মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং: ৮৬
রিকাক অধ্যায়
এক ব্যক্তির প্রতি নবী ﷺ-এর তিনটি মূল্যবান উপদেশ
৮৬. হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা) বলেন, এক ব্যক্তি নবী ﷺ-এর নিকট এসে বলল: আমাকে উপদেশ দিন এবং তা খুব সংক্ষিপ্তভাবে। তিনি বললেন: যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে, তখন তা বিদায়ী ব্যক্তির ন্যায় পড়বে। এমন কোন কথা বলবে না যার জন্য আগামীকাল তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে এবং মানুষের কাছে যা আছে তার ব্যাপারে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরাশ করে ফেল।
کتاب الرقاق
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ ، قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ عَلِّمْنِي ، وَأَوْجِزْ ، فَقَالَ : « إِذَا قُمْتَ فِي صَلَاتِكَ فَصَلِّ صَلَاةَ مُوَدِّعٍ ، وَلَا تَكَلَّمْ بِكَلَامٍ تَعْتَذِرُ مِنْهُ ، وَأَجْمِعِ الْيَأْسَ عَمَّا فِي أَيْدِي النَّاسِ » (رواه احمد)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এই হাদীসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। প্রথমত, বলা হয়েছে নামায খুব মনযোগ সহকারে আদায় করতে হবে। নামাযী ব্যক্তি নিজের নামাযকে জীবনের শেষ নামায মনে করবে। আমাদের জীবন যে কোন মুহূর্তে শেষ হয়ে যেতে পারে। আমরা বলতে পারি না কোন সময় আমাদের কাছে মৃত্যুর পরোয়ানা আসবে। তাই নামায আদায়ের সময় এই বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের জীবন সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করে যে, পরপারের নোটিশ যে কোন সময় আসতে পারে, সে একাগ্রতা সহ নামায আদায় করতে সক্ষম হবে। যে নিজের নামাযকে জীবনের শেষ নামায হিসেবে আদায় করে, সে কত একাগ্রতা সহকারে নামায আদায় করে তা সহজে অনুমেয়। একাগ্রচিত্তে ইবাদত করা হলে আখিরাতে বিরাট ফল পাওয়া যাবে।

দ্বিতীয়ত, সংযতভাবে কথা বলতে বলা হয়েছে। দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় অশান্তি মুখ এবং লজ্জাস্থানের অসংযত ব্যবহারের জন্য হয়ে থকে। নবী করীম ﷺ অপর এক হাদীসে ঈমানদারদেরকে বলেছেন, তারা মুখ ও লজ্জাস্থানের যামানত দান করলে তিনি তাদেরকে জান্নাতের যামানত দান করবেন। তাই মুখের দ্বারা এমন কোন কিছু বলা উচিত নয় যা পরবর্তীকালে মানুষের কাছে বা আখিরাতে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে, জিহবার হিফাযত অতি উত্তম কাজ।

তৃতীয়ত, যেহেতু মানুষের হাতে কোন কল্যাণ বা মঙ্গল নেই, এ জন্য মানুষের উপর ভরসা করতে নিষেধ করা হয়েছে। যাবতীয় কল্যাণ আল্লাহর হাতে এবং তিনিই বান্দার একমাত্র ভরসাস্থল। যে ব্যক্তি মানুষের উপর ভরসা করে, সে বস্তুত বোকামী করে এবং লোকসানের সম্মুখীন হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে ও তাঁর কাছে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য প্রার্থনা করে, সেই বস্তুত সঠিক কাজ করে। তিনি তাকে কোন বস্তু দান করবেন, না হয় তার উপর থেকে কোন বিপদ অপসারিত করবেন বা কিয়ামতের দিন তাকে বিরাট সওয়াব দান করবেন। তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনাকারী ও তাঁর উপর ভরসাকারী ব্যক্তি কখনো নিরাশ হবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান