মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং: ৯৬
রিকাক অধ্যায়
নবী করীম ﷺ-এর প্রতি আল্লাহর নয়টি নির্দেশ
৯৬. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেছেন: আমার রব্ব আমাকে নয়টি আদেশ করেছেন। প্রকাশ্য ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা; ক্রোধ ও সন্তুষ্টিতে ইনসাফের কথা বলা, দারিদ্র্য ও প্রাচুর্যে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা; যে (আত্মীয়) আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তার সাথে সম্পর্ক কায়েম করা; আমাকে যে বঞ্চিত করে তাকে দান করা; যে আমাকে যুলম করে তাকে মাফ করা; আমার নীরবতা হবে চিন্তা-ভাবনা; আমার কথাবার্তা হবে (আল্লাহর) যিকির এবং আমার দৃষ্টি হবে শিক্ষা গ্রহণমূলক; আর মানুষকে মারূফ বা ভাল কথা বলার হুকুম করতে আমাকে আদেশ করা হয়েছে। (রযীন)
کتاب الرقاق
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَمَرَنِىْ رَبِّىْ بِتِسْعٍ خَشْيَةِ اللهِ فِي السِّرِ وَالْإِعْلَانِيَةِ ، وَكَلِمَةَ الْعَدْلِ فِي الْغَضَبِ وَالرِّضَا ، وَالْقَصْدَ فِي الْفَقْرِ وَالْغِنَى ، وَأَنْ أَصِلَ مَنْ قَطَعَنِىْ ، وَأُعْطِىَ مَنْ حَرَمَنِىْ ، وَاَعْفُوَ عَمَّنْ ظَلَمَنِىْ وَاَنْ يَّكُوْنَ صَمْتِى فِكْرًا وَنُطْقِىْ ذِكْرًا وَنَظْرِىْ عِبْرَةً وَآمُرَ بِالْعُرْفِ وَقِيْلَ بِالْمَعْرُوْفِ . (رواه زرين)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহ তা'আলার তরফ থেকে হাদীসে বর্ণিত ন'টি বিষয় সম্পর্কে নবী করীম ﷺ-কে বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়ার পিছনে এক বিরাট তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। মূলত এসব গুণ আমাদের প্রিয় নবীর মধ্যে এমনিতেই ছিল। এরপরও তাঁকে এসব গুণ সম্পর্কে নির্দেশ দেয়ার তাৎপর্য হলো, তাঁর উম্মতরা যাতে এগুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করে মানব জাতির মধ্যে নিজেদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। কারণ এসব গুণ ছাড়া কোন মানুষ নিজেকে যেমন আল্লাহ তা'আলার একজন খাঁটি বান্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন না। তেমনি অন্য মানুষের জন্যও তিনি আদর্শ ব্যক্তিকে পরিণত হতে পারেন না। নবী করীম ﷺ সুদীর্ঘ ২৩ বছরব্যাপী আল্লাহর বাণী প্রচারের যে মহান দায়িত্ব পালন করেন, তাঁর ইত্তিকালের পর স্বভাবতই এই দায়িত্ব তাঁর উম্মতের উপর বর্তেছে। তাদেরকে এই দায়িত্ব পালনের যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূলের মাধ্যমে এসব গুণ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

বস্তুত রিসালতে মুহাম্মদীয় পয়গাম মানব সমাজে পেশ করার জন্য উন্নত মানসিকতা, বুলন্দ আখলাক, বলিষ্ঠ চিন্তাধারা এবং শিক্ষামূলক দৃষ্টি প্রত্যেক মু'মিনের জন্য অপরিহার্য। আর তাই হাদীসের প্রথম অংশে এ অপরিহার্য গুণাবলীর উল্লেখ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহকে ভয় করেন, রাগ ও খুশিতে ইনসাফের কথা বলেন, দুঃখ-দৈন্য ও প্রাচুর্যে আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকেন, ধৈর্য সহকারে শয়তানের যাবতীয় হামলা মোকাবিলা করেন, যুলমের জবাব যুলমের দ্বারা দেন না, অবসর সময়ে আল্লাহর গুণগান, তাঁর সিফাত ও এখতিয়ার প্রচারের কাজে নিযুক্ত করেন, জিহ্বাকে অন্য কাজে নিয়োজিত করেন না এবং যিনি ইতিহাসের ঘটনা থেকে সবক হাসিল করেন, তিনি মূলত ঈমানের এক জীবন্ত নমুনা। তিনি মানবতার অনুসরণযোগ্য ব্যক্তি। তাঁর গোটা জীবন এক নীরব দাওয়াত এবং তাবলীগ। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ বুলন্দ আখলাক দান করুন। আমীন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান