মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৯
রিকাক অধ্যায়
রাসূল ﷺ-এর শরীরে মাদুরের দাগ
৬৯. হযরত উমর (রা) বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আল্লাহর রাসূলের নিকট গেলাম। তিনি খেজুর পাতার মাদুরে শুয়েছিলেন। তাঁর (শরীর) ও মাদুরের মধ্যস্থলে কোন বিছানা ছিল না। তাঁর শরীরের পাশে মাদুরের দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি পাতা ভর্তি চামড়ার বালিশে ভর দিয়েছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, তিনি আপনার উম্মতকে প্রাচুর্য দান করবেন। পারস্য ও রোমকে প্রাচুর্য দান করা হয়েছে। অথচ তারা আল্লাহর ইবাদত করে না। আল্লাহর রাসূল বললেনঃ হে খাত্তাবের পুত্র! তুমি কি এরূপ চিন্তা কর? তারা এমন কওম যাদেরকে তাদের যাবতীয় কল্যাণ দুনিয়ার যিন্দেগীতে দান করা হয়েছে। অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে। তুমি কি রাযী নও (বা কেন তুমি রাযী নও) যে, তাদের জন্য দুনিয়া এবং আমাদের জন্য আখিরাত? (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الرقاق
وَعَن عمر قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا هُوَ مُضْطَجِعٌ عَلَى رِمَالِ حَصِيرٍ ، لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ فِرَاشٌ ، قَدْ أَثَّرَ الرِّمَالُ بِجَنْبِهِ ، مُتَّكِئًا عَلَى وِسَادَةٍ مِنْ أَدَمٍ حَشْوُهَا لِيفٌ قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ فَلْيُوَسِّعْ عَلَى أُمَّتِكَ ، فَإِنَّ فَارِسَ وَالرُّومَ وُسِّعَ عَلَيْهِمْ ، وَهُمْ لاَ يَعْبُدُونَ اللَّهَ ، فَقَالَ : « أَوَفِي شَكٍّ أَنْتَ يَا ابْنَ الخَطَّابِ أُولَئِكَ قَوْمٌ عُجِّلَتْ لَهُمْ طَيِّبَاتُهُمْ فِي الحَيَاةِ الدُّنْيَا » وَفِىْ رِوَايَةٍ أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ لَهُمُ الدُّنْيَا وَلَنَا الآخِرَةُ . (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উমর (রা) আল্লাহর রাসূলের তকলিফ দেখে সীমাহীন ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি জানতেন, দুনিয়ার তামাম ধন-দৌলত আসমান-যমীনের মালিক আল্লাহর পূর্ণ এখতিয়ারে রয়েছে। তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। যদি তিনি ইরান ও রোমের কাফির জাতিদের ধন-দৌলত দান করতে পারেন, তাহলে তাঁর ইবাদতকারী মুসলমানদেরকে কেন দান করতে পারবেন না? অধিকন্তু আল্লাহ তাঁর নবীর দু'আ কখনো ফেলে দিবেন না। উমর (রা) আরো জানতেন, নবী করীম ﷺ তাঁর ব্যক্তিগত যিন্দেগীর প্রাচুর্যের জন্য কখনো দু'আ করবেন না। তাই তিনি গোটা উম্মতের প্রাচুর্যের জন্য দু'আ করতে অনুরোধ করেন কিন্তু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের জন্য প্রাচুর্যের দু'আ করেননি। তিনি অন্য হাদীসে প্রাচুর্যকে তাঁর উম্মতের ফিতনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাই কি করে তিনি তাঁর উম্মতের বিড়ম্বনার জন্য দু'আ করতে পারেন? তিনি তাঁর উম্মতের আখিরাতের আরাম-আয়েশ চেয়েছেন। নবী করীম ﷺ-এর অপর এক হাদীসের সারমর্ম হল: যারা আখিরাতের সুখ-শান্তির প্রার্থী এবং তার জন্য চেষ্টা-সাধনা করে, দুনিয়া তাদের নিকট লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে ফিরে আসে। দুনিয়ার জীবনে যা তাদের জন্য লিখা হয়েছে তা অবশ্যই তাদেরকে দেয়া হয়। ঈমানদারদের আখিরাতের সাফল্য সর্বাধিক। তাই "তাদের (দুনিয়াদারদের) জন্য দুনিয়া এবং আমাদের জন্য আখিরাত" বলার অর্থ এ নয় যে, ঈমানদারগণ দুনিয়া থেকে বঞ্চিত। নবী করীম ﷺ তাঁর উম্মতকে দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল প্রার্থনা করার জন্য বলেছেনঃ
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً.
-"হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান করুন।"

আখিরাতকে ছেড়ে শুধু দুনিয়ার কল্যাণ চাওয়া ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থি। কাফিরগণ আখিরাতের জীবনে বিশ্বাসী নয় এবং তারা নিজেদের যাবতীয় চেষ্টা দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ও ধন-দৌলত আয়ত্ত করার জন্য নিয়োজিত করে। তাই আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে তামাম প্রাচুর্য দান করেন এবং আখিরাতের অফুরন্ত নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান