মা'আরিফুল হাদীস
রিকাক অধ্যায়
হাদীস নং: ২১
রিকাক অধ্যায়
রাসূলুল্লাহর যুগে গুনাহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা
২১. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি (তাঁর যুগের লোকদের) বলেন, তোমরা অনেক কাজ কর, যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়েও সরু (অতি সাধারণ ও নগণ্য) কিন্তু রাসূলুল্লাহর যুগে আমরা সে সবকে বড় অপরাধ অর্থাৎ ধ্বংসকারী জিনিস গণ্য করতাম। (বুখারী)
کتاب الرقاق
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : « إِنَّكُمْ لَتَعْمَلُونَ أَعْمَالًا ، هِيَ أَدَقُّ فِي أَعْيُنِكُمْ مِنَ الشَّعَرِ ، إِنْ كُنَّا لَنَعُدُّهَا عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ المُوبِقَاتِ » قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ : « يَعْنِي بِذَلِكَ المُهْلِكَاتِ » (رواه البخارى)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আল্লাহর অবাধ্যতার নাম হল অপরাধ। স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে আল্লাহর হুকুমের সামান্যতম খেলাফ করাকে দূষণীয় মনে না করা খুব দূষণীয় কাজ। ছোট ছোট গুনাহ, যার প্রতি কোন গুরুত্ব আরোপ করা হয় না, তা একত্র করা হলে বড় গুনাহর মত হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ছোট-বড় সকল গুনাহ সম্পর্কে মানুষ ও জিন্নকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আল্লাহ তা'আলা দয়া পরবশ হয়ে সেগুলো মাফ না করে দিলে ছোট অপরাধের অপরাধীও শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না। সাহাবায়ে কিরামের ঈমানী শক্তি খুব বেশি ছিল এবং সাচ্চা মু'মিন হিসেবে কখনো তাঁরা ছোট অপরাধকে নগণ্য মনে করতেন না। আল্লাহর হুকুমের সামান্যতম বিপরীত কাজ করাকে দুনিয়া ও আখিরাতের ধ্বংসকারী কাজ গণ্য করে তারা কাজ করার সময় বিচার-বিবেচনার আশ্রয় নিতেন এবং আল্লাহর অসন্তুষ্ট হওয়ার মত কাজ পরিত্যাগ করতে সচেষ্ট থাকতেন। বস্তুত পাপের প্রতি এ ধরনের মনোভাব তখনই জন্মাতে পারে যখন প্রকৃতপক্ষে আখিরাতে বিশ্বাসী হয় এবং তার দৃঢ় প্রত্যয় থাকে যে, মৃত্যুর পর আল্লাহর দরবারে তার দুনিয়ার জীবনের হিসাব দিতে হবে। হাদীসে বর্ণিত দুটি শব্দ 'মুবিকাত' (পাপ, অপরাধ, অবাধ্যতা) এবং 'মুহলিকাত' (ধ্বংসকারী) খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সাহাবায়ে কিরাম (রা) পাপকে ক্ষতিকারক ও ধ্বংসকারী মনে করতেন। তাই হাদীসে এই দুটো শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে পরিষ্কার বুঝা যায়, সাহাবায়ে কিরাম (রা) পাপ সম্পর্কে কিরূপ চিন্তা-ভাবনা করতেন। আল্লাহ আমাদের ছোট-বড় সকল গুনাহ থেকে বাঁচার তওফিক দিন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)