মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ১৩৩
আখলাক অধ্যায়
ত্যাগ স্বীকার: প্রয়োজন সত্ত্বেও রাসূল ﷺ চাদর দিয়ে দিলেন
১৩৩. হযরত সাহল ইবন সা'আদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মহিলা একখানা চাদর নিয়ে নবী ﷺ-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে চাদরটি পরিধান করতে দিতে চাই। নবী করীম ﷺ-এর চাদরের প্রয়োজন ছিল, তিনি তা গ্রহণ করলেন এবং পরিধান করলেন। অতঃপর তাঁর জনৈক সাহাবী তাঁর গায়ে চাদর দেখে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কি সুন্দর। আমাকে তা পরিধান করতে দিন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন: হ্যাঁ। যখন নবী ﷺ মজলিস থেকে উঠে গেলেন, তখন তাঁর সাহাবিগণ সওয়ালকারীকে দোষারোপ করে বললেন: যখন তুমি জান যে, নবী করীম ﷺ-এর কাছে কোন সওয়াল করা হলে তা তিনি প্রত্যাখান করেন না এবং তুমি দেখেছ, নবী ﷺ প্রয়োজনের খাতিরে চাদরটি গ্রহণ করেছেন, তখন তুমি তাঁর কাছে তা চেয়ে ভাল কাজ করনি। সওয়ালকারী জবাব দিলেন, যেহেতু নবী ﷺ তা পরিধান করছেন, তাই আমি তাঁর বরকতের আশা পোষণ করেছি। আমি আশা করি, এটা দিয়ে আমার কাফন হবে। (বুখারী)
کتاب الاخلاق
عَنْ سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ قَالَ : جَاءَتِ امْرَأَةٌ اِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : بِبُرْدَةٍ ، فَقَالَتْ : يَا رَسُولَ اللَّهِ أَكْسُوكَ هَذِهِ ، فَأَخَذَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْتَاجًا إِلَيْهَا ، فَلَبِسَهَا ، فَرَآهَا عَلَيْهِ رَجُلٌ مِنْ اَصْحَابِهِ ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، مَا أَحْسَنَ هَذِهِ ، فَاكْسُنِيهَا ، فَقَالَ : « نَعَمْ » فَلَمَّا قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَمَهُ أَصْحَابُهُ ، قَالُوا : مَا أَحْسَنْتَ حِينَ رَأَيْتَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَهَا مُحْتَاجًا إِلَيْهَا ، ثُمَّ سَأَلْتَهُ إِيَّاهَا ، وَقَدْ عَرَفْتَ أَنَّهُ لاَ يُسْأَلُ شَيْئًا فَيَمْنَعَهُ ، فَقَالَ : رَجَوْتُ بَرَكَتَهَا حِينَ لَبِسَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، لَعَلِّي أُكَفَّنُ فِيهَا . (رواه البخارى)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহর নবী ﷺ কখনো কোন সওয়ালকারীর সওয়াল প্রত্যাখ্যান করেননি। তিনি তাঁর সাহাবায়ে কিরামের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতেন। চাদরের প্রয়োজন তাঁর খুব বেশি ছিল এবং তিনি তা পসন্দও করেছিলেন। কিন্তু যখন একজন তা চেয়ে বসলেন, তখন আল্লাহর রাসুল ﷺ তাকে তা দিয়ে দিলেন। নিজের প্রয়োজনের চেয়ে সওয়ালকারীর প্রয়োজনের প্রতি বেশি গুরুত্ব আরোপ করলেন। মুসলিম সমাজের প্রত্যেক সদস্য অপরের প্রয়োজনের প্রতি সতর্ক ও মনোযোগী হলে আমাদের সমাজের অভাব-অনটন দূর হবে, হিংসা-বিদ্বেষ মুছে যাবে এবং ভালবাসা ও হৃদ্যতা সৃষ্টি হবে। অপর ভাইয়ের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দান করার ফলে যে ভালবাসা ও মহব্বত সৃষ্টি হয়, তা সমাজকে সীসাঢালা প্রাচীরের মত মযবুত করে। এ কাজ দুর্বল ঈমানের অধিকারী ব্যক্তি কখনো করতে পারবে না। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে যিনি যত বেশি মহব্বত করেন, তিনি তত বেশি এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন।

ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগে নিযুক্ত লোকজন এ অপরিহার্য গুণের দ্বারা নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত না করা পর্যন্ত সমাজের গতিধারা পরিবর্তন করতে পারবে না। এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের যিম্মাদারী খুব বেশি। অধীনস্থদের সাথে তাদের সম্পর্ক এরূপ প্রাণখোলা হওয়া উচিত যেরূপ নবী করীম ﷺ-এর সাথে সাহাবায়ে কিরামের ছিল। অর্থাৎ যেরূপ অকপটে সাহাবায়ে কিরাম নবী ﷺ-কে তাদের প্রয়োজন জানাতেন, তাঁর কাছে ছোট-খাট আবদার করতেন এবং নবী করীম ﷺ যেভাবে তাঁর সাথীদের সন্তুষ্ট করতেন, সেরূপ অকপটে অধীনস্থগণ তাদের দায়িত্বশীলদের কাছে নিজেদের সমস্যা এবং অভাব-অনটনের বিষয় পেশ করতে যেন ইতস্তত না করেন এবং দায়িত্বশীলগণও যেন অধীনস্থদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দান করেন। আল্লাহর রাসূলের যাবতীয় মহান উদাহরণ নিজেদের জীবনে কার্যকরী না করা পর্যন্ত অপর মানুষকে ইসলামের মহান পয়গামের প্রতি আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান