মা'আরিফুল হাদীস
রিকাক অধ্যায়
হাদীস নং: ৯২
রিকাক অধ্যায়
পাঁচটা জিনিস জিজ্ঞাসার পূর্বে আদম সন্তানের পা সরবে না: জীবন, যৌবন, সম্পদের আয়-ব্যয় এবং জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন
৯২. হযরত ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: কিয়ামতের দিন পাঁচটা জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত কোন বনী আদমের পা সরতে পারবে না। সেগুলো হলো: তার জীবন কি কাজে ধ্বংস করেছে। তার যৌবন সে কি কাজে ক্ষয় করেছে। তার সম্পদ সে কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কি কাজে তা ব্যয় করেছে এবং তার যে জ্ঞান ছিল সে মোতাবিক সে কি আমল করেছে। (তিরমিযী)
کتاب الرقاق
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : لاَ تَزُولُ قَدَمُ ابْنِ آدَمَ يَوْمَ القِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ ، عَنْ عُمُرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ ، وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ ، وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَا أَنْفَقَهُ ، وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ . (رواه الترمذى)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
নবী করীম ﷺ খুব ওযন করে কথা বলতেন। তাঁর প্রত্যেকটি শব্দ অর্থবোধক ও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের জীবন সম্পর্কে আল্লাহ যে সওয়াল করবেন তাতে আফনা' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ বান্দা কি কাজে তা ধ্বংস করেছে? এ কথা বলা হয়নি, বান্দা তার জীবন কিভাবে ব্যয় করেছে। প্রশ্ন যাকে করা হবে সে সেদিন সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে, প্রশ্নকারী তার কাছে কি জানতে চাচ্ছেন। দুনিয়ার যিন্দেগীতে যত দুনিয়া-পরস্তী করুক না কেন, বান্দা তখন বুঝতে পারবে, যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সে উদ্দেশ্যে ব্যয় না করে অন্য যে কাজে সে ব্যয় করেছে তা তার জীবনের সদ্ব্যবহার হয়নি, বরং তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস ও বরবাদ হয়েছে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আহকামের পরিপূর্ণ আনুগত্য এবং আল্লাহর দীনের সম্প্রসারণ ও শোভা বর্ধনের কাজে যে জীবন ব্যয়িত হয়েছে, তা ধ্বংস ও বরবাদ হয়নি। আল্লাহর কাছে এ ধরনের ব্যক্তির কদর ও মর্যাদা রয়েছে। কিয়ামতের বিপদ তাদেরকে স্পর্শ করবে না।
যৌবন সম্পর্কে যে সওয়াল করা হবে তাতে 'আবলা' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে সে কি কাজে যৌবনকে ক্ষয় করেছে। অফুরন্ত সম্ভাবনাময় যৌবন মানুষের জীবনের বুনিয়াদী লক্ষ্য বাস্তবায়নের কাজে না থাকলে তা এক বিরাট অপচয় এবং খিয়ানত হিসেবে আল্লাহর কাছে গণ্য হবে। যৌবন এক অমূল্য নিয়ামত যা দুনিয়ার ধন-দৌলত ও প্রভাব-প্রতিপত্তির দ্বারা আয়ত্ত করা যায় না। আল্লাহর ইঙ্গিতে মানুষের মধ্যে যৌবনের প্রবাহ সৃষ্টি হয়। আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী এ অমূল্য সম্পদ ব্যবহৃত না হলে তার কোন মূল্য ও প্রতিদান আল্লাহর কাছে নেই। যে যৌবন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, সে যৌবনের অধিকারী খোশ নসীব ও কামিয়াব।
সম্পদের উপার্জন ও ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। হালাল উপায়ে সম্পদ উপার্জন এবং বৈধ খাতে আল্লাহর হুকুম মোতাবিক তা ব্যবহার করার উপর বান্দার কামিয়াবী নির্ভরশীল। এ ব্যাপারে কোন ত্রুটি ও গাফলতি হলে জবাবদিহি করতে হবে। নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণ, আল্লাহর দীনের প্রচার এবং গরীব-মিসকীনের সাহায্য-সহযোগিতায় সম্পদ ব্যয় করা হল পুণ্যের কাজ এবং সম্পদের সদ্ব্যবহার। জনপ্রিয়তা উপার্জন বা সুনাম ও সুখ্যাতির জন্য যে সম্পদ ব্যয় করা হয়, তার দ্বারা কোন সওয়াব পাওয়া যাবে না। খালেস আল্লাহর জন্য যা ব্যয় করা হয় আল্লাহ তা কবুল করেন এবং প্রতিদান দেন।
জ্ঞান অর্থে কুরআন-হাদীসের জ্ঞান বুঝানো হয়েছে। জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয। ছেলেমেয়েদেরকে দীনের জ্ঞান দান করা পিতামাতার কর্তব্য। নামায-রোযা, উযু-গোসল সম্পর্কিত যে জ্ঞান, তা দীনের প্রাথমিক জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও আল্লাহর কিতাবের অর্থ ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষা দান করা পিতামাতার কর্তব্য। কিয়ামতের দিন ছেলেমেয়েদেরকে দীনি তা'লিম ও তারবিয়াত সম্পর্কে পিতামাতাকে জিজ্ঞেস করা হবে। যেরূপ জ্ঞান হাসিল করা প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য, সেরূপ জ্ঞান মোতাবিক নিজের ব্যক্তিগত জীবনে আমল করা এবং তা অন্য মানুষের কাছে পৌঁছানোও কর্তব্য। প্রত্যেক ব্যক্তিকে জ্ঞান অনুযায়ী আমল করেছে কিনা তা জিজ্ঞেস করা হবে। অজ্ঞতার কারণে অনেকে মনে করেন আল্লাহর দীনের দাওয়াত পৌছানোর কাজ একমাত্র আলিম-উলামার। অবশ্য আলিম-উলামার যিম্মাদারী খুব বেশি। কারণ দীনের জ্ঞান তাদের বেশি। কিন্তু দীনের জান যার যতটুকু, তার ততটুকু অন্য মানুষের কাছে বা আশেপাশের মানুষের কাছে পৌঁছানো কর্তব্য। নবী ﷺ বিদায় হজ্জের মহান সমাবেশে উপস্থিত সকল মুসলমানকে আল্লাহর পয়গাম অন্য মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য হুকুম করেছেন। দীনের কাজ শুধু অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন সাহাবীদের যিম্মাদারী হলে নবী করীম ﷺ সাধারণ মুসলমানদেরকে হুকুম করতেন না, বরং এমনভাবে বলতেন যাতে বুঝা যেত তিনি সকল মু'মিনের উপর এ যিম্মাদারী দান করেননি।
জ্ঞানের সাথে আমলের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। অন্যথায় জ্ঞান দুনিয়া ও আখিরাতে কোন ফায়দা দান করবে না। আখিরাতের অপমান থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে জ্ঞানের সাথে আমল সংযোগ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে তওফিক দিন। আমীন।
যৌবন সম্পর্কে যে সওয়াল করা হবে তাতে 'আবলা' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে সে কি কাজে যৌবনকে ক্ষয় করেছে। অফুরন্ত সম্ভাবনাময় যৌবন মানুষের জীবনের বুনিয়াদী লক্ষ্য বাস্তবায়নের কাজে না থাকলে তা এক বিরাট অপচয় এবং খিয়ানত হিসেবে আল্লাহর কাছে গণ্য হবে। যৌবন এক অমূল্য নিয়ামত যা দুনিয়ার ধন-দৌলত ও প্রভাব-প্রতিপত্তির দ্বারা আয়ত্ত করা যায় না। আল্লাহর ইঙ্গিতে মানুষের মধ্যে যৌবনের প্রবাহ সৃষ্টি হয়। আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী এ অমূল্য সম্পদ ব্যবহৃত না হলে তার কোন মূল্য ও প্রতিদান আল্লাহর কাছে নেই। যে যৌবন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, সে যৌবনের অধিকারী খোশ নসীব ও কামিয়াব।
সম্পদের উপার্জন ও ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। হালাল উপায়ে সম্পদ উপার্জন এবং বৈধ খাতে আল্লাহর হুকুম মোতাবিক তা ব্যবহার করার উপর বান্দার কামিয়াবী নির্ভরশীল। এ ব্যাপারে কোন ত্রুটি ও গাফলতি হলে জবাবদিহি করতে হবে। নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণ, আল্লাহর দীনের প্রচার এবং গরীব-মিসকীনের সাহায্য-সহযোগিতায় সম্পদ ব্যয় করা হল পুণ্যের কাজ এবং সম্পদের সদ্ব্যবহার। জনপ্রিয়তা উপার্জন বা সুনাম ও সুখ্যাতির জন্য যে সম্পদ ব্যয় করা হয়, তার দ্বারা কোন সওয়াব পাওয়া যাবে না। খালেস আল্লাহর জন্য যা ব্যয় করা হয় আল্লাহ তা কবুল করেন এবং প্রতিদান দেন।
জ্ঞান অর্থে কুরআন-হাদীসের জ্ঞান বুঝানো হয়েছে। জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয। ছেলেমেয়েদেরকে দীনের জ্ঞান দান করা পিতামাতার কর্তব্য। নামায-রোযা, উযু-গোসল সম্পর্কিত যে জ্ঞান, তা দীনের প্রাথমিক জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও আল্লাহর কিতাবের অর্থ ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষা দান করা পিতামাতার কর্তব্য। কিয়ামতের দিন ছেলেমেয়েদেরকে দীনি তা'লিম ও তারবিয়াত সম্পর্কে পিতামাতাকে জিজ্ঞেস করা হবে। যেরূপ জ্ঞান হাসিল করা প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য, সেরূপ জ্ঞান মোতাবিক নিজের ব্যক্তিগত জীবনে আমল করা এবং তা অন্য মানুষের কাছে পৌঁছানোও কর্তব্য। প্রত্যেক ব্যক্তিকে জ্ঞান অনুযায়ী আমল করেছে কিনা তা জিজ্ঞেস করা হবে। অজ্ঞতার কারণে অনেকে মনে করেন আল্লাহর দীনের দাওয়াত পৌছানোর কাজ একমাত্র আলিম-উলামার। অবশ্য আলিম-উলামার যিম্মাদারী খুব বেশি। কারণ দীনের জ্ঞান তাদের বেশি। কিন্তু দীনের জান যার যতটুকু, তার ততটুকু অন্য মানুষের কাছে বা আশেপাশের মানুষের কাছে পৌঁছানো কর্তব্য। নবী ﷺ বিদায় হজ্জের মহান সমাবেশে উপস্থিত সকল মুসলমানকে আল্লাহর পয়গাম অন্য মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য হুকুম করেছেন। দীনের কাজ শুধু অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন সাহাবীদের যিম্মাদারী হলে নবী করীম ﷺ সাধারণ মুসলমানদেরকে হুকুম করতেন না, বরং এমনভাবে বলতেন যাতে বুঝা যেত তিনি সকল মু'মিনের উপর এ যিম্মাদারী দান করেননি।
জ্ঞানের সাথে আমলের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। অন্যথায় জ্ঞান দুনিয়া ও আখিরাতে কোন ফায়দা দান করবে না। আখিরাতের অপমান থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে জ্ঞানের সাথে আমল সংযোগ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে তওফিক দিন। আমীন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)