মা'আরিফুল হাদীস
রিকাক অধ্যায়
হাদীস নং: ৮৭
রিকাক অধ্যায়
তিনটি নাজাতদানকারী ও তিনটি হালাককারী জিনিস
৮৭. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেছেন : তিনটি জিনিস নাজাত দানকারী এবং তিনটি জিনিস হালাককারী। নাজাত দানকারী তিনটি জিনিস হল: প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা, খুশি এবং রাগের অবস্থায় হক কথা বলা এবং দারিদ্র্য ও প্রাচুর্য অবস্থায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। হালাককারী জিনিস হল, নফসের খাহেশের অনুসরণ করা, কৃপণতার তাঁবেদারী করা এবং নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করা, এটা সবচেয়ে নিকৃষ্ট। (বায়হাকী: শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الرقاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " ثَلَاثٌ مُنْجِيَاتٌ ، وَثَلَاثٌ مُهْلِكَاتٌ ، فَأَمَّا الْمُنْجِيَاتُ : فَتَقْوَى اللهِ فِي السِّرِّ وَالْعَلَانِيَةِ ، وَالْقَوْلُ بِالْحَقِّ فِي الرِّضَا وَالسُّخْطِ ، وَالْقَصْدُ فِي الْغِنَى وَالْفَقْرِ ، وَأَمَّا الْمُهْلِكَاتِ : فَهَوًى مُتَّبِعٌ ، وَشُحٌّ مُطَاعٌ ، وَإِعْجَابُ الْمَرْءِ بِنَفْسِهِ ، وَهِيَ أَشَدُّهُنَّ " (رواه البيهقى فى شعب الايمان)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
নাজাত দানকারী তিনটি জিনিস উত্তম আখলাকের বুনিয়াদী উপাদান। ঈমানদার ব্যক্তির অবশ্য পালনীয় গুণ। তাকওয়া ব্যতীত ঈমানদার ব্যক্তি ঈমানের এক কদমও অগ্রসর হতে পারবে না। তাকওয়া তার রক্ষাকবচ এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার নিয়ামক। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার দিলের মধ্যে হিকমত ঢেলে দেন, তার দিলকে ইসলামের জন্য খুলে দেন, তার কথা ও কাজের দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সাধিত হয়।
খুশি ও রাগের অবস্থায় ইনসাফের কথা বলা বিশ্বাসী ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য। হক ও ইনসাফ কখনো নিজের পসন্দ ও অপসন্দের উপর নির্ভরশীল নয়। কার পক্ষে হক কথা বলা হবে বা তার দ্বারা কে লাভবান হবে তা বিচার্য নয়। সর্বাবস্থায় হক কথা বলা ঈমানদারের ঈমানের দাবি এবং এ দাবি পূরণের মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে।
প্রাচুর্য ও দারিদ্র্য অবস্থায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা আল্লাহর বিশ্বাসী বান্দাদের অন্যতম গুণ। বিশ্বাসী বান্দাগণ ধন-দৌলত অযথা ব্যয় করেন না। তারা প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে কোনরূপ কার্পণ্য করেন না বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন খরচও করেন না। মু'মিনদের অন্যতম গুণ হল:
وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا.
-"এবং যারা খরচ করার সময় অপব্যয় করে না এবং কৃপণতাও করে না, বরং মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে।"
ধ্বংস সাধনকারী তিনটি জিনিস মন্দ স্বভাবের বুনিয়াদী উপাদান। উল্লেখিত তিনটি জিনিস মানুষের সম্মান ও আখিরাত বিনষ্টকারী। এগুলো ঈমানদার ব্যক্তির স্বভাবের বিপরীত। প্রবৃত্তি মানুষকে অনেক হুকুম করে। প্রবৃত্তির সকল দাবি পূরণ করা মুমিন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। প্রবৃত্তি মানুষকে এমন সব হুকুম করে যা পালন করলে তার আখিরাত বিলকুল বরবাদ হবে। প্রবৃত্তির অনুসরণের মধ্যে জাহান্নাম এবং তার অস্বীকৃতির মধ্যে জান্নাত নিহিত রয়েছে।
কৃপণতার তাঁবেদারী করাও খুব গর্হিত কাজ। যে কৃপণ সে লোভ-লালসার তাঁবেদারী করে। তাই সে কখনো হক পথ অনুসরণ করতে পারে না। মূলত লোভী ব্যক্তি কৃপণ এবং কৃপণ ব্যক্তি লোভী হয়ে থাকে। কৃপণতা ও লোভ-লালসা একই মুদ্রার দুটি দিক। কৃপণ ব্যক্তি তার সম্পদের প্রতি এত বেশি অনুরক্ত থাকে যে, তার বা তার নিজের পরিবার-পরিজনের কোন দাবি সে পূরণ করতে পারে না। সম্পদ সঞ্চয়ের মধ্যেই তার তৃপ্তি এবং প্রয়োজনীয় খাতে সম্পদ ব্যয় করার মধ্যেও তার ঘোরতর অনিচ্ছা। বখিল ব্যক্তি নিজের পরিবার-পরিজন এবং দেশের শত্রু। তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কৃপণতাকে অপসন্দ করেন।
নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করা শুধু একটা মন্দ স্বভাব নয়, এটা নিকৃষ্টতম স্বভাব। নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণকারী ব্যক্তি অন্য মানুষের রায় এবং মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। সে যা ভাল মনে করে তাই ভাল। সে যা মন্দ মনে করে তাই মন্দ। সারা দুনিয়ার যুক্তি তার বিরুদ্ধে প্রদান করা হলেও তার মন তাতে সায় দেয় না। সর্বদা তার একান্ত ইচ্ছা তামাম সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে মানুষ তার নিজের মতের অনুরূপ মত দান করুক, তার চোখ দিয়ে অন্য মানুষ সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করুক এবং তার মাথা দিয়ে সমস্যার বিচার-বিশ্লেষণ করুক। হক তার মনমত না হলে সে তা গ্রহণ করতে চায় না: বরং তার বিপরীত যুক্তি প্রদর্শন করার জন্য সে চেষ্টা করে। এ ধরনের লোক তার নিজের ও সমাজের ক্ষতি সাধন করে। নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণকারী ব্যক্তি তার নিজের দোষ কখনো স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়, অন্য মানুষ তার দোষ-ত্রুটির প্রতি ইঙ্গিত করলে সে তা খারাপ মনে করে। মানুষের এ রোগ তার নিজের ও অন্যের জন্যও ক্ষতিকর। এজন্য একে নিকৃষ্টতম স্বভাব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ ধরনের মন্দ স্বভাব থেকে বাঁচার জন্য সর্বদা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত।
খুশি ও রাগের অবস্থায় ইনসাফের কথা বলা বিশ্বাসী ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য। হক ও ইনসাফ কখনো নিজের পসন্দ ও অপসন্দের উপর নির্ভরশীল নয়। কার পক্ষে হক কথা বলা হবে বা তার দ্বারা কে লাভবান হবে তা বিচার্য নয়। সর্বাবস্থায় হক কথা বলা ঈমানদারের ঈমানের দাবি এবং এ দাবি পূরণের মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে।
প্রাচুর্য ও দারিদ্র্য অবস্থায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা আল্লাহর বিশ্বাসী বান্দাদের অন্যতম গুণ। বিশ্বাসী বান্দাগণ ধন-দৌলত অযথা ব্যয় করেন না। তারা প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে কোনরূপ কার্পণ্য করেন না বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন খরচও করেন না। মু'মিনদের অন্যতম গুণ হল:
وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا.
-"এবং যারা খরচ করার সময় অপব্যয় করে না এবং কৃপণতাও করে না, বরং মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে।"
ধ্বংস সাধনকারী তিনটি জিনিস মন্দ স্বভাবের বুনিয়াদী উপাদান। উল্লেখিত তিনটি জিনিস মানুষের সম্মান ও আখিরাত বিনষ্টকারী। এগুলো ঈমানদার ব্যক্তির স্বভাবের বিপরীত। প্রবৃত্তি মানুষকে অনেক হুকুম করে। প্রবৃত্তির সকল দাবি পূরণ করা মুমিন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। প্রবৃত্তি মানুষকে এমন সব হুকুম করে যা পালন করলে তার আখিরাত বিলকুল বরবাদ হবে। প্রবৃত্তির অনুসরণের মধ্যে জাহান্নাম এবং তার অস্বীকৃতির মধ্যে জান্নাত নিহিত রয়েছে।
কৃপণতার তাঁবেদারী করাও খুব গর্হিত কাজ। যে কৃপণ সে লোভ-লালসার তাঁবেদারী করে। তাই সে কখনো হক পথ অনুসরণ করতে পারে না। মূলত লোভী ব্যক্তি কৃপণ এবং কৃপণ ব্যক্তি লোভী হয়ে থাকে। কৃপণতা ও লোভ-লালসা একই মুদ্রার দুটি দিক। কৃপণ ব্যক্তি তার সম্পদের প্রতি এত বেশি অনুরক্ত থাকে যে, তার বা তার নিজের পরিবার-পরিজনের কোন দাবি সে পূরণ করতে পারে না। সম্পদ সঞ্চয়ের মধ্যেই তার তৃপ্তি এবং প্রয়োজনীয় খাতে সম্পদ ব্যয় করার মধ্যেও তার ঘোরতর অনিচ্ছা। বখিল ব্যক্তি নিজের পরিবার-পরিজন এবং দেশের শত্রু। তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কৃপণতাকে অপসন্দ করেন।
নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করা শুধু একটা মন্দ স্বভাব নয়, এটা নিকৃষ্টতম স্বভাব। নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণকারী ব্যক্তি অন্য মানুষের রায় এবং মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। সে যা ভাল মনে করে তাই ভাল। সে যা মন্দ মনে করে তাই মন্দ। সারা দুনিয়ার যুক্তি তার বিরুদ্ধে প্রদান করা হলেও তার মন তাতে সায় দেয় না। সর্বদা তার একান্ত ইচ্ছা তামাম সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে মানুষ তার নিজের মতের অনুরূপ মত দান করুক, তার চোখ দিয়ে অন্য মানুষ সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করুক এবং তার মাথা দিয়ে সমস্যার বিচার-বিশ্লেষণ করুক। হক তার মনমত না হলে সে তা গ্রহণ করতে চায় না: বরং তার বিপরীত যুক্তি প্রদর্শন করার জন্য সে চেষ্টা করে। এ ধরনের লোক তার নিজের ও সমাজের ক্ষতি সাধন করে। নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণকারী ব্যক্তি তার নিজের দোষ কখনো স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়, অন্য মানুষ তার দোষ-ত্রুটির প্রতি ইঙ্গিত করলে সে তা খারাপ মনে করে। মানুষের এ রোগ তার নিজের ও অন্যের জন্যও ক্ষতিকর। এজন্য একে নিকৃষ্টতম স্বভাব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ ধরনের মন্দ স্বভাব থেকে বাঁচার জন্য সর্বদা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)