ذَالِكَ ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ : " الْغِنَى فِى الْقَلْبِ , وَالْفَقْرُ فِى الْقَلْبِ " (رواه الطبرانى فى الكبير)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ধন-দৌলতের আসল উদ্দেশ্য হল প্রয়োজন পূরণ করা এবং নিজের প্রয়োজনের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়া। দৌলতের আধিক্য দ্বারা মানুষের তামাম প্রয়োজন পূরণ অসম্ভব। দৌলতের আধিক্যের সাথে সাথে বান্দার প্রয়োজনও বৃদ্ধি পায়। সঞ্চিত দৌলতের দ্বারা এক প্রয়োজন পূরণ করার পূর্বেই বান্দার নফস অসংখ্য প্রয়োজন সৃষ্টি করে। নফসের সৃষ্ট অসংখ্য প্রয়োজন পূরণ করার জন্য বান্দা আরো সম্পদ লাভ করার চেষ্টা করে এবং অধিক সম্পদ অর্জনের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়। তাই নফসের গলদ নির্দেশে লোভ-লালসায় বান্দা ধনী হয়েও অন্যের মুখাপেক্ষী। সম্পদের আধিক্য তাকে প্রাচুর্য দান করতে পারেনি অর্থাৎ তাকে অন্যের মুখাপেক্ষিতা থেকে রক্ষা করতে পারেনি।

সাধারণত সম্পদের অভাবকে দারিদ্র্য বলা হয় এবং দরিদ্র ব্যক্তি তার প্রয়োজন পূরণ করার জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়। যদি কোন বান্দা তার অল্প সম্পদ সত্ত্বেও অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়, একটি রুটির পরিবর্তে অর্ধেক রুটির দ্বারা প্রয়োজন পূরণ করে, তাহলে সম্পদের স্বল্পতা সত্ত্বেও তাকে দরিদ্র বলা যাবে না। তাই নবী করীম ﷺ বলেছেন, সম্পদের অভাবের নাম দারিদ্র্য নয়, বরং অন্তরের প্রাচুর্য আসল প্রাচুর্য এবং অন্তরের দারিদ্র্য আসল দারিদ্র।

ইমাম বুখারী আবূ হুরায়রা (রা)-এর হাওয়ালা দিয়ে অনুরূপ এক হাদীস বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
لَيْسَ الغِنٰى عَنْ كَثْرَةِ الْعُرُوضِ وَلَكِنَّ الْغِنٰى غِنَى النَّفْسِ .
"দৌলতের আধিক্য প্রাচুর্য নয়, বরং প্রাচুর্য হল নফসের প্রাচুর্য।"

নফস বা অন্তরের প্রাচুর্য কিভাবে হাসিল করা যায় তার পন্থাও আল্লাহর রাসূল ﷺ অপর এক হাদীসে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ যা দান করেছেন, তাতে যে তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট থাকে, সে অন্তরের প্রাচুর্য হাসিল করতে পারে। যে অন্তরের প্রাচুর্য লাভ করে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াব।

ইমাম মুসলিম আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা)-এর হাওয়ালা দিয়ে বর্ণনা করেন; রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَم وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا أَتَاهُ -
"সেই কামিয়াব হয়েছে যে ইসলাম কবুল করেছে, যাকে সামান্য রিযক দেয়া হয়েছে এবং যা তাকে দেয়া হয়েছে তাতে আল্লাহ তাকে কানাআত ও পরিতৃপ্তি দান করেছেন
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান