মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ১৩৪
আখলাক অধ্যায়
এক মেহমানদারীতে আল্লাহ হেসেছেন
১৩৪: হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল ﷺ-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলল: আমি ক্ষুধার্ত ও অভাবগ্রস্ত। আল্লাহর নবী ﷺ তাঁর কোন বিবির কাছে সংবাদ পাঠালেন। তিনি উত্তর দিলেন, যিনি আপনাকে হক দীনসহকারে পাঠিয়েছেন, তাঁর শপথ! আমার কাছে পানি ছাড়া আর কিছু নেই। অতঃপর তিনি অপর বিবির কাছে খবর পাঠালেন। তিনিও অনুরূপ জবাব দিলেন এবং তাঁদের প্রত্যেকে অনুরূপ জবাব দিলেন। অতঃপর নবী ﷺ-বললেন: যে এ ব্যক্তির মেহমানদারী করবে, আল্লাহ তাকে রহম করবেন। আবু তালহা নামক এক আনসার সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি। অতঃপর তিনি মেহমানকে তাঁর ঘরে নিয়ে গেলেন। তিনি তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন: তোমার কাছে কি মেহমানদারী করার মত কোন জিনিস আছে? তাঁর স্ত্রী জবাব দিলেন, আমার কাছে বাচ্চাদের খাবার ছাড়া কিছু নেই। তিনি বললেন, বাচ্চাদেরকে কোন কিছুর দ্বারা ব্যস্ত রাখ এবং ঘুম পাড়িয়ে দাও। আমাদের মেহমান এলে তাকে এরূপ ভাব দেখাও যে আমরা খাব। মেহমান খাওয়ার জন্য হাত বাড়ালে তুমি বাতি ঠিক করার ভান করে বাতির কাছে যাও এবং তা নিভিয়ে দাও। তাঁর বিবি তাই করলেন। মেহমান খেলেন এবং তাঁরা বসে থাকলেন। ফলে তাঁরা অভুক্ত রাত কাটালেন। ভোর হলে আবু তালহা নবী করীম ﷺ-এর কাছে গেলেন। নবী ﷺ তাদের নাম নিয়ে বললেন: আল্লাহ তাঁর অমুক বান্দা ও তার স্ত্রীর উপর খুব খুশি হয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, অথবা আল্লাহর নবী বলেছিলেন, আল্লাহ তাঁর অমুক বান্দা ও তার স্ত্রীর ব্যাপারে হেসেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ : إِنِّي مَجْهُودٌ ، فَأَرْسَلَ إِلَى بَعْضِ نِسَائِهِ ، فَقَالَتْ : وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ ، مَا عِنْدِي إِلَّا مَاءٌ ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى أُخْرَى ، فَقَالَتْ مِثْلَ ذَلِكَ ، حَتَّى وَقُلْنَ كُلُّهُنَّ مِثْلَ ذَلِكَ : فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مَنْ يُضِيفُهُ يَرْحَمُهُ اللهُ؟ » ، فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ ، يُقَالُ لَهُ اَبِىْ طَلْحَةَ فَقَالَ : أَنَا ، يَا رَسُولَ اللهِ ، فَانْطَلَقَ بِهِ إِلَى رَحْلِهِ ، فَقَالَ لِامْرَأَتِهِ : هَلْ عِنْدَكِ شَيْءٌ؟ قَالَتْ : لَا إِلَّا قُوتُ صِبْيَانِي ، قَالَ : فَعَلِّلِيهِمْ بِشَيْءٍ ، وَنَوِّمِيْهِمْ فَإِذَا دَخَلَ ضَيْفُنَا ، فَأَرِيهِ أَنَّا نَأْكُلُ ، فَإِذَا أَهْوَى بِيَدِهِ لِيَأْكُلَ ، فَقُومِي إِلَى السِّرَاجِ كَىْ تُصْلِحِيْهِ فَأَطْفِئِيْهِ فَفَعَلَتْ فَقَعَدُوا وَأَكَلَ الضَّيْفُ وَبَاتَا طَاوِيَيْنِ ، فَلَمَّا أَصْبَحَ غَدَا عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « لَقَدْ عَجِبَ اللهُ مِنْ اَوْ ضَحِكَ اللهُ مِنْ فُلَانٍ وَفُلَانَةٍ » (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নিজের এবং পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনের চেয়ে আল্লাহর অভাবগ্রস্ত বান্দাদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দান করা সহজ কাজ নয়। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসেন এবং দুনিয়ার বিন্দেগীর সামান্য আরামের চেয়ে আখিরাতের যিন্দেগীর স্থায়ী কল্যাণের আকাঙ্ক্ষা বেশি করেন, তিনি অতি সহজে এ কাজ করতে পারেন। যখন বান্দা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কোন কুরবানী দান করে, তখন আল্লাহ পূর্ণ সন্তুটি সহকারে তা কবুল করেন। সাহাবী আবু তালহা (রা) এবং তাঁর বিবি নিজেদেরকে এবং বাচ্চাদেরকে ভূখা রেখে ক্ষুধার্ত মেহমানকে একবেলা সাধারণ খাবার দান করে যে সওয়াব হাসিল করেছেন, সে সওয়াব স্বাভাবিক অবস্থায় সম্পদের পাহাড় বিতরণ করেও হাসিল করা সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ সওয়াবের পরিমাণ সম্পদের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না; বরং তা বান্দার নিয়্যতের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে। যে নিজের প্রয়োজন উপেক্ষা করে অন্যের প্রয়োজন পূরণ করে, সে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে এবং যে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে সে কখনো ব্যর্থ হয় না। আল্লাহ এ ধরনের বান্দাকে তাঁর নিয়ামত ও বরকত দান করেন। তিনি তাঁর মাহবুব বান্দাকে দুনিয়ার যিন্দেগীতে আলো দান করেন, শয়তান ও তার কর্মী বাহিনীর আক্রমণ থেকে তার ঈমান রক্ষা করেন এবং আখিরাতের যিন্দেগীতে নিয়ামতভরা জান্নাত দান করেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান