মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ২২৩
আখলাক অধ্যায়
আল্লাহ যে তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না
২২৩, হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদেরকে পাক-সাফ করবেন না। অন্য রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে, তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে। তারা হলো, বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী বাদশাহ এবং অহঙ্কারী দরিদ্র। (মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ – وَفِىْ رِوَايَةٍ : وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ - وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ : شَيْخٌ زَانٍ ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ " (رواه مسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

জঘন্য আযাবের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ সুবহানাহু কিয়ামতের দিন বিভিন্ন প্রকারের অপরাধী ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি রহমত ও মেহেরবানীর দৃষ্টি দান করবেন না এবং তাদেরকে পাক-সাফ করে জান্নাতে দাখিল করবেন না। আলোচ্য হাদীসে তিন শ্রেণীর বদ-কিসমত বদকার ব্যক্তির উল্লেখ রয়েছে। ব্যভিচার করা জঘন্য অপরাধ। ব্যভিচারকারীর শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে। ব্যভিচারকারী তওবা করলে আল্লাহ্ তাকে মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু বৃদ্ধ ব্যভিচারীর অপরাধ আরও জঘন্য। যৌবনের দুর্বার ও দুর্দমনীয় ইচ্ছা বৃদ্ধ বয়সে ভাটা পড়ে যায় এবং বৃদ্ধ ব্যক্তি ইচ্ছা করলে তার যৌন আকাঙ্ক্ষাকে অনায়াসে দমন করতে পারে। তাই কোন বৃদ্ধ ব্যক্তি যদি তার যৌন আবেদনকে সংযত না করে যেনা করে, তাহলে আল্লাহ তার উপর যুবক ব্যভিচারীর তুলনায় অধিক অসন্তুষ্ট হন। কারণ চরিত্রের চরম অধঃপতন ও আল্লাহর প্রতি বেপরোয়া না হলে কোন মানুষ বৃদ্ধ বয়সে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে না।

মিথ্যা বলা অপরাধ। মিথ্যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করে। হাসি-তামাশার জন্যও মিথ্যা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। রাষ্ট্র প্রধানের মিথ্যা বলা জঘন্যতম অপরাধ। এ জন্য তা জঘন্যতম যে, রাষ্ট্র প্রধান কোন ব্যক্তির অধীনে নয়। কোন ব্যক্তি তাকে শাস্তি দিতে পারে না। দুনিয়ার কোন জিনিস তাকে মিথ্যা বলতে বাধ্য করতে পারে না। তাই পরিস্থিতি ও পরিবেশের কোন চাপ না থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্র প্রধানের মিথ্যা বলা নিজের স্বভাবের চরম নীচুতা এবং আল্লাহ তা'আলার প্রতি উদাসীনতারই স্বাক্ষর বহন করে।

অহঙ্কার করা পাপ। সামান্যতম অহঙ্কার মানুষের আখিরাতকে বরবাদ করে। অহঙ্কার মানুষের দুনিয়াও বিনষ্ট করে। পাপ হওয়া সত্ত্বেও বিত্তবান ও প্রভাব-প্রতিপত্তিশালীদের চাল-চলনে অহঙ্কার প্রকাশ অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু যাকে আল্লাহ ধন-দৌলত বা প্রভাব-প্রতিপত্তি দান করেননি, তার পক্ষে অহঙ্কার করা মোটেই সাজে না। তার নিজের অবস্থার জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে নত থাকা উচিত। তার অসহায় অবস্থা দূর করার জন্য দিনরাত আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা উচিত। যে গরীব বান্দা এ ধরনের মনোভাব পোষণ না করে অহঙ্কার করে, সে মূলত জঘন্যতম অপরাধ করে। পরিস্থিতি-পরিবেশের দাবি অনুযায়ী বিনম্রতা অবলম্বন না করে দরিদ্র ব্যক্তি অহঙ্কার প্রদর্শন করে তার জঘন্যতম অপরাধী মনোবৃত্তিরই পরিচয় দেয়। তাই আল্লাহ দরিদ্র অহঙ্কারীকে খুব বেশি অপসন্দ করেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান